ধরিত্রীর কী লাভ
মাদ্রিদে কপ-২৫ সম্মেলন
রূপান্তর ডেস্ক | ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে গতকাল সোমবার স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৫। চিলির সভাপতিত্বে দুই সপ্তাহব্যাপী এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। তিন দশক ধরে প্রতি বছর সম্মেলনে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ন্যায়সংগত মাত্রায় আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখনো পৃথিবীজুড়ে নজিরবিহীন দাবানল, বন্যা, সাইক্লোন, খরা হচ্ছে। ফলে ইস্যুটি পৃথিবী নামক গ্রহের জন্যই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রমাণ আমাজন পুড়ে ধ্বংস হলেও নিষ্ক্রিয় ব্রাজিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে না এলে অচিরেই পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
সম্মেলন সামনে রেখে গত রবিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্থনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্ব এমন অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে, যেখান থেকে ফেরার সুযোগ থাকবে না। বিশ্ব এত দিন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, এখন তারা পাল্টা আঘাত করছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে। যারা এখনো এটি করেনি, এ সম্মেলনে তাদের ওপর চাপ বাড়বে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানো ও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বণ নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে এ উদ্দেশ্য পূরণে রাজনীতিকরা যে কাজ করছেন না, সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা থুনবার্গের আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলন চলাকালে তার আন্দোলনের সমর্থনে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেন।
কপ-২৫ এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দরিদ্ররা শক্তিধর অর্থনীতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কারণে যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তা জানাতে পারে। সড়ক, কয়লা পোড়ানো প্ল্যান্ট, সুউচ্চ ভবন নির্মাণ এবং তেল ও গ্যাসক্ষেত্র উন্মুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে চলেছে। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়ার অবস্থানও হতাশাজনক। চীন ও ভারত সবচেয়ে বেশি কার্বণ নিঃসরণ করলেও, দূষণরোধে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিমধ্যে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজ স্বার্থে চীন দূষণরোধে এগিয়ে এলেও, গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের জরিপ বলছে, গত জুন পর্যন্ত বিগত ১৮ মাসে দেশটি কয়লাভিত্তিক জ্বালানি সক্ষমতা ৪০ জিডব্লিউ বাড়িয়েছে। এনজিও বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন শেরিয়ার বলেন, চীন নিজ দেশ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে পরিবেশে দূষণ বাড়াচ্ছে।
তবে সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর ব্যাপক আলোচনায় মানুষ সচেতন হয়েছে। ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও শহর ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেও বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ প্রতিরক্ষা ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ন্যাট কোয়েহেন বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের জন্য জরুরি। এ জন্য সবাই মিলে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে অর্থায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’
শেয়ার করুন
মাদ্রিদে কপ-২৫ সম্মেলন
রূপান্তর ডেস্ক | ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে গতকাল সোমবার স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৫। চিলির সভাপতিত্বে দুই সপ্তাহব্যাপী এ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ২০০টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। তিন দশক ধরে প্রতি বছর সম্মেলনে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ ন্যায়সংগত মাত্রায় আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও, এখনো পৃথিবীজুড়ে নজিরবিহীন দাবানল, বন্যা, সাইক্লোন, খরা হচ্ছে। ফলে ইস্যুটি পৃথিবী নামক গ্রহের জন্যই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রমাণ আমাজন পুড়ে ধ্বংস হলেও নিষ্ক্রিয় ব্রাজিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত দেশগুলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে এগিয়ে না এলে অচিরেই পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
সম্মেলন সামনে রেখে গত রবিবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্থনিও গুতেরেস বলেন, বিশ্ব এমন অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে, যেখান থেকে ফেরার সুযোগ থাকবে না। বিশ্ব এত দিন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, এখন তারা পাল্টা আঘাত করছে। ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশকে ‘ন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে। যারা এখনো এটি করেনি, এ সম্মেলনে তাদের ওপর চাপ বাড়বে। প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, দেশগুলো বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে সম্মত হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ৪৫ শতাংশ কমানো ও ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বণ নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। তবে এ উদ্দেশ্য পূরণে রাজনীতিকরা যে কাজ করছেন না, সুইডিশ শিক্ষার্থী গ্রেটা থুনবার্গের আন্দোলন চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সম্মেলন চলাকালে তার আন্দোলনের সমর্থনে প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেন।
কপ-২৫ এমন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে দরিদ্ররা শক্তিধর অর্থনীতি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কারণে যে ক্ষতির শিকার হচ্ছে, তা জানাতে পারে। সড়ক, কয়লা পোড়ানো প্ল্যান্ট, সুউচ্চ ভবন নির্মাণ এবং তেল ও গ্যাসক্ষেত্র উন্মুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ বাড়িয়ে চলেছে। তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা ও বলিভিয়ার অবস্থানও হতাশাজনক। চীন ও ভারত সবচেয়ে বেশি কার্বণ নিঃসরণ করলেও, দূষণরোধে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিমধ্যে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিজ স্বার্থে চীন দূষণরোধে এগিয়ে এলেও, গ্লোবাল এনার্জি মনিটরের জরিপ বলছে, গত জুন পর্যন্ত বিগত ১৮ মাসে দেশটি কয়লাভিত্তিক জ্বালানি সক্ষমতা ৪০ জিডব্লিউ বাড়িয়েছে। এনজিও বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন শেরিয়ার বলেন, চীন নিজ দেশ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে পরিবেশে দূষণ বাড়াচ্ছে।
তবে সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুর ব্যাপক আলোচনায় মানুষ সচেতন হয়েছে। ফলে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ছাড়াও বিভিন্ন দেশ ও শহর ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতেও বিষয়টি আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ প্রতিরক্ষা ফান্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ন্যাট কোয়েহেন বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের জন্য জরুরি। এ জন্য সবাই মিলে কার্বণ নিঃসরণ কমাতে অর্থায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি ও পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটাতে হবে।’