ধর্ষণ রোধে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি
খুশী কবির
নারী ও মানবাধিকারকর্মী খুশী কবিরের জন্ম ১৯৪৮ সালে। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে স্নাতক হন। এরপর যুক্ত হয়েছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি ত্রাণ বিতরণের কাজে যোগ দেন। পরে তিনি ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে সেবামূলক কাজে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে ব্র্যাক ছেড়ে যোগ দেন ‘নিজেরা করি’ নামে সংগঠনটিতে। বর্তমানে তিনি এর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের একজন সদস্য। সম্প্রতি দেশে চলমান ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও অন্যান্য যৌনসহিংসতা নিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের অনিন্দ্য আরিফ
দেশ রূপান্তর : বেগমগঞ্জের ঘটনা, সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনাসহ যৌনসহিংসতার ঘটনাগুলোর পেছনে কী কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
খুশী কবির : আমার মতে, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের নেপথ্যে দুটি বা তিনটি কারণ প্রধান ভূমিকা রাখছে। প্রথমত, আমাদের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। আগে সমাজে একটি নৈতিক মূল্যবোধ কাজ করত। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায় নৈতিকতা বজায় থাকত। সঠিক-ভুল নির্ধারণের একটা মাপকাঠি সমাজে বিদ্যমান ছিল। আমাদের শৈশবের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের সন্তানদেরও ন্যায়, নীতিবোধ এবং ন্যায্যতার শিক্ষা দিয়েছি। আমরা ঘুষ, দুর্নীতিকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু এখনকার সমাজে নৈতিকতার মূল্যবোধ একদম অনুপস্থিত। এখন অর্থের মাপকাঠিতে সবকিছু বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সম্মান, মর্যাদাসহ প্রায় সবই কিনে ফেলা যাচ্ছে। তাই নৈতিকতার অবস্থান একদম শূন্যতে নেমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রশাসন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সিভিল প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনই বলেন, সবাই দেশের সংবিধান এবং আইনকানুন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় আছে তাদেরই সেবাদানে এসব প্রশাসন নিয়োজিত। তারা জনগণের জন্য কিংবা রাষ্ট্রের জন্য কোনো কাজ করছে না। তারা দেশের নিয়মকানুন, বিধিবিধান এবং আইন উপেক্ষা করে এ কাজ করছেন। আমরা যখন গ্রাম-গঞ্জে কাজ করতে যাই তখন দেখি, প্রশাসনের লোকরা নিয়মাবলি বা আইন ভেঙে কাজ করছেন। অথচ জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ না থেকে তারা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নৈতিকতার বিসর্জন দিচ্ছেন। তাদের নৈতিক স্খলন ঘটছে। আর এই সুযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্নরা তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাজনৈতিক নেতারা দুর্বৃত্তদের কর্মী হিসেবে লালন-পালন করছেন। কেননা, এদের ওপর নির্ভর করে ওইসব রাজনৈতিক নেতার কর্মসূচিতে জমায়েত হবে কি না। এখন রাজনৈতিক নেতারা এই দুর্বৃত্তদের বেষ্টনী দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে। সাধারণ জনগণ সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই দুর্বৃত্তরা নৈতিকতাবর্জিত হয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এবং প্রশাসনিক আঁতাতে যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : সারা বিশ্বের মতোই দেশেও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। অনেকে পর্নোগ্রাফির প্রসার, চলচ্চিত্র ও বিভিন্ন মাধ্যমে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপনকে ধর্ষণ-মানসিকতা তৈরির জন্য দায়ী করছেন। প্রাযুক্তিক বিকাশের এ অপব্যবহার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
খুশী কবির : এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হচ্ছে। আমরা এসবের মধ্যে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা বুঝতে সক্ষম। পৃথিবীতে কোথায় কী ঘটছে তা আমরা জানতে পারছি। কিন্তু এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। কিছু অসাধু মহল তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে। এর ফলে এক ধরনের ক্রিমিলাইজেশন হচ্ছে। আবার অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় মতকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উন্মাদনা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের নিপীড়নে ভূমিকা রাখছে। আবার যৌনসহিংসতা সংঘটিত হওয়ার পেছনেও প্রযুক্তির অপব্যবহার কাজ করছে। তাই এ অপব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণ বা যৌনসহিংসতার নেপথ্যে ‘পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা’ কতটুকু ভূমিকা রাখছে?
