
আফগানিস্তানের ফয়জাবাদে স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে ৪ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এ ভূমিকম্পে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর এখনো পাওয়া যায়নি। এক মাসের মধ্যে দেশটিতে এটি দ্বিতীয় ভূমিকম্প। গতকাল সোমবার ভারতের সিকিমেও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রাজ্যের ইয়ুকসম শহরে ভোরে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা অতি পরিচিত ভ্যালেন্টাইনস ডে। এই দিবসে কিংবা কেবল এই দিনটি ছাড়াও প্রতিনিয়ত ভালোবাসার মানুষের মন গলাতে বা তার মুখে হাসি ফোটাতে মানুষ কত কিছুই না করে। এ ক্ষেত্রে অন্যতম একটি উপায় হলো, সুন্দর একটি প্রেমপত্র লেখা, অথবা সুন্দর একটি কার্ডে কয়েক লাইনে মনের কথা গুছিয়ে লিখে দেওয়া। সুন্দর সুন্দর শব্দ দিয়ে, গুছিয়ে প্রেমপত্র লেখাটা অনেকের কাছেই রীতিমতো মহা বিড়ম্বনা। তবে এবার সেই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সফটওয়্যার বা স্মার্ট চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই এক তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে ব্যাপক ব্যবহার শুরু না হলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে চ্যাটবটটি। অনেকে নাকি এরই মধ্যে প্রেমপত্র লেখার জন্য এই প্রযুক্তি ব্যবহারও করছেন! সম্প্রতি ভারতসহ ৯টি দেশের পাঁচ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালায় যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত প্রযুক্তি সংস্থা ম্যাকাফি কর্প। ‘মডার্ন লাভ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রায় ৬২ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক ভালোবাসা দিবসে মনের মতো প্রেমপত্র লিখতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করছেন। বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় এ সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ওই জরিপে আরও উঠে এসেছে, গবেষণায় অংশ নেওয়া ৭৮ শতাংশ ভারতীয় উত্তরদাতা মানবলিখিত প্রেমপত্র ও চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে লেখা প্রেমপত্রের পার্থক্য ধরতেই পারেননি।
বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির জগতে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রান্সিসকোভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) গবেষণা সংস্থা ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটবট। প্রযুক্তিজগতের ওয়েবসাইটগুলোর দাবি, চ্যাটজিপিটি এমন একটি উদ্ভাবন, যেটাতে বিশে^র সব ধরনের তথ্য রয়েছে। এমনকি অনেকের কাছে এটি গুগলের থেকে বেশি কার্যকরী। চ্যাটজিপিটির কাছে কিছু জিজ্ঞেস করলে, এটি গুগলের মতো শুধু লিংক হাজির করে না; বরং পুরো বিষয় বিস্তারিত তুলে ধরে। এমনকি নির্দেশদাতার মনের মতো করে লিখে দিতে পারে যেকোনো আর্টিকেল বা অ্যাসাইনমেন্ট। তাই তো অনেকে মজা কর বলছেন, ভ্যালেন্টাইনস ডে, অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসে প্রেমপত্র লিখে নেওয়ার একটি সহজ মাধ্যম হতে পারে চ্যাটজিপিটি।
তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পেরিয়েছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দুই দেশ মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পের পর সাত দিনে এখন চারদিকে কেবল ধূলিসাৎ ভবন, বাতাসে লাশের গন্ধ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি শহর কাহরানমারমারাসের ধসে পড়া ভবনের নিচে এখনো অনেক মৃতদেহ চাপা পড়ে আছে। ৬ দিন পেরিয়ে গেছে, এছাড়া রোদের তাপে এসব মরদেহ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ায় মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসা ভূমিকম্পে উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা নিয়ে দেখা দিয়েছে হতাশা। বলছে, গত বছর থেকেই কলেরার প্রকোপ বাড়তে থাকা সিরিয়ায় এই ভূমিকম্প নতুন শঙ্কা জাগাচ্ছে। সহায়তাকারী ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, ‘ভয়াবহ ভূমিকম্পে কলেরার প্রকোপ বৃদ্ধি পেতে পারে।’
মানবিক বিপর্যয়ের চ্যালেঞ্জ
লণ্ডভণ্ড তুরস্ক-সিরিয়ায় এখন মূল চ্যালেঞ্জ মানবিক সংকট মোকাবিলা। দুই দেশে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পকে শত বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ বিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস। উদ্ধার তৎপরতাও শেষের দিকে বলে জানিয়েছেন তিনি। জাতিসংঘের এই কর্মকর্তার মতে এখন দরকার মানবিক সহায়তা। বিশেষ করে আশ্রয়, খাদ্য এবং মানসিক সাহায্য নিশ্চিতের আহ্বান তার। সিরিয়ার আলেপ্পো পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পে রক্ষা পাওয়া যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের চেহারায় ভয়াবহতা দেখে আসার মানসিক আঘাতের ছাপ স্পষ্ট। বিশ্বের এখন এই ক্ষত সারাতে এগিয়ে আসতে হবে।’ ভূমিকম্পে প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মক ভীতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তুরস্কের কাহরানমারমারাসের বাসিন্দা সেদাত কাভসুত। তিনি আলজাজিরাকে বলেন, ‘এখন সবচেয়ে বড় বিষয় হয় ভীতি। এখন কোনো ভবনে ঢুকলে প্রস্রাবও করতে পারি না, এত ভয় লাগে।’
