
মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক হতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনায় (ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ-ইউপিআর) এ আহ্বান জানানো হয়েছে। জেনেভায় অনুষ্ঠিত হওয়া ইউপিআর-এ যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন, ব্রিটেন, কানাডা, জার্মানি ও বেলজিয়ামের পক্ষ থেকে ভারতের মানবাধিকার বিষয়ে আগাম প্রশ্ন জমা হয়েছে। এতে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি যৌন নিপীড়ন এবং ধর্মীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা। মানবাধিকার পরিষদে নিয়োজিত যুক্তরাষ্ট্রের দূত মিশেল টেইলর বলেন, ‘আমাদের সুপারিশ হলো, ভারত যেন মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবৈধ কর্মকাণ্ড (প্রতিরোধ) আইনসহ (ইউএপিএ) একই ধরনের আইনগুলোর প্রয়োগ কমিয়ে দেয়।’ ইউএপিএ হলো ভারতের একটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন’ যার আওতায় কর্র্তৃপক্ষ কাউকে সন্দেহের ভিত্তিতে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিতে পারে এবং জামিন না দিয়ে মাসের পর মাস আটকে রাখতে পারে। গত ৫ আগস্ট ভারত জাতিসংঘে মানবাধিকার সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে মানবাধিকার রক্ষা এবং তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
গত প্রায় ১৮ মাস ধরে মিয়ানমারে জান্তা ও গণতন্ত্রপন্থী বেসামরিক জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আসিয়ান) সম্মেলন। এতে যোগ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও এই সম্মেলনে সংক্ষিপ্ত সময় দিতে উড়ে এসেছেন নমপেনে। কিন্তু দূর-দূরান্তের শীর্ষ ব্যক্তিরা এলেও সম্মেলনে নেই মিয়ানমার। চীনের গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত জান্তাকে সম্মেলন থেকে বাইরেই রাখতে চায় আসিয়ান। অথচ এবারের সম্মেলনে অনুপস্থিত থেকেও আলোচনার কেন্দ্রেই আছে মিয়ানমার।
গতকাল শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি জনগণের জন্য একটি দুঃস্বপ্ন ও পুরো অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।’
জান্তাকে ‘অবিলম্বে’ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারকে ঘিরে থাকা ‘দুঃস্বপ্ন’ বন্ধের এটিই একমাত্র পথ।
এদিকে মিসরের জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শনিবার নমপেনে নেমে তার সঙ্গে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন মিয়ানমারের ওপর অব্যাহত নিষেধাজ্ঞা ও চাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে কীভাবে জান্তাকে গণতান্ত্রিক মিয়ানমারের দিকে হাঁটতে বাধ্য করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করতে এই সম্মেলনের সুযোগকে কাজে লাগাতে চান।’
এর আগে গেল শুক্রবার মিয়ানমার সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে জান্তাকে ‘একঘরে’ করার সিদ্ধান্ত নেয় আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। গত শুক্রবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে আসিয়ানের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেখানে আরও বলা হয়Ñ এক বছর আগে মিয়ানমারে শান্তি স্থাপন সংক্রান্ত যে ৫ প্রস্তাব দিয়েছিল আসিয়ান, সেসব বাস্তবায়নে আর কত সময় লাগতে পারে তা ক্ষমতাসীন সেনা সরকারকে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
আসিয়ানের অন্যতম সদস্য রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতেœা মারসুদি গত সপ্তাহে মিয়ানমারে অশান্তির জন্য সরাসরি জান্তাকে দায়ী করেছিলেন। শুক্রবারের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আজ যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো, তা জান্তার জন্য একটি কঠিন বার্তা। একে হুমকি হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে।’
সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবশ্য আসিয়ানের এই সিদ্ধান্তে আপত্তি জানানো হয়েছে। পাল্টা এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শান্তি স্থাপনে আসিয়ানের প্রস্তাবনা ‘বাস্তবসম্মত নয়’। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এরপর দেশ শাসন করছেন জান্তারা। এরপর থেকেই একের পর এক এলাকা থেকে আসছে জান্তার হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের খবর। রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদের কারাদণ্ড।
এই জান্তাকে সুপথে আনতে আসিয়ানের পদক্ষেপ খুব বেশিদূর অগ্রসর হবেÑ এমন কোনো আশা দেখছে না আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ডভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ফর্টিফাই রাইটসের কর্মকর্তা প্যাট্রিক ফোংসাথোর্ন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসিয়ান কিন্তু মিয়ানমারকে এখনো বহিষ্কার করেনি। যদি এমন কোনো পদক্ষেপ এই সংস্থা নিত, তাহলে সেটি হতো জান্তার ওপর
বড় ধরনের আঘাত।’
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফলাফল করায় ফুরফুরে মেজাজে আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অংশ নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন বলছে, ঘর সামলানোর পর এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রভাব সমুন্নত রাখতে মনোযোগী বাইডেন। এই লক্ষ্যে পাঁচ দিনের এশিয়া সফরে বের হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার মিসরে কপ-২৭ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পরপরই আসিয়ান সম্মেলনের উদ্দেশ্যে উড়াল দেন বাইডেন।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে কম্বোডিয়ায় পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে পৌঁছান তিনি। ২০১৭ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এ সম্মেলনে জো বাইডেন মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
