ব্যালটে জবাব দবেনে হংকংবাসী
২৪ নভম্বের কাউন্সলি নর্বিাচন
রূপান্তর ডেস্ক | ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
প্রায় ছয় মাস ধরে হংকংয়ের স্বাধীনতাপন্থিরা চীনবিরোধী আন্দোলন করছেন। চলতি সপ্তাহের শেষে তারা ব্যালটের মুখোমুখি হচ্ছেন। শহরের ৪৫২ আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনে আগামী ২৪ নভেম্বর ভোট হবে। গণতান্ত্রিক এ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলন নতুন মোড় নিচ্ছে, আরও সহিংস হয়ে উঠছে। রাজপথ থেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রতিরোধ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের জবাব তারা দিচ্ছে পেট্রোল বোমা, তীর ও ইট-পাথরে।
ইতিমধ্যে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিশৃঙ্খলার অজুহাত তুলে নির্বাচন বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হলে ক্যারি লাম বড় ধরনের ভুল করবেন। কারণ হংকংবাসীর কণ্ঠস্বর উচ্চে উঠেছে। এখন তারা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিতে মুখিয়ে আছেন। তাদের চাওয়াকে অস্বীকার করলে, সরকারের পড়তি জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকবে। সরকারপন্থিরা এবার ভোটে সুবিধা করতে পারবেন না। তারপরও ভোট বাতিল হলে ধ্বংসাত্মক বিক্ষোভ হবে এবং সেটি গণতন্ত্রপন্থিদের বিজয় নিশ্চিত করবে।
স্থানীয় হলেও এ নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে বিক্ষোভকারীরা তাদের আইনি বৈধতার প্রশ্নে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। বিগত কয়েক মাসের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চড়াও হওয়ায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অবশ্য আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রচার করে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ফরেন পলিসি বলছে, চীন এসব করে একটিই বার্তা দিয়েছেÑ বৈদেশিক শক্তি কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর মাধ্যমে হংকংয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা কখনোই শহরের ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ মানুষের সমর্থন পাবে না।
তবে এটাও সত্য, এই লাখো সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যেভাবে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছেন; একইভাবে ভোটের চেহারাও অনুমিত ধারণা থেকে পাল্টে দিতে পারেন। আর গণতন্ত্রপন্থিরা ব্যালটে জয় পেলে তা পেইচিংকে বড় ধাক্কা দেবে।
স্থানীয় এ নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে হংকংয়ের রাজনীতিতে। এতে বড়সংখ্যক আসনে জয় পেলে শহরের নেতৃত্ব তারা ঠিক করবে। ঠিক যেভাবে হংকংয়ের বর্তমান প্রধান নির্বাহী ১ হাজার ২০০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছেন। এসব ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটার মূলত চীনপন্থি রাজনীতিক, শিল্পপতি ও ধনকুবের। এ নির্বাচনের বিজয়ীদের মধ্যে ১২০ জেলা কাউন্সিলর আগামী ২০২২ হংকংয়ের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত করবেন।
ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যে ৪০০ আসন দখল করে আছেন। এখন স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে শহরের আগামী নেতা নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রভাব বাড়বে। কিন্তু চীনের জন্য দুশ্চিন্তার হলো, সাম্প্রতিক আন্দোলনের ফলে ক্যারি লামের মতো বিশ্বস্তরাও এখন নীরব। এটা সত্য, অতীতে কখনই গণতন্ত্রপন্থিরা এ নির্বাচনে জেতেননি। প্রায় এক দশক টানা পেইচিংপন্থিরা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন, এর বড় কারণ ভোট করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের ছিল না।
তবে এবার ভোট ঘিরে সরকারি নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যেই প্রায় ৩ লাখ নতুন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। এতে করে প্রথমবারের মতো ভোটার ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর। এই বড়সংখ্যক তরুণ ভোটার নীরব বিপ্লব ঘটাবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শেয়ার করুন