খুশী কবির : আমরা একটা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করছি। এ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা শৈশব থেকে বড় হয়েছি। আর এতে নারীকে সবসময় অধীনস্ত করে রাখা হয়। তার পরিচয় হয়ে ওঠে সে কারও স্ত্রী কিংবা কারও মা বা কারও কন্যা। শৈশবে একটা মেয়েকে বোঝানো হয় তোমার প্রকৃত বাড়ি হলো শ্বশুরবাড়ি। যেখানে সে জন্ম নেয় সেখানকার ওপর তার কি কোনো অধিকার নেই? এটা কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যে, একটা পুত্রসন্তান তার নিজের বাড়ির অধিকার পাচ্ছে, কিন্তু কন্যা সন্তানের কোনো অধিকার নেই। এই কন্যারা হয়তো পরিবারে খাদ্য পায়, কিন্তু তারা পরাশ্রয়ীর মতো বাস করে। সমাজে প্রচলিত এই ধ্যানধারণা অর্থাৎ নারী দুর্বল, নারীকে নিয়ন্ত্রিত রাখা উচিত, নারী অধীনস্ত এসবই নারীর অবস্থানকে মর্যাদার আসনে না বসিয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোকে সহায়তা করছে। এসব ধারণা সমাজে বিরূপ এবং পশ্চাৎপদ ভূমিকা তৈরি করে। আর তাতে ধর্ষণের সংখ্যা এবং যৌন নিপীড়নের সংখ্যা বহুল পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আমরা যুদ্ধে সব সময় দেখেছি যে নারীর ওপর বেশিমাত্রার নিপীড়ন হয়ে থাকে। কেননা নারীকে দুর্বল এবং অসহায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি আমরা দেখছি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্নতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। জবাবদিহির সংস্কৃতি নেই। কোনো ধরনের অ্যাকাউন্টিবিলিটি নেই। তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়নি। যার ফলে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। পাশাপাশি, সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ে বসবাস করেন। পুরুষ তো পশু নয়, তাদের আমরা সেভাবে দেখতে চাই না, নিপীড়ক হিসেবে ভাবতে চাই না। তাতে পুরুষেরও অমর্যাদা হয়। নারী যদি পুরুষের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখে তাহলে পুরুষের অবস্থানও নিচে নেমে যায়। তাই পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তনও খুব জরুরি। পুরুষ নিজে যখন বুঝতে শিখবে যে, এ ধরনের আচরণের দ্বারা সে নিজেই নিজের অবমূল্যায়ন করছে তখন নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে।
দেশ রূপান্তর : বাংলাদেশ সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। খুন, ধর্ষণ, পারিবারিক-সামাজিক নির্যাতন নিত্য ঘটনা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি, তার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৪৩টি। ধর্ষণের শিকার ১২ জন করেছেন আত্মহত্যা। নারীর প্রতি এই সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় কী?
খুশী কবির : এই ধরনের সহিংসতা রোধের উপায় হচ্ছে সার্বিকভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এখানে সরকারের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এজন্য সবাইকে ডাকতে হবে, কেননা সরকার এটা এককভাবে পারবে না। একটা রাজনৈতিক দল সরকার পরিচালনা করে থাকে। এই পরিচালনার জন্য দলে বিভিন্ন পদ থাকে। এখন তাদের তদারকি করতে হবে কোন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এ অপকর্মগুলো করা হচ্ছে? কেন সহিসংসতার রাশ টেনে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না? সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেন এগুলো প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না? নিশ্চয়ই অনেকগুলো দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সরকার সবাইকে ডাকবে। আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, প্রশাসন, সামাজিক সংগঠনসমূহ, সচেতন নাগরিকসহ সবাইকে ডেকে এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রতিকারের পথ খুঁজতে হবে। আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা আছে কি না তা বের করে দেখতে হবে। আইনের ব্যবহারিক কোনো দুর্বলতা আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণে কোনো দুর্বলতা আছে কি না তা দেখতে হবে। এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকেও যুক্ত করতে হবে। আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতনের জন্য ট্রাইবুন্যাল আছে। একে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীকে সমানভাবে দেখার শিক্ষাটা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে নারীর যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সবাইকে ডাকতে হবে। আমরা সবাই যেসব পরামর্শ প্রদান করব, সেটা বিবেচনা করে বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে হবে। যে কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু এজন্য তো সে দলকে ন্যায়বিচার এবং সুশাসনও নিশ্চিত করতে হয়। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবাইকে ডেকে দক্ষতা অনুযায়ী কাজে লাগাতে হবে। যেসব আইন করা হয়েছিল, সেগুলোতে কোনো ফাঁক আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কেন আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তাও খোঁজ করতে হবে। আমরা নীতিমালা করেছিলাম। কিন্তু নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও কোনো নারী বিচারপ্রার্থী না হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে, তার সন্ধানও করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণ বা নিপীড়নের ক্ষেত্রে এসব অপরাধের শিকার নারীর দিকে অনেকে আঙুল তুলছে...
