অভিবাসন সংকটে ইউরোপ
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ইংলিশ চ্যানেলের ফ্রান্স উপকূলে গত বুধবার নৌকা ডুবে ২৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার পথে সাম্প্রতিককালে এটিকে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কার দায়িত্ব বহন করা উচিত তা নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। আগেই অভিবাসন ও ব্রেক্সিট ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা বিরাজ করছে। নতুন করে অভিবাসন সংকটে দোষারোপের রাজনীতি তাদের সম্পর্কের চরম অবনতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটা ইউরোপেই অভিবাসন সংকট প্রকট আকার নিয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পাচারকারী ও শরণার্থীরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছে। ফলে বিপর্যয়কর দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোনো দেশই কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নিজেদের দায়-দায়িত্ব আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের দোষারোপ করছে এবং সমস্যার দায় শুধু পাচারকারীদের ওপর দিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নিতে ফ্রান্সকে চিঠি দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তার এ চিঠির ভাষ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ক্যালেতে হতে যাওয়া বৈঠকে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে দেওয়া আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স। আগামীকাল রবিবারের ওই বৈঠকে যুক্তরাজ্য ছাড়াও বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান কমিশনকে আমন্ত্রণ জানায় ফ্রান্স। প্যাটেলের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হলেও বাকিদের নিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সৃষ্ট সংকট নিরসনে আলোচনা হবে বলে জানান ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল ডারমানো।
জনসন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে লেখা তার চিঠিতে গত বুধবারের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা এড়াতে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য যৌথ টহল চালু, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফ্রান্সে ফিরিয়ে নিতে দ্রুত একটি চুক্তি করাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর খোলা চিঠিকে অগ্রহণযোগ্য এবং অংশীদারদের মধ্যে আলোচনার পাল্টা হিসেবে বিবেচনা করছি আমরা। ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বাজে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের বন্ধুদেশ বেলজিয়াম, জার্মানি ও ব্রিটেনকে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না।’
তবে যুক্তরাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস প্রধানমন্ত্রীর চিঠির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘যেকোনো সংকটে বন্ধু ও প্রতিবেশীদের একসঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো দেশই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ একা সামাল দিতে পারবে না। ফ্রান্স তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আমি আশাবাদী।’
অভিবাসন নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই গতকাল শুক্রবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপগামী একটি নৌকা থেকে পাঁচ শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে দেশটির নৌবাহিনী। তাদের মধ্যে ১৩ নারী ও ৯৩ শিশু রয়েছে। বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেওয়ায় ভূমধ্যসাগরে ডুবতে বসেছিল নৌকাটি। এ সময় তিউনিসিয়ার নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে মিসর, বাংলাদেশ, সিরিয়া, সুদান, মরক্কো, ইরিত্রিয়ার নাগরিক রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের এক তীরে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া ও লিবিয়া; অন্যপাড়ে ইউরোপের ইতালি ও স্পেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাগ্য অন্বেষণে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ইতালি বা স্পেনে যাওয়ার জন্য সমুদ্রপথে পাড়ি জমাচ্ছেন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ইংলিশ চ্যানেলের ফ্রান্স উপকূলে গত বুধবার নৌকা ডুবে ২৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার পথে সাম্প্রতিককালে এটিকে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে কার দায়িত্ব বহন করা উচিত তা নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। আগেই অভিবাসন ও ব্রেক্সিট ইস্যুতে দেশ দুটির মধ্যে বৈরিতা বিরাজ করছে। নতুন করে অভিবাসন সংকটে দোষারোপের রাজনীতি তাদের সম্পর্কের চরম অবনতি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গোটা ইউরোপেই অভিবাসন সংকট প্রকট আকার নিয়েছে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পাচারকারী ও শরণার্থীরা অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে সাগর পাড়ি দিচ্ছে। ফলে বিপর্যয়কর দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু কোনো দেশই কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নিজেদের দায়-দায়িত্ব আড়াল করতে পরিকল্পিতভাবে পরস্পরের দোষারোপ করছে এবং সমস্যার দায় শুধু পাচারকারীদের ওপর দিচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফিরিয়ে নিতে ফ্রান্সকে চিঠি দেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তার এ চিঠির ভাষ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে ক্যালেতে হতে যাওয়া বৈঠকে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলকে দেওয়া আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয় ফ্রান্স। আগামীকাল রবিবারের ওই বৈঠকে যুক্তরাজ্য ছাড়াও বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও ইউরোপিয়ান কমিশনকে আমন্ত্রণ জানায় ফ্রান্স। প্যাটেলের আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হলেও বাকিদের নিয়ে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সৃষ্ট সংকট নিরসনে আলোচনা হবে বলে জানান ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল ডারমানো।
জনসন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে লেখা তার চিঠিতে গত বুধবারের মতো বেদনাদায়ক ঘটনা এড়াতে ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য যৌথ টহল চালু, অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফ্রান্সে ফিরিয়ে নিতে দ্রুত একটি চুক্তি করাসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এরপর ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর খোলা চিঠিকে অগ্রহণযোগ্য এবং অংশীদারদের মধ্যে আলোচনার পাল্টা হিসেবে বিবেচনা করছি আমরা। ব্রিটেনের অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বাজে। এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমাদের বন্ধুদেশ বেলজিয়াম, জার্মানি ও ব্রিটেনকে আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায় না।’
তবে যুক্তরাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস প্রধানমন্ত্রীর চিঠির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন, ‘যেকোনো সংকটে বন্ধু ও প্রতিবেশীদের একসঙ্গে কাজ করতে হয়। কোনো দেশই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চাপ একা সামাল দিতে পারবে না। ফ্রান্স তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আমি আশাবাদী।’
অভিবাসন নিয়ে টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই গতকাল শুক্রবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তিউনিসিয়া থেকে ইউরোপগামী একটি নৌকা থেকে পাঁচ শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে দেশটির নৌবাহিনী। তাদের মধ্যে ১৩ নারী ও ৯৩ শিশু রয়েছে। বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নেওয়ায় ভূমধ্যসাগরে ডুবতে বসেছিল নৌকাটি। এ সময় তিউনিসিয়ার নৌবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে মিসর, বাংলাদেশ, সিরিয়া, সুদান, মরক্কো, ইরিত্রিয়ার নাগরিক রয়েছে।
ভূমধ্যসাগরের এক তীরে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া ও লিবিয়া; অন্যপাড়ে ইউরোপের ইতালি ও স্পেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাগ্য অন্বেষণে তিউনিসিয়া ও লিবিয়া থেকে ইতালি বা স্পেনে যাওয়ার জন্য সমুদ্রপথে পাড়ি জমাচ্ছেন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী, যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই।