সে রাতের অনুভূতি বলা সম্ভব নয়: ঐশী
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২১:০১
জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায়।
জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায়। চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় তিনি জায়গা করে নেন সেরা ত্রিশে। প্রতিযোগিতা শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর ঐশী এসেছিলেন ‘দেশ রূপান্তর’ কার্যালয়ে। এ সময় তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াসহ ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।
ঐশীর জীবন বদলে দেওয়া সেই রাতের গল্প…
ঐশী: সেই রাতের অনুভূতি ভাষায় বলা সম্ভব নয়। কারণ ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হওয়া সত্যিই অসাধারণ একটা ব্যাপার ছিল। এ জন্য আমি ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সাধারণ থেকে তারকা হয়ে কেমন লাগছে?
ঐশী: ভাল লাগছে। দেশের মানুষের সাপোর্ট পাচ্ছি, প্রশংসা পাচ্ছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমি আমার দেশকে বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের।
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে হওয়ার আগেই একটা খবর চাউর হয়েছিল যে ঐশীই হতে যাচ্ছে বিজয়ী এবং সেটাই সত্যি হয়েছে। বিষয়টাকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিয়েছিল…
ঐশী: সে সময় নিউজটা কারা করেছে জানি না। তারা কার কাছ থেকে এটা শুনেছিল, সেটা জানলে ভালো লাগত। আর শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হওয়া নিয়ে বলব, প্রতিযোগিতা চলার সময়েই প্রতিযোগীদের নিয়ে মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে। আমার মনে হয় সবাই আমাকে নিয়ে সেই প্রত্যাশাটা করেছিল। এ কারণেই হয়তো গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই আমার নামটা উচ্চারিত হয়েছিল। এবং শেষ পর্যন্ত আমিই বিজয়ী হয়েছি।
বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপনের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছিলেন?
ঐশী: আসলে ওই মঞ্চে যাওয়ার আগে আমার তেমন কোনো প্রিপারেশন ছিল না। তবে আমার ডেডিকেশন, আমার প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেরা ত্রিশে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম।
‘মিস ওয়ার্ল্ডের পেজে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের হয়ে আপনি ইতিহাস তৈরি করেছিলেন…
ঐশী: বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার সেরা ত্রিশে জায়গা করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। প্রথমবারের মতো ইতিহাস তৈরি করতে পেরেছি সেটা আমার কাছে বড় ব্যাপার ছিল।
অচেনা দেশ, অচেনা ভাষা- নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন কীভাবে?
ঐশী: আমরা ইংরেজিতেই কথা বলেছি। ফলে চাইনিজদের সঙ্গে তেমন কথা বলতে হয়নি। তবে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কারণ চাইনিজ খাবারে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না।
আর কোন সমস্যা?
ঐশী: আর একটা সমস্যা ছিল। আমার প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। অনেক কিছু নিজেকেই ম্যানেজ করতে হয়েছে।
কোনো ভয়-ভীতি কাজ করেছিল কি?
ঐশী: প্রথম দিকে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম যে এতগুলো দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবে সবার সঙ্গে মেশার পর সেই ভয়টা কেটে গিয়েছিল।
ভারতীয় একজন প্রশিক্ষক দিয়ে আপনার গ্রুমিং করানো হয়েছিল, তারপরও কেন ভয় পেলেন বা প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার কথা বলছেন?
ঐশী: আসলে গ্রুমিং করানোর কথা থাকলেও আমাকে ভারতীয় ওই প্রশিক্ষক দিয়ে গ্রুমিং করানো হয়নি। প্রতিযোগিতার আগের সময়টাতে আমি অসুস্থ ছিলাম।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার মূল আয়োজকদের পক্ষ থেকে কোনো গ্রুমিং করানো হয়েছিল কি?
ঐশী: না। তারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো গ্রুমিং করাননি। তবে নানা প্রোগ্রামের আগে কিছু রিহার্সাল ছিল সেগুলো করা হয়েছে। যেটা তাদের সামনেই পারফর্ম করতে হয়েছে।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন, স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার ফলে কোনো মনোবেদনা কাজ করে কিনা?
