ধর্ষণ বন্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করা উচিত
| ২ অক্টোবর, ২০২০ ১৩:২৯
সালমা আলী
সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সালমা আলী দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই মানবাধিকারকর্মী প্রবাসে নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও কাজ করছেন। এখন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আইনজীবী হিসেবে তার করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য ২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায়টি দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ এবং খাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাসহ দেশের সাম্প্রতিক নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আইনজীবী সালমা আলী মনে করেন, ধর্ষণ ও যৌননিপীড়ন বন্ধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির স্থাপন করা জরুরি। একই সঙ্গে পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বদল না ঘটলে নারীদের প্রতি ভয়াবহ সহিংসতার লাগাম টানা যাবে না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর সম্পাদকীয় বিভাগের আহমেদ মুনীরুদ্দিন
দেশ রূপান্তর : সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ কলেজে সম্প্রতি এক তরুণীকে স্বামীসহ তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর দুদিন আগেই খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি এবং প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সারা দেশে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখছি, সব ঘটনারই বিচারের দাবি একসময় মøান হয়ে যায়। আর অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ বিচারও হয় না। এমনটা কেন ঘটছে?
সালমা আলী : আমাদের দেশে যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে কঠিন আইন আছে, বিভিন্ন নীতিমালাও আছে। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হলো সবসময়ই শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় সবখানে কিছু গ্রুপ থাকে যারা মনে করে, তারা আইন-আদালত সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ক্ষমতার দাপট তাদের অন্ধ করে ফেলে। এদের আমরা বলি ‘পাওয়ার রেপিস্ট’। তারা মনে করতে থাকে যেকোনো অপরাধ করলেও তারা পার পেয়ে যাবে। তাই কোনো ঘটনা ঘটাবার আগে তারা কোনোকিছুই তোয়াক্কা করে না। সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজে আমরা যে জঘন্য দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা দেখলাম, সেটা এমন ‘পাওয়ার রেপিস্ট’ মানসিকতারই ফল। দেশে এখন এমন পাওয়ার রেপিস্টদের রাজত্ব চলছে। আর খাগড়াছড়িতে যে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটল সেটাও কিন্তু একই রকমের বিষয়। সেখানে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
ধর্ষণের বিচার দৃশ্যমান না হওয়া সমাজে ধর্ষণ না কমার অন্যতম প্রধান কারণ। আইন দিয়ে বিচার করা অপরাধ কমিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু সবসময় কেবল আইন করে আর সাজা দিয়ে অপরাধ কমানো যায় না। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হচ্ছে ধর্ষণ বা কোনো অপরাধ কেন হয় তার কারণ অনুসন্ধান করা। আমরা কিন্তু এ বিষয়ে খুব একটা কাজ করছি না। যারা সমাজ-গবেষণায় যুক্ত, যারা পেনাল কোড রিফর্ম বা আইন-সংস্কার নিয়ে কাজ করি, যারা মনো-সামাজিক বিষয়-আশয় নিয়ে কাজ করি, যারা যুবকদের নিয়ে বা তরুণসমাজ নিয়ে কাজ করি তাদের সবারই এই দায়িত্ব রয়েছে। কারণ ধর্ষণ কেবল যৌনবিকৃতি বা যৌনসুখের বিষয় নয়; এর সঙ্গে সমাজে বিদ্যমান নানা রকম সমস্যা ও সংকট এবং ক্ষমতার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এজন্যই এ ধরনের বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক রকম সামাজিক সমীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
