
যুদ্ধের মাঝে থাইল্যান্ড ভ্রমণের জন্য এবার নিজ দল দ্য সারভেন্ট অব পিপলস পার্টির আইনপ্রণেতা মাইকোলা তাইশ্চেঙ্কোকে বরখাস্ত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দলের মুখপাত্র ইউলিয়া প্যালিচুক গত শুক্রবার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডে ইউক্রেনীয় দূতাবাসের ওয়েবসাইটেও ঘোষণাটি প্রচারিত হয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের একটি বিলাসবহুল হোটেলে বর্তমানে অবস্থান করছেন তাইশ্চেঙ্কো। এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনুমতি নিয়েই থাইল্যান্ডে এসেছিলেন এবং তার এ সফর মোটেই প্রমোদভ্রমণ নয়; বরং ইউক্রেনের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের অংশ হিসেবেই থাইল্যান্ডে এসেছেন তিনি। তবে ঠিক কী উদ্দেশ্যে তার এ সফর, সে সম্পর্কে ফেইসবুক পোস্টে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তাইশ্চেঙ্কো। এদিকে ইউক্রেনের পার্লামেন্টের স্পিকার রাসলান স্তেফানচুক সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, তাইশ্চেঙ্কো তার কাছ থেকে এ সফরের বিষয়ে অনুমতি নেননি। গত সপ্তাহে দেশজুড়ে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ঘোষণা দেন জেলেনস্কি। এরপর চলতি সপ্তাহে ১২ জনের বেশি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন কিংবা বরখাস্ত হয়েছেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের ভরসা পশ্চিমা অস্ত্র। প্রায় এক বছর ধরে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন শুরুতে বড় এলাকা হারালেও পশ্চিমা অস্ত্রবলে রুশ অগ্রসরতা রুখে দিতে সমর্থ হয়। আর এতে ইউক্রেনের সফলতায় বড় ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্রের হিমার্স মাল্টিপল রকেট লঞ্চিং ব্যবস্থা। তবে এসব অস্ত্রের ব্যবহারে হাতে থাকা সহজ প্রযুক্তি যেমন ট্যাবলেট-স্মার্টফোনের সংমিশ্রণ ঘটাতে শিখেছে ইউক্রেনের সেনারা। যুদ্ধক্ষেত্রে স্মার্টপ্রযুক্তির সাহায্য রুশ সামরিক অবস্থান শনাক্ত করে হিমার্স দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে অব্যর্থ হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেন। এবার আরও ভারী অস্ত্র পেতে ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে পশ্চিমারা ট্যাংক পাঠাচ্ছে। জার্মানির রামস্টেইন বিমানঘাঁটিতে আলোচনার পর ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা নিজ নিজ দেশের অত্যাধুনিক ট্যাংক পাঠাতে সম্মত হয়েছে। ইউক্রেনকে ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জার্মানি। এই ট্যাংক চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণের দরকার এই অজুহাত দেখালেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় মিত্রদের চাপে ইউক্রেনের সেনাদের ট্যাংক দিতে রাজি হওয়ার পাশাপাশি পরিচালনার প্রশিক্ষণেও সম্মতি জানায় জার্মানি। জার্মানির অস্ত্রনির্মাতা প্রতিষ্ঠান রাইনমেটাল এই ভারী অস্ত্র সরবরাহ করতে যাচ্ছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ৩১টি আব্রামস ট্যাংক দেবে ইউক্রেনকে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে অনাগ্রহী হলেও এখন তারা বলছে ইউক্রেনে আব্রামসের একেবারেই নতুন সংস্করণ সরবরাহ করা হবে; যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বহরেও নেই। এজন্য অবশ্য সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং। আর এই সময়ে আব্রামস চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে থাকবে ইউক্রেনের সেনারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের নিজ নিজ যুদ্ধাস্ত্র পরীক্ষা এবং যুদ্ধকৌশল রপ্তের সুযোগ করে দিয়েছে। এ যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর জন্য তাদের নিজস্ব যুদ্ধাস্ত্র ও সরঞ্জামের প্রয়োগিক সুবিধা