যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্টরা কীভাবে কাজ করে
অনলাইন ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:২৮
গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০টি লবিস্ট ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ছিল
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রশ্নে দেশের রাজনীতিতে তুমুল তর্ক-বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। পাল্টাপাল্টি তথ্য দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি।
র্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। পাশাপাশি লবিস্টের কাজ ও নিয়োগের তাৎপর্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবেই বা কাজ করে লবিস্ট?
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রণেতাদের কাছে তথ্য তুলে ধরার জন্য লবিস্ট কাজ করে থাকেন।
তারা কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি কোন দেশের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের তথ্য দিয়ে থাকে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তারের জন্যও তথ্য তুলে ধরা এই লবিস্টদের কাজ।
এই পেশায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
নিজের এক পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০টি লবিস্ট ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ছিল।
লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে নিবন্ধন করতে হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তদারকি করে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিভিশন।
ফরেন লবিস্ট এবং অভ্যন্তরীণ লবিস্ট-এই দুই ধরনের লবিস্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ভেতরে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে থাকে অভ্যন্তরীণ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্য যেকোনো দেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দেশ নিয়োগ করতে পারে ফরেন লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও কোন ব্যক্তি অন্য দেশের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করতে পারেন।
দেশটিতে ১৯৩৮ সাল থেকে ফরেন এজেন্সি অ্যাক্ট নামে একটি আইন আছে। এই আইনের অধীনে ফরেন লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন রয়েছে।
লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যখন কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোন দেশের পক্ষ হয়ে কাজ করে, তখন ওই প্রতিষ্ঠানকে তার কাজের বিস্তারিত প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
কারা কার হয়ে কী ধরনের কাজ করছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যখন কাজ নেয়, তখন প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানটি কাজের বিনিময়ে কত অর্থ পাবে-সেটাও চুক্তিতে থাকে।
আরেকজন বিশ্লেষক অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন মনে করেন, লবিস্ট ফার্মের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজের ক্ষেত্রে অর্থের একটা অংশকে ননপ্রফিট হিসেবে দেখানোর সুযোগ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বুশের সময় থেকে এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এবং বাইরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাধারণ লবিস্টের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, যাতে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়, এমন কোন আইন তৈরি না হয়।
সে জন্য লবিস্ট প্রতিষ্ঠান তাদের চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, অন্য দেশ সাধারণ তাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে।
আরও জানান, লবিস্ট প্রতিষ্ঠান সেই দেশের অনুকূলে তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরে। একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম বা নাগরিক প্রতিষ্ঠান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠনের কাছেও সংশ্লিষ্ট দেশের পক্ষে তথ্য দিয়ে থাকে।
অনেক লবিস্ট ফার্ম অনেক ক্ষেত্রে পিআর বা গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে থাকে।
অধ্যাপক রীয়াজ মনে করেন, কোন দেশ যখন তাদের সুশাসনের অভাব বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য লবিস্টের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করে, তখন সেই তথ্য কতটা সঠিক-সেই প্রশ্ন থাকে এবং অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
যদিও কোন দেশের ব্যাপারে নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রণেতারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য যাচাই করে থাকেন। কিন্তু লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিনিধির অনুকূলে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের মধ্যে ইসরায়েলের লবিস্ট যুক্তরাষ্ট্র্রে খুব প্রভাবশালী-সেটা সাধারণ মানুষেরও অজানা নয়।
আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ওষুধ ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর লবিস্টদের প্রভাবের কারণে ভালো স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:২৮

যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের প্রশ্নে দেশের রাজনীতিতে তুমুল তর্ক-বিতর্ক দেখা যাচ্ছে। পাল্টাপাল্টি তথ্য দিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি।
র্যাব এবং এর সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। পাশাপাশি লবিস্টের কাজ ও নিয়োগের তাৎপর্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবেই বা কাজ করে লবিস্ট?