তবে, যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণ বন্ধ না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার সেটা হলো সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটানো। দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতিসহ অনেক উন্নয়ন ঘটলেও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না। নারীর সমানাধিকার তো দূরের কথা, নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করার পরিবেশ-পরিস্থিতিই এখনো তৈরি হয়নি। সমাজ এখনো নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা ও উপস্থাপন করার স্তরেই রয়ে গেছে। পারিবারিক সহিংসতা ও পরিবারে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিবেচনা করলেও এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ফলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের কাজটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনি। কেউ বলছেন ‘পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা’, কেউ বলছেন ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’। একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে দেশে সাম্প্রতিক নানারকম যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
সালমা আলী : আইন প্রণয়ন করা হয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এটা এক ধরনের ভয় দেখানো যে, আমি এই অপরাধ করলে আমার এই শাস্তি হবে। কিন্তু সেই শাস্তি যদি দৃশ্যমান না হয়, অর্থাৎ যথাযথ শাস্তিই যদি না হয় তাহলে সমাজে অপরাধ-প্রবণতা নিয়ন্ত্রিত হবে কীভাবে? আর ‘ক্ষমতা’ বিষয়টা কী পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা বলেন বা রাজনৈতিক ক্ষমতা, এসব একই যোগসূত্রে গাঁথা। কিন্তু এখানে যেটা খেয়াল করা দরকার, সেটা হলো কোন ধরনের ক্ষমতাবানরা এসব অপকর্ম করছেন। সবসময় সব আমলেই শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় একদল লোক অপরাধ করেন। এরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শবান বা ত্যাগী নেতাকর্মী নয়। এরা হলো সেই গ্রুপ যাদের দিয়ে সব ধরনের অপরাধ করানো হয়। এক্ষেত্রে বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মাদকে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন তরুণদের মাদকে মত্ত রেখে ভোগবিলাসে ডুবিয়ে রাখা হয় আর তাদের দিয়ে নানারকম অপরাধ করানো হয়। এর ফলে এই তরুণরা নানারকম অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। শাসকরা বা ক্ষমতাসীনরা এসব অপরাধে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকার কারণে তারা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, একসময় তাদের আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
আর আইনের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় ভিয়েনা থেকে বেইজিং কনভেনশন পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বিগত দশকগুলোতে আমাদের দেশে অনেকগুলো ভালো আইন হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। হিসাব করলে দেখা যায়, ধর্ষণের মতো অপরাধে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ মামলা শেষ পর্যন্ত সাজা ঘোষণা হয় আর সাজা কার্যকর হতে হতে আরও বহুপথ পাড়ি দিতে হয়। আমি নিজে একজন পেনাল রিফর্ম অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কখনই ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির পক্ষে না। কিন্তু দেশে নারী ও শিশুরা যেভাবে প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে সেটা দেখে আমারও এখন মনে হয় যে, সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মৃত্যুদন্ডের শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে সমাজে ধর্ষণের বিচার দৃশ্যমান হয় এবং মানুষের মধ্যে এই শাস্তির ভীতি তৈরি হয়।
এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনই হোক কিংবা বিরোধী দল, সব রাজনৈতিক দলকেও সোচ্চার হতে হবে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হলেও ধর্ষণ বন্ধের প্রশ্নে তাদের সক্রিয়তা দেখা যায় না। আমি মনে করি, ধর্ষণ বন্ধে সরকারের এখন সত্যিকার অর্থেই জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে দেশে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না।
দেশ রূপান্তর : পরিসংখ্যান বলছে এক বছরের ব্যবধানে দেশে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে অন্ততপক্ষে ৭৩২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর পরের বছরই এই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৪১৩ জনে পৌঁছে গেছে। অব্যাহতভাবে ধর্ষণ বাড়তে থাকার কারণ কী বলে মনে করেন?