ধারণা করা হচ্ছে, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও প্রযুক্তিগত উত্থান মোকাবিলায় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সমর্থন পেতেই এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বাইডেন। এদিকে পাঁচ দিনের এ সফরে আগামী সোমবার জি-২০ সম্মেলনে জো বাইডেন প্রথমবারের মতো চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সশরীরে সাক্ষাৎ করবেন।
শনিবার হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, শি-বাইডেন বৈঠকে বাইডেন চীনা প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করবেন যে, উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগত অস্ত্র উন্নয়নের প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রকে এই অঞ্চলে তার সামরিক উপস্থিতি আরও বাড়ানোর দিকে নিয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা, পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করছে পিয়ংইয়ং। তবে ওয়াশিংটনের বিশ্বাস, চীন ও রাশিয়ার পক্ষে এমন পরিকল্পনা থেকে তাদের সরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেছেন, বাইডেন চীনা প্রেসিডেন্টকে বলবেন যে, উত্তর কোরিয়া শুধু যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের জন্যই নয়, বরং দেশটি এই অঞ্চলের সামগ্রিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি।
বাণিজ্যযুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, তাইওয়ান ইস্যুতে চীনকে ‘কোনো ধরনের মৌলিক ছাড়’ দিতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরও বলেন, সোমবার নিশ্চিতভাবেই শি চিনপিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য ও তাইওয়ান নিয়ে আলোচনা হবে। তবে অবশ্যই আমরা প্রতিযোগিতা চাই, সংঘাত নয়।
একই দিনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, পেইচিং ওয়াশিংটনের এ প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। পারস্পরিক সম্মান, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক সহযোগিতা বজায় রাখতে চীন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
পাকিস্তানকে ১৯২টি পুরাকীর্তি ফেরত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হয়, সুপ্রাচীন কুষাণ যুগের গান্ধারা বৌদ্ধ সভ্যতার এসব প্রতœসম্পদ পাকিস্তান থেকে লুট করে চালান দেওয়া হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ভারতীয়-আমেরিকান একজন শিল্প-সামগ্রী ব্যবসায়ীর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্তের পর পাকিস্তান থেকে চুরি করে আনা পুরাকীর্তিগুলো উদ্ধার হয়। এই শিল্পকর্মগুলোর দাম ৩.৪ মিলিয়ন বা ৩৪ লাখ ডলার। ফেরত আসা প্রতœসম্পদের মধ্যে রয়েছেÑ গান্ধারের আলোকিত বুদ্ধমূর্তি এবং প্রায় ৫ হাজার ৫০০ বছরের পুরনো মেহেরগড় পুতুল।
পাকিস্তানের পেশোয়ারের প্রাদেশিক প্রতœতত্ত্ব বিভাগের গবেষক বখত মুহম্মদ জানান, পুরাকীর্তিগুলো গান্ধার বৌদ্ধসভ্যতার অন্তর্গত। এগুলোতে গ্রিক ও স্থানীয় শিল্পের মিশ্রণ রয়েছে যে এই ধারার শিল্পকর্ম বেশিরভাগই কুষাণ যুগের। কুষাণ রাজবংশের যারা খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম তিন শতাব্দীতে উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার কিছু অংশ শাসন করেছিল, এই জিনিসগুলো সেই সময়ের হবে।
নিউইয়র্কে পাচার করার আগে পাকিস্তানের একটি প্রতœতাত্ত্বিক স্থান থেকে পুরাকীর্তিগুলো লুট করা হয়েছিল। চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের কর্র্তৃপক্ষ সেগুলো জব্দ করে। এর আগ পর্যন্ত আর্ট অব দ্য পাস্টের এজেন্টদের ভাড়া করা স্টোরেজ ইউনিটে সেগুলো রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানের মেহেরগড়ের প্রতœতাত্ত্বিক স্থানটি ১৯৭৪ সালে আবিষ্কৃত হয় এবং পরবর্তীকালে সেখানে ব্যাপক লুটপাট হয়। নিউইয়র্কের ম্যানহাটন জেলা অ্যাটর্নির অফিস জানিয়েছে, সুভাষ কাপুর নামে এক ভারতীয়- আমেরিকানের কাছ থেকে ১৮৭টি নিদর্শন উদ্ধার করা হয়েছে; যা তাকে ‘বিশ্বের অন্যতম প্রতœসম্পদ পাচারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কাপুর এবং তার সহযোগীরা লুট করা পুরাকীর্তি ম্যানহাটনে পাচার করেছিল এবং কাপুর তার গ্যালারি ‘আর্ট অব দ্য পাস্টের’ মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করছিল। ২০০১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কাপুরচক্র ২৫শ’র বেশি শিল্পকর্ম পাচার করার সঙ্গে জড়িত। এসব শিল্পকর্মের মূল্য আনুমানিক ১৪৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। পুরাকীর্তি বিক্রির অভিযোগে কাপুরসহ তার পাঁচ সহযোগী ভারতের কারাগারে আটক রয়েছে। গত সপ্তাহে দেশটির একটি বিশেষ আদালত এই ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজাও দিয়েছে। এতে কাপুরের ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়।
ইরানে চলমান বিক্ষোভে মাস দেড়েক আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে এক দিনেই কয়েক ডজন মানুষ নিহত হয়। সেই ‘রক্তাক্ত শুক্রবার’ স্মরণে গত শুক্রবার ফের বিক্ষোভ করেছে হাজারো ইরানি। নিহতদের স্মরণে গত শুক্রবার জেহেদানে কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভের একটি ভিডিও টুইটারে পোস্ট করেছে আন্দোলনকারীদের খবরাখবর দেওয়ার জন্য সুপরিচিত অ্যাকাউন্ট ১৫০০ তাসবির। ইরানি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্মম দমনপীড়নের জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে দিনটি ‘রক্তাক্ত শুক্রবার’ নামে পরিচিতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সেপ্টেম্বরের ওইদিন সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী জেহেদানে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৬৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়। কঠোর পোশাক বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে কুর্দি নারী মাশা আমিনিকে গ্রেপ্তারের পর নীতি পুলিশের হেফাজতে তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেপ্টেম্বরে ইরানজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ, যা সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।