
ইউক্রেনে দখল করা কয়েকটি এলাকা হাতছাড়া হওয়ায় সেনা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর জানানো হয়েছিল, তিন লাখ রিজার্ভ সেনার পাশাপাশি যাদের সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরও যুদ্ধে ডাকা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে তরুণ ও যুবক রুশ নাগরিকদের মধ্যে দেশ ছেড়ে পালানোর হিড়িক পড়েছে। এতে করে রুশ সীমান্তে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। এর ফলে রুশ সীমান্ত বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য আংশিক সৈন্য সমাবেশের ঘোষণা দেওয়ার পর রাশিয়ায় কয়েকদিন ধরে বিশৃঙ্খল দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। তবে রাশিয়া ছেড়ে পালিয়ে যেতে চাওয়া সামরিক-বয়স্ক এসব পুরুষদের দেশত্যাগ বন্ধ করতে রাশিয়ার সীমানা সিল করা হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।
সোমবার সীমান্ত বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি’।
ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য রিজার্ভ সৈন্য তলবের বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিনের ওই ঘোষণার পর থেকেই রাশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাশিয়ার আইন অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া সমাবেশ করা নিষিদ্ধ। এরপরও রাশিয়ার শহরগুলোজুড়ে বড় আকারের বিক্ষোভ করেন অনেকে। বিক্ষোভ সমাবেশ করার কারণে এক হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছিল রুশ কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া এড়াতে হাজার হাজার তরুণ দেশ ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। জর্জিয়া ও ফিনল্যান্ড সীমান্তে দেশত্যাগের জন্য দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মী, ব্যাংকার আর গণমাধ্যমকর্মীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে হবে না বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
আলজাজিরা বলছে, রাশিয়ার বাইরে যাওয়া যাবে এমন ফ্লাইটগুলোর টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে এবং সীমান্ত চেকপয়েন্টগুলোতে গাড়ির স্তূপ জমে গেছে। জর্জিয়ার যেতে একমাত্র সীমান্ত রাস্তায় ৪৮ ঘণ্টা ধরে গাড়ির সারি রয়েছে। রাশিয়ার এই প্রতিবেশী দেশটি রুশ নাগরিকদের ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়।
জর্জিয়ার সীমান্ত ক্রসিংয়ে দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস নিউজ এজেন্সির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ডেভিড নামে এক রুশ নাগরিক বলেছেন, ‘আতঙ্ক। আমার পরিচিত সকলেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আমরা সেই শাসন থেকে পালাচ্ছি যারা মানুষ হত্যা করে’। এছাড়া কাজাখস্তান এবং মঙ্গোলিয়ার সীমান্ত ক্রসিংয়ের রাস্তায়ও গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে রুশ-অধিভুক্ত ক্রিমিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী সিনিয়র আইনপ্রণেতা সের্গেই সেকভ আরআইএ নভোস্তি নিউজ এজেন্সিকে বলেছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে (সেনাসদস্য হিসেবে) নিয়োগের জন্য নির্ধারিত বয়সের প্রত্যেকেরই বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা উচিৎ’।
মেডুজা এবং নোভায়া গাজেটা ইউরোপ নামে রাশিয়ার দুটি নির্বাসিত নিউজ সাইটও এ বিষয়ে সরব হয়েছে। রাশিয়ার অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে উভয় সাইটই জানিয়েছে, পুরুষদের দেশের বাইরে চলে যাওয়া নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো ‘সামরিক সংহতিকরণ’ বা সামরিক বাহিনীর সেনাসংখ্যা বাড়াতে সেনা সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন পুতিন। গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদন বাড়ানোর জন্যও পুতিন বাড়তি অর্থ বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
পুতিনের এই ঘোষণায় প্রমাদ গুনছে পশ্চিমা বিশ্ব। আশঙ্কা করা হচ্ছে পুতিন হয়তো সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ আরো জোরদার করতে পারেন। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন।
আরও পড়ুন...