সালমা আলী : এটা তো আগের দুই বছরের হিসাব। আপনি যদি চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের হিসাব দেখেন তাহলে দেখবেন এই হারটা আরও বেড়ে গেছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি বাস্তবে ধর্ষণের সংখ্যা ও হার দুটোই এসব পরিসংখ্যানের চেয়ে আরও অনেক বেশি। এমনকি এই করোনার মধ্যেও আমাদের জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির শেল্টারহোমে আমরা এমন অনেক নারী ও তরুণীকে আশ্রয় দিয়েছি, যাদের ঘটনা পত্রিকায় আসেনি। আসলে পত্রপত্রিকায় যত ঘটনা প্রকাশিত হয় বাস্তবে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি। আর যেসব কেস আমাদের মতো আইনি সামাজিক সহায়তাদাতাদের কাছেও আসে না, নিজেরাই আপস করে ফেলে, সেসব ঘটনাকেও তো আমলে নিতে হবে।
যৌনতা তো একটা স্বাভাবিক মনোদৈহিক বিষয়;যৌনবিকৃতি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমরা এখন দেখছি সমাজে বিকৃত যৌনতার চর্চা নানাভাবে বেড়েই চলেছে। নইলে আমরা দেশে বাবার হাতে শিশুকন্যার ধর্ষণের মতো ঘটনা বারবার দেখতাম না। এসব বন্ধ করা দরকার। এক্ষেত্রে আমি একটা বিষয়ের ওপর জোর দিতে চাই। সেটা হলো সাম্প্রতিককালে দেশে অনলাইন বা ভার্চুয়াল জগতে নানারকম পর্নোগ্রাফি ও বিকৃত যৌনতার বিস্তার। বিগত দেড়-দুই দশকে হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট চলে আসায় এখন কিশোর-তরুণরা তো বটেই শিশুরাও এমন অনেককিছু দেখে ফেলছেযা তাদের দেখার কথা না। এসবের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে এমন বিকৃত চাহিদা তৈরি হচ্ছে যা সুস্থ-স্বাভাবিক নয় আর আমাদের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নাগরিক হিসেবে তথ্য জানার অধিকার আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকতে হবে, কিন্তু অনলাইন বা ভার্চুয়াল মিডিয়ায় পর্নোগ্রাফি বন্ধের বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। বিশেষত শিশুদের বা আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশ রূপান্তর : দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কর্মস্থল এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যে যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল এখনো সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আপনার করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের এই রায়টি এসেছিল। এই রায়ের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানেন বা এ বিষয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
সালমা আলী : কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের যে যুগান্তকারী রায় উচ্চ আদালত দিয়েছিল এখনো সেটার আংশিকও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আর কিছু বড় প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু কমিটি থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কমিটি নেই। আর এই রায়ের আলোকে যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী সদস্য রেখে এবং নারীর নেতৃত্বে কমিটি করার কথা ছিল সেটা হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক যে, যতটা হয়েছে তারও বেশিরভাগই আসলে লোক দেখানো। এক্ষেত্রে পিটিশনার হিসেবে আমি বলতে চাই, সব দায়িত্ব কিন্তু সরকারের একার নয়। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাকিদের পথ দেখাতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। আবার গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে জনসচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে। সংবাদমাধ্যম এসব ক্ষেত্রে অনেক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেও আপনি খোঁজ নিলে জানতে পারবেন যে, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমেও কিন্তু কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নেই। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াচ্ছে, আমরা যারা সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাইছি তারা নিজেরাও আসলে এসব বিষয়ে সচেতন নই বা দায়িত্বশীল নই।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
| ২ অক্টোবর, ২০২০ ১৩:২৯

সুপ্রিম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী সালমা আলী দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই মানবাধিকারকর্মী প্রবাসে নারী শ্রমিকদের অধিকার নিয়েও কাজ করছেন। এখন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। আইনজীবী হিসেবে তার করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করার জন্য ২০০৯ সালে যুগান্তকারী রায়টি দিয়েছিল উচ্চ আদালত। সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ এবং খাগড়াছড়িতে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাসহ দেশের সাম্প্রতিক নারী ও শিশু নির্যাতন পরিস্থিতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। আইনজীবী সালমা আলী মনে করেন, ধর্ষণ ও যৌননিপীড়ন বন্ধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির স্থাপন করা জরুরি। একই সঙ্গে পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বদল না ঘটলে নারীদের প্রতি ভয়াবহ সহিংসতার লাগাম টানা যাবে না। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর সম্পাদকীয় বিভাগের আহমেদ মুনীরুদ্দিন
দেশ রূপান্তর : সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ কলেজে সম্প্রতি এক তরুণীকে স্বামীসহ তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর দুদিন আগেই খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি এবং প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। সারা দেশে এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে আমরা দেখছি, সব ঘটনারই বিচারের দাবি একসময় মøান হয়ে যায়। আর অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ বিচারও হয় না। এমনটা কেন ঘটছে?
