সমরে প্রস্তুত ইউক্রেন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
বাইনোকুলার চোখে মুইকোলা চেকম্যান তাকিয়ে আছেন ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র সেতুটির দিকে। তার ভাষ্যে, ‘এবারই প্রথম এই উপদ্বীপ হামলার শিকার হচ্ছে ব্যাপারটি এমন নয়। ক্রিমিয়ার ওপর দিয়ে অনেক যুদ্ধ গেছে।’ চেকম্যান হলেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একজন আলোকচিত্রী। একটি সামরিক চৌকি থেকে তিনি রাশিয়ার গতিবিধির দিকে নজর রাখছেন।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন প্রদেশের চোনহার গ্রামটিতে এখন জনমানুষ বলতে শুধুই সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গ্রামটিতে প্রবেশের মুখে নীল ও হলুদ পতাকা দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সীমানা চিহ্ন দেওয়া আছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশ করতে হলে, এ গ্রামটি দিয়েই প্রবেশ করতে হবে। আর সেই প্রবেশমুখে ভারী অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ওদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি মিলিশিয়ারা প্রতিদিনই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অতর্কিতে এসব হামলার কারণে পূর্বাঞ্চলে এখন সাধারণ মানুষের বসবাস খুব কমে গেছে।
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কিয়েভ। যুদ্ধের জন্য যা যা দরকার তার প্রায় সব আয়োজনই গুছিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। এমন একসময় তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে যখন আবহাওয়াও বৈরী। তীব্র ঠাণ্ডা পরিস্থিতির মধ্যে বন্দুক হাতে তাকিয়ে থাকা ইউক্রেনিয়ান সৈনিকদের চোখে এখন শুধুই আতঙ্ক। আইভান আরেফিয়েভ নামে এক সৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভøাদিমির পুতিন তাদের অধিকৃত ক্রিমিয়া ও ডনবাসের জন্য একটি ভূমি করিডোর তৈরি করতে চাইছে। আমরা তাদের সেটা করতে দেব না। যাই ঘটুক না কেন, আমরা যেকোনো হামলার জন্য প্রস্তুত।’
বসে নেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীও। রাতের আঁধারে রাশিয়ার ট্যাংক ও ভারী যন্ত্রপাতির শব্দ শোনা যাচ্ছে ইউক্রেন সীমানা থেকে। যেকোনো মুহূর্তে ভূমি, সমুদ্র বা আকাশপথে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন সীমান্তে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার রুশ সেনা মোতায়েন অবস্থায় আছে। দক্ষিণে ইউক্রেনের বন্দর বার্দইয়ানস্ক ও মারিওপোল থেকে খুব বেশি দূরে নেই রুশ বাহিনী। হামলা হলে শুরুতেই এ দুটি বন্দর চলে যেতে পারে মস্কোর হাতে। আর গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বন্দর মস্কোর হস্তগত হলে, ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ধাক্কা হয়ে যাবে। এ দুই বন্দর ধরেই ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য থেকে বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রবেশ করে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত ২০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহযোগিতা প্যাকেজের প্রথম চালান ইউক্রেন পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার ইউক্রেনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এ সামরিক সহযোগিতা কিয়েভ পৌঁছল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন কিয়েভ সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের আশঙ্কা, ইউক্রেন দখল করতে মস্কোর এ সেনা মোতায়েন। তবে রাশিয়া কোনো সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করার কথা অস্বীকার করেছে। ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহযোগিতা প্যাকেজটি অনুমোদন করে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ফেইসবুকে লিখেছে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে এমন সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে একদিকে উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলছে, অন্যদিকে অস্ত্র সহায়তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যও ইউক্রেনকে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