ঐশী: প্রতিযোগীতায় নাম ঘোষণা হওয়ার পর আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। সেরা ত্রিশে জায়গা করে নিয়েও আমি গর্বিত ছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গ তখনই হয়েছে যখন সেরা ১২তে আমি নির্বাচিত হইনি। আমি ছিলাম ১৩তম। আমার আফসোস সেখানেই। আমার কিছু ভুল ত্রুটির কারণেই সেখানে সিলেক্ট হতে পারিনি। যাই হোক যা কিছু হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। তবে ভ্যানেসা একদম শত ভাগ যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। বিশেষ করে তার নাম ঘোষণার কারণে আমার সেই মনোবেদনাটা পরে আর থাকেনি। আমি খুশি হয়েছিলাম।
ভুল ত্রুটিগুলো কি ছিল? সেটা কি খুঁজে পাওয়া গেছে?
ঐশী: হ্যাঁ। গেছে। এখন পর্যন্ত একটা কথাই বলব আমি যাওয়ার আগে অুসস্থ ছিলাম। আর আমার একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন ছিল, সেই ভিডিওটা করা হয়নি। সেটা করতে পারলে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।
আমরা শুনেছি, বিচারকদের সুদৃষ্টি আপনার দিকেই ছিল? অন্যরা হিংসা করেননি?
ঐশী: না। অন্যরা ঈর্ষা করত না। আসলে হয়েছে কি, গেল বছরের যে মিস ওয়ার্ল্ড ছিলেন- মানুষী চিল্লার। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন। সে কারণে সবাই বলতো যে সে শুধু তোমাকেই বেশি আদর করে। তবে তারা কেউ আমাকে হিংসা করেননি।
মানুষী চিল্লার কেমন ছিলেন?
ঐশী: একজন মিস ওয়ার্ল্ডের ভেতর যত গুণ থাকা দরকার, সবই ছিল ওনার মধ্যে। অনেক ভালো মানুষ ছিলেন তিনি।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খ্যাতাবজয়ী ভ্যানেসার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
ঐশী: ভ্যানেসার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বোনের মতো।
বাংলাদেশে আসার পর প্রতিযোগীদের কার কার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন?
ঐশী: অনেকের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। আমাদের ইয়েলো গ্রুপের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি যার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তিনি আমার রুমমেট- মিস নেপালের সঙ্গে। সে বাংলাদেশে পরিবার নিয়ে আসতে চেয়েছে। ভ্যানেসাও আসতে চেয়েছে।
এই যে রাতারাতি খ্যাতি, নানা জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছেন-কেমন লাগছে?
ঐশী: এখনও স্টার ফিলিংসটা ভেতরে আসেনি। কারণ আমি তো গিয়েছিলাম প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। মিডিয়ায় কাজ দিয়ে যদি এই খ্যাতিটা পেতাম তাহলে হয়তো স্টার ফিলিংসটা আসতো।
আপনি তো নতুন। মিডিয়া ম্যানেজের ব্যাপারে কি আয়োজকরা কোনো দিক নির্দেশনা দিয়েছে, নাকি নিজের মতো করেই সব হ্যান্ডেল করছেন?
ঐশী: না, তারা তেমন কোনো দিক নির্দেশনা দেননি। নিজের মতো করেই সবকিছু হ্যান্ডেল করছি।যেহেতু আমার বয়স কম, সেহেতু অনেক কিছু বুঝতে না পারলে কাছের মানুষদের কাছে পরামর্শ চাই।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ঐশী: এখনকার পরিকল্পনা পড়াশোনা নিয়েই। ভাবছি কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবো। ফাঁকে ফাঁকে মিডিয়াতেও কিছু কাজ করব।
মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে কোন সেক্টরকে বেছে নিতে চান?
ঐশী: সব সেক্টরেই কাজ করতে চাই।
নিজের কাছে ভালো লাগে কোন সেক্টর? সিনেমা, নাটক, না উপস্থাপনা-
ঐশী: আমার কাছে সব সেক্টরই সমান ভালো লাগে।
আপনার আইডল?
