
২০১৪ সালের পর থেকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের ওপর কিয়েভের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করেছিল রাশিয়া। মস্কোর অভিযোগ ছিল ইউক্রেনের উগ্র-জাতীয়তাবাদীরা দেশটির পূর্বাঞ্চলের রুশ সীমান্ত সংলগ্ন লুহানস্ক, দোনেৎস্কে জাতিগতভাবে রুশদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই নিধনযজ্ঞের সঙ্গে জড়িতদের নব্য নাৎসি হিসেবে অভিহিত করে মস্কো। ইউক্রেনের তথাকথিত এ নাৎসিদের বিরুদ্ধে বিশেষ সামরিক অভিযানে বড় এলাকা দখলে এনেছে রাশিয়া।
কিন্তু ঝুঁকি বাড়ছে খোদ রাশিয়ার মাটিতে। যুদ্ধ শুরুর পর সাম্প্রতিক সময়ে ১৩ দফা হামলার ঘটনা ঘটেছে রাশিয়ার ভেতরে। এর মধ্যে সর্বশেষ সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা ঘটে গত সোমবার ইউক্রেনের সীমান্তঘেঁষা রুশ অঞ্চল বেলগোরোদে। রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেনের সন্ত্রাসীরা যুক্তরাষ্ট্রের সাঁজোয়াযান নিয়ে রুশ মাটিতে এ হামলা চালায়। হামলাকারী ৭০ ‘সন্ত্রাসীকে’ হত্যা ও বাকিদের বিতাড়িত করার কথা নিশ্চিত করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এ হামলাই শেষ নয়। ইউক্রেন ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর দাবি, বেলগোরোদে আসলে ইউক্রেনীয়রা নয়, হামলা চালিয়েছে পুতিনবিরোধী দুটি রুশ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। বেলগোরোদে গত সোমবারের (২২ মে) আন্তঃসীমান্ত হামলার দায় স্বীকার করেছে রুশ ভলান্টিয়ার কর্পস (আরডিকে) ও লিবার্টি রাশিয়া লিজিয়ন (এলএসআর)। ইউক্রেন থেকে রাশিয়ায় অনুপ্রবেশ করে অঞ্চলটিতে হামলা চালায় তারা।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে আরডিকে নেতা দেনিস কাপুস্তিন জানান, বেলগোরোদের পর রাশিয়ার মাটিতে আরও হামলার পরিকল্পনা করছে তারা।
দেনিস কাপুস্তিনের পরিচয় নিয়ে নানা সংবাদমাধ্যম নানা তথ্য দিলেও প্রায় সব প্রতিবেদনে তাকে উগ্র-জাতীয়তাবাদী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো কাপুস্তিনকে পুতিনবিরোধী রুশ নাগরিক বললেও তিনি ইউক্রেনীয় উগ্র-জাতীয়তাবাদের সমর্থক নব্য-নাৎসি চিন্তার বলে জানিয়েছে একাধিক সংবাদমাধ্যম। সিএনএন বলছে, স্বপ্রণোদিত এই গ্রুপগুলো যুদ্ধে নিজেরাই পুতিনের বিরুদ্ধে লড়ছে। এজন্য তারা ইউক্রেনের নির্দেশনাও মানছে না।
রাশিয়ার মাটিতে ঘনিয়ে আসা বিপদ উড়িয়ে দিচ্ছেন না সম্প্রতি রাশিয়ার হয়ে বাখমুত জয়ের নায়ক ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। তিনি রাশিয়ার সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে সতর্ক করে বলেন, ‘রাশিয়ার নেতারা যদি যুদ্ধ পরিচালনা পদ্ধতিতে উন্নতি করতে না পারেন, তবে তাদের আরও একটি বিপ্লবের মুখোমুখি হতে হবে। এতে বর্তমান শাসকদের ক্ষমতার আসন নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে।’ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে নিজস্ব চ্যানেলে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ওয়াগনার প্রধান এ দাবি করেন। ওয়াগনার প্রধান আরও জানান, তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রেও সামাজিক বৈষম্য হাজির হয়েছে। তিনি বলেন, গরিব ঘরের সেনারা মারা যাওয়ার পর তাদের স্রেফ জিংক কফিনে ভরে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। বিপরীতে বড়লোকদের সন্তানরা দেশে রাজার হালতে আছে। প্রিগোজিন সতর্ক করে বলেন, ‘এই বিভাজন আবারও ১৯১৭ সালের মতো একটি বিপ্লব দিয়ে শেষ হতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে সৈন্যরা উঠে দাঁড়াবে, তারপর তাদের প্রিয়জনরা উঠে দাঁড়াবে।’
এদিকে রাশিয়ার ভেতরে ঘনিয়ে আসা বিপদের হুমকি ও সতর্কবাণীর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারাও রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা-ঝুঁকি নিয়ে ভীতি বাড়িয়ে দিল। সম্প্রতি রাশিয়ার একেবারে কেন্দ্রে নিñিদ্র নিরাপত্তার ক্রেমলিনে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের বাসভবনের ওপরও চালানো হয় ড্রোন হামলা। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, সম্ভবত ওই ড্রোন হামলা ইউক্রেনীয়রাই চালিয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানতে পেরেছে।
২০০৩ সালে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসার পর সময়ের সঙ্গে আরও ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছেন রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান। ২০০৭ সালে প্রধানমন্ত্রী-শাসিত ব্যবস্থা থেকে প্রেসিডেন্ট-শাসিত ব্যবস্থা চালু করেন তিনি। এরপর নিজের প্রবর্তিত এ শাসনব্যবস্থায় ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে) এই নেতা।