পরিবেশবিদদের দাবি উপেক্ষা করে আটলান্টিক মহাসাগরে নিজেদের একটি বিমানবাহী রণতরী ডুবিয়ে দিয়েছে লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। ব্যবহারের অনুপযোগী ও পুরনো হয়ে যাওয়ায় শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ডুবিয়ে দেওয়া হয় এটি।
ব্রাজিলের নৌ বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, রণতরী ডোবানোর বিষয়টি শুক্রবার সন্ধ্যার পর সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি ব্রাজিলের উপকূল থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে আটলান্টিক মহাসাগরের একটি স্থানে ডোবানো হয়েছে, যে স্থানটির গভীরতা প্রায় ১৬ হাজার ফুট।
তবে এ নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন পরিবেশবিদরা। তারা দাবি করেছিলেন, রণতরীটিতে অনেক বিষাক্ত পদার্থ আছে। এগুলো সাগরের পানিতে মিশে পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।
ছয় দশক পুরনো ‘সাও পাওলো’ নামের রণতরীটি অন্য কোনো দেশের বন্দরে রাখতে চেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কেউ এটি রাখতে রাজি হয়নি। ফলে এটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, রণতরীটি ১৯৫০ সালে ফ্রান্সে তৈরি করা হয়েছিল। ফরাসি নৌ বাহিনী দীর্ঘ ৩৭ বছর ‘ফো’ নামে এটি ব্যবহার করে।
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের প্রথম পরমাণু পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় রণতরীটি। এছাড়া ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এটি আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং যুগোস্লাভিয়ায় মোতায়েন করা হয়। ব্রাজিল ২০০০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে রণতরীটি কিনে নেয়। কিন্তু মাত্র ৫ বছরের মধ্যে এটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
২০২২ সালে ব্রাজিল সরকার এই রণতরী ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। এ নিয়ে তুরস্কের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিও করে তারা। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতির কথা চিন্তা করে তুরস্কের সরকার এতে বাধা দেয়। এরপর এটি আবার ব্রাজিলে ফিরিয়ে আনা হয়।
ব্যাপক কর্মী সংকটে ভুগছে জার্মানির কারাগারগুলো। ফলে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির কারা ব্যবস্থাপনা। এ মুহূর্তে প্রায় দুই হাজার কর্মীর সংকট রয়েছে দেশটির বিভিন্ন কারাগারে। আর এই সংকট সামাল দিতে বিদেশি কর্মীদের জার্মানির শ্রমবাজারে যুক্ত করতে চায় সরকার। এজন্য নেওয়া হয়েছে প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
জার্মানির ফেডারেশন অব প্রিজন সার্ভিস এমপ্লয়িজ জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন কারাগারে মোট দুই হাজার পদ খালি রয়েছে। যদিও ট্রেড ইউনিয়নের প্রধান রেনে ম্যুলারের দাবি, শূন্য পদের সংখ্যা আরও বেশি।
তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ কারাগার ব্যবস্থাপনা বিবেচনায় নিলে কর্মী ঘাটতির সংখ্যা দ্বিগুণ হবে। কিন্তু এতগুলো খালি পদের বিপরীতে আমরা কোনো আবেদন পাচ্ছি না’।
কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত জার্মানির বিভিন্ন কারাগারে মোট বন্দির সংখ্যা ৫৬ হাজার। ট্রেড ইউনিয়ন প্রধান রেনে ম্যুলারের মতে, দেশের কারাগারগুলোতে মোট কর্মীর সংখ্যা ৩৮ হাজার।
তিনি বলেন, ‘কারাগারে বন্দিদের সংশোধনের বিষয়টি এখন শুধুই কাগজপত্রে। অথচ এটি কারারক্ষীদের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু একজন কর্মীকে যদি ৭০ জনের দায়িত্ব নিতে হয় তাহলে আর কী বলার থাকে’।
জার্মানির সংশোধনাগারগুলোতে মানসিক রোগীর সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখ করে রেনে ম্যুলার বলেন, ‘মানসিক রোগীদের জন্য আর জায়গা নেই’। কারাগারে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের সাবেক সমর্থকরা থাকায় উগ্রপন্থি ও বিপজ্জনক বন্দিদের জন্য কেন্দ্রীয় আটককেন্দ্র তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি নদীতে সাঁতার কাটতে গিয়ে হাঙরের আক্রমণে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানী পার্থের বন্দর শহর ফ্রেম্যান্টলের সোয়ান নদী থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, ওই কিশোরী বন্ধুদের সঙ্গে জেট স্কিতে চড়ছিল। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া পুলিশের পরিদর্শক পল রবিনসন বলেছেন, ‘মেয়েটি সম্ভবত কাছাকাছি দেখা একটি ডলফিনের সঙ্গে সাঁতার কাটতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। ঘটনাটি খুব বেদনাদায়ক। মেয়েটিকে হারিয়ে তার পরিবার একেবারেই বিধ্বস্ত। যদিও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন নদীর ওই অংশে হাঙর থাকা অস্বাভাবিক’।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি বছর প্রায় ২০টি ঘটনা ঘটে, যেখানে হাঙরের আক্রমণের কথা জানা যায়। তবে এর বেশিরভাগই ঘটে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়।
