শত্রুদের পরীক্ষায় বাইডেন
মিত্ররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় বসেছেন এক বছর প্রায়। এর মধ্যেই একাধিক জটিল বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সংকটগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে তার শত্রুরা একজোট হয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রে। এই চাপের একটাই কারণ, যুক্তরাষ্ট্রকে যে করেই হোক বৈশ্বিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া।
গত সোমবার বাইডেন ক্রেমলিনকে প্রতিহত করতে পূর্ব ইউরোপে সাড়ে আট হাজার সৈন্যকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছেন।
পশ্চিম ইউরোপ থেকে ওই সৈন্যদের সরিয়ে পূর্বে মোতায়েন করেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের এমন পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য কিছু না। কারণ পুতিন ইতিমধ্যেই এক প্রকার জিম্মি হিসেবে রেখেছেন ইউক্রেনকে। ইউক্রেনকে ঘিরে পশ্চিমা সম্প্রসারণবাদ রুখে দেওয়া পুতিন এখন ইউরোপের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
বিশ্বের অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রাখছে। একই সঙ্গে আরও কিছু আঞ্চলিক সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ যা দীর্ঘ বছর ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল, তা এখন জেগে উঠতে শুরু করেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দীর্ঘদিনের শাসক যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর আগের মতো ক্ষমতা নেই। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করে, আর চীন যদি তাইওয়ানে অভিযান চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দুই দিক সামাল দেওয়া সহজ হবে না। সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা ‘পরাশক্তিদের সংঘাত’ হিসেবে দেখছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার আবুধাবিতে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি থেকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হুতিদের কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াই জারি রাখতে চাইছে। কিন্তু এতে ঝুঁকিতে পড়ছে গোটা অঞ্চলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। ওয়াশিংটনের সামনে আরেক ভয় উত্তর কোরিয়ার চেয়ারম্যান কিম জং উন। উত্তর কোরিয়া যদি একবার দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তাহলে অপরিসীম ক্ষতি হবে ওয়াশিংটনের। এমন ঝুঁকি নিতে চাইবেন না বাইডেন। পুতিন ভালো করেই জানেন যে, বাইডেন একাধিক শিবিরে চাপের মুখে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে সবচেয়ে খুশি হবেন শি চিনপিং। কারণ বিশ্ব মোড়ল হওয়ার চীনের যে খায়েশ আছে তা পূরণের কাছে চলে যাবেন চিনপিং।
বাইডেন শুধু বাইরে নন, দেশের ভেতরেও চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর অধিকাংশ এখনো বহাল আছে। যদিও বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এসেই তিনি এসব বাতিল করবেন। সেই চেষ্টা যে বাইডেন করেননি তা বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপ বাতিলের চেষ্টা করতেই বাইডেনকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তাকে আটকে দিচ্ছে আদালত। এসব মিলিয়ে বাইডেনের ওপর চাপ এতটাই বাড়ছে যে, তিনি খেই হারিয়ে ফেলছেন। গত সোমবার হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিককে গালাগালি দিতে দেখা যায় তাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ নজিরবিহীন।
শেয়ার করুন
মিত্ররাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে
রূপান্তর ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় বসেছেন এক বছর প্রায়। এর মধ্যেই একাধিক জটিল বৈশ্বিক সংকটের মোকাবিলা করতে হচ্ছে তাকে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সংকটগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বিরুদ্ধে তার শত্রুরা একজোট হয়ে চাপ প্রয়োগ করছেন বৈশ্বিক রাজনীতির ক্ষেত্রে। এই চাপের একটাই কারণ, যুক্তরাষ্ট্রকে যে করেই হোক বৈশ্বিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়া।
গত সোমবার বাইডেন ক্রেমলিনকে প্রতিহত করতে পূর্ব ইউরোপে সাড়ে আট হাজার সৈন্যকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রেখেছেন।
পশ্চিম ইউরোপ থেকে ওই সৈন্যদের সরিয়ে পূর্বে মোতায়েন করেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের এমন পদক্ষেপ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য কিছু না। কারণ পুতিন ইতিমধ্যেই এক প্রকার জিম্মি হিসেবে রেখেছেন ইউক্রেনকে। ইউক্রেনকে ঘিরে পশ্চিমা সম্প্রসারণবাদ রুখে দেওয়া পুতিন এখন ইউরোপের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
বিশ্বের অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিবাদ ক্রমশ বাড়ছে। তাইওয়ান ইস্যুতে চীন ক্রমশ যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রাখছে। একই সঙ্গে আরও কিছু আঞ্চলিক সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ যা দীর্ঘ বছর ধরে সুপ্ত অবস্থায় ছিল, তা এখন জেগে উঠতে শুরু করেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দীর্ঘদিনের শাসক যুক্তরাষ্ট্রের এখন আর আগের মতো ক্ষমতা নেই। রাশিয়া যদি ইউক্রেনে আক্রমণ করে, আর চীন যদি তাইওয়ানে অভিযান চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে দুই দিক সামাল দেওয়া সহজ হবে না। সম্ভাব্য এমন পরিস্থিতিকে বিশ্লেষকরা ‘পরাশক্তিদের সংঘাত’ হিসেবে দেখছেন।
গত কয়েক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার আবুধাবিতে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি থেকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হুতিদের কয়েকটি ড্রোন ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াই জারি রাখতে চাইছে। কিন্তু এতে ঝুঁকিতে পড়ছে গোটা অঞ্চলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা। ওয়াশিংটনের সামনে আরেক ভয় উত্তর কোরিয়ার চেয়ারম্যান কিম জং উন। উত্তর কোরিয়া যদি একবার দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তাহলে অপরিসীম ক্ষতি হবে ওয়াশিংটনের। এমন ঝুঁকি নিতে চাইবেন না বাইডেন। পুতিন ভালো করেই জানেন যে, বাইডেন একাধিক শিবিরে চাপের মুখে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে সবচেয়ে খুশি হবেন শি চিনপিং। কারণ বিশ্ব মোড়ল হওয়ার চীনের যে খায়েশ আছে তা পূরণের কাছে চলে যাবেন চিনপিং।
বাইডেন শুধু বাইরে নন, দেশের ভেতরেও চ্যালেঞ্জের মুখে আছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর অধিকাংশ এখনো বহাল আছে। যদিও বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, ক্ষমতায় এসেই তিনি এসব বাতিল করবেন। সেই চেষ্টা যে বাইডেন করেননি তা বলা যাবে না। কিন্তু প্রতিটি পদক্ষেপ বাতিলের চেষ্টা করতেই বাইডেনকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে তাকে আটকে দিচ্ছে আদালত। এসব মিলিয়ে বাইডেনের ওপর চাপ এতটাই বাড়ছে যে, তিনি খেই হারিয়ে ফেলছেন। গত সোমবার হোয়াইট হাউজে এক সাংবাদিককে গালাগালি দিতে দেখা যায় তাকে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এমন আচরণ নজিরবিহীন।