ঘটা করে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পরেও আপাতত কোণঠাসা রুশ বাহিনী যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক অঞ্চলে প্রবল গোলাবর্ষণ করেছে। ইউক্রেনের প্রশাসনের ধারণা, অবশিষ্ট অধিকৃত এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরালো করতেই রুশ বাহিনী এমন হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেন প্রশাসনের বরাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল বাখমুট ও আভদিভিকা শহর লক্ষ্য করে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ চলেছে। অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেংকো বলেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী নভেম্বর মাসে লাইমান এলাকার ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার পর রাশিয়া আবার সেখানে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের বাহিনী যাতে আরও অগ্রসর না হতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতেই রাশিয়া জোরালো হামলা চালাচ্ছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র সেই পরিকল্পনার উল্লেখও করেছেন। বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের যে অংশ রাশিয়ার অন্তর্গত করা হয়েছিল, সেই অঞ্চলের সিংহভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ পাকাপোক্ত করাই আপাতত মূল লক্ষ্য। নতুন করে কোনো এলাকা দখল করার পরিকল্পনা আপাতত নেই। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাত থেকে রাশিয়ার সংযুক্ত ভূখণ্ড ‘মুক্ত’ করতে অনেক কাজ বাকি রয়েছে। ২০১৪ সালে দখল করা ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন তিনি। বৃহস্পতিবার সেখানকার সেভাস্তোপোল শহরের কাছে ইউক্রেনের ড্রোন রুশ নৌবাহিনীর ওপর আঘাত করায় পেসকভ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হামলা শুরু করার পর থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাশিয়া বয়ান বদলে চলেছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ হানাদার বাহিনীকে পুরোপুরি বহিষ্কার করার অঙ্গীকার করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতের ভিডিও বার্তায় তিনি অধিকৃত এলাকায় রাশিয়ার ল্যান্ডমাইন ব্যবহারের তীব্র সমালোচনা করেন। খেরসন প্রদেশে মাইন বিস্ফোরণে নিহত চারজন পুলিশকর্মীর প্রতি সম্মান জানান তিনি। যুদ্ধের পর নিরীহ মানুষের হত্যালীলার দায়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘মাইন সন্ত্রাসবাদ’ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করার হুমকি দেন তিনি।
রুশ ভূখণ্ডে ইউক্রেনের সম্ভাব্য হামলা সম্পর্কেও রাশিয়ার দুশ্চিন্তা বাড়ছে। দুটি সামরিক ঘাঁটির ওপর ড্রোন হামলা সম্পর্কে ইউক্রেন সরাসরি কোনো মন্তব্য না করলেও জার্মান সরকার এক বিবৃতিতে আত্মরক্ষার স্বার্থে ইউক্রেনের সেই অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র পেসকভ সতর্ক করে বলেন, এর ফলে সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমা বিশে^র আরও সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। ইউক্রেনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউরোপ রাশিয়ার ওপর আগামী পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা চাপানোর পরিকল্পনা করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, সেøাভাকিয়ার কয়েকজন মন্ত্রী সেই লক্ষ্যে কিয়েভে আলোচনা করেছেন।