আগে সংলাপে আসুন পরে নির্বাচন নিয়ে সংসদে কথা বলুন
মাহবুব উল আলম হানিফ
মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৯, ২০ ও ২১তম কাউন্সিলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতির সংলাপ, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর সম্পাদকীয় বিভাগের এহ্সান মাহমুদ
দেশ রূপান্তর : নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনাদের প্রত্যাশা কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ : মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের সবার অভিভাবক। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। রাষ্ট্রপতি যেহেতু কোনো দলের নন, তাই তার এই উদ্যোগ দেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণে যে সংলাপের উদ্যোগ মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়েছেন তা ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি বলছে এই সংলাপ আসলে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দমতো কমিশন গঠনের জন্য একটি নাটক। বিএনপির এই অভিযোগ বিষয়ে কী বলবেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : সংলাপের মাধ্যমে সবার মতামত নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে অংশ নেওয়া এবং কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দেশের সবার রাষ্ট্রপতি। তিনি কোনো দলের নন। তাই তার আমন্ত্রণে সংলাপে যোগ দেওয়া উচিত সবার। এখন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। এজন্যই সংলাপের আয়োজন হয়েছে।
আমি বিএনপিকে বলব আগে সংলাপে আসুন, পরে নির্বাচন কীভাবে হবে না হবে তা নিয়ে সংসদে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু বিএনপি সংলাপ নিয়ে ইতিবাচক কথা না বলে আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলব বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ নিয়ে আপনাদের কোনো কথা থাকলে তা বলতে পারেন। উল্টো বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, যেটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি, সেটা অনুসরণ করেই আমাদের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মতামতে সার্চ কমিটি গঠন এবং তাদের দেওয়া নাম যাচাই-বাছাই করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এটাই হলো গণতান্ত্রিক ও সবচেয়ে উত্তম পন্থা। বিএনপি বলছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, এটা প্রশাসনের নাটক। এ রকম নানা অভিযোগ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে তারা। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, বিএনপি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন কেন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করেনি? এখন কেন তারা দাবি করছে! নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপি যে কলঙ্ক তৈরি করে দিয়ে গেছে, তা এখনো জাতির মনে আছে।
দেশ রূপান্তর : বর্তমান সরকার টানা ১২ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। এই সময়ে একটি নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করা গেল না কেন বলে মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারসহ সরকারকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় পার করতে হয়েছে। এত সব কাজের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনটি গঠন করতে পারিনি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা ১২ বছর সময় পার করেছি। ১২ বছরে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাদের সময় পার হয়েছে। জাতির বহু প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও আমাদের করতে হয়েছে। সবচেয়ে যে বড় আঘাতটা আমাদের এসেছিল, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ড। ক্ষমতায় আসার পরেই এমন একটি ঘটনা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আর সেটির বিচারকাজও করেছি। এত সব কাজের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনটি গঠন করতে পারিনি। আশা করছি, আগামী বছরই আইনটি করতে পারব।
দেশ রূপান্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাহিনী হিসেবে র্যাবের এবং ব্যক্তি হিসেবে পুলিশ প্রধানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের ভেতরে ও বাইরে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিতে দেশীয় শক্তিও ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ হতাশ। হঠাৎ করে আমেরিকা আমাদের দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে তারা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বিনা বিচারে হত্যার কারণে নাকি এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ র্যাব প্রতিষ্ঠা করে ২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট করে ৬৫ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় ২০০ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। সে সময়ের র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন বাংলাদেশে ক্রসফায়ার আছে, এটা প্রয়োজন। সন্ত্রাস দমনে ক্রসফায়ারের বিকল্প নেই। সেই ফজলুল বারী এখন কোথায়? এখন তিনিই আমেরিকার আশ্রয়ে আছেন। একই গাছে দুই রকম ফল কেন? যে দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার সাতদিনের মধ্যে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয় বলা হলো। মাত্র ১০ দিন আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরে প্রশংসা করা হলো। এখন মানুষের কাছে কোনটা গ্রহণযোগ্য হবে?
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দেখি, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান ১২০০ সামরিক কর্মকর্তাকে অনেকটা বিনা বিচারে হত্যা করেছেন। এই রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে কোনো দেশকে কথা বলতে শুনিনি। ২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ২৫ হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। ২ হাজারর বেশি মা-বোনকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আমাদের পাঁচশ’র বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা?
আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকারদের দোসর, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল দুজন চৌধুরী মাঈনুদ্দিন লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ে আছেন। কী করে খুনিদের আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন? এতে প্রমাণ হয় এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসেছে, যা বাংলাদেশের মানুষকে হতাশ করেছে। কোনো শক্তিধর রাষ্ট্র অযাচিত কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিক সেটা অমানবিক।
দেশ রূপান্তর : অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে।
মাহবুব উল আলম হানিফ : দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর

মাহবুব উল আলম হানিফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৮তম কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো তিনি দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত ১৯, ২০ ও ২১তম কাউন্সিলেও তাকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় দায়িত্ব প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতির সংলাপ, নির্বাচন কমিশন গঠন এবং সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ রূপান্তর সম্পাদকীয় বিভাগের এহ্সান মাহমুদ
দেশ রূপান্তর : নতুন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছেন। আপনাদের প্রত্যাশা কী?