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আইন প্রণেতাদের কাছে তথ্য তুলে ধরার জন্য লবিস্ট কাজ করে থাকেন।
তারা কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি কোন দেশের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে প্রভাব বিস্তার করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের তথ্য দিয়ে থাকে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তারের জন্যও তথ্য তুলে ধরা এই লবিস্টদের কাজ।
এই পেশায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান বা ফার্ম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
নিজের এক পরিসংখ্যানের উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮০টি লবিস্ট ফার্ম বা প্রতিষ্ঠান ছিল।
লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের কাছে নিবন্ধন করতে হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড তদারকি করে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি ডিভিশন।
ফরেন লবিস্ট এবং অভ্যন্তরীণ লবিস্ট-এই দুই ধরনের লবিস্ট রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ভেতরে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে থাকে অভ্যন্তরীণ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্য যেকোনো দেশের ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং দেশ নিয়োগ করতে পারে ফরেন লবিস্ট প্রতিষ্ঠানকে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও কোন ব্যক্তি অন্য দেশের পক্ষে লবিস্ট নিয়োগ করতে পারেন।
দেশটিতে ১৯৩৮ সাল থেকে ফরেন এজেন্সি অ্যাক্ট নামে একটি আইন আছে। এই আইনের অধীনে ফরেন লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ লবিস্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন রয়েছে।
লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যখন কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোন দেশের পক্ষ হয়ে কাজ করে, তখন ওই প্রতিষ্ঠানকে তার কাজের বিস্তারিত প্রকাশ করার বিধান রয়েছে।
কারা কার হয়ে কী ধরনের কাজ করছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টকে জানাতে হয়।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, লবিস্ট প্রতিষ্ঠান যখন কাজ নেয়, তখন প্রতিষ্ঠানটি সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রতিষ্ঠানটি কাজের বিনিময়ে কত অর্থ পাবে-সেটাও চুক্তিতে থাকে।
আরেকজন বিশ্লেষক অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন মনে করেন, লবিস্ট ফার্মের কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজের ক্ষেত্রে অর্থের একটা অংশকে ননপ্রফিট হিসেবে দেখানোর সুযোগ রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বুশের সময় থেকে এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এবং বাইরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাধারণ লবিস্টের মাধ্যমে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, যাতে তাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়, এমন কোন আইন তৈরি না হয়।
সে জন্য লবিস্ট প্রতিষ্ঠান তাদের চুক্তিবদ্ধ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পক্ষের তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, অন্য দেশ সাধারণ তাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকলে যুক্তরাষ্ট্র লবিস্ট নিয়োগ করে থাকে।
আরও জানান, লবিস্ট প্রতিষ্ঠান সেই দেশের অনুকূলে তথ্যাদি যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের কাছে তুলে ধরে। একইসঙ্গে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম বা নাগরিক প্রতিষ্ঠান এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠনের কাছেও সংশ্লিষ্ট দেশের পক্ষে তথ্য দিয়ে থাকে।
অনেক লবিস্ট ফার্ম অনেক ক্ষেত্রে পিআর বা গণসংযোগ প্রতিষ্ঠান হিসেবেও কাজ করে থাকে।
অধ্যাপক রীয়াজ মনে করেন, কোন দেশ যখন তাদের সুশাসনের অভাব বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য লবিস্টের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করে, তখন সেই তথ্য কতটা সঠিক-সেই প্রশ্ন থাকে এবং অনেক সময় বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
যদিও কোন দেশের ব্যাপারে নীতিগত কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষ এবং আইন প্রণেতারা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য যাচাই করে থাকেন। কিন্তু লবিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রতিনিধির অনুকূলে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
অধ্যাপক মেহনাজ মোমেন বলেন, বিভিন্ন দেশের মধ্যে ইসরায়েলের লবিস্ট যুক্তরাষ্ট্র্রে খুব প্রভাবশালী-সেটা সাধারণ মানুষেরও অজানা নয়।
আরও উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ওষুধ ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর লবিস্টদের প্রভাবের কারণে ভালো স্বাস্থ্যনীতি গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।