তুরস্কের চাপে ন্যাটো
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০
সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার পরও রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমলে তুরস্কের সঙ্গে বাকি সদস্যদের সংঘাত বেড়েই চলেছে। কামাল আতাতুর্কের আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রের অনেক মৌলিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন এরদোয়ান। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র থেকে শুরু করে ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আমূল বদলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির পথে বাধা তারই আরেক লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যাটোর সম্মিলিত অবস্থানের বদলে তুরস্ক নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। এজন্য দেশটি ন্যাটোর বদলে রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনছে। যার ফলে দেশটির সঙ্গে ন্যাটো ও ইউরোপের সংঘাত স্বার্থ বড়ছে। কুর্দি জনগোষ্ঠীর ওপর তুরস্কের ‘নিপীড়ন’ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তুরস্ক দেশের মধ্যে ও সিরিয়ায় কুর্দিদের শত্রু মনে করে। সিরিয়া সীমান্তে এবং সে দেশের মধ্যে প্রায়ই কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সঙ্গে তুর্কি সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়। ২০১৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনী ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর অন্য অনেক দেশের মতো ফিনল্যান্ড ও সুইডেনও তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল। তাই ন্যাটোর সব সদস্য দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হলেও তুরস্ক লাগাতার আপত্তি জানিয়েছে যাচ্ছে। আর সে কারণে গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বিরুদ্ধে তার দেশ ও সিরিয়ায় কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তার অভিযোগও এনেছেন। তার ভাষ্য, তুরস্কের পিকেকে ও সিরিয়ার ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে এই দুই দেশের ন্যাটোয় যোগদানের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে তার দেশ। সমস্যা দূর করতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রতিনিধিদল তুরস্কে গিয়ে এরদোয়ানের উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তুরস্কের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে এ দুই দেশের উদ্যোগ দেখতে চান তিনিও। তুরস্ক ফিনল্যান্ডে যে ২৮ জন ও সুইডেনে ১২ জনকে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাদের প্রত্যর্পণের দাবি করেন কালিন। এদিকে ২০২৩ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন অনেক কমে যাওয়ায় তিনি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়টিকে হাতিয়ার করছেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। টার্কিশ ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুসেইন বাগচি বলেন, এরদোয়ান পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু একটা করে দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সে ক্ষেত্রে সাফল্য এলে তিনি আগাম নির্বাচনেরও ডাক দিতে পারেন। তবে তুরস্ক যেভাবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বর্তমান ‘দুর্বলতা’র ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, ন্যাটোর অনেক সদস্য তা ভালো চোখে দেখছে না। আপাতত সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর ওপর জোর দিচ্ছে সেই দেশগুলো। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, তার দেশ এ দুই দেশকে ন্যাটোয় আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। নরওয়ে সফরে গিয়ে গত বুধবার তিনি আরও বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য না হয়েও বহুকাল ধরেই ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর মহড়ায় অংশ নিয়ে আসছে। এবারও ‘ডিফেন্ডার ইউরোপ’ ও ‘সুইফট রেসপন্স’ নামের দুটো সামরিক মহড়ায় ২০টি দেশের প্রায় ১৮ হাজার সেনা অংশ নিয়েছেন। জার্মানি, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়াসহ আটটি দেশে এসব মহড়া হয়েছে। এছাড়া আগামী মাসে পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোতে ‘রামস্টাইন লিগ্যাসি’ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ দেশের সেনারা এতে অংশ নেবেন।
শেয়ার করুন
রূপান্তর ডেস্ক | ২৭ মে, ২০২২ ০০:০০

সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার পরও রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমলে তুরস্কের সঙ্গে বাকি সদস্যদের সংঘাত বেড়েই চলেছে। কামাল আতাতুর্কের আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রের অনেক মৌলিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন এরদোয়ান। দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র থেকে শুরু করে ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আমূল বদলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। সম্প্রতি ন্যাটোতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির পথে বাধা তারই আরেক লক্ষণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যাটোর সম্মিলিত অবস্থানের বদলে তুরস্ক নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। এজন্য দেশটি ন্যাটোর বদলে রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনছে। যার ফলে দেশটির সঙ্গে ন্যাটো ও ইউরোপের সংঘাত স্বার্থ বড়ছে। কুর্দি জনগোষ্ঠীর ওপর তুরস্কের ‘নিপীড়ন’ বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তুরস্ক দেশের মধ্যে ও সিরিয়ায় কুর্দিদের শত্রু মনে করে। সিরিয়া সীমান্তে এবং সে দেশের মধ্যে প্রায়ই কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সঙ্গে তুর্কি সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়। ২০১৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনী ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর অন্য অনেক দেশের মতো ফিনল্যান্ড ও সুইডেনও তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল। তাই ন্যাটোর সব সদস্য দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হলেও তুরস্ক লাগাতার আপত্তি জানিয়েছে যাচ্ছে। আর সে কারণে গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বিরুদ্ধে তার দেশ ও সিরিয়ায় কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তার অভিযোগও এনেছেন। তার ভাষ্য, তুরস্কের পিকেকে ও সিরিয়ার ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে এই দুই দেশের ন্যাটোয় যোগদানের বিরোধিতা চালিয়ে যাবে তার দেশ। সমস্যা দূর করতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রতিনিধিদল তুরস্কে গিয়ে এরদোয়ানের উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তুরস্কের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে এ দুই দেশের উদ্যোগ দেখতে চান তিনিও। তুরস্ক ফিনল্যান্ডে যে ২৮ জন ও সুইডেনে ১২ জনকে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাদের প্রত্যর্পণের দাবি করেন কালিন। এদিকে ২০২৩ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এরদোয়ানের প্রতি সমর্থন অনেক কমে যাওয়ায় তিনি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়টিকে হাতিয়ার করছেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। টার্কিশ ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুসেইন বাগচি বলেন, এরদোয়ান পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু একটা করে দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সে ক্ষেত্রে সাফল্য এলে তিনি আগাম নির্বাচনেরও ডাক দিতে পারেন। তবে তুরস্ক যেভাবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বর্তমান ‘দুর্বলতা’র ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, ন্যাটোর অনেক সদস্য তা ভালো চোখে দেখছে না। আপাতত সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর ওপর জোর দিচ্ছে সেই দেশগুলো। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেন, তার দেশ এ দুই দেশকে ন্যাটোয় আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে। নরওয়ে সফরে গিয়ে গত বুধবার তিনি আরও বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য না হয়েও বহুকাল ধরেই ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর মহড়ায় অংশ নিয়ে আসছে। এবারও ‘ডিফেন্ডার ইউরোপ’ ও ‘সুইফট রেসপন্স’ নামের দুটো সামরিক মহড়ায় ২০টি দেশের প্রায় ১৮ হাজার সেনা অংশ নিয়েছেন। জার্মানি, পোল্যান্ড, লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, নর্থ মেসিডোনিয়াসহ আটটি দেশে এসব মহড়া হয়েছে। এছাড়া আগামী মাসে পোল্যান্ড ও বাল্টিক দেশগুলোতে ‘রামস্টাইন লিগ্যাসি’ মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ দেশের সেনারা এতে অংশ নেবেন।