সালমা আলী : আমাদের দেশে যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণসহ সব ধরনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমনে কঠিন আইন আছে, বিভিন্ন নীতিমালাও আছে। কিন্তু একটা বড় সমস্যা হলো সবসময়ই শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় সবখানে কিছু গ্রুপ থাকে যারা মনে করে, তারা আইন-আদালত সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ক্ষমতার দাপট তাদের অন্ধ করে ফেলে। এদের আমরা বলি ‘পাওয়ার রেপিস্ট’। তারা মনে করতে থাকে যেকোনো অপরাধ করলেও তারা পার পেয়ে যাবে। তাই কোনো ঘটনা ঘটাবার আগে তারা কোনোকিছুই তোয়াক্কা করে না। সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজে আমরা যে জঘন্য দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা দেখলাম, সেটা এমন ‘পাওয়ার রেপিস্ট’ মানসিকতারই ফল। দেশে এখন এমন পাওয়ার রেপিস্টদের রাজত্ব চলছে। আর খাগড়াছড়িতে যে ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটল সেটাও কিন্তু একই রকমের বিষয়। সেখানে একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। পাহাড়ে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
ধর্ষণের বিচার দৃশ্যমান না হওয়া সমাজে ধর্ষণ না কমার অন্যতম প্রধান কারণ। আইন দিয়ে বিচার করা অপরাধ কমিয়ে আনার একটা প্রক্রিয়া। কিন্তু সবসময় কেবল আইন করে আর সাজা দিয়ে অপরাধ কমানো যায় না। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হচ্ছে ধর্ষণ বা কোনো অপরাধ কেন হয় তার কারণ অনুসন্ধান করা। আমরা কিন্তু এ বিষয়ে খুব একটা কাজ করছি না। যারা সমাজ-গবেষণায় যুক্ত, যারা পেনাল কোড রিফর্ম বা আইন-সংস্কার নিয়ে কাজ করি, যারা মনো-সামাজিক বিষয়-আশয় নিয়ে কাজ করি, যারা যুবকদের নিয়ে বা তরুণসমাজ নিয়ে কাজ করি তাদের সবারই এই দায়িত্ব রয়েছে। কারণ ধর্ষণ কেবল যৌনবিকৃতি বা যৌনসুখের বিষয় নয়; এর সঙ্গে সমাজে বিদ্যমান নানা রকম সমস্যা ও সংকট এবং ক্ষমতার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে। এজন্যই এ ধরনের বিষয় নিয়ে আমাদের অনেক রকম সামাজিক সমীক্ষা ও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
তবে, যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণ বন্ধ না হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার সেটা হলো সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটানো। দেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতিসহ অনেক উন্নয়ন ঘটলেও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে না। নারীর সমানাধিকার তো দূরের কথা, নারীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করার পরিবেশ-পরিস্থিতিই এখনো তৈরি হয়নি। সমাজ এখনো নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে বিবেচনা ও উপস্থাপন করার স্তরেই রয়ে গেছে। পারিবারিক সহিংসতা ও পরিবারে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো বিবেচনা করলেও এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। ফলে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের কাজটা পরিবার থেকেই শুরু করতে হবে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের বিষয়টা নিয়ে কাজ করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণের সঙ্গে ক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনি। কেউ বলছেন ‘পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা’, কেউ বলছেন ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’। একজন সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে দেশে সাম্প্রতিক নানারকম যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কি?
