নিজের করা খুনের দৃশ্যে নিজেই অভিনয় করেন এই গণহত্যাকারী
অনলাইন ডেস্ক | ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:৪৮
কীভাবে মানুষ হত্যা করতেন, নিজেই তা অভিনয় করে দেখিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এক গণহত্যাকারী। দেশটির এক গণহত্যা নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটি অস্কার পুরস্কারও জিতে নেয়।
বিবিসি বাংলা জানায়, ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ সালে রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন ও নিধনযজ্ঞে নিহত হয় অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
ক্যু করতে ব্যর্থ হয়ে সেনা সদস্যরা দেশটির বামপন্থী কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তাদের হত্যা করে।
বিশ শতকের অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যাগুলোর একটি মনে করা হয় ইন্দোনেশিয়ার এই হত্যাকাণ্ডকে। যেটির কথা খুব কম মানুষই জানে।
এই গণহত্যা চালানো একটি দলের সদস্য ছিলেন আনোয়ার কঙ্গো। সাদা চুল আর শুকনো শরীরের এই ব্যক্তি অন্তত এক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বলে মনে করা হয়। যদিও এই সংখ্যা আরও বেশি এমনটাই ধারণা করেন অনেকে।
বামপন্থীদের ওপর চালানো এই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ২০১২ সালে নির্মিত হয়েছে অস্কার বিজয়ী ডকুমেন্টারি বা তথ্যচিত্র ‘দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং।’ এতে অভিনয় করে দেখান কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন আনোয়ার।
এ বছরের ২৫ অক্টোবরের ৭৮ বছর বয়সে আনোয়ার কঙ্গো মারা গিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর মেদানের একটি তেলক্ষেত্রের কাছে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে উঠেন তিনি।
১২ বছর বয়সেই অপরাধ জগতে নাম লেখান তিনি। মেদানের একটি জনপ্রিয় সিনেমা হলের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আনোয়ার। কালোবাজারি, অবৈধ জুয়া এবং স্থানীয় চাইনিজ ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায় শুরু করেন।
১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতে ব্যর্থ ক্যু হওয়ার সময়টা আসতে-আসতে আনোয়ার কঙ্গো আর তার বন্ধু-বান্ধব মিলে শতাধিক অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
ইন্দোনেশিয়ার সেই গণহত্যার নীল নকশা এঁকেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেছিল গুন্ডা-সন্ত্রাসী এবং ডানপন্থী আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
আনোয়ার কঙ্গোর দলটিকেও নিয়োগ দিয়েছিল সেনাবাহিনী। নিয়োগের পর থেকে তারা শত শত মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে।
দলটার নাম ছিল ‘ফ্রগ স্কোয়াড’ যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে ‘ব্যাঙ বাহিনী।’ তারা ছিল ওই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী হত্যাকারী গ্রুপ। এই গ্রুপের হত্যাকারী হিসেবে আনোয়ার কঙ্গো কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।
হলিউড সিনেমা দেখে মানুষকে খুন করার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতেন আনোয়ার ও তার বন্ধুরা। বিশেষ করে আল পাচিনো অভিনীত মাফিয়া সিনেমা এবং জন ওয়েনের ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো ছিল তাদের প্রিয়।