জাতিসংঘের বরাতে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় কমপক্ষে ৮ লাখ ৭০ হাজার মানুষের এখন গরম খাবার দরকার। সিরিয়ায় ৫৩ লাখ মানুষ গৃহহীন। তুরস্কে ৮০ হাজার মানুষ হাসপাতালে এবং ১০ লাখের বেশি মানুষ আছে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে। দক্ষিণ তুরস্কের আদানায় কাজ করছেন অ্যাকশন এগেইনস্ট হাঙ্গারের কর্মী আনা মোরা সেগুরা। বিবিসিকে তিনি জানান, অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের চাহিদার তালিকাটি বেশ লম্বা। অন্তর্বাস থেকে শুরু করে মাথাগোঁজার তাঁবুর সংকট চলছে। তিনি বলেন, ‘জীবন বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালানো মানুষেরা এক কাপড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। এখন খোলা আকাশের নিচে এত মানুষের মধ্যে থাকতে হলে অবশ্যই ন্যূনতম ব্যক্তিগত পরিধেয় থাকার দরকার মনে করছেন তুর্কিরা, বিশেষ করে নারীরা। এখানে আমাদের আরও তাঁবু দরকার। বিধ্বস্ত এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দাকে এই তীব্র শীতে মাথাগোঁজার ঠাইটুকু তো নিশ্চিত করতে হবে।’
সিরিয়ায় সংকটে ত্রাণ, তুরস্কে নিরাপত্তা
ভূমিকম্পে সিরিয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল। সেখানকার বহু মানুষ দ্বিতীয়বারের মতো গৃহহীন হয়েছেন। দেশটিতে প্রায় এক যুগ ধরে চলা গৃহযুদ্ধের কারণে এর আগেও তারা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এরপরও সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের তুলনায় তারা সামান্যই ত্রাণসহায়তা পেয়েছেন। মার্টিন গ্রিফিথস এক টুইটে বলেছেন, ‘আমরা এখনো উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি।’ তিনি বলেন, ওই এলাকার বাসিন্দারা ঠিকই নিজেদের অবহেলিত ভাবছেন। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা দরকার। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র বলেছেন, অনুমোদন না দেওয়ায় সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের কাজ থমকে গেছে। এ অঞ্চলের বেশির ভাগের নিয়ন্ত্রণ করছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইদলিবে এইচটিএসের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, সরকার নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে কোনো ধরনের ত্রাণবাহী বহর ঢুকতে দেবে না তারা।
নজিরবিহীন দুর্যোগে যখন মানুষ দিশেহারা, সে সময়ে তুরস্কের শহরে লুটপাটের ঘটনাও ঘটছে। এদিকে এখনো সিরিয়ার সব অঞ্চলে দুর্গত মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে যেতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। তুরস্কের ইতিহাসে ১৯৩৯ সালের পর এবারের ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি হয়েছে। এই ভূমিকম্পে শুধু তুরস্কে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬৪৩ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ বিষয়ক দপ্তর। এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ভূমিকম্পে দুই দেশে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। দুর্যোগে বিপর্যস্ত তুরস্কের সহায়তায় বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ এগিয়ে এলেও এখনো দেশটিতে দুর্গত মানুষকে আশ্রয় ও তাদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে। এর মধ্যে গোষ্ঠীগত সংঘাত ও লুটপাট সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলেছে। গেল শনিবার তুরস্কে উদ্ধারকাজ স্থগিতের ঘোষণা দেয় জার্মানির দুটি সংস্থা। কারণ হিসেবে তারা একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা জানায়। স্থানীয় লোকজনও লুটপাটের কথা জানিয়েছে। ভূম্পিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দক্ষিণ–পূর্বাঞ্চলীয় শহর কাহরানমানমারাস শহরের এক বাসিন্দা বলেন, তার ঘরে থাকা সব অলংকার চুরি হয়ে গেছে। এখানকার বাস্তুহারা বাসিন্দারা বলছেন, নিজেদের বিধ্বস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির যত দূর সম্ভব কাছেই তারা তাঁবু টানিয়ে থাকছেন। লুটপাট ঠেকাতে তারা এই ব্যবস্থা নিয়েছেন। এছাড়া লুটেরাদের ভয়ে দোকান থেকে মালপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন দোকানিরা। তুরস্কের মধ্যাঞ্চলীয় আন্তাকায়া শহরে দোকানিরা নিজেদের দোকান খালি করতে শুরু করেছেন। মালপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন অন্যত্র। তাদের ভাষ্য, এমনটা করা হচ্ছে লুটেরাদের ভয়ে। ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকান থেকে শুরু করে মুদি, ওষুধের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে লুটপাট হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, তুরস্কে ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা থেকে লুটপাট থামাতে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। মার্কেটগুলোতে টহল দিচ্ছে সেনাসদস্যরা। দুর্গত এলাকাগুলোতে ডাকাতির অভিযোগে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৮ জনকে। নৈরাজ্য ঠেকাতে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ প্রদেশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে তুর্কি সরকার। তুরস্কের অর্থনীতি এমনিতেই মূল্যস্ফীতিতে আক্রান্ত ছিল। এর ওপর এলো ভয়াবহ ভূমিকম্প। তুরস্কের সরকারি হিসাব বলছে এই ভূমিকম্পে দেশটির প্রায় ৯ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে।
