
ভারতের ৭৪তম প্রজাতন্ত্র দিবস আজ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রটিতে ১৯৫০ সালের এই দিনে কার্যকর হয় সংবিধান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেও জনগণের কাক্সিক্ষত শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এদিন। জনগণের ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা তথা ভারতীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপনের এ দিনটি যেন বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে এলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য। তার দল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে ভারত জুড়ে সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গেল বছর এপ্রিলে দেশের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অত্যন্ত কড়া চিঠি দেন ১০৮ জন সাবেক আমলা। চিঠিতে সাবেক আমলারা বলেন, ‘ঘৃণার উন্মত্ততায় ধসের যে ছবি আমরা দেখছি, তাতে শুধু মুসলিম ও অন্য সংখ্যালঘুদের বলি দেওয়া হচ্ছে তাই নয়, দেশের সংবিধানকেও হত্যা করা হচ্ছে।’ কারণ সংবিধান অনুযায়ী ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এরই মধ্যে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিতর্ক নতুন করে উসকে দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোশ্চেন’। তাও এমন এক সময়ে যখন বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বহুল পরিচিত দেশটি যখন সংবিধান প্রণয়ন স্মরণে বরাবরের মতো মহাসমারোহে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করছে। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে তৈরি বিবিসির তথ্যচিত্রকে কেন্দ্র করে ভারতে রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ওই দাঙ্গার সময় মোদি পশ্চিমাঞ্চলীয় এ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেই দাঙ্গায় সরকারি হিসাবেই এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলমান। সেই কলঙ্কিত ঘটনার ওপর তৈরি করা বিবিসির তথ্যচিত্রে মোদির ভূমিকা নিয়ে আবার উত্তপ্ত হচ্ছে ভারতের রাজনীতি। বহুদলীয় গণতন্ত্রের দেশটিতে প্রজাতন্ত্র দিবসকে কেন্দ্র করে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধীরা তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনী করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এদিকে মোদি সরকার এ বিব্রতকর তথ্যচিত্রটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ ও ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিয়েছে। গত শনিবার এক টুইটে ভারত সরকারের উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্ত জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের অধীনে জরুরি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশটির সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই তথ্যচিত্র প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ জারি করেছে। এমনকি তথ্যচিত্রের কোনো ক্লিপও শেয়ার করা যাবে না।
কিন্তু তাতে বিজেপির মাথাব্যথা কমছে না। তথ্যচিত্রের প্রথম কিস্তি সামলাতে বেশ বিপাকে ক্ষমতাসীনরা। এ তথ্যচিত্রকে ‘প্রোপাগান্ডা’ বা অপপ্রচার হিসেবে অভিহিত করেছে মোদির দল বিজেপি। আর কয়েক বছরে ভারতের রাজনীতিতে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা দলটিকে জব্দ করতে তথ্যচিত্রটিকে সুযোগ হিসেবে দেখছে বিরোধীরা। বিশেষ করে প্রজাতন্ত্র দিবসকে সামনে রেখে শিক্ষাঙ্গনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে এ তথাকথিত ‘নিষিদ্ধ’ তথ্যচিত্রটি প্রদর্শনের তোড়জোড় চলছে। এমনকি ভারতের রাজধানী দিল্লির জওয়াহেরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থি ছাত্র ইউনিয়নের একদল শিক্ষার্থী সিদ্ধান্ত নেন গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ তথ্যচিত্র দেখবেন তারা। এ জন্য একটি প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। কিন্তু এতে বাধা সৃষ্টি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। তারা জানায়, ‘এ ধরনের প্রদর্শনী ক্যাম্পাসের স্থিতিশীলতার নষ্ট করবে।