খুশী কবির : আমাদের এখানে একটা সংস্কৃতি চালু রয়েছে যে নিপীড়িতকেই দোষারোপ করা হয়। এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ধর্ষণ বা নিপীড়নের শিকার নারীর জন্য এমন একটা সামাজিক অবস্থা তৈরি করতে হবে যেন সে উঁচু গলায় বলতে পারে, ‘আমি যে ধর্ষণের শিকার হয়েছি, সেটা আমার জন্য কোনো কলঙ্ক নয়, বরং সমাজের জন্য কলঙ্ক। আর তোমরা যদি ওই ধর্ষককে প্রশ্রয় দাও কিংবা বিচারের আওতায় না আনো, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য কলঙ্ক।’ আপনাকে যদি রাস্তায় কেউ ছুরিকাঘাত করে আহত করে, তাহলে সমাজ তো তখন আপনার পক্ষেই থাকবে। কিন্তু নারীর ওপর যদি সহিংসতা চলে, তখন নারীকেই কেন দোষারোপের সম্মুখীন হতে হবে। এই মানসিকতা থেকে উত্তরণ ঘটানো দরকার। পুরুষের মতো নারীও ব্যক্তি; তাই পুরুষের ওপর হামলার মতো নারীর ওপর হামলাও একইভাবে নিন্দনীয় এবং দোষের। যে ব্যক্তি নারীর ওপর এ হামলা করে সে যেমন দোষী, তেমনি যে সমাজ এ হামলাকে প্রশ্রয় দেয় সে সমাজও সমানভাবে দোষী। নারীর ওপর হামলা হলে সে যেন চুপসে না গিয়ে উচ্চকণ্ঠে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়। তার তো লজ্জার কিছু নেই, এটা উপলব্ধি করতে হবে। সমাজকেও এ ব্যাপারে মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এখন অবশ্য কিছু কিছু নারী এগিয়ে আসছেন। এভাবে সামগ্রিক নারী সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিদ্যালয় থেকে এ সাহস রপ্ত করার শিক্ষা দিতে হবে। সরকারের ব্যবস্থাপনাও এমনভাবে দৃঢ় করতে হবে যে ধর্ষণ বা নিপীড়নের শিকার নারীরা নির্ভয়ে তাদের কথা বলতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক দশকে ধর্ষণ মামলার সুরাহার হার মাত্র ৩.৪৫ ভাগ। শাস্তির হার মাত্র ০.৪৫ ভাগ। দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাদীপক্ষের বড় অংশই মামলা চালাতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। এই বিচারহীনতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ক্ষেত্রে করণীয় কী?
খুশী কবির : এটা কি আইনের দুর্বলতা, নাকি প্রয়োগের দুর্বলতা সেটা আমাদের ভালোভাবে দেখতে হবে। এগুলো কেউ দেখছে না বলে এটার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কথা বলতে হবে। আইনসহ বিচারব্যবস্থা এবং পুলিশের তদন্তের প্রক্রিয়াসহ সব কিছুকে আমাদের ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়ন করলে তা যদি পুরনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে নতুন আইনই বলবৎ থাকবে। সর্বোপরি, সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। এ বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু নারীর নিরাপত্তা দানের বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। এজন্য সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে যে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারা, একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা। তাই এ ব্যর্থতা মোচন করা সরকারের একটা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নারী ও মানবাধিকারকর্মী খুশী কবিরের জন্ম ১৯৪৮ সালে। তিনি ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে স্নাতক হন। এরপর যুক্ত হয়েছিলেন বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ের সময় তিনি ত্রাণ বিতরণের কাজে যোগ দেন। পরে তিনি ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদের সঙ্গে সেবামূলক কাজে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে ব্র্যাক ছেড়ে যোগ দেন ‘নিজেরা করি’ নামে সংগঠনটিতে। বর্তমানে তিনি এর সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আন্তর্জাতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের একজন সদস্য। সম্প্রতি দেশে চলমান ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন ও অন্যান্য যৌনসহিংসতা নিয়ে তিনি দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের অনিন্দ্য আরিফ
দেশ রূপান্তর : বেগমগঞ্জের ঘটনা, সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনাসহ যৌনসহিংসতার ঘটনাগুলোর পেছনে কী কী কারণ রয়েছে বলে মনে করেন?
