ওমিক্রন কতটা গুরুতর
উপসর্গ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রূপান্তর ডেস্ক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯ এবং তা অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে। ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে। যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে আরও দেখা গেছে, ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ৬টি। আর ওমিক্রনের ‘ইউনিক’ মিউটেশনের সংখ্যা এর অনেক বেশি মোট ২৬টি। এতেই বোঝা যায় একে মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে। ওমিক্রন ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশটির ডাক্তাররা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে খুবই মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অ্যানজেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে, কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়নি। তিনি আরও বলেন, হয়তো এর লক্ষণ অত্যন্ত মৃদু বলেই এই নতুন ধরনটি এতদিন শনাক্ত হয়নি। কোয়েৎজে বলেন, ‘প্রথম যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাই সে একজন পুরুষ, বয়স ছিল ৩০-এর কোঠায়। এবং সে দু’দিন ধরে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করার কথা বলছিল। তার সঙ্গে গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা। তবে কোনো কাশি ছিল না বা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলাও ছিল না। এরকম লক্ষণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে আমি তার টেস্ট করাই। তাতে সে এবং তার পরিবারের সবাই পজিটিভ ধরা পড়লেও পরিবারের অন্যরা ভালো ছিল। সেজন্যই আমি বলছি মৃদু উপসর্গ।’
কোয়েৎজি অবশ্য বলছেন, যদিও এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের উপসর্গ খুবই মৃদু বলে দেখা যাচ্ছে; কিন্তু দু সপ্তাহ পর হয়তো এ চিত্রটা বদলে যেতে পারে। ওমিক্রন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, ওমিক্রনে ঠিক কতটা গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে চিত্রটা এখনো পরিষ্কার নয়। একজন ডাক্তার জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে আক্রান্তদের লক্ষণ ছিল মৃদু। আরেকজন ডাক্তার বলেছেন, তিনি তরুণ-বয়স্ক কিছু রোগী দেখেছেন যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল। আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি সদস্য অ্যালেক্স সিগাল ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা ভুল হবে, তবে বলা যায় যে আমরা আগে যা দেখেছি, এটা তার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই।’
বাস্তবতা হচ্ছে, ওমিক্রন কতটা মারাত্মক রূপ নিতে পারে এ সম্পর্কে এখনো খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তার ফলাফল পেতে আরও দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এর মধ্যে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে ওমিক্রন-আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের খবর বের হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল, বা করতে যাচ্ছিল এমন অনেক দেশ এখন নতুন করে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। একইসঙ্গে মাস্ক পরা ও জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতেও নানা নির্দেশ কার্যকর করছে তারা।
শেয়ার করুন
উপসর্গ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
রূপান্তর ডেস্ক | ১ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্টটির বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.১.৫২৯ এবং তা অন্তত ৩২টি মিউটেশন (জিনগত গঠনের পরিবর্তন) ঘটিয়েছে। ওমিক্রন নিয়ে বিজ্ঞানীরা যে কারণে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন তা হলো এটি অত্যন্ত দ্রুত এবং সহজে ছড়াতে পারে এবং মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এড়াতে পারে। যার ফলে এর বিরুদ্ধে টিকা কম কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রাথমিক তথ্য প্রমাণে আরও দেখা গেছে, ওমিক্রনে পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মিউটেশন ছিল ১০টি আর বেটায় ৬টি। আর ওমিক্রনের ‘ইউনিক’ মিউটেশনের সংখ্যা এর অনেক বেশি মোট ২৬টি। এতেই বোঝা যায় একে মোকাবিলা করা কত কঠিন হতে পারে। ওমিক্রন ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ আফ্রিকায়। দেশটির ডাক্তাররা বলছেন, এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের সংক্রমণে রোগীদের মধ্যে খুবই মৃদু লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অ্যানজেলিক কোয়েৎজি বিবিসিকে বলেছেন, এখন পর্যন্ত সেদেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় সামান্য বৃদ্ধি ঘটেছে, কিন্তু ওমিক্রনে আক্রান্তদের অধিকাংশেরই হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দরকার হয়নি। তিনি আরও বলেন, হয়তো এর লক্ষণ অত্যন্ত মৃদু বলেই এই নতুন ধরনটি এতদিন শনাক্ত হয়নি। কোয়েৎজে বলেন, ‘প্রথম যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে পাই সে একজন পুরুষ, বয়স ছিল ৩০-এর কোঠায়। এবং সে দু’দিন ধরে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করার কথা বলছিল। তার সঙ্গে গায়ে ব্যথা, মাথাব্যথা। তবে কোনো কাশি ছিল না বা স্বাদ-গন্ধ হারিয়ে ফেলাও ছিল না। এরকম লক্ষণ আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হওয়াতে আমি তার টেস্ট করাই। তাতে সে এবং তার পরিবারের সবাই পজিটিভ ধরা পড়লেও পরিবারের অন্যরা ভালো ছিল। সেজন্যই আমি বলছি মৃদু উপসর্গ।’
কোয়েৎজি অবশ্য বলছেন, যদিও এখন পর্যন্ত ওমিক্রন আক্রান্তদের উপসর্গ খুবই মৃদু বলে দেখা যাচ্ছে; কিন্তু দু সপ্তাহ পর হয়তো এ চিত্রটা বদলে যেতে পারে। ওমিক্রন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন দেশ তড়িঘড়ি করে দক্ষিণ আফ্রিকায় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার আরও কয়েকজন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে ওয়াশিংটন পোস্ট জানাচ্ছে, ওমিক্রনে ঠিক কতটা গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে সে চিত্রটা এখনো পরিষ্কার নয়। একজন ডাক্তার জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে আক্রান্তদের লক্ষণ ছিল মৃদু। আরেকজন ডাক্তার বলেছেন, তিনি তরুণ-বয়স্ক কিছু রোগী দেখেছেন যাদের মাঝারি থেকে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল। আফ্রিকা হেলথ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ফ্যাকাল্টি সদস্য অ্যালেক্স সিগাল ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, ‘এখনই কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোটা ভুল হবে, তবে বলা যায় যে আমরা আগে যা দেখেছি, এটা তার চেয়ে খুব বেশি ভিন্ন বলে মনে হচ্ছে না। এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করবে এমন কোনো ইঙ্গিত এখনো নেই।’
বাস্তবতা হচ্ছে, ওমিক্রন কতটা মারাত্মক রূপ নিতে পারে এ সম্পর্কে এখনো খুব বেশি কিছু জানা যায়নি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, তারা যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তার ফলাফল পেতে আরও দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগবে। এর মধ্যে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে ওমিক্রন-আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্তের খবর বের হচ্ছে। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রান্ত বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল, বা করতে যাচ্ছিল এমন অনেক দেশ এখন নতুন করে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। একইসঙ্গে মাস্ক পরা ও জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতেও নানা নির্দেশ কার্যকর করছে তারা।