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা যেন বড় পর্দায় এ তথ্য চিত্রটির প্রদর্শন করতে না পারেন সে জন্য ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয় এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সেখানে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেন তারা একসঙ্গে এটি দেখবেনই। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাফেটারিয়ায় গিয়ে সবাই যার যার স্মার্টফোন ও ল্যাপটপে একসঙ্গে বসে এটি দেখেন। তবে ওই সময় তাদের ওপর পাথর নিক্ষেপ করে আরএসএসের ছাত্র সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবা সংঘ (এবিভিপি)। তাদের মধ্যে দুজনকে আটকও করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ পরিস্থিতিতে দেশটির বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদরা সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন অন্য উপায়ে এটি দেখেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী ও লোকসভার সদস্য মহুয়া মৈত্র তথ্যচিত্রের লিংক শেয়ার করে লিখেছেন, ‘লজ্জার বিষয় যে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশের রাজাধিরাজ ও তার সভাসদরা এতটা অনিরাপদ বোধ করছেন। দুঃখিত, আমি কোনো সেন্সরশিপ মেনে চলতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হইনি।’
দীর্ঘ বিতর্ক-সমালোচনার পর অবশেষে ইউক্রেনে অত্যাধুনিক ট্যাংক পাঠাতে যাচ্ছে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশগুলোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে অনেকদিন ধরেই যুদ্ধের ট্যাংক চাইছে। তাদের দাবি, ইউক্রেনের যে এলাকাগুলোতে রাশিয়ার সেনা ঢুকে বসে আছে, তাদের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অত্যাধুনিক ট্যাংকের প্রয়োজন। কিন্তু জার্মানি এতদিন পর্যন্ত ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক ট্যাংক দিতে সম্মত হচ্ছিল না। জার্মানির তৈরি ট্যাংক পোল্যান্ডের হাতেও আছে। পোল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরেই সেই ট্যাংক ইউক্রেনকে দিতে চায়। কিন্তু এই ট্যাংক দিতে হলে ন্যাটো এবং জার্মানির ছাড়পত্র লাগবে। এতদিন তা-ও মিলছিল না। তবে এর মধ্যে গত মঙ্গলবার জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াসের সঙ্গে বৈঠক হয় ন্যাটো প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গের। সেখানে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। তারপরেই ইউক্রেনকে জার্মানির লেপার্ড-টু ট্যাংক দেওয়ার খবর প্রকাশিত হলো। ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ইউক্রেনকে এক কোম্পানি অর্থাৎ ১৪টি লেপার্ড দেবে জার্মানি। জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও এবার অত্যাধুনিক এম-ওয়ান আব্রাম ট্যাংক দিতে রাজি হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবারই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার কথা রয়েছে।
ইউক্রেনে ট্যাংক সরবরাহে জার্মানি-যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তথা মিত্রদের চাপে ছিল। আলোচনায় এতদিন জার্মানির একটি শর্ত ছিল, তা হলো যদি যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আব্রাম ট্যাংক দেয় তাহলে তারা লেপার্ড দেবে। এতদিন যুক্তরাষ্ট্র আব্রাম ট্যাংক পরিচালনা কঠিন, এজন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন এই অজুহাত দেখিয়ে ট্যাংক দিতে রাজি হচ্ছিল না। আর জার্মানির অজুহাত ছিল তারা এই যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি সামরিকভাবে জড়াতে চায় না। জার্মানির আশঙ্কা, এতে ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সরাসরি জড়িয়ে যাচ্ছে। এদিকে ইউক্রেনে এসব ট্যাংক পাঠানো হলে তা যুদ্ধের স্থায়িত্ব বাড়াবে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। কিয়েভের মিত্ররা যুদ্ধকে ‘বৈশ্বিক বিপর্যয়ের’ দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে রুশ কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র ট্যাংক পাঠালে তা হবে ‘আরেকটি নির্লজ্জ উসকানি’, গতকাল বুধবার এমনটাই বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আনাতোলি আন্তোনভ। দূতাবাসের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটন যে আমাদের কৌশলগত পরাজয় দেখতে চাইছে, তা স্পষ্ট। ন্যাটোর অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র যেভাবে ধ্বংস হয়েছে পশ্চিমা ট্যাংকগুলো সেভাবেই ধ্বংস হবে।’