বাইনোকুলার চোখে মুইকোলা চেকম্যান তাকিয়ে আছেন ক্রিমিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার সংযোগ রক্ষাকারী একমাত্র সেতুটির দিকে। তার ভাষ্যে, ‘এবারই প্রথম এই উপদ্বীপ হামলার শিকার হচ্ছে ব্যাপারটি এমন নয়। ক্রিমিয়ার ওপর দিয়ে অনেক যুদ্ধ গেছে।’ চেকম্যান হলেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর একজন আলোকচিত্রী। একটি সামরিক চৌকি থেকে তিনি রাশিয়ার গতিবিধির দিকে নজর রাখছেন।
ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় খেরসন প্রদেশের চোনহার গ্রামটিতে এখন জনমানুষ বলতে শুধুই সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গ্রামটিতে প্রবেশের মুখে নীল ও হলুদ পতাকা দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সীমানা চিহ্ন দেওয়া আছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে প্রবেশ করতে হলে, এ গ্রামটি দিয়েই প্রবেশ করতে হবে। আর সেই প্রবেশমুখে ভারী অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ওদিকে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশপন্থি মিলিশিয়ারা প্রতিদিনই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। অতর্কিতে এসব হামলার কারণে পূর্বাঞ্চলে এখন সাধারণ মানুষের বসবাস খুব কমে গেছে।
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত কিয়েভ। যুদ্ধের জন্য যা যা দরকার তার প্রায় সব আয়োজনই গুছিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। এমন একসময় তাদের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে যখন আবহাওয়াও বৈরী। তীব্র ঠাণ্ডা পরিস্থিতির মধ্যে বন্দুক হাতে তাকিয়ে থাকা ইউক্রেনিয়ান সৈনিকদের চোখে এখন শুধুই আতঙ্ক। আইভান আরেফিয়েভ নামে এক সৈনিক দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘ভøাদিমির পুতিন তাদের অধিকৃত ক্রিমিয়া ও ডনবাসের জন্য একটি ভূমি করিডোর তৈরি করতে চাইছে। আমরা তাদের সেটা করতে দেব না। যাই ঘটুক না কেন, আমরা যেকোনো হামলার জন্য প্রস্তুত।’
বসে নেই রাশিয়ার সেনাবাহিনীও। রাতের আঁধারে রাশিয়ার ট্যাংক ও ভারী যন্ত্রপাতির শব্দ শোনা যাচ্ছে ইউক্রেন সীমানা থেকে। যেকোনো মুহূর্তে ভূমি, সমুদ্র বা আকাশপথে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী। ইউক্রেন সীমান্তে ইতিমধ্যেই ১০ হাজার রুশ সেনা মোতায়েন অবস্থায় আছে। দক্ষিণে ইউক্রেনের বন্দর বার্দইয়ানস্ক ও মারিওপোল থেকে খুব বেশি দূরে নেই রুশ বাহিনী। হামলা হলে শুরুতেই এ দুটি বন্দর চলে যেতে পারে মস্কোর হাতে। আর গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি বন্দর মস্কোর হস্তগত হলে, ইউক্রেনের জন্য অনেক বড় ধাক্কা হয়ে যাবে। এ দুই বন্দর ধরেই ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে খাদ্য থেকে বিভিন্ন দ্রব্যাদি প্রবেশ করে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুত ২০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহযোগিতা প্যাকেজের প্রথম চালান ইউক্রেন পৌঁছেছে। গতকাল শনিবার ইউক্রেনে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এ তথ্য জানিয়েছে। ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় এক লাখ রুশ সেনা মোতায়েন নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে এ সামরিক সহযোগিতা কিয়েভ পৌঁছল। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন কিয়েভ সফর করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্রদের আশঙ্কা, ইউক্রেন দখল করতে মস্কোর এ সেনা মোতায়েন। তবে রাশিয়া কোনো সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করার কথা অস্বীকার করেছে। ডিসেম্বরে ইউক্রেনকে ২০০ মিলিয়ন ডলার সামরিক সহযোগিতা প্যাকেজটি অনুমোদন করে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ফেইসবুকে লিখেছে, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীকে এমন সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে বৈঠকে একদিকে উত্তেজনা প্রশমনের কথা বলছে, অন্যদিকে অস্ত্র সহায়তা পাঠিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যও ইউক্রেনকে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পাঠিয়েছে।