
গড়িমসির পর ইউক্রেনের বহুল আকাক্সিক্ষত লেপার্ড ও আব্রাম দিতে সম্মত হয়েছে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র। আপাতত জার্মানি ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড-টু দেবে। এ ছাড়া পোল্যান্ডের মতো অন্য দেশকেও জার্মানি তাদের তৈরি লেপার্ড ইউক্রেনে পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। এরপর কানাডাও ইউক্রেনে চারটি লেপার্ড দেওয়ার কথা জানিয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র দেবে ৩১টি এম-১ আব্রাম। এ বিষয়ে গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিশ্চয়তা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্য চ্যালেঞ্জার্স-টু কিয়েভে পাঠাবে বলে জানিয়েছে। ফ্রান্সও পাঠাতে যাচ্ছে এএমএক্স-ফিফটি সিক্স লিক্লার্ক ট্যাংক।
রাশিয়ার হামলার শুরু থেকেই পশ্চিমাদের কাছে এসব ভারী অস্ত্র চাইছে কিয়েভ। স্থলভাগে ক্রমেই অগ্রসরমাণ রুশ বাহিনীকে রুখতে মরিয়া হয়ে পশ্চিমাদের ট্যাংকগুলো চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। অবশেষে যুদ্ধের ১১ মাস পর তার আহ্বানে সাড়া দিয়েছে পশ্চিম। তবে কি যুদ্ধের মোড় ঘুরে যাবে? রুশরা পশ্চিমের ট্যাংকে পিছু হটবে? এরকম প্রশ্ন আসছে। রুশ বার্তা সংস্থা আরটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিন শেষে যুদ্ধের ময়দানে এসব অস্ত্র কতটা কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে, সেটিই আসল প্রশ্ন। মনে রাখার মতো আরেকটি বিষয় হলো, আধুনিক ট্যাংক প্রতিরোধব্যবস্থার কাছে সব ট্যাংকই অরক্ষিত। আরটির বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, অদক্ষ ক্রু এসব ট্যাংক পরিচালনা করার কারণে ফলাফল নেতিবাচক হতে পারে। তাই ট্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য ক্রুদের অবশ্যই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ট্যাংক মেরামতকারী ইউনিট, স্থানান্তরকারী দলকে ট্যাংক পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের বিশ্লেষণ বলছে, মিত্রদের ট্যাংক ইউক্রেন যুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলবে বা মোড় ঘুরিয়ে দেবে এমনটা আশা করা একটু অতিরিক্ত হয়ে যাবে। আবার এসব ট্যাংক শুধু পেলেই চলবে না কিয়েভকে এসব অত্যাধুনিক ও সূক্ষ্ম সমরাস্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহারের বাস্তবতাও বুঝতে হবে। আপাতত ইউক্রেন শুধু ট্যাংকের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, রণক্ষেত্রে এসব ট্যাংক পৌঁছতে লাগবে কমপক্ষে এক মাস। এদিকে ট্যাংকের খবরে ভীষণ ক্ষিপ্ত রাশিয়া। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ইউক্রেনে তীব্র হামলা শুরু করেছে রুশ বাহিনী। ইউক্রেনকে পশ্চিমাদের উন্নত ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণার পরপরই এ হামলা শুরু হয়। যুদ্ধ শুরুর বছরখানেকের মাথায় এসে মিত্রদের কাছ থেকে এসব ট্যাংক পাওয়ার ঘোষণা ইউক্রেনের জন্য অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে দেশটি এতেই খুশি নয়, এবার ইউক্রেনের চাওয়া অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান।
দুই দশক ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর একক অভিযানে অধিকৃত পশ্চিম তীরে এক দিনে সবচেয়ে বেশি ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থি নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এক অভিযানে এমন হতাহতের ঘটনা ঘটল। জেনিনে শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে এক দিনে এতজনের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিন-ইসরায়েলের মধ্যে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গতকাল শুক্রবার গাজা উপত্যকা থেকে রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনের হামাস। জবাবে গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
গত বছর পর্যন্ত জেনিনে ইসরায়েলের অভিযান বাড়ছিল এবং নতুন প্রজন্মের সশস্ত্র ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে প্রায়ই তাদের সংঘর্ষ হচ্ছিল। অনেকেই বর্তমান পরিস্থিতিকে ২০০২ সালের এপ্রিলের দ্বিতীয় ‘ইন্তিফাদা’ বা ‘ফিলিস্তিনি জাগরণ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। ওই সময় ইসরায়েল একটি পূর্ণ সামরিক অভিযান চালায়, যা জেনিনের যুদ্ধ নামে পরিচিত। ওই যুদ্ধে অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি ও ২৩ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়। এর জেরে ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলে অনেকবার আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। জেনিন শিবিরের বড় অংশই তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে ফিলিস্তিনিরাও নিজেদের সংগঠিত করার চেষ্টা শুরু করে। গত বসন্তে ব্রেক দ্য ওয়েভ নামে অপারেশন শুরু করে ইসরায়েল। বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীও মারা যায়, যাদের মধ্যে রাদ হাজেমও ছিলেন। হাজেম তেল আবিবের একটি বারে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ফলে জেনিন আবার আলোচনায় আসে এবং ইসরায়েলের অভিযান বেড়ে যায়। এসব ঘটনায় জাতিসংঘ ও কিছু মানবাধিকার সংস্থা বরাবরই ইসরায়েলকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য অভিযুক্ত করে আসছে। সেখানকার একরকম অবরুদ্ধ এলাকাগুলোতে ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষের শাসনক্ষমতাও সীমিত হয়ে এসেছে। তারা এরই মধ্যে জেনিন ও নাবলুসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষ নব্বইয়ের অসলো শান্তি প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকলেও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আব্বাসের দল ফাতাহ পার্টির প্রবল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে হামাস। এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি কর্র্তৃপক্ষ ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করছে। যার অর্থ হলো, তারাই কিছু তথ্য আদান-প্রদান করছে। যদিও প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেছেন, জেনিনে বৃহস্পতিবার হামলার কারণে নিরাপত্তা সমন্বয় তারা বন্ধ করে দেবেন।
মূলত জেনিন ও নাবলুসের নতুন প্রজন্মের যোদ্ধারা মাহমুদ আব্বাসের সরকারকে প্রত্যাখ্যান করছে। তারা সশস্ত্র হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে। তারা নিজেদের ‘জেনিন ব্যাটালিয়ন’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। নাবলুসে তাদের গোপন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পরিচিতি পেয়েছে ‘লায়নস ডেন’ হিসেবে। এসব যোদ্ধা জর্ডান থেকে চোরাচালান হয়ে আসা, না হয় ইসরায়েলি ঘাঁটি থেকে চুরি বা বিক্রি হওয়া অস্ত্র ব্যবহার করছে।
ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা এক সাংবাদিক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থা। এসব লোক লড়াই করতে চায়। এমনকি প্রাণ দিতেও পিছপা নয়। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলছে, তারা বেসামরিক নাগরিক ও সৈন্যদের ওপর হামলা প্রতিরোধ করছে। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টের দাবি, ‘জিহাদিদের’ টেরর স্কোয়াড ইসরায়েলে হামলা করতে চাইছে। এর মধ্যেই জেনিনে এ রক্তক্ষয়ী হামলায় পরিস্থিতি আরও সংঘাতপূর্ণ হয়ে ওঠার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাশিয়ার বিরোধিতা উপেক্ষা করে ‘কৃষ্ণ সাগরের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত ইউক্রেনের বন্দরনগরী ওদেসাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দিল ইউনেস্কো। গত বুধবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থাটির বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটি এ স্বীকৃতি দেয়। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই আলোচনায় এসেছে ওদেসা। সমুদ্রবন্দরের কারণে পূর্ব ইউরোপের অন্যতম বাণিজ্যিক নগর এটি। ‘কৃষ্ণসাগরের মুক্তা’ হিসেবে পরিচিত বন্দরনগরীটির আছে হাজার বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। শুধু ইউক্রেনেরই নয়, প্রাচীন রুশ সাম্রাজ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এ শহর। ১৬২ বর্গকিলোমিটারের ওদেসার গুরুত্ব রয়েছে গোটা পূর্ব ইউরোপেই। ওদেসার প্রাচীন নাম হাডজিবেই। প্রচলিত আছে, ১৮ শতকের শেষদিকে রুশ সম্রাজ্ঞী ‘ক্যাথরিন দ্য গ্রেট’ ওদেসাকে রাশিয়ার সামুদ্রিক প্রবেশদ্বার হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৮১০ সালে নির্মিত অপেরা হাউজ ওদেসার অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা।