অসুবিধার তথ্য পাওয়ার দারুণ এক উৎস। আধুনিক যুগের লড়াইয়ে জয় পেতে উভয় পক্ষ কী ধরনের অস্ত্র, সরঞ্জাম বা কৌশল ব্যবহার করছে, তাও দেখে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করতে রাশিয়া কীভাবে ইরানের তৈরি সস্তা ড্রোন দিয়ে সফলভাবে আক্রমণ চালিয়েছে, সেটাও এ যুদ্ধে দেখার সুযোগ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অপারেশন অফিসার ও সামরিক কর্মকর্তাদের। পশ্চিমা গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে সিএনএন জানায়, সবদিক বিবেচনা করে ইউক্রেন বাস্তব অর্থেই একটি অস্ত্রের গবেষণাগার হয়ে উঠেছে, কারণ এসব অস্ত্র ও সরঞ্জামের কোনোটিই এর আগে শিল্পোন্নত দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়নি। সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যে এটা ‘বাস্তব যুদ্ধে যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষা’।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তা এবং এক ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থার বরাতে সিএনএন জানায়, ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সুইচব্লেড ৩০০ ড্রোন এবং শত্রুর রাডার সিস্টেমে আক্রমণ চালাতে দেওয়া ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধক্ষেত্রে প্রত্যাশার তুলনায় কম কাজে দিয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হালকা ওজনের এম১৪২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার বা হিমার্স মিসাইল ইউক্রেনের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এমনকি এ ধরনের অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহারের ক্ষেত্রে কতটা মেরামত প্রয়োজন হয়, আর রক্ষণাবেক্ষণ কতটা লাগে, সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, সীমিত পরিমাণে সরবরাহ করা হিমার্স মিসাইল দিয়ে ইউক্রেন যেভাবে রুশ সেনা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, কমান্ড পোস্ট, হেডকোয়ার্টার আর সামরিক ডিপোতে আক্রমণ চালিয়েছে, তা ছিল অপ্রত্যাশিত। যুদ্ধক্ষেত্রের এসব তথ্য রীতিমতো সমরবিদদের চোখ খুলে দিয়েছে, কারণ এসব জানতে তাদের বছরের পর বছর গবেষণা করতে হতো। রণক্ষেত্রের এই ‘পরীক্ষাগার’ থেকে নিজেদের আরও একটি যুদ্ধাস্ত্র সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, সেটা হলো তাদের এম৭৭৭ হাউইটজার। এসব হালকা কামান ইউক্রেনের সমরশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তবে এ অস্ত্রের একটি খুঁত এই যুদ্ধক্ষেত্রেই স্পষ্ট হয়েছে। আর তা হলো, এ কামান দিয়ে অল্প সময়ে অনেক বেশি শেল নিক্ষেপ করা হলে এর নির্ভুল লক্ষ্যভেদের হার এবং কার্যকারিতা কমে যায়।
আর ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধক্ষেত্রে নতুন নতুন যে কৌশলগত উদ্ভাবন ঘটিয়ে চলেছে, তা পশ্চিমা কর্মকর্তাদেরও অবাক করে দিচ্ছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে কিয়েভে রাশিয়ার হামলার সময় ইউক্রেনের কমান্ডাররা তাদের পদাতিক বাহিনীকে ছোট ছোট সৈন্যদলে বিভক্ত করে পাল্টা হামলা চালিয়েছিল। কাঁধে স্টিংগার ও জ্যাভেলিন রকেট লঞ্চার নিয়ে ইউক্রেনীয় সেনারা তাদের দুই পাশে পদাতিক বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই অতর্কিতে রাশিয়ার ট্যাঙ্কগুলোকে নিশানা করতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য জিম হিমস বলেন, ‘ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে কী শিখেছি যদি সেটা বলতে হয়, তাহলে আস্ত একটা বই লিখে ফেলতে হবে।’ কেবল যুদ্ধাস্ত্রের সক্ষমতা-দুর্বলতা জানা নয়, ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমের প্রতিরক্ষা ঠিকাদারদের জন্যও নতুন ধারণা নেওয়ার এবং নতুন বাজার তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী ব্রিটিশ কোম্পানি বিএই সিস্টেমস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, রাশিয়ার কামিকাজি ড্রোনগুলোর সাফল্য থেকে ধারণা নিয়ে নতুন একটি সাঁজোয়া যানের নকশা করেছে তারা, যেখানে উপর থেকে চালানো আক্রমণ থেকে সৈন্যদের রক্ষায় বাড়তি বর্ম যোগ করা হয়েছে। এ এমন এক যুদ্ধ, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং সামরিক বাণিজ্যের অনেকে তাদের নতুন নতুন অস্ত্র ও সরঞ্জাম পরীক্ষা করে দেখতে চেয়েছে। আর মরিয়া ইউক্রেন চেয়েছে, যা যা পাওয়া সম্ভব, তার সবই আদায় করে নিতে। যুদ্ধের প্রথম দিকে ন্যাশনাল জিওস্পেশাল-ইনটেলিজেন্স এজেন্সি ইউরোপে ইউএস স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের কাছে পাঁচটি হালকা ওজনের নজরদারি ড্রোন পাঠিয়েছিল। হেক্সাগন কোম্পানির তৈরি ওই ড্রোনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের তথাকথিত ‘ভবিষ্যৎ প্রতিরক্ষা কর্মসূচি’র অংশ ছিল না। এ থেকে বোঝা যায়, ইউক্রেন যুদ্ধকে আসলে পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহারের কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের তখন থেকেই ছিল। একাধিক গোয়েন্দা ও সামরিক কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের অর্জিত জ্ঞান থেকে এখন একক ব্যবহারের সস্তা ড্রোনের মতো অস্ত্র তৈরির দিকে আরও বেশি মনোযোগী হয়ে উঠবে প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশি নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। প্রভাবশালী গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গেল ১২ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশের হাতে ১ হাজার ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে প্রচলিত যে অভিযোগ সেটি হলো বর্ণবাদী বিদ্বেষ থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর চরম দমনমূলক আচরণ। পুলিশের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্বেষ থেকে একের পর এক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১২ সালে কৃষ্ণাঙ্গ কিশোরী ট্রেভন মার্টিনকে হত্যায় দায়ী পুলিশকে খালাস দেওয়ার পর ২০১৩ সালে শুরু হয় ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ স্লোগান। যা পরবর্তী পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গদের প্রাণহানিতে বারবার উচ্চারিত হয়ে, পরিণত হয় এক বিশাল আন্দোলনে। ২০২০ সালে জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ডের পর যে আন্দোলনে কেঁপে উঠেছিল পুরো যুক্তরাষ্ট্র এমনকি পেয়েছিল বৈশ্বিক সংহতি। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের পুলিশি বর্বরতা বন্ধ হয়নি। গত ৩ জানুয়ারি ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা প্যাট্রিসে কুলোরসের চাচাতো ভাই কিনান অ্যান্ডারসনকেও পুলিশি দমনে প্রাণ হারাতে হয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষোভ কাটার আগেই আবারও ঘটল একই বর্বরোচিত ঘটনা। গত ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যের মেম্ফিসে টায়ার নিকোলস নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে হত্যা করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে নিকোলসের ওপর পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে উঠে এসেছে তার ওপর পাঁচ পুলিশ সদস্যের নির্মম নির্যাতন।