খুশী কবির : আমার মতে, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের নেপথ্যে দুটি বা তিনটি কারণ প্রধান ভূমিকা রাখছে। প্রথমত, আমাদের সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় ঘটেছে। আগে সমাজে একটি নৈতিক মূল্যবোধ কাজ করত। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায় নৈতিকতা বজায় থাকত। সঠিক-ভুল নির্ধারণের একটা মাপকাঠি সমাজে বিদ্যমান ছিল। আমাদের শৈশবের শিক্ষা অনুযায়ী নিজেদের সন্তানদেরও ন্যায়, নীতিবোধ এবং ন্যায্যতার শিক্ষা দিয়েছি। আমরা ঘুষ, দুর্নীতিকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছিলাম। কিন্তু এখনকার সমাজে নৈতিকতার মূল্যবোধ একদম অনুপস্থিত। এখন অর্থের মাপকাঠিতে সবকিছু বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে সম্মান, মর্যাদাসহ প্রায় সবই কিনে ফেলা যাচ্ছে। তাই নৈতিকতার অবস্থান একদম শূন্যতে নেমে এসেছে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রশাসন জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। সিভিল প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনই বলেন, সবাই দেশের সংবিধান এবং আইনকানুন রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত। তারা জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় আছে তাদেরই সেবাদানে এসব প্রশাসন নিয়োজিত। তারা জনগণের জন্য কিংবা রাষ্ট্রের জন্য কোনো কাজ করছে না। তারা দেশের নিয়মকানুন, বিধিবিধান এবং আইন উপেক্ষা করে এ কাজ করছেন। আমরা যখন গ্রাম-গঞ্জে কাজ করতে যাই তখন দেখি, প্রশাসনের লোকরা নিয়মাবলি বা আইন ভেঙে কাজ করছেন। অথচ জনগণের করের টাকায় তাদের বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ না থেকে তারা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নৈতিকতার বিসর্জন দিচ্ছেন। তাদের নৈতিক স্খলন ঘটছে। আর এই সুযোগে রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্নরা তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রাজনৈতিক নেতারা দুর্বৃত্তদের কর্মী হিসেবে লালন-পালন করছেন। কেননা, এদের ওপর নির্ভর করে ওইসব রাজনৈতিক নেতার কর্মসূচিতে জমায়েত হবে কি না। এখন রাজনৈতিক নেতারা এই দুর্বৃত্তদের বেষ্টনী দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে। সাধারণ জনগণ সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না। এই দুর্বৃত্তরা নৈতিকতাবর্জিত হয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এবং প্রশাসনিক আঁতাতে যথেচ্ছাচারে লিপ্ত হচ্ছে।
দেশ রূপান্তর : সারা বিশ্বের মতোই দেশেও তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। অনেকে পর্নোগ্রাফির প্রসার, চলচ্চিত্র ও বিভিন্ন মাধ্যমে নারীকে ভোগ্যপণ্য হিসেবে উপস্থাপনকে ধর্ষণ-মানসিকতা তৈরির জন্য দায়ী করছেন। প্রাযুক্তিক বিকাশের এ অপব্যবহার সম্পর্কে আপনার মন্তব্য কী?
খুশী কবির : এখন ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হচ্ছে। আমরা এসবের মধ্যে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা বুঝতে সক্ষম। পৃথিবীতে কোথায় কী ঘটছে তা আমরা জানতে পারছি। কিন্তু এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। কিছু অসাধু মহল তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এ প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে। এর ফলে এক ধরনের ক্রিমিলাইজেশন হচ্ছে। আবার অনেকে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মীয় মতকে অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উন্মাদনা ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সংখ্যালঘুদের নিপীড়নে ভূমিকা রাখছে। আবার যৌনসহিংসতা সংঘটিত হওয়ার পেছনেও প্রযুক্তির অপব্যবহার কাজ করছে। তাই এ অপব্যবহার সম্পর্কে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণ বা যৌনসহিংসতার নেপথ্যে ‘পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা’ কতটুকু ভূমিকা রাখছে?