ঐশী: আমার কোনো আইডল নেই। তবে প্রিয় তারকা আছে। আর তারকাদের ভেতরে কোন আইডল আমি নির্ধারণও করিনি।
কেন?
ঐশী: কারণ। তাদের মতো করে নিজেকে ভাবার মতো অত সাহস আমার নেই। তাদেরকে অনুসরণ করার সাহসও দেখাই না। তবে নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চাই।
মাঝখানে বেশ কিছু পত্রিকায় দেখলাম, আপনি শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করতে চান, ঘটনা কি সত্যি?
ঐশী: না। আমি কখনোই বলিনি আমি শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। বরং আমার কাছে কয়েকটি নাম বলে অপশন পছন্দ করতে বলেছিল তখন আমি শাকিব খানের নামের অপশনটা বেছে নিয়েছিলাম।
সিনেমা দেখা হয়?
ঐশী: হ্যাঁ। আমি ছোটবেলা থেকেই বাংলা সিনেমার ফ্যান। আমি চেষ্টা করি ভালো ভালো সিনেমা দেখতে।
সিনেমার প্রস্তাব পেলে কোন ধরনের সিনেমায় কাজ করতে চান?
ঐশী: যেকোনো ধরনের সিনেমাতেই কাজ করতে চাই। দেশীয় সিনেমায় কাজ করতে চাই। তবে নকল সিনেমায় কাজ করতে চাই না।
ঐশীর ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
ঐশী: আর দশজনের মতোই আমার ছোটবেলা কেটেছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা- এসব নিয়েই কেটেছে সময়।
ছোটবেলায় কি দুষ্ট ছিলেন? না শান্ত?
ঐশী: চঞ্চল ছিলাম, তবে সেরকম দুষ্ট না।
মাঝারি মানের দুষ্ট?
ঐশী: না। সেটাও না। মানে… তবে যেটা মনে করেন (হাসি)
আপনি তো সুন্দরী। এলাকার ছেলেরা কি পেছন পেছন ঘুরতো?
ঐশী: হুম। প্রচুর প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি।
এ পর্যন্ত কতজন প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে?
ঐশী: (হাসি) গুণে দেখিনিতো।
আপনি কারো প্রেমে পড়েননি?
ঐশী: না।
জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন ছেলে পছন্দ?
ঐশী: একজন ভালো মানুষ চাই।
কেমন চেহারার?
ঐশী: চেহারা নিয়ে কোনও প্রত্যাশা নেই। কালো হোক ফর্সা হোক একজন ভালো মানুষ চাই।
এ বছর তো আপনার বয়স ১৮ চলছে। এই অষ্টাদশী সময়টা কেমন?
ঐশী: আমি যখন সুকান্তর ১৮ বছর বয়স কবিতাটা পড়তাম, কবিতাটির মর্মবাণী নিয়ে ভাবতাম। তখন মনে হতো ১৮ বছর বয়স প্রত্যেকটা তরুণ তরুণীর কাছেই শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত। এই বয়সে যে উদ্যম, যে আবেগ থাকে সেটাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত। তাই আমি সমাজসেবামূলক কাজ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কখনো কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন যে এই আঠারো বছর বয়সেই আপনি তারকাখ্যাতি পাবেন?
ঐশী: না। এটা কখনোই ভাবিনি। তবে কল্পনা করতাম কোনো না কোনোভাবে আমার আঠারো বছর বয়সটাকে বিশেষ করে রাখব। যেকোনো অর্জন দিয়েই আঠারো বছর বয়সটাকে বিশেষ করে রাখার ইচ্ছে ছিল।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২১:০১

জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। বাংলাদেশের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতায়। চীনের সানাইয়া শহরে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় তিনি জায়গা করে নেন সেরা ত্রিশে। প্রতিযোগিতা শেষে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর ঐশী এসেছিলেন ‘দেশ রূপান্তর’ কার্যালয়ে। এ সময় তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়াসহ ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সুদীপ্ত সাইদ খান।
ঐশীর জীবন বদলে দেওয়া সেই রাতের গল্প…
ঐশী: সেই রাতের অনুভূতি ভাষায় বলা সম্ভব নয়। কারণ ওই মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিজয়ী হওয়া সত্যিই অসাধারণ একটা ব্যাপার ছিল। এ জন্য আমি ‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সাধারণ থেকে তারকা হয়ে কেমন লাগছে?