সেই সময়ে আনোয়ারের বাহিনী কতটা ভয়ানক ছিল দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং তথ্যচিত্রে সে বিষয়ে উত্তর সুমাত্রার গভর্নর শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সবাই তাকে ভয় পেত। তার নাম শুনলেই লোকে ভয়ে সেঁধিয়ে যেতো।’
রাজনৈতিক নিধনযজ্ঞের এই সময়টা ইন্দোনেশিয়াতে খুবই স্পর্শকাতর একটা ইস্যু। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সেই সময়ে লাখ খানিক মানুষকে কারাবন্দী করা হয়। কিন্তু আনোয়ার কঙ্গো তার বন্ধুদের মতন অপরাধীরা কখনোই কোনো জবাবদিহির মুখোমুখি হয়নি।
উল্টো তিনি তখন ইন্দোনেশিয়ার সরকারপন্থী দল ‘দ্য প্যানকাসিলা ইয়ুথ’-এর সম্মানিত নেতা হয়ে ওঠেন। মেদানের সর্ববৃহৎ নৈশ ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান হিসেবে ১৯৯০ এর দশকে কাজ করেন আনোয়ার।
কিন্তু এই কোম্পানির নামের আড়ালে তিনি আসলে মাদকের কারবার করতেন। তার সংগঠনে আনোয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে উপাধিও দেওয়া হয় এবং ষাটের দশকের সেই হত্যাকাণ্ডের ভূমিকার জন্য তাকে অত্যন্ত সম্মান, শ্রদ্ধা ও স্মরণ করা হয়।
দেশটির সাংবাদিক প্রদিতা সাবারিনি বিবিসিকে বলেন, ‘সেই সময় স্কুলে তাদের শেখানো হতো যে, কমিউনিস্টরা খারাপ। তারা নাস্তিক। তারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
তিনি বলছিলেন, ‘বিদ্যালয়ে আমাদের কী শেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা কখনো প্রশ্ন করিনি। এমনকি বিরাট সংখ্যায় যখন বামপন্থীদের গণহারে হত্যা করা হলো সেটি জানার পরেও আমার মনে হয়েছে: তারা তো সব বামপন্থী। অতএব, মেরে ফেলা ঠিকই আছে।’
একজন সিনেমা কর্মী আনোয়ার কঙ্গোকে খুঁজে বের করেন এবং তিনি যে কুকীর্তি করেছেন সেগুলোর মুখোমুখি করে এবং বিবেকের সামনে দাঁড় করান। তবে শুরুতে তিনি ছিল বেশ অহংকারী।
তথ্যচিত্র নির্মাতা ওপেনহেইমারের সঙ্গে আনোয়ারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০০৫ সালে। তখন সাবেক এই হত্যাকারী একে-একে তার খুনের পদ্ধতিগুলো তুলে ধরে।
দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং তথ্যচিত্রটিতে আনোয়ার ও তার বন্ধুদের অনুসরণ করা হয়। এই তথ্যচিত্রে তারা তাদের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং খুনের পদ্ধতিগুলো তুলে ধরেন।
তারা নিজেরাই ক্রিপ্ট বা পাণ্ডুলিপি লিখেন, নিজেরাই অভিনয় করেন এবং নিজেদের প্রিয় সিনেমাগুলোর আদলে সেগুলোকে প্রকাশ করেন।
তথ্যচিত্রটিকে শুরুর দিকে আনোয়ার কঙ্গো বলেন, ‘তরুণ বয়সে কী করেছি সেই গল্পই বলব।’
নায়কের ভূমিকায় তার অভিনয় যত সামনে এগিয়েছে ধীরে ধীরে তার মধ্যে অপরাধবোধ জাগতে শুরু করে।
একপর্যায়ে আনোয়ার স্বীকার করেন, একসময় রাতে তিনি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলেন, ‘আমার ঘুমে খুব ব্যাঘাত ঘটে। কী জানি, গলায় প্যাঁচ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মানুষদের মেরে ফেলার সময়, আমি তাদের মরতে দেখি বলেই হয়তো এমন হয়েছে।’
তথ্যচিত্রটির একেবারে শেষ দিকের একটি দৃশ্যে কঙ্গো নিজেই একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
তখন তিনি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন এবং খুব চুপচাপ বসে থেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি অপরাধ করেছি?’ পরবর্তীতে আবার যখন সে এই দৃশ্য দেখেন তখন অশ্রুসজল চোখে সে বলছিলেন, ‘কত মানুষের সঙ্গে আমি এমন করেছি!’
দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং এর নির্মাতা ওপেনহেইমার বলেন, ‘তথ্যচিত্রটিতে কাজ করতে গিয়ে একপর্যায়ে তার মধ্যে অপরাধবোধ দেখা দেয়। মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমেই নিজেকে ধ্বংস করে। আর এটাই হচ্ছে এই তথ্যচিত্রের মূল বার্তা।’
শেয়ার করুন
সংশ্লিষ্ট সংবাদ
অনলাইন ডেস্ক | ৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৬:৪৮

কীভাবে মানুষ হত্যা করতেন, নিজেই তা অভিনয় করে দেখিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার এক গণহত্যাকারী। দেশটির এক গণহত্যা নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্রটি অস্কার পুরস্কারও জিতে নেয়।
বিবিসি বাংলা জানায়, ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৬ সালে রাজনৈতিক দমন-নিপীড়ন ও নিধনযজ্ঞে নিহত হয় অন্তত ৫ লাখ মানুষ।
ক্যু করতে ব্যর্থ হয়ে সেনা সদস্যরা দেশটির বামপন্থী কর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ও তাদের হত্যা করে।
বিশ শতকের অন্যতম ভয়ংকর গণহত্যাগুলোর একটি মনে করা হয় ইন্দোনেশিয়ার এই হত্যাকাণ্ডকে। যেটির কথা খুব কম মানুষই জানে।
এই গণহত্যা চালানো একটি দলের সদস্য ছিলেন আনোয়ার কঙ্গো। সাদা চুল আর শুকনো শরীরের এই ব্যক্তি অন্তত এক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে বলে মনে করা হয়। যদিও এই সংখ্যা আরও বেশি এমনটাই ধারণা করেন অনেকে।
বামপন্থীদের ওপর চালানো এই হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ২০১২ সালে নির্মিত হয়েছে অস্কার বিজয়ী ডকুমেন্টারি বা তথ্যচিত্র ‘দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং।’ এতে অভিনয় করে দেখান কীভাবে মানুষ হত্যা করেছেন আনোয়ার।
এ বছরের ২৫ অক্টোবরের ৭৮ বছর বয়সে আনোয়ার কঙ্গো মারা গিয়েছেন। ইন্দোনেশিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর মেদানের একটি তেলক্ষেত্রের কাছে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে উঠেন তিনি।
১২ বছর বয়সেই অপরাধ জগতে নাম লেখান তিনি। মেদানের একটি জনপ্রিয় সিনেমা হলের টিকিট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন আনোয়ার। কালোবাজারি, অবৈধ জুয়া এবং স্থানীয় চাইনিজ ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায় শুরু করেন।
১৯৬৫ সালে ইন্দোনেশিয়াতে ব্যর্থ ক্যু হওয়ার সময়টা আসতে-আসতে আনোয়ার কঙ্গো আর তার বন্ধু-বান্ধব মিলে শতাধিক অপরাধ ও অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
ইন্দোনেশিয়ার সেই গণহত্যার নীল নকশা এঁকেছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করেছিল গুন্ডা-সন্ত্রাসী এবং ডানপন্থী আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
আনোয়ার কঙ্গোর দলটিকেও নিয়োগ দিয়েছিল সেনাবাহিনী। নিয়োগের পর থেকে তারা শত শত মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করে।
দলটার নাম ছিল ‘ফ্রগ স্কোয়াড’ যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে ‘ব্যাঙ বাহিনী।’ তারা ছিল ওই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী হত্যাকারী গ্রুপ। এই গ্রুপের হত্যাকারী হিসেবে আনোয়ার কঙ্গো কুখ্যাত হয়ে ওঠেন।
হলিউড সিনেমা দেখে মানুষকে খুন করার নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করতেন আনোয়ার ও তার বন্ধুরা। বিশেষ করে আল পাচিনো অভিনীত মাফিয়া সিনেমা এবং জন ওয়েনের ওয়েস্টার্ন সিনেমাগুলো ছিল তাদের প্রিয়।