খুশী কবির : আমরা একটা পিতৃতান্ত্রিক সমাজে বসবাস করছি। এ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা শৈশব থেকে বড় হয়েছি। আর এতে নারীকে সবসময় অধীনস্ত করে রাখা হয়। তার পরিচয় হয়ে ওঠে সে কারও স্ত্রী কিংবা কারও মা বা কারও কন্যা। শৈশবে একটা মেয়েকে বোঝানো হয় তোমার প্রকৃত বাড়ি হলো শ্বশুরবাড়ি। যেখানে সে জন্ম নেয় সেখানকার ওপর তার কি কোনো অধিকার নেই? এটা কী ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যে, একটা পুত্রসন্তান তার নিজের বাড়ির অধিকার পাচ্ছে, কিন্তু কন্যা সন্তানের কোনো অধিকার নেই। এই কন্যারা হয়তো পরিবারে খাদ্য পায়, কিন্তু তারা পরাশ্রয়ীর মতো বাস করে। সমাজে প্রচলিত এই ধ্যানধারণা অর্থাৎ নারী দুর্বল, নারীকে নিয়ন্ত্রিত রাখা উচিত, নারী অধীনস্ত এসবই নারীর অবস্থানকে মর্যাদার আসনে না বসিয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনাগুলোকে সহায়তা করছে। এসব ধারণা সমাজে বিরূপ এবং পশ্চাৎপদ ভূমিকা তৈরি করে। আর তাতে ধর্ষণের সংখ্যা এবং যৌন নিপীড়নের সংখ্যা বহুল পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আমরা যুদ্ধে সব সময় দেখেছি যে নারীর ওপর বেশিমাত্রার নিপীড়ন হয়ে থাকে। কেননা নারীকে দুর্বল এবং অসহায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি আমরা দেখছি দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্নতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। জবাবদিহির সংস্কৃতি নেই। কোনো ধরনের অ্যাকাউন্টিবিলিটি নেই। তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়নি। যার ফলে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। পাশাপাশি, সমাজে নারী-পুরুষ উভয়ে বসবাস করেন। পুরুষ তো পশু নয়, তাদের আমরা সেভাবে দেখতে চাই না, নিপীড়ক হিসেবে ভাবতে চাই না। তাতে পুরুষেরও অমর্যাদা হয়। নারী যদি পুরুষের দ্বারা নিপীড়িত হওয়ার ভয়ে নিজেকে লুকিয়ে রাখে তাহলে পুরুষের অবস্থানও নিচে নেমে যায়। তাই পুরুষের মানসিকতার পরিবর্তনও খুব জরুরি। পুরুষ নিজে যখন বুঝতে শিখবে যে, এ ধরনের আচরণের দ্বারা সে নিজেই নিজের অবমূল্যায়ন করছে তখন নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ হবে।
দেশ রূপান্তর : বাংলাদেশ সম্প্রতি নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। খুন, ধর্ষণ, পারিবারিক-সামাজিক নির্যাতন নিত্য ঘটনা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে গত ৯ মাসে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৯৭৫টি, তার মধ্যে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ২০৮টি। ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ৪৩টি। ধর্ষণের শিকার ১২ জন করেছেন আত্মহত্যা। নারীর প্রতি এই সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় কী?
খুশী কবির : এই ধরনের সহিংসতা রোধের উপায় হচ্ছে সার্বিকভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এখানে সরকারের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এজন্য সবাইকে ডাকতে হবে, কেননা সরকার এটা এককভাবে পারবে না। একটা রাজনৈতিক দল সরকার পরিচালনা করে থাকে। এই পরিচালনার জন্য দলে বিভিন্ন পদ থাকে। এখন তাদের তদারকি করতে হবে কোন দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এ অপকর্মগুলো করা হচ্ছে? কেন সহিসংসতার রাশ টেনে ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না? সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কেন এগুলো প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না? নিশ্চয়ই অনেকগুলো দুর্বলতা রয়েছে। সেগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সরকার সবাইকে ডাকবে। আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, প্রশাসন, সামাজিক সংগঠনসমূহ, সচেতন নাগরিকসহ সবাইকে ডেকে এর কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং প্রতিকারের পথ খুঁজতে হবে। আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো দুর্বলতা আছে কি না তা বের করে দেখতে হবে। আইনের ব্যবহারিক কোনো দুর্বলতা আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণে কোনো দুর্বলতা আছে কি না তা দেখতে হবে। এর সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনকেও যুক্ত করতে হবে। আমাদের নারী ও শিশু নির্যাতনের জন্য ট্রাইবুন্যাল আছে। একে শক্তিশালী এবং কার্যকর করার জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নারীকে সমানভাবে দেখার শিক্ষাটা ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে নারীর যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সবাইকে ডাকতে হবে। আমরা সবাই যেসব পরামর্শ প্রদান করব, সেটা বিবেচনা করে বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে হবে। যে কোনো রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। কিন্তু এজন্য তো সে দলকে ন্যায়বিচার এবং সুশাসনও নিশ্চিত করতে হয়। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবাইকে ডেকে দক্ষতা অনুযায়ী কাজে লাগাতে হবে। যেসব আইন করা হয়েছিল, সেগুলোতে কোনো ফাঁক আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। কেন আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়নে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে, তাও খোঁজ করতে হবে। আমরা নীতিমালা করেছিলাম। কিন্তু নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও কোনো নারী বিচারপ্রার্থী না হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে, তার সন্ধানও করতে হবে।
দেশ রূপান্তর : ধর্ষণ বা নিপীড়নের ক্ষেত্রে এসব অপরাধের শিকার নারীর দিকে অনেকে আঙুল তুলছে...