জীবিত অথবা মৃত স্বজনের আশায়
তুরস্কে গাজিয়ানতেপ, কাহরানমারমারাসের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা স্তিমিত হয়ে এসেছে। তবে ধসে পড়া কংক্রিটের জঞ্জালের নিচ থেকে কয়েকজনকে এখনো জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের ‘অলৌকিক’ ঘটনা ঘটছে। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আদিয়ামানে ভূমিকম্পের ১৭৮ ঘণ্টা পর একটি ছোট্ট মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে হাতায়া প্রদেশে ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া একটি তিন তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৭০ বছর বয়সী নুরে গুরবাজকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এরকম ‘অলৌকিক’ভাবে বেঁচে থাকারাই এখনো আশার আলো দেখাচ্ছেন নিখোঁজদের স্বজনদের।
স্বজনরা তাই তীব্র শীতে কোনো রকমে আগুন জ্বালিয়ে ধসে পড়া ভবনের সামনেই বসে থেকে উদ্ধারকারীদের কাজ দেখছেন। বিবিসি ওয়েদার বলছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প উপদ্রুত অঞ্চলে আসন্ন সপ্তাহে তীব্র ঠাণ্ডা বিরাজ করবে। তুরস্কের গাজিয়ানতেপ ও সিরিয়ার আলেপ্পোতে রাতের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে থাকতে পারে।
আদানি গোষ্ঠীর মালিক গৌতম আদানির সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক নিয়ে দেশটির লোকসভায় দেওয়া রাহুল গান্ধীর বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে নোটিস জারি হয়েছে। রাহুলের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস দিয়েছেন ভারতের সংসদবিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশি এবং বিজেপির সংসদ সদস্য নিশিকান্ত দুবে। তাদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিকর, অসংসদীয় অভিযোগ করেছেন রাহুল। এ ব্যাপারে তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ভারতের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রস্তাবে আলোচনায় অংশ নিয়ে আদানি প্রসঙ্গে জবাবদিহি দাবি করেন রাহুল। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, বিদেশ সফরে কতবার ওই শিল্পপতি তার সঙ্গী হয়েছেন, কতবার আলাদাভাবে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন? নির্বাচনী বন্ড মারফত আদানিরা বিজেপিকে কত টাকা দিয়েছে, সেই প্রশ্নের উত্তরও দাবি করেন রাহুল। মরিসাসহ অন্য দেশের শেল কোম্পানি মারফত কত টাকা ভারতে ঢুকেছেÑ জানতে চান তা-ও। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় ওই গোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ প্রকল্প পাইয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলেও রাহুল অভিযোগ করেন।
ইতিমধ্যে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সেই বক্তব্যের বড় অংশই স্পিকার কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নিয়ে অন্য বিরোধীদের বক্তব্যও এভাবেই বাদ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে বিরোধীরা গতকাল সোমবারও সরব হন। রাজ্যসভার বিরোধী নেতা ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এ বিষয়ে যে যে আপত্তি করেন, সেসবও কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন চেয়ারম্যান এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়। বিরোধীরা তখন সেøাগান দিতে শুরু করেন। যুগ্ম সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি জানানো হয়। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, বিরোধীরা সংসদের তোয়াক্কা করেন না। আলোচনাও চান না।’ বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে সভা এক মাসের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয়। সোমবার ছিল সংসদের বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বের শেষ দিন। পরবর্তী অধিবেশন শুরু হবে ১৩ মার্চ।
এদিকে আদানি গোষ্ঠীর দশটি সংস্থার প্রতিটির শেয়ারমূল্য সোমবারও কমেছে। আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার পড়েছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেডের ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ; আদানি টোটাল গ্যাস, আদানি ট্রান্সমিশন ও আদানি উইলমার পড়েছে ৫ শতাংশ করে। আম্বুজা সিমেন্টের দর পড়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আদানি পাওয়ার ও আদানি গ্রিন এনার্জির দরপতন হয়েছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ করে। এসিসির দাম পড়েছে ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি পড়েছে এনডিটিভির দাম, ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল্লের প্রভাবে দমকা হওয়া, প্রবল বর্ষণ ও জলোচ্ছ্বাস শুরু হয়েছে নিউজিল্যান্ডের বৃহত্তম শহর অকল্যান্ড, নর্থ আইল্যান্ড ও তার আশপাশের এলাকায়। পাশাপাশি বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে ৫৮ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর। দেশটির জরুরি ব্যবস্থাপনামন্ত্রী কিয়েরান ম্যাকুয়েনাল্টি বলেন, প্রচন্ড বাতাস ও ভারী বর্ষণের কারণে সেখানে ‘অনেক খারাপ পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।