সালমা আলী : আইন প্রণয়ন করা হয় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। এটা এক ধরনের ভয় দেখানো যে, আমি এই অপরাধ করলে আমার এই শাস্তি হবে। কিন্তু সেই শাস্তি যদি দৃশ্যমান না হয়, অর্থাৎ যথাযথ শাস্তিই যদি না হয় তাহলে সমাজে অপরাধ-প্রবণতা নিয়ন্ত্রিত হবে কীভাবে? আর ‘ক্ষমতা’ বিষয়টা কী পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা বলেন বা রাজনৈতিক ক্ষমতা, এসব একই যোগসূত্রে গাঁথা। কিন্তু এখানে যেটা খেয়াল করা দরকার, সেটা হলো কোন ধরনের ক্ষমতাবানরা এসব অপকর্ম করছেন। সবসময় সব আমলেই শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় একদল লোক অপরাধ করেন। এরা কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলের আদর্শবান বা ত্যাগী নেতাকর্মী নয়। এরা হলো সেই গ্রুপ যাদের দিয়ে সব ধরনের অপরাধ করানো হয়। এক্ষেত্রে বিশেষত তরুণ-তরুণীদের মাদকে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখন তরুণদের মাদকে মত্ত রেখে ভোগবিলাসে ডুবিয়ে রাখা হয় আর তাদের দিয়ে নানারকম অপরাধ করানো হয়। এর ফলে এই তরুণরা নানারকম অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। শাসকরা বা ক্ষমতাসীনরা এসব অপরাধে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে থাকার কারণে তারা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, একসময় তাদের আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
আর আইনের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় ভিয়েনা থেকে বেইজিং কনভেনশন পেরিয়ে আজকের বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে, বিগত দশকগুলোতে আমাদের দেশে অনেকগুলো ভালো আইন হয়েছে। কিন্তু আইনের প্রয়োগ যথাযথভাবে করা যাচ্ছে না। হিসাব করলে দেখা যায়, ধর্ষণের মতো অপরাধে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ মামলা শেষ পর্যন্ত সাজা ঘোষণা হয় আর সাজা কার্যকর হতে হতে আরও বহুপথ পাড়ি দিতে হয়। আমি নিজে একজন পেনাল রিফর্ম অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে কখনই ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির পক্ষে না। কিন্তু দেশে নারী ও শিশুরা যেভাবে প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে সেটা দেখে আমারও এখন মনে হয় যে, সমাজে ধর্ষণ বন্ধ করতে হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই মৃত্যুদন্ডের শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে সমাজে ধর্ষণের বিচার দৃশ্যমান হয় এবং মানুষের মধ্যে এই শাস্তির ভীতি তৈরি হয়।
এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনই হোক কিংবা বিরোধী দল, সব রাজনৈতিক দলকেও সোচ্চার হতে হবে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অনেক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার হলেও ধর্ষণ বন্ধের প্রশ্নে তাদের সক্রিয়তা দেখা যায় না। আমি মনে করি, ধর্ষণ বন্ধে সরকারের এখন সত্যিকার অর্থেই জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করা উচিত। তা না হলে দেশে ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না।
দেশ রূপান্তর : পরিসংখ্যান বলছে এক বছরের ব্যবধানে দেশে ধর্ষণের ঘটনা দ্বিগুণ বেড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে অন্ততপক্ষে ৭৩২ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আর পরের বছরই এই সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৪১৩ জনে পৌঁছে গেছে। অব্যাহতভাবে ধর্ষণ বাড়তে থাকার কারণ কী বলে মনে করেন?