মাহবুব উল আলম হানিফ : মহামান্য রাষ্ট্রপতি আমাদের সবার অভিভাবক। তার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। রাষ্ট্রপতি যেহেতু কোনো দলের নন, তাই তার এই উদ্যোগ দেশের গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া তাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাই দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণে যে সংলাপের উদ্যোগ মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়েছেন তা ফলপ্রসূ হবে বলে আমি মনে করি।
দেশ রূপান্তর : বিএনপি বলছে এই সংলাপ আসলে ক্ষমতাসীন দলের পছন্দমতো কমিশন গঠনের জন্য একটি নাটক। বিএনপির এই অভিযোগ বিষয়ে কী বলবেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : সংলাপের মাধ্যমে সবার মতামত নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে কমিশন গঠন করা হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে অংশ নেওয়া এবং কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি দেশের সবার রাষ্ট্রপতি। তিনি কোনো দলের নন। তাই তার আমন্ত্রণে সংলাপে যোগ দেওয়া উচিত সবার। এখন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। এজন্যই সংলাপের আয়োজন হয়েছে।
আমি বিএনপিকে বলব আগে সংলাপে আসুন, পরে নির্বাচন কীভাবে হবে না হবে তা নিয়ে সংসদে কথা বলতে পারবেন। কিন্তু বিএনপি সংলাপ নিয়ে ইতিবাচক কথা না বলে আগামী নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলছে। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আমি তাদের বলব বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশগ্রহণ নিয়ে আপনাদের কোনো কথা থাকলে তা বলতে পারেন। উল্টো বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে উদ্যোগ নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন গঠনে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি, যেটা সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি, সেটা অনুসরণ করেই আমাদের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন রাষ্ট্রপতি। তাদের মতামতে সার্চ কমিটি গঠন এবং তাদের দেওয়া নাম যাচাই-বাছাই করেই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। এটাই হলো গণতান্ত্রিক ও সবচেয়ে উত্তম পন্থা। বিএনপি বলছে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না, এটা প্রশাসনের নাটক। এ রকম নানা অভিযোগ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে তারা। আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, বিএনপি যখন রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল, তখন কেন নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করেনি? এখন কেন তারা দাবি করছে! নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে বিএনপি যে কলঙ্ক তৈরি করে দিয়ে গেছে, তা এখনো জাতির মনে আছে।
দেশ রূপান্তর : বর্তমান সরকার টানা ১২ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে। এই সময়ে একটি নির্বাচন কমিশন আইন তৈরি করা গেল না কেন বলে মনে করেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : যুদ্ধাপরাধ, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা ও পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারসহ সরকারকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে সময় পার করতে হয়েছে। এত সব কাজের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনটি গঠন করতে পারিনি। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা ১২ বছর সময় পার করেছি। ১২ বছরে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাদের সময় পার হয়েছে। জাতির বহু প্রত্যাশিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারও আমাদের করতে হয়েছে। সবচেয়ে যে বড় আঘাতটা আমাদের এসেছিল, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ড। ক্ষমতায় আসার পরেই এমন একটি ঘটনা আমাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে। আর সেটির বিচারকাজও করেছি। এত সব কাজের মধ্যে নির্বাচন কমিশন আইনটি গঠন করতে পারিনি। আশা করছি, আগামী বছরই আইনটি করতে পারব।
দেশ রূপান্তর : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বাহিনী হিসেবে র্যাবের এবং ব্যক্তি হিসেবে পুলিশ প্রধানের প্রতি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
মাহবুব উল আলম হানিফ : আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঈর্ষান্বিত হয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের ভেতরে ও বাইরে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিতে দেশীয় শক্তিও ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে দেশের মানুষ হতাশ। হঠাৎ করে আমেরিকা আমাদের দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অভিযোগ করা হচ্ছে তারা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বিনা বিচারে হত্যার কারণে নাকি এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। অথচ র্যাব প্রতিষ্ঠা করে ২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিনহার্ট করে ৬৫ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় ২০০ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। সে সময়ের র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার ফজলুল বারী মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছিলেন বাংলাদেশে ক্রসফায়ার আছে, এটা প্রয়োজন। সন্ত্রাস দমনে ক্রসফায়ারের বিকল্প নেই। সেই ফজলুল বারী এখন কোথায়? এখন তিনিই আমেরিকার আশ্রয়ে আছেন। একই গাছে দুই রকম ফল কেন? যে দুটি সংস্থার প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তার সাতদিনের মধ্যে র্যাবের ভূমিকা প্রশংসনীয় বলা হলো। মাত্র ১০ দিন আগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরে প্রশংসা করা হলো। এখন মানুষের কাছে কোনটা গ্রহণযোগ্য হবে?
আমরা যদি ইতিহাসের দিকে দেখি, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান ১২০০ সামরিক কর্মকর্তাকে অনেকটা বিনা বিচারে হত্যা করেছেন। এই রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে কোনো দেশকে কথা বলতে শুনিনি। ২০০০ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের দ্বারা ২৫ হাজার নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। ২ হাজারর বেশি মা-বোনকে পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই হামলায় ২৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আমাদের পাঁচশ’র বেশি নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এত বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিয়েছিল তারা?
আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকারদের দোসর, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল দুজন চৌধুরী মাঈনুদ্দিন লন্ডনে ও আশরাফুজ্জামান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয়ে আছেন। কী করে খুনিদের আপনারা আশ্রয় দিয়েছেন? এতে প্রমাণ হয় এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসেছে, যা বাংলাদেশের মানুষকে হতাশ করেছে। কোনো শক্তিধর রাষ্ট্র অযাচিত কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিক সেটা অমানবিক।
দেশ রূপান্তর : অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে।
মাহবুব উল আলম হানিফ : দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।