নয়া সম্পর্কে সৌদি-ইরান
রূপান্তর ডেস্ক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পরিচিত ইরান। ইরানকে শায়েস্তা করতে সৌদি আরব যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা শক্তিকেও কাছে টেনেছে। আজ মধ্যপ্রাচ্যে যত সমস্যা তার সিংহভাগের জন্য দায়ী বিদেশি শক্তি। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধে ইরানকে দমাতে ব্যাপক বিধ্বংসী পদক্ষেপ নিয়েছিল সৌদি আরব। অথচ সেই সৌদি আরবই এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) ইরানের প্রতিনিধি অফিস পুনরায় চালু করতে সৌদি আরবের জেদ্দায় তেহরানের তিনজন কূটনীতিক পৌঁছেছেন। গতকাল সোমবার ইরানের আধা সরকারি এক গণমাধ্যম ইরানের ওই তিন কূটনীতিকের সৌদি আরবে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
মুসলিম বিশে^র ৫৭ সদস্য দেশের এই সংগঠনের সদর দপ্তর সৌদি আরবে অবস্থিত। ছয় বছর আগে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা তৈরির পর জেদ্দায় নিজেদের ওআইসি প্রতিনিধি অফিস বন্ধ করে দেয় ইরান। অর্ধযুগ পর সেই অফিস পুনরায় চালু করতে ইরানি কূটনীতিকরা জেদ্দায় পৌঁছেছেন। বিশ্লেষকরা একে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ কমার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। যদিও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ বিশ্লেষকরা এই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন চেষ্টাকে সতর্কতার সঙ্গেই দেখছেন।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ তেহরানের কূটনীতিকদের জেদ্দায় পৌঁছানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জেদ্দায় ওআইসি প্রতিনিধি অফিস পুনরায় চালুর উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত তিন কূটনীতিক সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন। তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সৌদি আরবে দূতাবাস পুনরায় চালু করতেও প্রস্তুত আছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। তবে এটি সৌদি আরবের বাস্তব প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে।
২০১৬ সালে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে এবং মাশশাদ শহরের কনস্যুলেটে হামলা হওয়ার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে; যা শেষ পর্যন্ত ছিন্ন হয়ে যায়। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরবে শিয়া ধর্মীয় এক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে ওই হামলা হয়। কিন্তু গত বছরের এপ্রিলের দিকে ইরাকের মধ্যস্থতায় বাগদাদে আঞ্চলিক চিরবৈরী এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে চার দফায় প্রত্যক্ষ আলোচনা হয়। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই উদ্যোগে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটছে বলে জানায় ইরাক। পঞ্চম দফায় আবারও উভয় দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনায় বসার প্রস্তুতি চলছে।
গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সৌদি আরব আঞ্চলিক কিছু ইস্যুতে আলোচনার জন্য আগ্রহী। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের বোঝাপড়ার কেন্দ্রে আছে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় এবং সম্পর্ক কখন স্বাভাবিক হবে সেটি।’ দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক সব সংকটের সমাধানের জন্য উভয় দেশের ‘ঘনিষ্ঠ সংলাপ’ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সৌদি ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন চেষ্টায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ইয়েমেন। দেশটিতে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা এখন ক্ষমতায়। আর এই হুতিদের বিরুদ্ধেই দীর্ঘ লড়াইয়ে নেমেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। গত ছয় বছরের লড়াইয়ে ইয়েমেনের যেমন বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তেমনি সৌদি আরবই এই প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক কোনো দেশের পক্ষ থেকে আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এখন সৌদিতে হামলা হচ্ছে। আর এই হামলার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে সৌদির তেল উৎপাদন। উৎপাদনে ঘাটতি হওয়ার কারণে মিত্র রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপের মুখে আছে সৌদি আরব।