বন্দরনগরীটির আরেক নিদর্শন পটেমকিন সিঁড়ি। সোভিয়েত আমলে নির্মিত সের্গেই আইজেনস্টেইনের নির্বাক চলচ্চিত্র ব্যাটেলশিপ পটেমকিনের কারণে ব্যাপক পরিচিতি পায় বিশাল আকৃতির এই সিঁড়ি। পরে সিনেমার নামেই এর নামকরণ করা হয়। ওদেসা মিউজিয়াম অব ফাইন আর্টস এবং ওদেসা মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্টসহ আরও বেশ কিছু স্থাপনা রয়েছে শহরটিতে। চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে বেশ কয়েকবার আঘাত পেয়েছে ওদেসা। যুদ্ধের শুরু থেকেই ওদেসাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে ইউক্রেনের সরকার। এবার সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ওদেসাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিল ইউনেস্কো। ফলে এখন থেকে ওদেসার ইচ্ছাকৃত ক্ষতিসাধন হবে ইউনেস্কোর নীতিমালা পরিপন্থী। ইউনেস্কোর মহাসচিব আদ্রে আজুলে বলেন, ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত হিসেবে এখন থেকে বিবেচিত হবে শহরটি। এর সুদীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কারণেই এ স্বীকৃতি। এখন থেকে ওদেসার সুরক্ষায় নানা আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে। আমাদের সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে যেখানে ১৯৪টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। কাজেই ইচ্ছাকৃতভাবে বিশ্ব ঐতিহ্যের ক্ষতিসাধন হবে নীতিমালা পরিপন্থী।’ যদিও ইউনেস্কোর এ সিদ্ধান্তের ঘোর বিরোধিতা করেছে রাশিয়া। তাদের দাবি, পশ্চিমা প্রভাবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গান গেয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন সংস্থাটিতে নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি।
সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হাইতির রাজধানী পোর্ট অ প্রিন্স। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় ১৪ পুলিশ কর্মকর্তা নিহতের পর রাজপথে নেমেছে খোদ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। গত বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকালে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ ও টায়ার জ্বালানোর মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, পুলিশ সদস্যদের মৃত্যুর পরও সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এর প্রতিবাদে তারা প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরির বাসভবন এবং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘেরাও করেন। চলমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক স্থাপনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরু থেকেই বিভিন্ন থানায় হামলা চালাচ্ছে অপরাধীরা। ন্যাশনাল পুলিশ জানিয়েছে, শুধু গত বুধবারই মারা গেছেন তাদের ৭ সদস্য। দেশটির মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুসারে, হেনরি এরিয়েল ক্ষমতায় আসার পর থেকে কমপক্ষে ৭৮ জন পুলিশ সদস্যের প্রাণ গেছে।
থাইল্যান্ডে অনলাইন পোস্টে রাজতন্ত্রের অমর্যাদা করার অভিযোগে এক ব্যক্তির ২৮ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। গত বৃহস্পতিবার ওই ব্যক্তির আইনজীবী বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির কিংডমস লেস-ম্যাজেস্ট (রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে অপরাধ) আইন বিশ্বের কঠোরতম আইনগুলোর মধ্যে একটি এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ, বিরোধী মত ও বিতর্ককে দমন করার জন্য এই আইনের অপব্যবহার করা হয়। এই আইনে দেশটির উত্তরের শহর চিয়াং রাইয়ের একটি আদালত ২৯ বছর বয়সী মংকোল তিরাকোতেকে দুটি পৃথক মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন। মংকোল একজন অনলাইন পোশাক বিক্রেতা ও মানবাধিকারকর্মী। বার্তা সংস্থা এএফপিকে তার আইনজীবী বলেন, সাজা মূলত ৪২ বছর ছিল, কিন্তু আদালত তা কমিয়ে ২৮ বছর করেন। তিনি আরও জানান, মংকোল আপিল করবেন এবং আদালত তাকে ৯ হাজার ১০০ ডলার জামানতে জামিন দিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জ্যেষ্ঠ গবেষক সুনাই ফাসুক বলেছেন, রাজতন্ত্রের মানহানির মামলায় থাই আদালতের ২৮ বছরের সাজা প্রদান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে থাই আদালত রাজতন্ত্রকে অপমান করার জন্য একজন নারীকে রেকর্ড ৪৩ বছরের সাজা দেয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বুধবার (২৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
হেফাজতে সুলতানার মৃত্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। আপনি প্রায় প্রতিদিনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের দুর্ঘটনা দেখতে পাবেন।’
‘এই সপ্তাহে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি গণগুলিতে শিশু নিহত হয়েছে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে? আমি মনে করি না এই ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নষ্ট করবে।’