যদিও দেশটিতে হাঙ্গরের আক্রমণে মারা যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক। এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, দেশটিতে হাঙরের আক্রমণে মৃত্যুর হার বছরে ০.৯ শতাংশ।
পাকিস্তানে নিষিদ্ধ হলো জনপ্রিয় অনলাইন বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া। ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমার মধ্যে ধর্মীয় অবমাননামূলক তথ্য অপসারণ না করায় এ পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির টেলিকমিউনিকেশন অথরিটি (পিটিএ)। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) এ খবর জানিয়েছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডন।
পিটিএ মুখপাত্র মালাহাত ওবায়েদ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে নিষেধাজ্ঞাটি আদেশ অমান্য করার জন্য আরোপ করা হয়েছে। উইকিপিডিয়া নির্দিষ্ট ধর্মীয় অবমাননামূলক তথ্য মুছে ফেললে সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে’।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ধর্মীয় অবমাননামূলক নিবন্ধ দ্রুত সরিয়ে নিতে উইকিপিডিয়াকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পিটিএ। এ বিষয়ে শুনানির সুযোগও দেওয়া হয়েছিল। তবে প্ল্যাটফর্মটি বিষয়বস্তু সরিয়ে নেয়নি এবং কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থিত হয়নি।
বুধবার (০১ ফেব্রুয়ারি) উইকিপিডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবাদ বিবৃতি প্রকাশ করে পিটিএ। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে শনিবার।
উইকিপিডিয়া পরিচালনা করে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উইকিপিডিয়ায় অন্তর্ভুক্ত তথ্যের বিষয়ে তাদের কোনো হাত নেই। তারা তথ্য নিয়ন্ত্রণ করে না। ফলে তথ্য মুছে দেওয়ারও সুযোগ নেই তাদের।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পিটিএ’র এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম জনবহুল দেশটির ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে সবাই।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পিটিএ উইকিপিডিয়া এবং গুগলকে বিদ্বেষমূলক বিষয়বস্তু প্রচারের জন্য নোটিশ দিয়েছিল। এর আগে দেশটিতে কয়েকবছর ইউটিউব বন্ধ করে রাখা হয়। এমনকি দেশটি অশালীন ও অনৈতিক কনটেন্টের কারণে বেশ কয়েকবার ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকও বন্ধ করে দিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ভাসতে থাকা চীনের গুপ্তচর বেলুন নিয়ে কূটনৈতিক মহলের হইচই এখনো থামেনি। এর মধ্যেই লাতিন আমেরিকায় আরেকটি গুপ্তচর বেলুন দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এটি যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন।
শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে। তবে লাতিন আমেরিকার কোন দেশের ওপর কিংবা কবে থেকে বেলুনটি উড়ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
পেন্টাগনের মুখপাত্র প্যাট রাইডার সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো লাতিন আমেরিকার আকাশেও সন্দেহজনক বেলুন উড়ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ধারণা করা হচ্ছে, এটি আরেকটি চীনা গোয়েন্দা বেলুন’। কিন্তু একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, দ্বিতীয় বেলুনটি যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন না তিনি।
এর আগে বেলুনকাণ্ডে শুক্রবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের দুই দিনের নির্ধারিত চীন সফর স্থগিত করার কথা জানায় পেন্টাগন। সফরটি হলে ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর ব্লিঙ্কেনই প্রথম মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে চীন সফর করতেন।
বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে রয়েছেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে গুপ্তচর বেলুনের উপস্থিতি দেশটির সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং পরিস্থিতি অনুমোদিত হলে আমি বেইজিং সফরের পরিকল্পনা করছি’।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ভাসতে থাকা বেলুনটি নিজেদের বলে স্বীকার করে নেয় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, নজরদারি চালানোর অভিযোগ ওঠা বেলুনটি বেসামরিক একটি এয়ারশিপ। আবহাওয়া সংক্রান্ত কাজে বেলুনটি ব্যবহার করা হয়। এটি পরিকল্পিত পথচ্যুত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। অনিচ্ছাকৃত এ ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে চীন।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।