২৪ নভম্বের কাউন্সলি নর্বিাচন
রূপান্তর ডেস্ক | ২২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

প্রায় ছয় মাস ধরে হংকংয়ের স্বাধীনতাপন্থিরা চীনবিরোধী আন্দোলন করছেন। চলতি সপ্তাহের শেষে তারা ব্যালটের মুখোমুখি হচ্ছেন। শহরের ৪৫২ আসনের কাউন্সিলর নির্বাচনে আগামী ২৪ নভেম্বর ভোট হবে। গণতান্ত্রিক এ নির্বাচন ঘিরে আন্দোলন নতুন মোড় নিচ্ছে, আরও সহিংস হয়ে উঠছে। রাজপথ থেকে এখন বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রতিরোধ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের জবাব তারা দিচ্ছে পেট্রোল বোমা, তীর ও ইট-পাথরে।
ইতিমধ্যে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিশৃঙ্খলার অজুহাত তুলে নির্বাচন বাতিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হলে ক্যারি লাম বড় ধরনের ভুল করবেন। কারণ হংকংবাসীর কণ্ঠস্বর উচ্চে উঠেছে। এখন তারা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দিতে মুখিয়ে আছেন। তাদের চাওয়াকে অস্বীকার করলে, সরকারের পড়তি জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকবে। সরকারপন্থিরা এবার ভোটে সুবিধা করতে পারবেন না। তারপরও ভোট বাতিল হলে ধ্বংসাত্মক বিক্ষোভ হবে এবং সেটি গণতন্ত্রপন্থিদের বিজয় নিশ্চিত করবে।
স্থানীয় হলেও এ নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ এর মাধ্যমে বিক্ষোভকারীরা তাদের আইনি বৈধতার প্রশ্নে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন। বিগত কয়েক মাসের আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চড়াও হওয়ায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ করেছেন বিক্ষোভকারীরা। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম অবশ্য আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে ভুল বার্তা প্রচার করে সহানুভূতি পাওয়ার চেষ্টা করেছে। ফরেন পলিসি বলছে, চীন এসব করে একটিই বার্তা দিয়েছেÑ বৈদেশিক শক্তি কতিপয় বিচ্ছিন্নতাবাদীর মাধ্যমে হংকংয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। তারা কখনোই শহরের ‘নীরব সংখ্যাগরিষ্ঠ’ মানুষের সমর্থন পাবে না।
তবে এটাও সত্য, এই লাখো সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতীয়তাবাদী শক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে যেভাবে আন্দোলনের মোড় ঘুরিয়েছেন; একইভাবে ভোটের চেহারাও অনুমিত ধারণা থেকে পাল্টে দিতে পারেন। আর গণতন্ত্রপন্থিরা ব্যালটে জয় পেলে তা পেইচিংকে বড় ধাক্কা দেবে।
স্থানীয় এ নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে হংকংয়ের রাজনীতিতে। এতে বড়সংখ্যক আসনে জয় পেলে শহরের নেতৃত্ব তারা ঠিক করবে। ঠিক যেভাবে হংকংয়ের বর্তমান প্রধান নির্বাহী ১ হাজার ২০০ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছেন। এসব ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটার মূলত চীনপন্থি রাজনীতিক, শিল্পপতি ও ধনকুবের। এ নির্বাচনের বিজয়ীদের মধ্যে ১২০ জেলা কাউন্সিলর আগামী ২০২২ হংকংয়ের পরবর্তী প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত করবেন।
ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যে ৪০০ আসন দখল করে আছেন। এখন স্থানীয় নির্বাচনে বিজয়ী হলে শহরের আগামী নেতা নির্বাচনে নিশ্চিতভাবেই তাদের প্রভাব বাড়বে। কিন্তু চীনের জন্য দুশ্চিন্তার হলো, সাম্প্রতিক আন্দোলনের ফলে ক্যারি লামের মতো বিশ্বস্তরাও এখন নীরব। এটা সত্য, অতীতে কখনই গণতন্ত্রপন্থিরা এ নির্বাচনে জেতেননি। প্রায় এক দশক টানা পেইচিংপন্থিরা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছেন, এর বড় কারণ ভোট করার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাদের ছিল না।
তবে এবার ভোট ঘিরে সরকারি নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যেই প্রায় ৩ লাখ নতুন ভোটার নিবন্ধিত হয়েছেন। এতে করে প্রথমবারের মতো ভোটার ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে, যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর। এই বড়সংখ্যক তরুণ ভোটার নীরব বিপ্লব ঘটাবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।