তাইওয়ানে হামলা করবে চীন?
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
রূপান্তর ডেস্ক | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০
যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পর তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ানের চারপাশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে পেইচিং। তাইপের আকাশে ছোড়া হচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। একাধিক যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে চীনা সেনাবাহিনী। পাশাপাশি তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীও চূড়ান্ত সতর্কতার মধ্যে আছে। উভয়পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে সংঘাত শুরু হতে পারে।
পেলোসির সফরকে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভয়াবহ, বেপরোয়া এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন উসকানি’ হিসেবে দেখছে পেইচিং। এমন অবস্থায় চীন তাইওয়ানে হামলা করবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের এ মহড়ার কারণে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বেড়েছে। জাপান বলছে, চীনা বাহিনীর ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের সমুদ্রসীমার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে (ইইজেড) পড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট (আসিয়ান) সতর্ক করে বলেছে, যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে হিসাবনিকাশে ভুল হওয়া, গুরুতর বিরোধ, সরাসরি সংঘাত এবং অনিশ্চিত পরিণতির শঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে তিনি চীনের ‘একতরফা ও অযৌক্তিক সামরিক কর্মকাণ্ড’ নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, তাইওয়ান সংঘাতে উসকানি দেবে না, তবে দৃঢ়ভাবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষা দেবে।
চীনের উপকূল থেকে তাইওয়ানের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তাইওয়ানের চারপাশে ছয়টি অঞ্চলে একই সঙ্গে সাগরে তাজা গোলার মহড়া এবং বিমান মহড়া চলছে। সিসিটিভির তথ্যানুযায়ী, বোমারু বিমানসহ শতাধিক যুদ্ধবিমান মহড়ায় অংশ নিয়েছে। চীনের মহড়াকে তাইওয়ানের পানিসীমার লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। একে তাইওয়ান অঞ্চলের সাগর ও আকাশপথ অবরোধের শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহড়ার প্রথম দিনে তাইওয়ানের চারপাশের জলসীমায় চীনা রকেট থেকে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর এমন ঘটনা এবারই প্রথম। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, অঞ্চলটি লক্ষ্য করে ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এগুলো ডংফেং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে শনাক্ত হয়েছে। জাপান বলছে, ইইজেডে কমপক্ষে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাইওয়ান কর্র্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ভ্রমণকারী জাহাজ ও বিমানকে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে বলেছে। তাইপেতে তাইওয়ান বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মহড়া চলায় এক-দুই দিনের জন্য তাইওয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার এবং এশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে যেসব বিশেষজ্ঞ মতপ্রকাশ হচ্ছে তাতে দেখা গেছে, এ মহড়াকে ‘পুনর্মিলনের মহড়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এর একটি প্রতিবেদনে চীনা মূল ভূখণ্ডের সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিংকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এখন যে অভিযানের মহড়া চলছে, তা ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধাভিযানে পরিণত করা হতে পারে। বিভিন্ন গুঞ্জন সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কেউই চায় না তাইওয়ানে যুদ্ধ হোক। অন্তত শিগগিরই যুদ্ধ বাধুক, তা তারা চায় না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক বোন্নি গ্লেজার বলেন, ‘চীনের রেডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানকে সতর্ক করতে চাইছে চীন।’
শেয়ার করুন
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ
রূপান্তর ডেস্ক | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০

যুক্তরাষ্ট্রের হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপে সফরের পর তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা বাড়ছে। তাইওয়ানের চারপাশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে পেইচিং। তাইপের আকাশে ছোড়া হচ্ছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। একাধিক যুদ্ধবিমান ও জাহাজ মোতায়েন করেছে চীনা সেনাবাহিনী। পাশাপাশি তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীও চূড়ান্ত সতর্কতার মধ্যে আছে। উভয়পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে যেকোনো মুহূর্তে সংঘাত শুরু হতে পারে।
পেলোসির সফরকে চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভয়াবহ, বেপরোয়া এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন উসকানি’ হিসেবে দেখছে পেইচিং। এমন অবস্থায় চীন তাইওয়ানে হামলা করবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের এ মহড়ার কারণে অঞ্চলটিতে উত্তেজনা বেড়েছে। জাপান বলছে, চীনা বাহিনীর ছোড়া বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তাদের সমুদ্রসীমার এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে (ইইজেড) পড়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট (আসিয়ান) সতর্ক করে বলেছে, যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে হিসাবনিকাশে ভুল হওয়া, গুরুতর বিরোধ, সরাসরি সংঘাত এবং অনিশ্চিত পরিণতির শঙ্কা রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ওই বিবৃতিতে তিনি চীনের ‘একতরফা ও অযৌক্তিক সামরিক কর্মকাণ্ড’ নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, তাইওয়ান সংঘাতে উসকানি দেবে না, তবে দৃঢ়ভাবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষা দেবে।
চীনের উপকূল থেকে তাইওয়ানের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, তাইওয়ানের চারপাশে ছয়টি অঞ্চলে একই সঙ্গে সাগরে তাজা গোলার মহড়া এবং বিমান মহড়া চলছে। সিসিটিভির তথ্যানুযায়ী, বোমারু বিমানসহ শতাধিক যুদ্ধবিমান মহড়ায় অংশ নিয়েছে। চীনের মহড়াকে তাইওয়ানের পানিসীমার লঙ্ঘন উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে তাইওয়ান। একে তাইওয়ান অঞ্চলের সাগর ও আকাশপথ অবরোধের শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মহড়ার প্রথম দিনে তাইওয়ানের চারপাশের জলসীমায় চীনা রকেট থেকে বেশ কয়েকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালের পর এমন ঘটনা এবারই প্রথম। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, অঞ্চলটি লক্ষ্য করে ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এগুলো ডংফেং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে শনাক্ত হয়েছে। জাপান বলছে, ইইজেডে কমপক্ষে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে। তাইওয়ান কর্র্তৃপক্ষ ওই এলাকায় ভ্রমণকারী জাহাজ ও বিমানকে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে বলেছে। তাইপেতে তাইওয়ান বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, মহড়া চলায় এক-দুই দিনের জন্য তাইওয়ানের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়ান এয়ার এবং এশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে যেসব বিশেষজ্ঞ মতপ্রকাশ হচ্ছে তাতে দেখা গেছে, এ মহড়াকে ‘পুনর্মিলনের মহড়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। এর একটি প্রতিবেদনে চীনা মূল ভূখণ্ডের সামরিক বিশ্লেষক সং ঝংপিংকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, এখন যে অভিযানের মহড়া চলছে, তা ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাতের ক্ষেত্রে সরাসরি যুদ্ধাভিযানে পরিণত করা হতে পারে। বিভিন্ন গুঞ্জন সত্ত্বেও বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র কেউই চায় না তাইওয়ানে যুদ্ধ হোক। অন্তত শিগগিরই যুদ্ধ বাধুক, তা তারা চায় না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান মার্শাল ফান্ডের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক বোন্নি গ্লেজার বলেন, ‘চীনের রেডলাইনকে চ্যালেঞ্জ করে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ও তাইওয়ানকে সতর্ক করতে চাইছে চীন।’