‘আমারে মুড়িয়ে দিও পতাকার কাফনে’
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ২০:১৫
আয়েদ আবু আমরো নামের ফিলিস্তিনি যুবকের ডান হাতে পতাকা ও বাম হাতে ঘূর্ণনরত গুলতি। ছবি: আনাদোলু এজেন্সি
খালি গায়ে এক হাতে ধরে রয়েছেন দেশের পতাকা, অন্য হাতে ছুঁড়ছেন গুলতি। বুকের ভেতর আকুতি, লড়াইয়ের ময়দানে মরে গেলে যেন দেশের পতাকাকেই তার কাফন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ফিলিস্তিনি এক তরুণের এই ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ভাইরাল। অনেকেই ছবিটিকে তুলনা করছেন ফরাসি বিপ্লবের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল’-এর সঙ্গে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ অক্টোবর তুরস্কের আনাদলু সংবাদসংস্থার ফটোসাংবাদিক মুস্তাফা হাসৌনা ছবিটি তোলেন। সেখানে দেখা গেছে, ২০ বছর বয়সী আয়েদ আবু আমরো নামের ফিলিস্তিনি যুবকের ডান হাতে পতাকা ও বাম হাতে ঘূর্ণনরত গুলতি। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের দিকে গুলতি তাক করার মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হয়েছে। যুবকের পাশেই নিরাপত্তা জ্যাকেট গায়ে দৌড়াচ্ছেন সাংবাদিকরা। জ্বলন্ত টায়ার থেকে বেরুচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবিটি ইতোমধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি টুইট করা হয়েছে।
টুইটারে ছবিটি শেয়ার করে যুক্তরাজ্যের এসওএসএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লালেহ খলিলি লেখেন, ‘কি দুর্দান্ত ছবি! গাজা অবরোধ ভাঙার ১৩তম চেষ্টা।’ এর পরপরই তিনি ‘লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল’ ছবিটি দেন। তার টুইটকে সমর্থন করেন অনেকেই। তারাও ছবি দুটোর মধ্যে তুলনা করেন। মালির ফুটবল তারকা ফ্রেদেরিক কানুতে টুইট করেন, ‘ছবিটা কি পরিচিত লাগছে, বিশেষত ফরাসিদের কাছে?’
১৮৩০ সালের জুলাইয়ে শিল্পী ইউজিন দ্যলাক্রোয়া তেল রংয়ে বিখ্যাত ছবিটি আঁকেন। ছবিতে এক হাতে পতাকা, অন্য হাতে অস্ত্রসহ সামনে ধাবমান নারী- যাকে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবির নিচের অংশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে মৃত সৈনিকের দেহাবশেষ। ছবিটি ওই সময় ফরাসি রাজা দশম চার্লসের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
অনেকে অবশ্য ফিলিস্তিনি যুবকের এ ছবিকে মিকেলেঞ্জেলো বুয়োনারতির বিখ্যাত ভাস্কর্য ডেভিডের সঙ্গেও তুলনা করছেন। গোলিয়াথ হাতে ডেভিডের সঙ্গে যেন মিলে যায় খালি গায়ের মারমুখো এই প্রতিবাদী যুবকের দৃঢ় প্রত্যয়ী ভঙ্গিমা। এসব তুলনা নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস নেই আয়েদের মাঝে। ফিলিস্তিনি এই যুবক বলেন, ‘আমার ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় বিস্মিত হয়েছি। আমি জানতাম না যে, ওই সময় এক ফটোগ্রাফার আমার কাছেই ছিলেন।’ আয়েদ জানান, তিনি প্রতি শুক্র ও সোমবার বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। গত সোমবারও গাজার বেইত লাহিয়ায় এক মিছিলে শামিল হয়েছিলেন।
দেশের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া আয়েদ বলেন, ‘আমি ছবি তোলার জন্য বিক্ষোভে যাইনি। তবে এটা আমাকে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে আরো অনুপ্রেরণা দেবে।’ হাতে পতাকা নিয়ে বিক্ষোভের ব্যাপারে তার বক্তব্য, ‘আমি সব বিক্ষোভেই পতাকা নিয়ে যাই। এটা নিয়ে আমার বন্ধুরা কৌতুক করে বলে, এক হাতে পতাকা ধরে রাখার চেয়ে ইট-পাথর ছোঁড়া অনেক সহজ। তবে আমি সবসময়ই পতাকা ধরে রাখতে চাই। যদি আমি মারা যাই, তাহলে যেন এই পতাকা দিয়েই আমাকে মুড়িয়ে (কাফন) দেওয়া হয়। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। আমরা নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মর্যাদার জন্য প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দেওয়া নতুন বেষ্টনীর বিরুদ্ধে গত সাত মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের দেওয়া অবরোধেরও সমাপ্তি চেয়েছে। ৭০ বছর আগে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারের পর গত ১১ বছর ধরে নতুন অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। আহত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের মধ্যে সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যসেবী রয়েছেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ২০:১৫

