ফের আইএসের উত্থানের শঙ্কা
অনলাইন ডেস্ক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:২১
জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলায় তারা নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে।
বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার বাগদাদে জোড়া আত্মঘাতী বোমা আবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে সিরিয়া এবং ইরাকে একসময় বিশাল ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী এই গোষ্ঠী এখনো বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।
এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিয়া সম্প্রদায়। সুন্নি জঙ্গিরা তাদের ‘রাফিদিয়ান বা ইসলাম অস্বীকারকারী’ হিসেবে দেখে থাকে।
লন্ডনের কিংস কলেজের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক পিটার নিউম্যান বলেন, ‘বাগদাদের এই হামলার মধ্য দিয়ে আইএস তার শত্রু-মিত্র সবাইকে জানিয়ে দিতে চেয়েছে যে তারা এখনো আছে, এবং তারা এখনো বড় ধরনের হামলা চালাতে প্রস্তুত।’
অবশ্য আইএসের জন্য এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে- বিপজ্জনক হলেও তারা আগের মতো শক্তিশালী নেই।
আফ্রিকার জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ২০১৫ সালে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
একসময় যে বিশাল ভূখণ্ড তারা নিয়ন্ত্রণ করতো সেটার আয়তন ছিল বেলজিয়ামের আয়তনের প্রায় সমান।
আইএস পাঁচ বছর ধরে স্বঘোষিত ‘খিলাফতে’র অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো, ক্ষেতের ফসল তুলে নিত, তেল উৎপাদন করতো এবং সেই তেল কালোবাজারে বিক্রি করতো।
তার চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো তারা ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার লোককে তারা তাদের লড়াইয়ে শামিল হতে প্রলুব্ধ করতে পারতো।
সিরিয়ার বাঘুজে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর হাতে পরাজয়ের মধ্য আইএস খেলাফতের অবসান ঘটে। কিন্তু লড়াই শেষ হলেও প্রায় ১০,০০০ আইএস যোদ্ধা ইরাক এবং সিরিয়ায় পালিয়ে রয়েছে।
তারা সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে আছে, সহজেই তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করতে পারে এবং স্থানীয় সুন্নি জনগণের মধ্যে যেকোনো ক্ষোভকে তারা উসকে দিতে প্রস্তুত।
আইএসের খিলাফতের ভৌগোলিক কাঠামো এতটাই বিনষ্ট হয়েছে যে তারা আবার সেটাকে মেরামত করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারবে তেমন সম্ভাবনা খুবই কম।
তারা যে নিজেরাই এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, তারা সেটাও মানুষকে বুঝতে দিতে চায় না। সেজন্যে তারা যে কৌশল বেছে নিয়েছে, সেটা একসময় ইরাকের ইসলামিক গোষ্ঠী খুব দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতো।
আর সেটা হলো- বড় লক্ষ্যবস্তুর ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, স্থানীয় জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানো এবং মানুষের জীবনযাত্রা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেখতে পেলেই সেটাকে বিনষ্ট করা।
সিরিয়া এবং ইরাকের বাইরে গত দুই বছর ধরে আইএসপন্থী দলগুলো সাফল্য পেয়েছে।
আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি শোচনীয় হামলার পেছনে আইএসের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এখন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, এই দশকে আইএস তৎপরতার প্রধান কেন্দ্র হবে আফ্রিকা। সেখানে আইএসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আল-কায়দার সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠীর।
আফ্রিকায় সাহেলের মতো অঞ্চল যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল, যেখানে প্রচুর দুর্নীতি চলে এবং যেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা নেই বললেই চলে, সেই সব এলাকায় আইএস এবং আল-কায়েদা উভয়েই তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেবে।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দুটি গোষ্ঠীই ২০২০ সালে তাদের অভিযানের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
নানা ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যে লোকে এখন আগের মতো বাড়ির বাইরে যায় না, বড় ধরনের জন সমাবেশ হয় না এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা দেশসহ নানা জায়গায় হামলা চালানোর খায়েশ তাদের এখনো রয়ে গেছে। তাদের পক্ষ হয়ে সেসব হামলা চালাতে উৎসাহী লোকেরও অভাব নেই।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:২১

জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। ইরাক ও সিরিয়ায় সাম্প্রতিক কয়েকটি হামলায় তারা নিজের অবস্থান জানান দিয়েছে।
বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার বাগদাদে জোড়া আত্মঘাতী বোমা আবার মনে করিয়ে দিয়েছে যে সিরিয়া এবং ইরাকে একসময় বিশাল ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী এই গোষ্ঠী এখনো বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটাতে পারে।
এই হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল শিয়া সম্প্রদায়। সুন্নি জঙ্গিরা তাদের ‘রাফিদিয়ান বা ইসলাম অস্বীকারকারী’ হিসেবে দেখে থাকে।
লন্ডনের কিংস কলেজের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক পিটার নিউম্যান বলেন, ‘বাগদাদের এই হামলার মধ্য দিয়ে আইএস তার শত্রু-মিত্র সবাইকে জানিয়ে দিতে চেয়েছে যে তারা এখনো আছে, এবং তারা এখনো বড় ধরনের হামলা চালাতে প্রস্তুত।’
অবশ্য আইএসের জন্য এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে- বিপজ্জনক হলেও তারা আগের মতো শক্তিশালী নেই।
আফ্রিকার জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ২০১৫ সালে আইএসের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
একসময় যে বিশাল ভূখণ্ড তারা নিয়ন্ত্রণ করতো সেটার আয়তন ছিল বেলজিয়ামের আয়তনের প্রায় সমান।
আইএস পাঁচ বছর ধরে স্বঘোষিত ‘খিলাফতে’র অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতো, ক্ষেতের ফসল তুলে নিত, তেল উৎপাদন করতো এবং সেই তেল কালোবাজারে বিক্রি করতো।
তার চেয়েও যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা হলো তারা ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে হাজার হাজার লোককে তারা তাদের লড়াইয়ে শামিল হতে প্রলুব্ধ করতে পারতো।
সিরিয়ার বাঘুজে মার্কিন-নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর হাতে পরাজয়ের মধ্য আইএস খেলাফতের অবসান ঘটে। কিন্তু লড়াই শেষ হলেও প্রায় ১০,০০০ আইএস যোদ্ধা ইরাক এবং সিরিয়ায় পালিয়ে রয়েছে।
তারা সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে আছে, সহজেই তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জোগাড় করতে পারে এবং স্থানীয় সুন্নি জনগণের মধ্যে যেকোনো ক্ষোভকে তারা উসকে দিতে প্রস্তুত।
আইএসের খিলাফতের ভৌগোলিক কাঠামো এতটাই বিনষ্ট হয়েছে যে তারা আবার সেটাকে মেরামত করে আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে পারবে তেমন সম্ভাবনা খুবই কম।
তারা যে নিজেরাই এখন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, তারা সেটাও মানুষকে বুঝতে দিতে চায় না। সেজন্যে তারা যে কৌশল বেছে নিয়েছে, সেটা একসময় ইরাকের ইসলামিক গোষ্ঠী খুব দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতো।
আর সেটা হলো- বড় লক্ষ্যবস্তুর ওপর চোরাগোপ্তা হামলা, স্থানীয় জনসাধারণকে ভয়ভীতি দেখানো এবং মানুষের জীবনযাত্রা একটু স্বাভাবিক হয়ে আসছে দেখতে পেলেই সেটাকে বিনষ্ট করা।
সিরিয়া এবং ইরাকের বাইরে গত দুই বছর ধরে আইএসপন্থী দলগুলো সাফল্য পেয়েছে।
আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি শোচনীয় হামলার পেছনে আইএসের হাত রয়েছে বলে মনে করা হয়।
এখন অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করেন, এই দশকে আইএস তৎপরতার প্রধান কেন্দ্র হবে আফ্রিকা। সেখানে আইএসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আল-কায়দার সমর্থক বিভিন্ন গোষ্ঠীর।
আফ্রিকায় সাহেলের মতো অঞ্চল যেখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল, যেখানে প্রচুর দুর্নীতি চলে এবং যেখানে সীমান্ত নিরাপত্তা নেই বললেই চলে, সেই সব এলাকায় আইএস এবং আল-কায়েদা উভয়েই তাদের তৎপরতা বাড়িয়ে দেবে।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দুটি গোষ্ঠীই ২০২০ সালে তাদের অভিযানের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।
নানা ধরনের বিধিনিষেধের মধ্যে লোকে এখন আগের মতো বাড়ির বাইরে যায় না, বড় ধরনের জন সমাবেশ হয় না এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
কিন্তু পশ্চিমা দেশসহ নানা জায়গায় হামলা চালানোর খায়েশ তাদের এখনো রয়ে গেছে। তাদের পক্ষ হয়ে সেসব হামলা চালাতে উৎসাহী লোকেরও অভাব নেই।