অর্থ সংকটে সেরাম
রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা
রূপান্তর ডেস্ক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
টিকা রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ জারির পর অর্থ সংকটে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। সংস্থাটি এখন টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য ভারত সরকারের কাছে তহবিল চাইছে। এমন এক অবস্থায় সেরাম অর্থ সংকটে পড়েছে যখন খোদ ভারতেই টিকার চাহিদা ব্যাপক। কারণ, ভারতে প্রতিদিনই রেকর্ডমাত্রায় মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার সেরামের তৈরি করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ওই বিধিনিষেধের পর এসআইআই রপ্তানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে সেরামের টিকার ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো যেমন সমস্যায় পড়েছে, তেমনি ভারতও টিকা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির নির্বাহী প্রধান আদর পুনাওয়ালা সম্প্রতি এনডিটিভিকে বলেন, ‘বিশ্বের এই টিকা প্রয়োজন এবং আমরা ভারতের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এই মুহূর্তে। প্রত্যেক ভারতীয়র যে টিকা প্রয়োজন তা সরবরাহও করতে পারছি না আমরা।’
সেরামের এখন টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত ৪০৮ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই পরিমাণ অর্থ সংস্থাটিকে কোনো বেসরকারি উৎস দিতে পারছে না। ফলে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। এ বিষয়ে পুনাওয়ালা বলেন, ‘অতিরিক্ত তহবিলের বিষয়টি আগে থেকে কখনই বাজেট বা পরিকল্পনাও করা হয়নি। কারণ, আমরা টিকা রপ্তানি করে সেখান থেকে প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে টিকা উৎপাদন করছিলাম। কিন্তু এখন সেটা ঘটছে না। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে হবে।’
এসআইআই কোভিশিল্ডের আওতায় দিনে বিশ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করছে। প্রতি ডোজে ১৫০ রুপি ভর্তুকিতে সংস্থাটি এই টিকা উৎপাদন করে আসছে। তবে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে কিন্তু সেরাম ভর্তুকির চেয়েও বেশি দামে তা বিক্রি করছে।
পুনাওয়ালা বলেন, ‘যে মূল্য ধার্য করা হয়েছে তা লাভজনক। যদিও এই লাভ দিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের মতো বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।’ সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও স্বীকার করেছেন, অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য তাদের ওপর ‘চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে ফোন কলও পাচ্ছেন। আদর পুনাওয়ালার ভাষায়, ‘আমাকে বিনীতভাবে সবার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে হয়েছে।’ বেশিরভাগ রাষ্ট্রপ্রধানই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সেরাম ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ উপার্জন করেছে টিকা বিক্রি করে। মহামারীর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বাড়তে শুরু করে। ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ সেরামের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকা কেনে।
শুধু অর্থ সংকটেই নয়, সেরাম কোভ্যাক্সকে প্রতিশ্রুত ২০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহ করতেও পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে কোভ্যাক্স প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেরামের টিকা রপ্তানি কমে যাওয়ায় ডব্লিউএইচও ওই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এমন সংকট সৃষ্টি পেছনে দায়ী ভারতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়া। দেশটি গত সপ্তাহে ৪৫-ঊর্ধ্ব বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষকে আগামী আগস্টের মধ্যে টিকা দেবে ভারত।
শেয়ার করুন
রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা
রূপান্তর ডেস্ক | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

টিকা রপ্তানির ওপর বিধিনিষেধ জারির পর অর্থ সংকটে পড়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কভিড-১৯ ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এসআইআই)। সংস্থাটি এখন টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য ভারত সরকারের কাছে তহবিল চাইছে। এমন এক অবস্থায় সেরাম অর্থ সংকটে পড়েছে যখন খোদ ভারতেই টিকার চাহিদা ব্যাপক। কারণ, ভারতে প্রতিদিনই রেকর্ডমাত্রায় মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।
গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার সেরামের তৈরি করা অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। ওই বিধিনিষেধের পর এসআইআই রপ্তানি কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে সেরামের টিকার ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো যেমন সমস্যায় পড়েছে, তেমনি ভারতও টিকা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির নির্বাহী প্রধান আদর পুনাওয়ালা সম্প্রতি এনডিটিভিকে বলেন, ‘বিশ্বের এই টিকা প্রয়োজন এবং আমরা ভারতের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এই মুহূর্তে। প্রত্যেক ভারতীয়র যে টিকা প্রয়োজন তা সরবরাহও করতে পারছি না আমরা।’
সেরামের এখন টিকা উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অতিরিক্ত ৪০৮ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এই পরিমাণ অর্থ সংস্থাটিকে কোনো বেসরকারি উৎস দিতে পারছে না। ফলে ভারত সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে তারা। এ বিষয়ে পুনাওয়ালা বলেন, ‘অতিরিক্ত তহবিলের বিষয়টি আগে থেকে কখনই বাজেট বা পরিকল্পনাও করা হয়নি। কারণ, আমরা টিকা রপ্তানি করে সেখান থেকে প্রাপ্ত তহবিল দিয়ে টিকা উৎপাদন করছিলাম। কিন্তু এখন সেটা ঘটছে না। আমাদের নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থা করতে হবে।’
এসআইআই কোভিশিল্ডের আওতায় দিনে বিশ লাখ ডোজ টিকা উৎপাদন করছে। প্রতি ডোজে ১৫০ রুপি ভর্তুকিতে সংস্থাটি এই টিকা উৎপাদন করে আসছে। তবে টিকা রপ্তানির ক্ষেত্রে কিন্তু সেরাম ভর্তুকির চেয়েও বেশি দামে তা বিক্রি করছে।
পুনাওয়ালা বলেন, ‘যে মূল্য ধার্য করা হয়েছে তা লাভজনক। যদিও এই লাভ দিয়ে নিজস্ব সক্ষমতা অর্জনের মতো বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়।’ সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও স্বীকার করেছেন, অন্যান্য দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য তাদের ওপর ‘চুক্তিগত বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে ফোন কলও পাচ্ছেন। আদর পুনাওয়ালার ভাষায়, ‘আমাকে বিনীতভাবে সবার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে হয়েছে।’ বেশিরভাগ রাষ্ট্রপ্রধানই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন বলেও জানান তিনি।
২০১৯-২০ অর্থবছরে সেরাম ৮০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ উপার্জন করেছে টিকা বিক্রি করে। মহামারীর পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বাড়তে শুরু করে। ব্রিটেন, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ সেরামের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টিকা কেনে।
শুধু অর্থ সংকটেই নয়, সেরাম কোভ্যাক্সকে প্রতিশ্রুত ২০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহ করতেও পারছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীনে কোভ্যাক্স প্রকল্পের আওতায় বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে সুলভ মূল্যে টিকা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেরামের টিকা রপ্তানি কমে যাওয়ায় ডব্লিউএইচও ওই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ করতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে, এমন সংকট সৃষ্টি পেছনে দায়ী ভারতে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাওয়া। দেশটি গত সপ্তাহে ৪৫-ঊর্ধ্ব বয়সীদের টিকা দেওয়া শুরু করেছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৩০০ মিলিয়ন মানুষকে আগামী আগস্টের মধ্যে টিকা দেবে ভারত।