সালমা আলী : এটা তো আগের দুই বছরের হিসাব। আপনি যদি চলতি বছরের প্রথম নয় মাসের হিসাব দেখেন তাহলে দেখবেন এই হারটা আরও বেড়ে গেছে। একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি বাস্তবে ধর্ষণের সংখ্যা ও হার দুটোই এসব পরিসংখ্যানের চেয়ে আরও অনেক বেশি। এমনকি এই করোনার মধ্যেও আমাদের জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির শেল্টারহোমে আমরা এমন অনেক নারী ও তরুণীকে আশ্রয় দিয়েছি, যাদের ঘটনা পত্রিকায় আসেনি। আসলে পত্রপত্রিকায় যত ঘটনা প্রকাশিত হয় বাস্তবে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের ঘটনা তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি। আর যেসব কেস আমাদের মতো আইনি সামাজিক সহায়তাদাতাদের কাছেও আসে না, নিজেরাই আপস করে ফেলে, সেসব ঘটনাকেও তো আমলে নিতে হবে।
যৌনতা তো একটা স্বাভাবিক মনোদৈহিক বিষয়;যৌনবিকৃতি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আমরা এখন দেখছি সমাজে বিকৃত যৌনতার চর্চা নানাভাবে বেড়েই চলেছে। নইলে আমরা দেশে বাবার হাতে শিশুকন্যার ধর্ষণের মতো ঘটনা বারবার দেখতাম না। এসব বন্ধ করা দরকার। এক্ষেত্রে আমি একটা বিষয়ের ওপর জোর দিতে চাই। সেটা হলো সাম্প্রতিককালে দেশে অনলাইন বা ভার্চুয়াল জগতে নানারকম পর্নোগ্রাফি ও বিকৃত যৌনতার বিস্তার। বিগত দেড়-দুই দশকে হাতে হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট চলে আসায় এখন কিশোর-তরুণরা তো বটেই শিশুরাও এমন অনেককিছু দেখে ফেলছেযা তাদের দেখার কথা না। এসবের মধ্য দিয়ে মানুষের মধ্যে এমন বিকৃত চাহিদা তৈরি হচ্ছে যা সুস্থ-স্বাভাবিক নয় আর আমাদের সমাজ বাস্তবতার সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নাগরিক হিসেবে তথ্য জানার অধিকার আর মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই থাকতে হবে, কিন্তু অনলাইন বা ভার্চুয়াল মিডিয়ায় পর্নোগ্রাফি বন্ধের বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। বিশেষত শিশুদের বা আগামী প্রজন্মকে রক্ষার জন্য এসব বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।
দেশ রূপান্তর : দেশের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌননিপীড়ন ও ধর্ষণের ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কর্মস্থল এবং সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত যে যুগান্তকারী রায় দিয়েছিল এখনো সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তৎকালীন নির্বাহী পরিচালক হিসেবে আপনার করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের এই রায়টি এসেছিল। এই রায়ের কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানেন বা এ বিষয়ে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
সালমা আলী : কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠনের যে যুগান্তকারী রায় উচ্চ আদালত দিয়েছিল এখনো সেটার আংশিকও বাস্তবায়ন হয়নি। কিছু কিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আর কিছু বড় প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু কমিটি থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনো কমিটি নেই। আর এই রায়ের আলোকে যেভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী সদস্য রেখে এবং নারীর নেতৃত্বে কমিটি করার কথা ছিল সেটা হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক যে, যতটা হয়েছে তারও বেশিরভাগই আসলে লোক দেখানো। এক্ষেত্রে পিটিশনার হিসেবে আমি বলতে চাই, সব দায়িত্ব কিন্তু সরকারের একার নয়। এসব ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাকিদের পথ দেখাতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। আবার গণমাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে জনসচেতনতা তৈরি করার ক্ষেত্রে। সংবাদমাধ্যম এসব ক্ষেত্রে অনেক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেও আপনি খোঁজ নিলে জানতে পারবেন যে, বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমেও কিন্তু কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি নেই। তাহলে বিষয়টা কী দাঁড়াচ্ছে, আমরা যারা সচেতনতা সৃষ্টি করতে চাইছি তারা নিজেরাও আসলে এসব বিষয়ে সচেতন নই বা দায়িত্বশীল নই।