ঐশী: ভাল লাগছে। দেশের মানুষের সাপোর্ট পাচ্ছি, প্রশংসা পাচ্ছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে আমি আমার দেশকে বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বেশি আনন্দের।
‘মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ’ প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে হওয়ার আগেই একটা খবর চাউর হয়েছিল যে ঐশীই হতে যাচ্ছে বিজয়ী এবং সেটাই সত্যি হয়েছে। বিষয়টাকে অনেকেই নেতিবাচকভাবে নিয়েছিল…
ঐশী: সে সময় নিউজটা কারা করেছে জানি না। তারা কার কাছ থেকে এটা শুনেছিল, সেটা জানলে ভালো লাগত। আর শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হওয়া নিয়ে বলব, প্রতিযোগিতা চলার সময়েই প্রতিযোগীদের নিয়ে মানুষের একটা প্রত্যাশা থাকে। আমার মনে হয় সবাই আমাকে নিয়ে সেই প্রত্যাশাটা করেছিল। এ কারণেই হয়তো গ্র্যান্ড ফিনালের আগেই আমার নামটা উচ্চারিত হয়েছিল। এবং শেষ পর্যন্ত আমিই বিজয়ী হয়েছি।
বিশ্ব মঞ্চে উপস্থাপনের জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করেছিলেন?
ঐশী: আসলে ওই মঞ্চে যাওয়ার আগে আমার তেমন কোনো প্রিপারেশন ছিল না। তবে আমার ডেডিকেশন, আমার প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেরা ত্রিশে জায়গা করে নিতে পেরেছিলাম।
‘মিস ওয়ার্ল্ডের পেজে বলা হয়েছিল বাংলাদেশের হয়ে আপনি ইতিহাস তৈরি করেছিলেন…
ঐশী: বাংলাদেশের হয়ে প্রথমবার সেরা ত্রিশে জায়গা করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। প্রথমবারের মতো ইতিহাস তৈরি করতে পেরেছি সেটা আমার কাছে বড় ব্যাপার ছিল।

অচেনা দেশ, অচেনা ভাষা- নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন কীভাবে?
ঐশী: আমরা ইংরেজিতেই কথা বলেছি। ফলে চাইনিজদের সঙ্গে তেমন কথা বলতে হয়নি। তবে খাওয়া-দাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কারণ চাইনিজ খাবারে আমি অভ্যস্ত ছিলাম না।
আর কোন সমস্যা?
ঐশী: আর একটা সমস্যা ছিল। আমার প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। অনেক কিছু নিজেকেই ম্যানেজ করতে হয়েছে।
কোনো ভয়-ভীতি কাজ করেছিল কি?
ঐশী: প্রথম দিকে কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম যে এতগুলো দেশের প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তবে সবার সঙ্গে মেশার পর সেই ভয়টা কেটে গিয়েছিল।
ভারতীয় একজন প্রশিক্ষক দিয়ে আপনার গ্রুমিং করানো হয়েছিল, তারপরও কেন ভয় পেলেন বা প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকার কথা বলছেন?
ঐশী: আসলে গ্রুমিং করানোর কথা থাকলেও আমাকে ভারতীয় ওই প্রশিক্ষক দিয়ে গ্রুমিং করানো হয়নি। প্রতিযোগিতার আগের সময়টাতে আমি অসুস্থ ছিলাম।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ প্রতিযোগিতার মূল আয়োজকদের পক্ষ থেকে কোনো গ্রুমিং করানো হয়েছিল কি?
ঐশী: না। তারা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কোনো গ্রুমিং করাননি। তবে নানা প্রোগ্রামের আগে কিছু রিহার্সাল ছিল সেগুলো করা হয়েছে। যেটা তাদের সামনেই পারফর্ম করতে হয়েছে।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলেন, স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার ফলে কোনো মনোবেদনা কাজ করে কিনা?