খুশী কবির : আমাদের এখানে একটা সংস্কৃতি চালু রয়েছে যে নিপীড়িতকেই দোষারোপ করা হয়। এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ধর্ষণ বা নিপীড়নের শিকার নারীর জন্য এমন একটা সামাজিক অবস্থা তৈরি করতে হবে যেন সে উঁচু গলায় বলতে পারে, ‘আমি যে ধর্ষণের শিকার হয়েছি, সেটা আমার জন্য কোনো কলঙ্ক নয়, বরং সমাজের জন্য কলঙ্ক। আর তোমরা যদি ওই ধর্ষককে প্রশ্রয় দাও কিংবা বিচারের আওতায় না আনো, তাহলে সেটা তোমাদের জন্য কলঙ্ক।’ আপনাকে যদি রাস্তায় কেউ ছুরিকাঘাত করে আহত করে, তাহলে সমাজ তো তখন আপনার পক্ষেই থাকবে। কিন্তু নারীর ওপর যদি সহিংসতা চলে, তখন নারীকেই কেন দোষারোপের সম্মুখীন হতে হবে। এই মানসিকতা থেকে উত্তরণ ঘটানো দরকার। পুরুষের মতো নারীও ব্যক্তি; তাই পুরুষের ওপর হামলার মতো নারীর ওপর হামলাও একইভাবে নিন্দনীয় এবং দোষের। যে ব্যক্তি নারীর ওপর এ হামলা করে সে যেমন দোষী, তেমনি যে সমাজ এ হামলাকে প্রশ্রয় দেয় সে সমাজও সমানভাবে দোষী। নারীর ওপর হামলা হলে সে যেন চুপসে না গিয়ে উচ্চকণ্ঠে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়। তার তো লজ্জার কিছু নেই, এটা উপলব্ধি করতে হবে। সমাজকেও এ ব্যাপারে মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এখন অবশ্য কিছু কিছু নারী এগিয়ে আসছেন। এভাবে সামগ্রিক নারী সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে। বিদ্যালয় থেকে এ সাহস রপ্ত করার শিক্ষা দিতে হবে। সরকারের ব্যবস্থাপনাও এমনভাবে দৃঢ় করতে হবে যে ধর্ষণ বা নিপীড়নের শিকার নারীরা নির্ভয়ে তাদের কথা বলতে পারেন।
দেশ রূপান্তর : গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে গত এক দশকে ধর্ষণ মামলার সুরাহার হার মাত্র ৩.৪৫ ভাগ। শাস্তির হার মাত্র ০.৪৫ ভাগ। দীর্ঘসূত্রতার কারণে বাদীপক্ষের বড় অংশই মামলা চালাতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। এই বিচারহীনতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ক্ষেত্রে করণীয় কী?
খুশী কবির : এটা কি আইনের দুর্বলতা, নাকি প্রয়োগের দুর্বলতা সেটা আমাদের ভালোভাবে দেখতে হবে। এগুলো কেউ দেখছে না বলে এটার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। কথা বলতে হবে। আইনসহ বিচারব্যবস্থা এবং পুলিশের তদন্তের প্রক্রিয়াসহ সব কিছুকে আমাদের ঢেলে সাজাতে হবে। এক্ষেত্রে নতুন আইন প্রণয়ন করলে তা যদি পুরনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে নতুন আইনই বলবৎ থাকবে। সর্বোপরি, সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। এ বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছি, কিন্তু নারীর নিরাপত্তা দানের বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। এজন্য সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে যে দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারা, একটা বড় ধরনের ব্যর্থতা। তাই এ ব্যর্থতা মোচন করা সরকারের একটা অন্যতম প্রধান দায়িত্ব।