
মূলত আর্থিক বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করে থাকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ। তবে কেবল গবেষণা নয় মাঝে মধ্যেই একেকটি বড় কোম্পানির ভেতরের বিষয় তুলে ধরে বিশ্বের দরবারে।
তেমনই চলতি বছর জানুয়ারিতে তাদের টার্গেট ছিলেন বিশ্বের অন্যতম ধনী এবং ভারতের অত্যন্ত প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানি। গত ২৪ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এখনো ঝড় বইছে ভারতীয় ধনকুবের আদানির সাম্রাজ্যে।
ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ বা ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের সম্পদ হারিয়েছে আদানি গ্রুপ। বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর অবস্থান থেকে নেমে আদানি পৌঁছেছেন ২৩তম অবস্থানে।
তবে সেই রিপোর্টের জের কাটতে না কাটতেই অচিরেই আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে এই মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিনডেনবার্গ রিসার্চ।
বৃহস্পতিবার সংস্থাটি টুইট বার্তায় জানায় অচিরেই আরও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চলেছে তারা। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তবে পরবর্তী প্রতিবেদনটি কবে প্রকাশ করা হবে তা টুইটে জানায়নি গবেষণা সংস্থাটি। এমনকি প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে কী বিষয় উঠে আসবে সে বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি তারা।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পুরো পৃথিবীতে তোলপাড় ফেলে হিনডেনবার্গ অভিযোগ করে, কারচুপির মাধ্যমে ধনী হয়েছেন গৌতম আদানি। তার মালিকানাধীন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী কৃত্রিমভাবে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে। এভাবে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। তারা জানায়, দুই বছর ধরে আদানি নিয়ে তারা গবেষণা করেছে, কথা বলেছে আদানি গ্রুপের সাবেক শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীদের সঙ্গে, আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে হাজার হাজার দলিল-দস্তাবেজ।
যদিও শুরু থেকেই এসব কথা অস্বীকার করে এসেছেন গৌতম আদানি।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের বিচার সামরিক আদালতে করা হবে।’ মঙ্গলবার (৩০ মে) ডন নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সানাউল্লাহর অভিযোগ, গত ৯ মে গ্রেপ্তারের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান ব্যক্তিগতভাবে সামরিক স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেক্ষেত্রে ইমরানের বিচার সামরিক আদালতে হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই, কেন হবে না? তিনি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পরিকল্পনা কার্যকর করেছিলেন। আমার ধারণা এটি অবশ্যই একটি সামরিক আদালতের মামলা।’
তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না যে ইমরান পরিকল্পনাকারী ছিলেন এবং ৯ মে সম্পর্কে সবকিছু জানতেন।’
গত ৯ মে ইসলামাবাদে আল কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তারের পর ইমরানকে এনএবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সহিংসতায় কমপক্ষে আটজন নিহত, ২৯০ জন আহত এবং প্রায় দুই হাজার জন বিক্ষোভকারী আটক হয়।
বিক্ষোভকারীরা লাহোরে কর্পস কমান্ডারের বাসভবনে হামলা চালায় এবং রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল হেডকোয়ার্টার্সের একটি গেট ভেঙে দেয়। সহিংসতায় সরকার ও সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। অঙ্গীকার করা হয় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। ফলে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মঙ্গলবার ভোরে মস্কোতে চালানো বিরল ড্রোন হামলাটির লক্ষব্যস্তু ছিল বেসামরিক স্থাপনা।
আজ মঙ্গলবার (৩০ মে) রুশ বার্তা সংস্থার বরাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় আজ এ ড্রোন হামলা চালানো হয়। স্থানীয় সময় ভোরে চালানো এ হামলার পর ‘সামান্য’ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার কথা জানান মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে রাশিয়ার সংবাদ সংস্থাগুলো জানিয়েছে, মস্কোয় ড্রোন হামলাটি বেসামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং রাজধানীর বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার করার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
পুতিন আরও বলেন, ‘ইউক্রেন নিজেই তার বেসামরিক জনগনের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে দিয়েছে। অবশ্যই , ইউক্রেনের নাগরিকদের কাছে এখন কোনো শব্দ নেই। যেহেতু ইউক্রেনের বেসামরিক জনগনের বিরুদ্ধেই শুরু হয়েছে সম্পূর্ণ এই সন্ত্রাস।’’
এ সময় মস্কোর বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রশংসা করে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদের আরও কাজ করার আছে। রাজধানীর বিমান প্রতিরক্ষা সিল করার জন্য কী করা দরকার , তা সাধারণভাবেই বুঝতে পারি এবং আমরা তা করবও।’
এদিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে যে, এ হামলার জবাবে সবচেয়ে ‘কঠোর ব্যবস্থা ‘ নেওয়ার অধিকার মস্কোরও রয়েছে। এর আগে এ হামলা জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে ক্রেমলিন।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মস্কোয় ড্রোন হামলার ঘটনা বিরল। তবে রাশিয়ার অন্য স্থানে প্রায়ই ড্রোন হামলা হয়ে থাকে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস নবনির্বাচিত তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাথে কথা বলেছেন এবং তাকে বার্লিন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সোমবার জার্মান সরকার এ কথা জানিয়েছে।
ইসলামিক রক্ষণশীল এরদোয়ান তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নেতা। রবিবার নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয়ের মাধ্যমে তার দুই দশকের শাসনের মেয়াদ বাড়িয়েছেন।
জার্মান সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, চ্যান্সেলর জার্মানি ও তুরস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন। এই সম্পর্ক কেবল ন্যাটোতে যৌথ মিত্র হিসেবেই নয়। উভয়ই নতুন উদ্দীপনার সাথে দুই সরকারের মধ্যে সহযোগিতার দিকে এগিয়ে যেতে এবং অভিন্ন বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একমত হতে সম্মত হয়েছে।
এতে বলা হয়, শলৎস এরদোয়ানকে একটি উদ্বোধনী সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তারা পূর্ব ভূমধ্যসাগরে একটি ভালো উন্নয়ন, ন্যাটোতে বর্তমানে মুলতবি থাকা সিদ্ধান্ত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের বিষয়ে একসাথে কাজ করতে চায়।
পর্যবেক্ষকরা আশা করছেন, এরদোয়ান তুরস্কের সুবিধার জন্য রাশিয়া ও পশ্চিমা অংশীদারদের মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে এরদোয়ানের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণেও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্রেমলিন টিকে আছে। খবর বাসসের।
এদিকে ন্যাটো অংশীদাররা উদ্বিগ্নভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন প্রতিরক্ষা জোটে যোগদানের জন্য আঙ্কারার সুইডেনের স্থগিত আবেদন অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে। স্টকহোমকে অবৈধ কুর্দি জঙ্গিদের সাথে কথিত যোগসূত্রসহ তুর্কি বিরোধী ব্যক্তিদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে এরদোয়ান আবেদনটি আটকে দিয়েছেন।
অধিকৃত উত্তর-পশ্চিম তীরের একটি ইহুদি বসতির প্রবেশপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে এক ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ মে) স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে এ খবর জানিয়েছে টাইমস অব ইসরায়েল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ব্যক্তির নাম মীর তামারি (৩২)। হারমেশ বসতির কাছে চলন্ত গাড়িতে তাকে গুলি করা হয়। তার শরীরে একাধিক গুলির চিহৃ পাওয়া গেছে। ইসরায়েলের হিলেল ইয়াফে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীদের সদস্যরা বন্দুকধারীদের খোঁজে অভিযান শুরু করেছে। তবে কথিত হামলাকারীদের এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।
ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ পার্টির সশস্ত্র শাখা আল-আকসা শহীদ ব্রিগেডস।
বসতি পরিচালনা করা ইসরায়েলি সংস্থা শোমরন আঞ্চলিক কাউন্সিল বলেছে, প্রায় চার বছর আগে পশ্চিম তীরের বাসিন্দা তালের সঙ্গে বিয়ের পর হারমেশে চলে আসেন তামারি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ও তিন বছর বয়সী দুই সন্তান রেখে গেছেন।
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েলের দখলে রয়েছে পশ্চিম তীর। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নির্মিত বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেখানে সহিংসতা বেড়েছে। সরকারি সূত্র থেকে সংকলিত এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাতে চলতি বছরের শুরু থেকে অন্তত ১৫৫ ফিলিস্তিনি, ২১ ইসরায়েলি, একজন ইউক্রেনীয় এবং একজন ইতালীয় নিহত হয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক রাজনীতিতে তুরস্কের কৌশলগত তাৎপর্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐতিহাসিক এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রবিবার রাতে টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। বেসরকারি এ ফল প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তুর্কি প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানাতে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা গেছে বিশ্বের প্রথম সারির নেতাদের।
পশ্চিমা নেতাদের কাছে তুরস্কের ক্যারিশমাটিক এই নেতার এত গুরুত্ব কেন, সোমবার (২৯মে) এক বিশ্লেষণে তা তুলে ধরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সংবাদ সংস্থাটির ইউরোপ এডিটর কাটিয়া অ্যাডলার বিশ্লেষণটি লেখেন।
তিনি জানান, বিশ্বনেতাদের মধ্যে তুরস্কের ১৩তম প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে প্রথম অভিনন্দন জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি তার তুর্কি সমকক্ষ এবং ‘শক্তিশালী’ সঙ্গী এরদোয়ানের অহমকে উসকে দিতে কোনো কার্পণ্য করেননি। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশের অপেক্ষা না করে বিজয়ের কারণ হিসেবে এরদোয়ানের ‘স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি’র কথা বলেছেন তিনি।
বিশ্লেষণে বলা হয়, এ থেকে খুব সহজে অনুমান করা যায়, তুরস্কের নীতির যে বিশেষ দিকটি রাশিয়ার পছন্দ, তা হলো ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর ক্রেমলিনকে একঘরে করতে আঙ্কারার অস্বীকৃতি। এমনকি তুরস্কের ন্যাটো মিত্ররা যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটির জ্বালানির ওপর থেকে তাদের নির্ভরতা কমিয়েছে, তখনো পুতিনের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছেন এরদোয়ান। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে রবিবার সবার আগে এরদোয়ানকে পুতিনের এই অভিনন্দন জানানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তার ফরাসি প্রতিপক্ষ ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়।
তাদের অপছন্দ সত্ত্বেও ক্রেমলিনের সঙ্গে এরদোয়ানের এই গাঁটছড়া বাধা এবং তার ক্ষমতার প্রথম দুই দশকে বাক্স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক নীতি হ্রাস করায় -পশ্চিমাদের কাছে তুরস্ক হয়ে উঠেছে কঠোর এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুরূহ এবং অপ্রতিরোধ্য এক মিত্র।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ক। জোটের প্রায় সব মিশনেই অংশ নিচ্ছে দেশটি। রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও ইউক্রেনকেও সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন এরদোয়ান।
এই যুদ্ধ বাস্তবতায় রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের একটি চুক্তি সম্পাদনে মধ্যস্থতা করে এরই মধ্যে তিনি জনপ্রিয়ও হয়ে উঠেছেন। যার ফলে ইউক্রেনের শস্য সরবরাহের ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেয় রাশিয়া।
এরপরই দীর্ঘ দিনের দ্বিধা কাটিয়ে মস্কোর প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেন এরদোয়ান।
