ইরানে পুলিশি হেফাজতে মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। অসংখ্য বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্দোলন-বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ৯ ইউরোপীয়কেও গ্রেপ্তারের করার কথা জানিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে গত শুক্রবার ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এক কর্নেলসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। তবে এই বন্দুকযুদ্ধের সঙ্গে মাশা আমিনির ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তাৎক্ষণিক তা স্পষ্ট নয়।
গত শুক্রবার ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ বিদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই ৯ জনের মধ্যে জার্মানি, পোল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনের নাগরিক রয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মাশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যে উত্তেজনা চলছে ইউরোপীয় নাগরিকদের গ্রেপ্তারে তা আরও তেঁতে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতিগত বিদ্রোহ উত্থানের আশঙ্কা থেকে এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে কয়েক দিন আগে তেহরান প্রতিবেশী ইরাকের কুর্দি অঞ্চলে বিভিন্ন স্থাপনায় ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে; এর আগে তারা ইরানের কুর্দি ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় জড়িত থাকার ও ইন্ধন দেওয়ারও অভিযোগ এনেছিল।
পশ্চিমা মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, পারসিক শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরান অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে। তেহরান এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দা পালনের নিয়ম রয়েছে। এই বিধিগুলো তদারক করার জন্য রয়েছে দেশটির ‘নৈতিকতাবিষয়ক’ পুলিশ। এই পুলিশের একটি দল গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনিকে তেহরান থেকে আটক করে। পরে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় তার। এ ঘটনার প্রতিবাদে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয় দেশজুড়ে।
অসলোভিত্তিক একটি মানবাধিকার সংগঠন জানিয়েছে, বিক্ষোভে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে ৮৩ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবারও বিক্ষোভ চলাকালে ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শনিবার ইরানের কুর্দিস্তানে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে।
২০১৯ সালেও তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এ ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় দেশটিতে। সে সময় ১ হাজার ৫০০ মানুষ নিহত হন।
ইরান অভিযোগ করছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করছে এবং ইসলামিক প্রজাতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।
এদিকে এই অস্থিরতার মধ্যেই ইরানের সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর এক কর্নেলসহ ১৯ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বন্দুকযুদ্ধের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে আঞ্চলিক গভর্নর হোসেইন খিয়াবানি বলেন, এই ঘটনায় ১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন।
সিস্তান-বেলুচিস্তান আফগানিস্তান ও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী ইরানের একটি দারিদ্র্যপীড়িত প্রদেশ। মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘাতের অন্যতম অঞ্চল এটি। পাশাপাশি সংখ্যালঘু বালুচ এবং সুন্নি মুসলিমদের চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে।