রুশ প্রভাবে শরিক ইরান
| ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০
রাশিয়া ও ইরান, উভয়ই ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক জন র্যাটক্লিফ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর এবারের নির্বাচনে ইরানও যুক্ত হলো নতুন এ অভিযোগের তালিকায়।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১৩ দিন আগে দেশটির অন্যতম শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা র্যাটক্লিফ বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে কিছু ভোটার নিবন্ধনের তথ্য পৃথকভাবে ইরান ও রাশিয়ার হস্তগত হয়েছে।
বেশিরভাগ ভোটার নিবন্ধনের তথ্যই যেখানে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সেখানে এমন অভিযোগ কী তাৎপর্য বহন করে প্রসঙ্গে র্যাটক্লিফ বলেন, ইতিমধ্যেই সরকারি কর্মকর্তারা লক্ষ করেছেন ইরান ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটারদের আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে সাজানো ইমেইল পাঠিয়ে সামাজিক অস্থিরতা উসকে দেওয়ার এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে একই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। তবে তাদের কাছেও ভোটারদের তথ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে ভোটারদের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। কিছু রাজ্যে আবার আবেদন করতে হয়। একেক রাজ্যের নিয়ম আলাদা।
এর আগে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল। বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দেশটি। সে সময় ডেমোক্র্যাট কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা হয়েছিল। ডেমোক্র্যাট ভোটারদের কাছে পাঠানো ওই ইমেইলগুলো ট্রাম্পের সমর্থক কট্টরপন্থি গোষ্ঠী ‘প্রাউড বয়েজ’-এর ঠিকানা ব্যবহার করে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এসব ভুয়া ইমেইল পাঠানো হয়েছে বলে ভাষ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করে বলেছিল, ট্রাম্পের ক্ষতি করার জন্য ইরান আর তাকে সাহায্য করার চেষ্টায় রাশিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে জন র্যাটক্লিফের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে। তিনি বলেন, মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা এখনো সুরক্ষিত এবং স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছে। আপনাদের এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে যে প্রত্যেকের ভোট গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশনের একজন মুখপাত্র তাদের দেশের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক বিবৃতিতে মুখপাত্র আলিরেজা মিরইউসেফি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো আগ্রহ ইরানের নেই এবং (ইরানের) পছন্দের কোনো প্রার্থীও নেই।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে গোপনীয় ব্রিফিং পান। এর পরপরই তিনি জানান, ইরান ট্রাম্পের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, র্যাটক্লিফের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন তিনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইরানের এবং আরও বিভিন্ন ঘটনায় রাশিয়ার অভিপ্রায় আমার কাছে পরিষ্কার, তারা মূলত নির্বাচনের ওপর আমাদের আস্থা নষ্ট করতে চাইছে। এসব পদক্ষেপ নির্দিষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জাড ডিয়ার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের উদ্যোগ সক্রিয়তার সঙ্গে নিরীক্ষণ ও ব্যর্থ করে দিতে সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে ওই ইমেইলগুলো তদন্তনাধীন এবং কারা এসবের পেছনে আছে তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
শেয়ার করুন
| ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০

রাশিয়া ও ইরান, উভয়ই ৩ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক জন র্যাটক্লিফ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পর এবারের নির্বাচনে ইরানও যুক্ত হলো নতুন এ অভিযোগের তালিকায়।
রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১৩ দিন আগে দেশটির অন্যতম শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা র্যাটক্লিফ বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে কিছু ভোটার নিবন্ধনের তথ্য পৃথকভাবে ইরান ও রাশিয়ার হস্তগত হয়েছে।
বেশিরভাগ ভোটার নিবন্ধনের তথ্যই যেখানে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সেখানে এমন অভিযোগ কী তাৎপর্য বহন করে প্রসঙ্গে র্যাটক্লিফ বলেন, ইতিমধ্যেই সরকারি কর্মকর্তারা লক্ষ করেছেন ইরান ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটারদের আতঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে সাজানো ইমেইল পাঠিয়ে সামাজিক অস্থিরতা উসকে দেওয়ার এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রাশিয়া থেকে একই ধরনের কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। তবে তাদের কাছেও ভোটারদের তথ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে ভোটারদের তথ্য অনলাইনে পাওয়া যায়। কিছু রাজ্যে আবার আবেদন করতে হয়। একেক রাজ্যের নিয়ম আলাদা।
এর আগে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল। বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে দেশটি। সে সময় ডেমোক্র্যাট কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করা হয়েছিল। ডেমোক্র্যাট ভোটারদের কাছে পাঠানো ওই ইমেইলগুলো ট্রাম্পের সমর্থক কট্টরপন্থি গোষ্ঠী ‘প্রাউড বয়েজ’-এর ঠিকানা ব্যবহার করে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। অস্থিরতা তৈরির উদ্দেশ্যেই এসব ভুয়া ইমেইল পাঠানো হয়েছে বলে ভাষ্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কর্মকর্তাদের।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করে বলেছিল, ট্রাম্পের ক্ষতি করার জন্য ইরান আর তাকে সাহায্য করার চেষ্টায় রাশিয়া নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে জন র্যাটক্লিফের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার রে। তিনি বলেন, মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থা এখনো সুরক্ষিত এবং স্বাভাবিক অবস্থাতেই আছে। আপনাদের এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে যে প্রত্যেকের ভোট গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশনের একজন মুখপাত্র তাদের দেশের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এক বিবৃতিতে মুখপাত্র আলিরেজা মিরইউসেফি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো আগ্রহ ইরানের নেই এবং (ইরানের) পছন্দের কোনো প্রার্থীও নেই।
বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে গোপনীয় ব্রিফিং পান। এর পরপরই তিনি জানান, ইরান ট্রাম্পের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, র্যাটক্লিফের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন তিনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় ইরানের এবং আরও বিভিন্ন ঘটনায় রাশিয়ার অভিপ্রায় আমার কাছে পরিষ্কার, তারা মূলত নির্বাচনের ওপর আমাদের আস্থা নষ্ট করতে চাইছে। এসব পদক্ষেপ নির্দিষ্টভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জাড ডিয়ার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যেকোনো ধরনের হস্তক্ষেপের উদ্যোগ সক্রিয়তার সঙ্গে নিরীক্ষণ ও ব্যর্থ করে দিতে সরকারি সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে ওই ইমেইলগুলো তদন্তনাধীন এবং কারা এসবের পেছনে আছে তা এখনো পরিষ্কার নয় বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।