তুরস্কের রাজনীতিতে রক্ষণশীল-গণতন্ত্রী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পছন্দ করে একে পার্টি। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো এরদোয়ানের ক্ষমতায় টিকে থাকার পেছনে তুর্কি রক্ষণশীল মুসলিম জনমতের সমর্থনকে মূল কারণ বলে মনে করে। তাকে আরও শক্তিশালী করে ২০১৬ সালের এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান, মুষ্টিমেয় কিছু সেনাসদস্য প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের চেষ্টা করেন। কিন্তু সামরিক বাহিনীর বাকিরাসহ এরদোয়ান সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এসে অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দেয়। জনতার হাতে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী সেনাদের লাঞ্ছিত হওয়ার ছবি ফলাও করে প্রকাশ করে তুর্কি গণমাধ্যম। ক্ষমতার ভিত মজবুত হয় এরদোয়ানের।
সব মিলিয়ে ২০ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় এরদোয়ান। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এগিয়ে থেকেও দ্বিতীয় দফায় গড়ানো নির্বাচনে জিতে তিনি ফের তুরস্কের মসনদে বসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন আদায় করতে পেরেছেন তিনি, জাতীয়বাদী নেতা ও সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা সিনান ওগানের সমর্থন এখন এরদোয়ানের পক্ষে।
কিন্তু পশ্চিমারা তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না এ অভিযোগ করে আসছেন এরদোয়ান। তার এমন অভিযোগ যে ভিত্তিহীন তাও বলা যায় না, কারণ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোতে এরদোয়ানবিরোধী প্রচারণাও তুঙ্গে। পশ্চিমা গণমাধ্যমে এরদোয়ানকে কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরশাসকের তকমা দিয়ে আসছে। দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে তাই পশ্চিমা প্রচারণার জবাব দিয়েছেন এরদোয়ান। তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি কর্র্তৃত্ববাদীই হতাম তাহলে তো প্রথম ধাপেই প্রেসিডেন্ট হতাম। নির্বাচনের রাতে আমাদের সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ছলনাময় মনস্তাত্ত্বিক অপারেশন চালানো হয়েছে। আমরা ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে এই সব দাবি ছুড়ে ফেলে দিয়েছি। স্বৈরতন্ত্রের দাবিটি যে ভুয়া সেটি আমরা প্রমাণ করেছি।’
দেশে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা এরদোয়ান পরবর্তী সময়ে ইউরোপ-এশিয়ার মধ্যবর্তী গুরুত্বপূর্ণ দেশ তুরস্ককে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও শক্তিশালী ভূমিকায় বসিয়েছেন। পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সদস্য হয়েও এরদোয়ানের তুরস্ক পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ। তার নেতৃত্বে তুরস্ক রাশিয়ার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রেখে চলছে। তারা ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমাদের মতো রাশিয়াবিরোধী পথে হাঁটেনি বরং কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তিতে রাশিয়াকে রাজি করিয়েছে। এদিকে ন্যাটোর সম্প্রসারণেও তুরস্ক পশ্চিমের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বৈশ্বিক এ বাস্তবতায় তুরস্কে ২৮ মে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচন হবে। ভোটে প্রমাণ হবে তুরস্কের জনগণ এরদোয়ানকে কতটা চায়।
বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক। বিশেষ করে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, মহাকাশ ভ্রমণ কিংবা দ্রুতগতির গাড়ি নিয়ে যাদের কিছুটা হলেও আগ্রহ রয়েছে তাদের সবার কাছে ইলন মাস্ক এক পরিচিত নাম। আগামী জুনে ৫২ বছরে পা দিতে যাচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী মাস্ক। ১৮ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার সমপরিমাণ সম্পদের মালিক মাস্কের সাম্রাজ্যের মসনদে কে বা কারা বসবে এ কৌতুহল রয়েছে অনেকের। তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানে বাইরের মানুষ। যতটুকু জানা যায়, তার সন্তান সংখ্যা নয়জন। সাধারণত ধনীদের সাম্রাজ্য সামলাতে দেখা যায় তার সন্তান অথবা পরিবারের অতি আপন কাউকে।
কিন্তু ব্যতিক্রমী ইলন মাস্ক জানালেন এমনটা হয়তো তার বেলায় হবে না। এবার নিজের ব্যবসার সঙ্গে সন্তানদের জড়ানো নিয়ে নিজেই কথা বললেন এ ধনকুবের। সম্প্রতি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টেসলা, স্পেসএক্স ও টুইটারের মালিক তার সাম্রাজ্যের সিংহাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন। মাস্ক জানান, সন্তানদের নিজের কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। তিনি ইতিমধ্যে কিছু মানুষ ঠিক করে ফেলেছেন, যারা ভবিষ্যতে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব দিতে পারবে। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর করব, এমন নীতিতে আমি বিশ্বাস করি না।’
উত্তারাধিকারকে অনেক পুরনো সমস্যা উল্লেখ করে মাস্ক বলেন, পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে উত্তরাধিকার নিয়ে সমস্যা চলে আসছে। এর কোনো সুস্পষ্ট সমাধান নেই। তাই যদি অপ্রত্যাশিতভাবে আমার কিছু হয়ে যায়, তবে আমি আমার বোর্ডের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা রেখে যাচ্ছি। বোর্ড চাইলে আমার মৃত্যুর পর সে অনুযায়ী সব কিছু পরিচালনা করতে পারবে। বরাবরই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন মাস্ক। এই চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছিলেন টুইটার কিনতে গিয়েও। এরপর টুইটারের কর্মী ছাঁটাই, সামাজিক মাধ্যমটিতে ব্যবহারকারীদের ব্লু-টিক প্রশ্নে সমালোচিত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। এমনকি তিনি ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও জড়িয়েছেন বিতর্কে। টুইটারের ভার কাঁধ থেকে নামাতে তিনি সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমটির প্রধান নির্বাহীর (সিইও) বোঝা তুলে দেওয়ার ঘোষণা দেন লিন্ডা ইয়াকারিনোর কাঁধে।