তুরস্কের মুসলিম ঐতিহ্যের এক সময়কার প্রচারক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগদানকারী এরদোয়ান ইদানীং ‘তুরস্ককে আবারও মহান করে তোলার’ কথা বলেছেন। এ জন্য তাকে আরও বেশি স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। আর এ লক্ষ্যেই সব মিত্রের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সর্বোচ্চ ভারসাম্যপূর্ণ লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি।
এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এরদোয়ানের গুরুত্ব সুইডেনকে কেন্দ্র করে। সুইডেনের ন্যাটোর সদস্যপদ অনুমোদনের জন্য এরদোয়ানকে রাজি করানো নিয়ে নিজেদের অধৈর্যের কথাও গোপন রাখেনি হোয়াইট হাউস। কারণ রাশিয়ার বিরুদ্ধে বাল্টিক সাগরকে ব্যবহারের জন্য ন্যাটোয় সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের জন্য।
পশ্চিমাদের মতে, নির্বাচনপরবর্তী তুরস্কের বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে এরদোয়ানকে আর্থিক স্থিতিশীলতা জোরদার এবং বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে হবে। এমন পরিস্থিতি সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান তুরস্কের জন্য একটি নমনীয় সুযোগ বয়ে আনতে পারে বলে আশা করছে পশ্চিমারা। সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র তুরস্ক এবং হাঙ্গেরি ভেটো দিয়ে আসছে।
অন্যদিকে ইইউয়ের অভিবাসন ইস্যুতে বেশ উদ্বিগ্ন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কাছ থেকে সমর্থন আদায়েরও আশায় রয়েছেন তিনি।
২০১৫ সালে শুরু হয় এই অভিবাসী সংকট। তখন যুদ্ধের কারণে, বিশেষ করে সিরিয়া থেকে ১০ লাখেরও বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলো আশ্রয় নেয়। এদের বেশির ভাগই তখন মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে নৌকায় করে সেখানে পৌঁছায়।
পরবর্তীতে বড় আকারের অর্থ সহায়তা এবং তুর্কি জনগণের জন্য ইইউতে ভিসাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ রেখে তুরস্কের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইইউ। পরে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার দেশের সমালোচক এবং বিরোধী রাজনীতিবিদদের কারাগারে পাঠালে, ইইউয়ের আপত্তির কারণে চুক্তিটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
তবে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া তুর্কি জলসীমা ছেড়ে ইইউ ব্লকে প্রবেশ করতে চাওয়া এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটকাতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন বলে প্রত্যাশা পশ্চিমাদের।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিশালসংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি তুর্কি ভোটারদের কাছে এরদোয়ানকে ভীষণ অজনপ্রিয় করে তুলেছে। তাই দেশটির চলতি মাসের পার্লামেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে, প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলই ‘এই অভিবাসন ইস্যু’ সমাধানে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তবে তুরস্ক থেকে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা শরণার্থীদের ফের সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর বিষয়ে উদ্বিগ্ন ইইউ। এ ছাড়া গ্রিসকে নিয়েও রক্ষণাত্মক অবস্থানে রয়েছে ইইউর সদর দপ্তর ব্রাসেলস। কারণ এজিয়ান সাগরকে কেন্দ্র করে এরদোয়ানের সঙ্গে নতুন বিরোধে জড়িয়েছে দেশটি।
এ প্রেক্ষাপটে তুরস্কের কৌশলগত গুরুত্বকে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যকার সেতু হিসেবে এত দিন উল্লেখ করে এসেছে পশ্চিমারা। তবে সবশেষ ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান তাদের কাছে তুরস্কের মর্যাদাকে ভিন্ন রূপে তুলে ধরেছে।
ক্ষমতার তৃতীয় দশকে এরদোয়ান পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে বিদেশ নীতিতে তার কাছ থেকে বড় ধরনের চমক পাওয়ার আশা করছে পশ্চিমাদের অনেকেই। তবে আঙ্কারার কৌশলগত মিত্ররাও খুব কাছ থেকেই পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
তুরস্ক কী করে, তাই দেখার অপেক্ষায় সবাই।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।