খালি গায়ে এক হাতে ধরে রয়েছেন দেশের পতাকা, অন্য হাতে ছুঁড়ছেন গুলতি। বুকের ভেতর আকুতি, লড়াইয়ের ময়দানে মরে গেলে যেন দেশের পতাকাকেই তার কাফন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অধিকৃত গাজায় ইসরায়েলি সেনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ফিলিস্তিনি এক তরুণের এই ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ ও গণমাধ্যমে ভাইরাল। অনেকেই ছবিটিকে তুলনা করছেন ফরাসি বিপ্লবের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল’-এর সঙ্গে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২২ অক্টোবর তুরস্কের আনাদলু সংবাদসংস্থার ফটোসাংবাদিক মুস্তাফা হাসৌনা ছবিটি তোলেন। সেখানে দেখা গেছে, ২০ বছর বয়সী আয়েদ আবু আমরো নামের ফিলিস্তিনি যুবকের ডান হাতে পতাকা ও বাম হাতে ঘূর্ণনরত গুলতি। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সদস্যদের দিকে গুলতি তাক করার মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হয়েছে। যুবকের পাশেই নিরাপত্তা জ্যাকেট গায়ে দৌড়াচ্ছেন সাংবাদিকরা। জ্বলন্ত টায়ার থেকে বেরুচ্ছে কালো ধোঁয়া। ছবিটি ইতোমধ্যে ৫ হাজারেরও বেশি টুইট করা হয়েছে।
টুইটারে ছবিটি শেয়ার করে যুক্তরাজ্যের এসওএসএস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লালেহ খলিলি লেখেন, ‘কি দুর্দান্ত ছবি! গাজা অবরোধ ভাঙার ১৩তম চেষ্টা।’ এর পরপরই তিনি ‘লিবার্টি লিডিং দ্য পিপল’ ছবিটি দেন। তার টুইটকে সমর্থন করেন অনেকেই। তারাও ছবি দুটোর মধ্যে তুলনা করেন। মালির ফুটবল তারকা ফ্রেদেরিক কানুতে টুইট করেন, ‘ছবিটা কি পরিচিত লাগছে, বিশেষত ফরাসিদের কাছে?’
১৮৩০ সালের জুলাইয়ে শিল্পী ইউজিন দ্যলাক্রোয়া তেল রংয়ে বিখ্যাত ছবিটি আঁকেন। ছবিতে এক হাতে পতাকা, অন্য হাতে অস্ত্রসহ সামনে ধাবমান নারী- যাকে বিজয় ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ছবির নিচের অংশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে মৃত সৈনিকের দেহাবশেষ। ছবিটি ওই সময় ফরাসি রাজা দশম চার্লসের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
অনেকে অবশ্য ফিলিস্তিনি যুবকের এ ছবিকে মিকেলেঞ্জেলো বুয়োনারতির বিখ্যাত ভাস্কর্য ডেভিডের সঙ্গেও তুলনা করছেন। গোলিয়াথ হাতে ডেভিডের সঙ্গে যেন মিলে যায় খালি গায়ের মারমুখো এই প্রতিবাদী যুবকের দৃঢ় প্রত্যয়ী ভঙ্গিমা। এসব তুলনা নিয়ে তেমন উচ্ছ্বাস নেই আয়েদের মাঝে। ফিলিস্তিনি এই যুবক বলেন, ‘আমার ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় বিস্মিত হয়েছি। আমি জানতাম না যে, ওই সময় এক ফটোগ্রাফার আমার কাছেই ছিলেন।’ আয়েদ জানান, তিনি প্রতি শুক্র ও সোমবার বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন। গত সোমবারও গাজার বেইত লাহিয়ায় এক মিছিলে শামিল হয়েছিলেন।
দেশের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া আয়েদ বলেন, ‘আমি ছবি তোলার জন্য বিক্ষোভে যাইনি। তবে এটা আমাকে বিক্ষোভ চালিয়ে যেতে আরো অনুপ্রেরণা দেবে।’ হাতে পতাকা নিয়ে বিক্ষোভের ব্যাপারে তার বক্তব্য, ‘আমি সব বিক্ষোভেই পতাকা নিয়ে যাই। এটা নিয়ে আমার বন্ধুরা কৌতুক করে বলে, এক হাতে পতাকা ধরে রাখার চেয়ে ইট-পাথর ছোঁড়া অনেক সহজ। তবে আমি সবসময়ই পতাকা ধরে রাখতে চাই। যদি আমি মারা যাই, তাহলে যেন এই পতাকা দিয়েই আমাকে মুড়িয়ে (কাফন) দেওয়া হয়। আমরা আমাদের অধিকার ফেরত চাই। আমরা নিজেদের ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মর্যাদার জন্য প্রতিবাদ চালিয়ে যাব।’
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দেওয়া নতুন বেষ্টনীর বিরুদ্ধে গত সাত মাস ধরে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা ওই অঞ্চলে ইসরায়েলের দেওয়া অবরোধেরও সমাপ্তি চেয়েছে। ৭০ বছর আগে সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের বহিষ্কারের পর গত ১১ বছর ধরে নতুন অবরোধ দিয়ে রেখেছে ইসরায়েল। গত ৩০ মার্চ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২০৫ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। আহত হয়েছেন ১৮ হাজারেরও বেশি। হতাহতদের মধ্যে সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যসেবী রয়েছেন।