এর আগে, নওগাঁ পৌরসভা-চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানাকে (৩৮) র্যাব-৫ এর একটি টহল দল ২২ মার্চ সকালে কাজে যাওয়ার সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় ধরে নিয়ে যায়। হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে নওগাঁ সদর হাসপাতাল এবং তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ মার্চ তার মৃত্যু হয়।
মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে অন্যদের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার দরকার নেই।
‘বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের সংগ্রামে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। অন্য দেশের গণতন্ত্র সম্পর্কে আমাদের কোনো পাঠের প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখন খুবই শক্তিশালী।
যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্রের সমস্যা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের গণতন্ত্র খুবই দুর্বল। তাই তারা দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে ওকালতি করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দেশে ও বিদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কারের বিষয়ে আরও সোচ্চার হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। আমরা এটি সম্পর্কে একই পৃষ্ঠায় আছি। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গত এক দশকে ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা ভুয়া ভোটারদের মোকাবিলা করার জন্য ছবিসহ ভোটার আইডি তৈরি করেছি। বিগত ১৪ বছরে নির্বাচন কমিশন হাজার হাজার নির্বাচন পরিচালনা করেছে। তাদের প্রায় সবগুলোই ছিল স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য। এবং ভবিষ্যতেও আমাদের নির্বাচন হবে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য।’
মোমেন বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন বৈশ্বিক গণমাধ্যমে ‘জাদুকরী’ হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান বিশ্বব্যাপী আমাদের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এবং ক্রমাগত উন্নয়নের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ এখন আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী।’
তিনি আরও বলেন,‘এই স্বাধীনতা দিবসে এবং রমজানের শুরুতে, আমরা অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাছ থেকে অভিনন্দনমূলক চিঠি পেয়েছি।’
মেয়েদের বয়সভিত্তিক দল নিয়ে বাফুফে যতটা তৎপর, সিনিয়র জাতীয় দল নিয়ে ততটাই উদাসীন। আরো একবার দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সিদ্ধান্ত সেটাই প্রমাণ করল। অর্থাভাবের অজুহাত দিয়ে সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাফুফে বলেছে, ‘মায়ানমার যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ইনস্যুরেন্স ফি, সেখানে থাকা-খাওয়া ও ট্রান্সপোর্টশনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের সংকুলান না হওয়ায় উক্ত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলের অংশগ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অলিম্পিক বাছাইয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা আছে ‘বি’ গ্রুপে। স্বাগতিক মায়ানমারের সঙ্গে গ্রুপে আরও আছে ইরান ও মালদ্বীপ। গ্রুপের খেলাগুলো হবে আগামী ৫ থেকে ১১ এপ্রিল।
বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে চেয়েছিলাম এই বাছাই পর্বের স্বাগতিক হতে। কিন্তু স্বাগতিক মর্যাদা মায়ানমারকে দেওয়া হয়। টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী এখানে অংশ নিতে হলে সব খরচ নিজেদের বহন করতে হবে, যা বহন করার মতো অবস্থায় নেই বাফুফের।’
আবু নাঈম সোহাগ আরও বলেন, ‘আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। সেই সাহায্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এরপরই আমরা দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
গত সেপ্টেম্বরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর আর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি সাবিনারা। এই সফর বাতিল হওয়ায় মাঠে নামার অপেক্ষাটা তাদের আরো বাড়ল।
মেয়েদের জাতীয় দল নিয়ে বাফুফের উদাসীনতার নজির এটাই প্রথম নয়। এর আগে ২০১৯ সালের এসএ গেমসে মেয়েদের দল পাঠায়নি বাফুফে।
সেবার যুক্তিটা ছিল অদ্ভুত। যেহেতু তখন মেয়েদের জাতীয় দলটি মূলত বয়সভিত্তিক দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া ছিল, তাই শক্তিশালী দলগুলোর বিপক্ষে খারাপ করলে তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে পারে। এই কারণের কথা বলে সেবার এসএ গেমসে দল পাঠায়নি বাফুফে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’