logo
আপডেট : ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০
তমব্রু সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ রোহিঙ্গা নিহত
নিজস্ব প্রতিবেদক ও উখিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

তমব্রু সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ রোহিঙ্গা নিহত

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় (নো ম্যানস ল্যান্ড) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা কিশোর নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল রবিবার ভোরে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখার আশ্রয় শিবিরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা।

নিহত ওমর ফারুক (১৭) ওই আশ্রয় শিবিরের বাসিন্দা মো. আয়ুবের ছেলে। গতকাল সকালে সীমান্তের পূর্বে পাহাড়ি এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতায় তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

তমব্রুর রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের মাঝি (দলনেতা) আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওমর ফারুক ও মো. আবদু ইয়্যা নামে দুই রোহিঙ্গা আজ ভোরে (গতকাল) তমব্রুর মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার পাহাড়ি ছড়ায় মাছ শিকারে বের হয়। এ সময় বিজিপির (মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ) পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে ওমর ফারুক মারা যায়। আরেকজন প্রাণে রক্ষা পায়। পরে তার মাধ্যমে খবর পেয়ে ফারুকের মরদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গার মৃত্যুর খবর গোয়েন্দাদের কাছ থেকে শুনেছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর তমব্রুর শূন্য রেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে মোহাম্মদ ইকবাল (১৮) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত হন। আহত হন আরও পাঁচজন। একই দিন ওই সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে অথোয়াইং তঞ্চঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশি যুবক আহত হন।

পাঁচ বছর ধরে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে শূন্য রেখায় আশ্রয় শিবির গড়ে বসবাস করছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি রোহিঙ্গা। ওই আশ্রয় শিবির ঘেঁষে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ও রাখাইন রাজ্যের একাধিক পাহাড় রয়েছে। পাহাড়ের ওপর বিজিপির একাধিক তল্লাশি চৌকি রয়েছে।

তমব্রুর শূন্য রেখার রোহিঙ্গা নেতা আবদুর রহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে মিয়ানমারে ফিরতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ-মিয়ানমান সীমান্ত জুড়ে বিজিপি স্থলমাইন পুঁতে রাখে। এসব মাইনে গত পাঁচ বছরে ছয়জন রোহিঙ্গা মারা গেছে। শূন্য রেখার রোহিঙ্গারা সবসময় আতঙ্কে থাকে।’

গত ১৩ আগস্ট থেকে তমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে। সর্বশেষ গত ২৮ আগস্ট এবং ৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় মিয়ানমার থেকে ছোড়া চারটি মর্টার শেল তমব্রু উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকায় এসে পড়ে। এসব ঘটনায় ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।

টহল বাড়িয়েছে  কোস্ট গার্ড : মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে টেকনাফ সীমান্তে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। গতকাল রবিবার কোস্ট গার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সুযোগে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কোস্ট গার্ড। সমুদ্রে সার্বক্ষণিক টহল জাহাজ মোতায়েনসহ টেকনাফ থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত রাত-দিন নিয়মিত অত্যাধুনিক হাইস্পিড বোটের মাধ্যমে টহল চলমান রয়েছে।