বরাবরই পুলিশ-প্রশাসনের এমন বর্ণবাদী চেহারা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ বিব্রতকর। তবে নিকোলসের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রকে যেন দেশটির পুলিশি বর্বরতার জন্য বর্ণবাদ দায়ী, এ দোষারোপ থেকে একটু মুক্তির সুযোগ এনে দিয়েছে। কারণ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পাঁচ পুলিশের সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। আর তাই এবার এ পুলিশদের ব্যাপারে বেশ সরব যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন এবং পশ্চিমা গণমাধ্যম। ইতিমধ্যে জড়িতদের কঠোর শাস্তির কথা বলছে দেশটির পুলিশ বিভাগ। তবে এখানে তারা পুলিশি অপরাধে বর্ণবাদের দায় এড়াতেই যেন বেশি তৎপর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে মেম্ফিস পুলিশের প্রধান সেরেলিন ডেভিস বলেন, ‘ওই পুলিশ অফিসাররা কোন বর্ণের বা ভুক্তভোগী ব্যক্তি কোন বর্ণের তাতে আসলে কিছু যায় আসে না। আপনি যদি ঘটনার ভিডিও দেখেন তাহলে সেখানে বর্ণবাদের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা পাবেন না।’ এদিকে এবারের ঘটনার প্রতিবাদে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটারের চেয়ে ‘নো জাস্টিস, নো পিস’ সেøাগান সামনে এসেছে। নিহত নিকোলসের মা রো ভন ওয়েলস বিবিসিকে বলেন, ‘পুলিশরা কোন বর্ণের বিষয় সেটা নয়, তাদের বর্ণে আমাদের কিছু যায় আসে না বরং তারা যা করেছে তা অন্যায়।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কানাডায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক তৎপরতা বাড়ছে। একই সঙ্গে ঘটছে ছোট ছোট হামলার ঘটনা। বিশেষ করে এসব ঘৃণামূলক অপরাধ বৃদ্ধির নেপথ্যে থাকছে ইসলামোফোবিয়া বা ‘ইসলামভীতি’। এ অবস্থায় কানাডায় ইসলামভীতি মোকাবিলায় বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছে দেশটি। প্রথমবারের মতো এ ধরনের নজিরবিহীন নিয়োগের ঘটনা ঘটল অভিবাসীদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে ওঠা কানাডায়। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কার্যালয় থেকে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ইসলামোফোবিয়ার অবসানে অটোয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে উপদেষ্টা হিসেবে মানবাধিকার ও গণমাধ্যমকর্মী আমিরা এলগাওয়াবির নাম ঘোষণা করা হলো।
এলগাওয়াবি কানাডার দাতব্য সংস্থ রেস রিলেশনস ফাউন্ডেশনের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান ও টরন্টো স্টার পত্রিকার একজন কলামিস্ট। এর আগে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিবিসিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন তিনি। এলগাওয়াবিকে নিয়োগ দেওয়ার বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেন, ‘ইসলামবিদ্বেষ ও সব ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বৈচিত্রতা সত্যিই কানাডার অন্যতম বড় শক্তি, কিন্তু অনেক মুসলমান ইসলামবিদ্বেষের শিকার।’
অনলাইনে চরম ডানপন্থিদের প্রচারণার ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ বিষয়গুলোর মধ্যে একটি মুসলিমবিরোধী বক্তব্য। ২০২১ সালের জুনে অন্টারিওতে একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে ট্রাক দিয়ে পিষে হত্যা করে এক ব্যক্তি। এর চার বছর আগে, কুইবেক সিটির একটি মসজিদে চালানো হামলায় ছয়জন মুসল্লি নিহত এবং পাঁচজন আহত হন। পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রুডোর সরকার ২০২১ সালে ইসলামভীতি এবং ইহুদিবিদ্বেষের ওপর জাতীয় শীর্ষ সম্মেলন করে। সম্মেলনে নতুন এই পদটি তৈরির সুপারিশ করা হয়েছিল।
ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিম অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এলগাওয়াবির নিয়োগকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি আগে এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গ্রুপের সিইও স্টিফেন ব্রাউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই প্রথম ইসলামোফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কানাডা সরকার একটি স্থায়ী উদ্যোগ নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য সত্যিই অসাধারণ মুহূর্ত।’
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।