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পরিচিত ইরান। ইরানকে শায়েস্তা করতে সৌদি আরব যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা শক্তিকেও কাছে টেনেছে। আজ মধ্যপ্রাচ্যে যত সমস্যা তার সিংহভাগের জন্য দায়ী বিদেশি শক্তি। কিছুদিন আগেও দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি যুদ্ধে ইরানকে দমাতে ব্যাপক বিধ্বংসী পদক্ষেপ নিয়েছিল সৌদি আরব। অথচ সেই সৌদি আরবই এখন ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) ইরানের প্রতিনিধি অফিস পুনরায় চালু করতে সৌদি আরবের জেদ্দায় তেহরানের তিনজন কূটনীতিক পৌঁছেছেন। গতকাল সোমবার ইরানের আধা সরকারি এক গণমাধ্যম ইরানের ওই তিন কূটনীতিকের সৌদি আরবে পৌঁছানোর খবর জানিয়েছে। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
মুসলিম বিশে^র ৫৭ সদস্য দেশের এই সংগঠনের সদর দপ্তর সৌদি আরবে অবস্থিত। ছয় বছর আগে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থা তৈরির পর জেদ্দায় নিজেদের ওআইসি প্রতিনিধি অফিস বন্ধ করে দেয় ইরান। অর্ধযুগ পর সেই অফিস পুনরায় চালু করতে ইরানি কূটনীতিকরা জেদ্দায় পৌঁছেছেন। বিশ্লেষকরা একে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ কমার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। যদিও মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক শীর্ষ বিশ্লেষকরা এই দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন চেষ্টাকে সতর্কতার সঙ্গেই দেখছেন।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ তেহরানের কূটনীতিকদের জেদ্দায় পৌঁছানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, জেদ্দায় ওআইসি প্রতিনিধি অফিস পুনরায় চালুর উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত তিন কূটনীতিক সৌদি আরবের ভিসা পেয়েছেন। তেহরানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, সৌদি আরবে দূতাবাস পুনরায় চালু করতেও প্রস্তুত আছে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান। তবে এটি সৌদি আরবের বাস্তব প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করছে।
২০১৬ সালে তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাসে এবং মাশশাদ শহরের কনস্যুলেটে হামলা হওয়ার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের মারাত্মক অবনতি ঘটে; যা শেষ পর্যন্ত ছিন্ন হয়ে যায়। সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরবে শিয়া ধর্মীয় এক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর সৌদি দূতাবাস ও কনস্যুলেটে ওই হামলা হয়। কিন্তু গত বছরের এপ্রিলের দিকে ইরাকের মধ্যস্থতায় বাগদাদে আঞ্চলিক চিরবৈরী এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মাঝে চার দফায় প্রত্যক্ষ আলোচনা হয়। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার এই উদ্যোগে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটছে বলে জানায় ইরাক। পঞ্চম দফায় আবারও উভয় দেশের কর্মকর্তাদের আলোচনায় বসার প্রস্তুতি চলছে।
গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরআব্দুল্লাহিয়ান আলজাজিরাকে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সৌদি আরব আঞ্চলিক কিছু ইস্যুতে আলোচনার জন্য আগ্রহী। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের বোঝাপড়ার কেন্দ্রে আছে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় এবং সম্পর্ক কখন স্বাভাবিক হবে সেটি।’ দীর্ঘমেয়াদি আঞ্চলিক সব সংকটের সমাধানের জন্য উভয় দেশের ‘ঘনিষ্ঠ সংলাপ’ জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সৌদি ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন চেষ্টায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ইয়েমেন। দেশটিতে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা এখন ক্ষমতায়। আর এই হুতিদের বিরুদ্ধেই দীর্ঘ লড়াইয়ে নেমেছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। গত ছয় বছরের লড়াইয়ে ইয়েমেনের যেমন বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তেমনি সৌদি আরবই এই প্রথমবারের মতো আঞ্চলিক কোনো দেশের পক্ষ থেকে আক্রমণের শিকার হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই এখন সৌদিতে হামলা হচ্ছে। আর এই হামলার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে সৌদির তেল উৎপাদন। উৎপাদনে ঘাটতি হওয়ার কারণে মিত্র রাষ্ট্রগুলো ছাড়াও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপের মুখে আছে সৌদি আরব।