ইরান সফলভাবে ২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার একটি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে বলে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে। ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী প্রধান ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির বিষয়ে দেশটির বিরুদ্ধে ‘পদক্ষেপ’ গ্রহণের সম্ভাবনার কথা তোলার দুদিন পর তেহরান এ পরীক্ষা চালাল। পশ্চিম এশিয়ার (মধ্যপ্রাচ্য) মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আছে ইরানের। দেশটি জানিয়েছে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল ও ওই অঞ্চলে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও তেহরান জানিয়েছে, তারা তাদের ‘আত্মরক্ষামূলক’ ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির আরও উন্নয়ন ঘটাবে। এক বিবৃতিতে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা আশতিয়ানি বলেছেন, ‘ইরানের শত্রুদের প্রতি আমাদের বার্তা হচ্ছে, আমরা আমাদের দেশ ও এর অর্জনগুলো রক্ষা করব।'
জাপানের মধ্যাঞ্চলের নাগানো প্রিফেকচারে বন্দুক হামলা ও ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্যসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও একজন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জাপানের এনএইচকে জাতীয় টেলিভিশনের বরাতে দ্য জাপান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাগানোর প্রত্যন্ত এক অঞ্চলে গুলি ও ছুরি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছে। হামলাকারী ব্যক্তি একটি ভবনের ভেতরে লুকিয়েছে। হামলাকারী একটি ক্যাপ, সানগ্লাস এবং একটি মাস্ক পরা অবস্থায় ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। নাকানো সিটি পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে তাদের কাছে খবর আসে নাগানোর একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে এক নারী গুরুতর আহত হয়েছে। এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। ঘটনাস্থলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই দুর্বৃত্ত পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে দুই পুলিশ সদস্য নিহত হয় এবং একজন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয় পুলিশ ওই এলাকার লোকজনকে আপাতত বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলাকারীকে আটকে অভিযান চলছে।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় বিয়ের আট মাসের মাথায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। নিহত গৃহবধূর নাম উন্মে সুলতানা সুইটি (২২)। সে উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুছা চৌধুরীর বাড়ির মমতাজ আহম্মেদের ছেলে রিয়াজ আহম্মদ সাকিবের স্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাটিখাইন ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডে শশুরবাড়ির নিজ বসত ঘরে এই ঘটনা ঘটে।
নিহত উন্মে সালমা সুইটি একই উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের শেখ মোহাম্মদ পাড়ার আবুল কালামের ছোট মেয়ে। সে পটিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। তবে কেন সুইটি আত্মহত্যা করেছেন সে ব্যাপারে উভয় পরিবারের কেউ কিছু বলতে পারেননি।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উম্মে সুলতানা সুইটির সাথে গত ৮ মাস পূর্বে মো. রিয়াজ আহম্মদ প্রকাশ শাকিবের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে তার শয়ন কক্ষের আড়ার সাথে ওড়না পেছিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি । এ সময় পরিবারের সদস্যরা দেখতে পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে হলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে পটিয়া থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রাতেই ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নিহতের বড়ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের পরিবারের কোন সন্দেহ নাই। মৃত্যুর বিষয়ে পরিবারের কোন সদস্য ভবিষ্যতে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ বা মামলা মোকদ্দমা করব না।
পটিয়া থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে খবর পেয়ে আমরা নিহত গৃহবধূর মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় এনে ময়নাতদন্তের জন্য চমেক হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। নিহতের পরিবারের কারো কোন অভিযোগ না থাকায় রাতেই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।