ঐশী: প্রতিযোগীতায় নাম ঘোষণা হওয়ার পর আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। সেরা ত্রিশে জায়গা করে নিয়েও আমি গর্বিত ছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গ তখনই হয়েছে যখন সেরা ১২তে আমি নির্বাচিত হইনি। আমি ছিলাম ১৩তম। আমার আফসোস সেখানেই। আমার কিছু ভুল ত্রুটির কারণেই সেখানে সিলেক্ট হতে পারিনি। যাই হোক যা কিছু হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। তবে ভ্যানেসা একদম শত ভাগ যোগ্য প্রার্থী ছিলেন। বিশেষ করে তার নাম ঘোষণার কারণে আমার সেই মনোবেদনাটা পরে আর থাকেনি। আমি খুশি হয়েছিলাম।
ভুল ত্রুটিগুলো কি ছিল? সেটা কি খুঁজে পাওয়া গেছে?
ঐশী: হ্যাঁ। গেছে। এখন পর্যন্ত একটা কথাই বলব আমি যাওয়ার আগে অুসস্থ ছিলাম। আর আমার একটা ভিডিও প্রেজেন্টেশন ছিল, সেই ভিডিওটা করা হয়নি। সেটা করতে পারলে আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।

আমরা শুনেছি, বিচারকদের সুদৃষ্টি আপনার দিকেই ছিল? অন্যরা হিংসা করেননি?
ঐশী: না। অন্যরা ঈর্ষা করত না। আসলে হয়েছে কি, গেল বছরের যে মিস ওয়ার্ল্ড ছিলেন- মানুষী চিল্লার। তিনি আমাকে অনেক আদর করতেন। সে কারণে সবাই বলতো যে সে শুধু তোমাকেই বেশি আদর করে। তবে তারা কেউ আমাকে হিংসা করেননি।
মানুষী চিল্লার কেমন ছিলেন?
ঐশী: একজন মিস ওয়ার্ল্ডের ভেতর যত গুণ থাকা দরকার, সবই ছিল ওনার মধ্যে। অনেক ভালো মানুষ ছিলেন তিনি।
‘মিস ওয়ার্ল্ড’ খ্যাতাবজয়ী ভ্যানেসার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
ঐশী: ভ্যানেসার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল বোনের মতো।
বাংলাদেশে আসার পর প্রতিযোগীদের কার কার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন?
ঐশী: অনেকের সঙ্গেই নিয়মিত যোগাযোগ করা হয়। আমাদের ইয়েলো গ্রুপের সবার সঙ্গেই যোগাযোগ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি যার সঙ্গে যোগাযোগ হয় তিনি আমার রুমমেট- মিস নেপালের সঙ্গে। সে বাংলাদেশে পরিবার নিয়ে আসতে চেয়েছে। ভ্যানেসাও আসতে চেয়েছে।
এই যে রাতারাতি খ্যাতি, নানা জায়গায় ইন্টারভিউ দিচ্ছেন-কেমন লাগছে?
ঐশী: এখনও স্টার ফিলিংসটা ভেতরে আসেনি। কারণ আমি তো গিয়েছিলাম প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। মিডিয়ায় কাজ দিয়ে যদি এই খ্যাতিটা পেতাম তাহলে হয়তো স্টার ফিলিংসটা আসতো।
আপনি তো নতুন। মিডিয়া ম্যানেজের ব্যাপারে কি আয়োজকরা কোনো দিক নির্দেশনা দিয়েছে, নাকি নিজের মতো করেই সব হ্যান্ডেল করছেন?
ঐশী: না, তারা তেমন কোনো দিক নির্দেশনা দেননি। নিজের মতো করেই সবকিছু হ্যান্ডেল করছি।যেহেতু আমার বয়স কম, সেহেতু অনেক কিছু বুঝতে না পারলে কাছের মানুষদের কাছে পরামর্শ চাই।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
ঐশী: এখনকার পরিকল্পনা পড়াশোনা নিয়েই। ভাবছি কোনো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হবো। ফাঁকে ফাঁকে মিডিয়াতেও কিছু কাজ করব।
মিডিয়ায় কাজের ক্ষেত্রে কোন সেক্টরকে বেছে নিতে চান?