ট্রান্স ফ্যাট সেবনের কারণে বিশ্বের পাঁচ বিলিয়ন মানুষ এখন মারাত্মক হৃদরোগের ঝুঁকির সম্মুখীন। এ ছাড়া এ কারণে কয়েক বছরে গড়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ অকালে প্রাণ হারিয়েছে। খাদ্যসামগ্রীতে কারখানায় তৈরি ট্রান্স ফ্যাটের বিপদ নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ট্রান্স ফ্যাট হলো একধরনের অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড। শিল্প কারখানায় প্রস্তুত করা ট্রান্স ফ্যাট অনেকটা স্লো পয়জোনিংয়ের মতো কাজ করে। ভেজিটেবল অয়েলে বিপজ্জনক ট্রান্স ফ্যাট থাকে। খাবারে ব্যবহৃত এই তেল হৃৎপিণ্ডের ধমনি বন্ধ করে দেয়। এটি প্রায়ই প্যাকেটজাত খাবার, যেমন চিপস; বেকড খাবার যেমন কুকিজ, কেক, ভোজ্য তেলসহ আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়।
ডব্লিউএইচও বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে কারখানায় তৈরি এই ফ্যাটি অ্যাসিড নির্মূল করার জন্য ২০১৮ সালে একটি আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনেক দেশই তাতে সাড়া দেয়নি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রেয়েসুস বলেন, ‘মিসর, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া এমন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, যারা এ ধরনের নীতি তৈরি করেনি; বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট থেকে হৃদরোগের ঝুঁকি সেখানে অনেক বেশি।’
একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেন, ট্রান্স ফ্যাট একটি বিষাক্ত রাসায়নিক, যা মানুষকে হত্যা করে। এটি খাওয়া উচিত নয়। অনেক দেশের খাদ্য প্রস্তুতকারীরা এই ট্রান্স ফ্যাট ব্যবহার করে। কারণ এটি দীর্ঘ সময় টেকে ও সস্তা। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ট্রান্স ফ্যাটের প্রধান উৎস হাইড্রোজেনেটেড তেলের উৎপাদন বা ব্যবহারে বিশ^ব্যাপী নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত অথবা খাবারে মোট চর্বির ১০০ গ্রামে ট্রান্স ফ্যাটের পরিমাণ মাত্র দুই গ্রাম সীমাবদ্ধ করা উচিত।’ ট্রান্স ফ্যাটের কারণে হৃদরোগ এবং মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে এমন ১৬টি দেশের মধ্যে ৯টি এখনো এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, ভুটান, ইকুয়েডর, মিসর, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ কোরিয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক পরিচালক ফ্রান্সেস্কো ব্রাঙ্কা এই দেশগুলোকে ‘জরুরি পদক্ষেপ’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউক্রেনে হামলা করার পর রাশিয়ার ওপর নানা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলও। অথচ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আবার রাশিয়ার তেলই কিনছে যুক্তরাজ্য তবে একটু ঘুরিয়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি টেলিগ্রাফের বরাতে গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাজ্য রাশিয়ার তেল কিনছে ভারতের মাধ্যমে। বিপি এবং শেলের মতো প্রতিষ্ঠান যেগুলো যুক্তরাজ্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে সেগুলো ভারতের বেসরকারি তেল শোধনাগার থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর ভারতের বেসরকারি কোম্পানি থেকে ১০০ লাখ ব্যারেল ডিজেল ও অন্যান্য পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করেছে যুক্তরাজ্য। অথচ ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য মাত্র ৪০ লাখ ব্যারেল তেল ভারত থেকে আমদানি করেছিল। রাজনীতি বিশেষজ্ঞ লুইস উইলসন টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য ভারতের কাছ থেকে যেসব তেল কিনেছে সেগুলো রাশিয়ার জ্বালানির অংশ। তবে তা ‘অবৈধ’ নয় বলে মনে করেন তিনি। কারণ এ তেল ভারতে পরিশোধন করা হয়।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।