সেই সময়ে আনোয়ারের বাহিনী কতটা ভয়ানক ছিল দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং তথ্যচিত্রে সে বিষয়ে উত্তর সুমাত্রার গভর্নর শামসুল আরেফিন বলেন, ‘সবাই তাকে ভয় পেত। তার নাম শুনলেই লোকে ভয়ে সেঁধিয়ে যেতো।’
রাজনৈতিক নিধনযজ্ঞের এই সময়টা ইন্দোনেশিয়াতে খুবই স্পর্শকাতর একটা ইস্যু। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে সেই সময়ে লাখ খানিক মানুষকে কারাবন্দী করা হয়। কিন্তু আনোয়ার কঙ্গো তার বন্ধুদের মতন অপরাধীরা কখনোই কোনো জবাবদিহির মুখোমুখি হয়নি।
উল্টো তিনি তখন ইন্দোনেশিয়ার সরকারপন্থী দল ‘দ্য প্যানকাসিলা ইয়ুথ’-এর সম্মানিত নেতা হয়ে ওঠেন। মেদানের সর্ববৃহৎ নৈশ ক্লাবের নিরাপত্তারক্ষীদের প্রধান হিসেবে ১৯৯০ এর দশকে কাজ করেন আনোয়ার।
কিন্তু এই কোম্পানির নামের আড়ালে তিনি আসলে মাদকের কারবার করতেন। তার সংগঠনে আনোয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে উপাধিও দেওয়া হয় এবং ষাটের দশকের সেই হত্যাকাণ্ডের ভূমিকার জন্য তাকে অত্যন্ত সম্মান, শ্রদ্ধা ও স্মরণ করা হয়।
দেশটির সাংবাদিক প্রদিতা সাবারিনি বিবিসিকে বলেন, ‘সেই সময় স্কুলে তাদের শেখানো হতো যে, কমিউনিস্টরা খারাপ। তারা নাস্তিক। তারা জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।’
তিনি বলছিলেন, ‘বিদ্যালয়ে আমাদের কী শেখানো হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা কখনো প্রশ্ন করিনি। এমনকি বিরাট সংখ্যায় যখন বামপন্থীদের গণহারে হত্যা করা হলো সেটি জানার পরেও আমার মনে হয়েছে: তারা তো সব বামপন্থী। অতএব, মেরে ফেলা ঠিকই আছে।’
একজন সিনেমা কর্মী আনোয়ার কঙ্গোকে খুঁজে বের করেন এবং তিনি যে কুকীর্তি করেছেন সেগুলোর মুখোমুখি করে এবং বিবেকের সামনে দাঁড় করান। তবে শুরুতে তিনি ছিল বেশ অহংকারী।
তথ্যচিত্র নির্মাতা ওপেনহেইমারের সঙ্গে আনোয়ারের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০০৫ সালে। তখন সাবেক এই হত্যাকারী একে-একে তার খুনের পদ্ধতিগুলো তুলে ধরে।
দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং তথ্যচিত্রটিতে আনোয়ার ও তার বন্ধুদের অনুসরণ করা হয়। এই তথ্যচিত্রে তারা তাদের হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি রোমন্থন করেন এবং খুনের পদ্ধতিগুলো তুলে ধরেন।
তারা নিজেরাই ক্রিপ্ট বা পাণ্ডুলিপি লিখেন, নিজেরাই অভিনয় করেন এবং নিজেদের প্রিয় সিনেমাগুলোর আদলে সেগুলোকে প্রকাশ করেন।
তথ্যচিত্রটিকে শুরুর দিকে আনোয়ার কঙ্গো বলেন, ‘তরুণ বয়সে কী করেছি সেই গল্পই বলব।’
নায়কের ভূমিকায় তার অভিনয় যত সামনে এগিয়েছে ধীরে ধীরে তার মধ্যে অপরাধবোধ জাগতে শুরু করে।
একপর্যায়ে আনোয়ার স্বীকার করেন, একসময় রাতে তিনি নিয়মিত দুঃস্বপ্ন দেখতেন। তিনি বলেন, ‘আমার ঘুমে খুব ব্যাঘাত ঘটে। কী জানি, গলায় প্যাঁচ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মানুষদের মেরে ফেলার সময়, আমি তাদের মরতে দেখি বলেই হয়তো এমন হয়েছে।’
তথ্যচিত্রটির একেবারে শেষ দিকের একটি দৃশ্যে কঙ্গো নিজেই একজন আক্রান্ত ব্যক্তির ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
তখন তিনি ক্যামেরা বন্ধ করতে বলেন এবং খুব চুপচাপ বসে থেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমি অপরাধ করেছি?’ পরবর্তীতে আবার যখন সে এই দৃশ্য দেখেন তখন অশ্রুসজল চোখে সে বলছিলেন, ‘কত মানুষের সঙ্গে আমি এমন করেছি!’
দ্য অ্যাক্ট অব কিলিং এর নির্মাতা ওপেনহেইমার বলেন, ‘তথ্যচিত্রটিতে কাজ করতে গিয়ে একপর্যায়ে তার মধ্যে অপরাধবোধ দেখা দেয়। মানুষ তার নিজের কৃতকর্মের মাধ্যমেই নিজেকে ধ্বংস করে। আর এটাই হচ্ছে এই তথ্যচিত্রের মূল বার্তা।’