ঐশী: সব সেক্টরেই কাজ করতে চাই।
নিজের কাছে ভালো লাগে কোন সেক্টর? সিনেমা, নাটক, না উপস্থাপনা-
ঐশী: আমার কাছে সব সেক্টরই সমান ভালো লাগে।
আপনার আইডল?
ঐশী: আমার কোনো আইডল নেই। তবে প্রিয় তারকা আছে। আর তারকাদের ভেতরে কোন আইডল আমি নির্ধারণও করিনি।
কেন?
ঐশী: কারণ। তাদের মতো করে নিজেকে ভাবার মতো অত সাহস আমার নেই। তাদেরকে অনুসরণ করার সাহসও দেখাই না। তবে নিজেকে নিজের মতো করে গড়ে তুলতে চাই।

মাঝখানে বেশ কিছু পত্রিকায় দেখলাম, আপনি শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করতে চান, ঘটনা কি সত্যি?
ঐশী: না। আমি কখনোই বলিনি আমি শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। বরং আমার কাছে কয়েকটি নাম বলে অপশন পছন্দ করতে বলেছিল তখন আমি শাকিব খানের নামের অপশনটা বেছে নিয়েছিলাম।
সিনেমা দেখা হয়?
ঐশী: হ্যাঁ। আমি ছোটবেলা থেকেই বাংলা সিনেমার ফ্যান। আমি চেষ্টা করি ভালো ভালো সিনেমা দেখতে।
সিনেমার প্রস্তাব পেলে কোন ধরনের সিনেমায় কাজ করতে চান?
ঐশী: যেকোনো ধরনের সিনেমাতেই কাজ করতে চাই। দেশীয় সিনেমায় কাজ করতে চাই। তবে নকল সিনেমায় কাজ করতে চাই না।
ঐশীর ছোটবেলা কেমন কেটেছে?
ঐশী: আর দশজনের মতোই আমার ছোটবেলা কেটেছে। পড়াশোনা, খেলাধুলা- এসব নিয়েই কেটেছে সময়।
ছোটবেলায় কি দুষ্ট ছিলেন? না শান্ত?
ঐশী: চঞ্চল ছিলাম, তবে সেরকম দুষ্ট না।
মাঝারি মানের দুষ্ট?
ঐশী: না। সেটাও না। মানে… তবে যেটা মনে করেন (হাসি)
আপনি তো সুন্দরী। এলাকার ছেলেরা কি পেছন পেছন ঘুরতো?
ঐশী: হুম। প্রচুর প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি।
এ পর্যন্ত কতজন প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে?
ঐশী: (হাসি) গুণে দেখিনিতো।
আপনি কারো প্রেমে পড়েননি?
ঐশী: না।
জীবন সঙ্গী হিসেবে কেমন ছেলে পছন্দ?
ঐশী: একজন ভালো মানুষ চাই।
কেমন চেহারার?
ঐশী: চেহারা নিয়ে কোনও প্রত্যাশা নেই। কালো হোক ফর্সা হোক একজন ভালো মানুষ চাই।
এ বছর তো আপনার বয়স ১৮ চলছে। এই অষ্টাদশী সময়টা কেমন?
ঐশী: আমি যখন সুকান্তর ১৮ বছর বয়স কবিতাটা পড়তাম, কবিতাটির মর্মবাণী নিয়ে ভাবতাম। তখন মনে হতো ১৮ বছর বয়স প্রত্যেকটা তরুণ তরুণীর কাছেই শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টাকে কাজে লাগানো উচিত। এই বয়সে যে উদ্যম, যে আবেগ থাকে সেটাকে দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো উচিত। তাই আমি সমাজসেবামূলক কাজ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কখনো কি স্বপ্নেও ভেবেছিলেন যে এই আঠারো বছর বয়সেই আপনি তারকাখ্যাতি পাবেন?
ঐশী: না। এটা কখনোই ভাবিনি। তবে কল্পনা করতাম কোনো না কোনোভাবে আমার আঠারো বছর বয়সটাকে বিশেষ করে রাখব। যেকোনো অর্জন দিয়েই আঠারো বছর বয়সটাকে বিশেষ করে রাখার ইচ্ছে ছিল।