
কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী- এই ট্রিলজি কয়েক প্রজন্মের বাঙালি পাঠককে মোহিত, তাড়িত ও অনুপ্রাণিত করেছে। এর বাইরে অনেক পাঠকপ্রিয় উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন সমরেশ মজুমদার।
সোমবার আমাদের ছেড়ে চলে যান এ কথাসাহিত্যিক।
তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। ছেলেবেলা কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সে। পড়েছেন স্কটিশ চার্চ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাঠকপ্রিয় এ ঔপন্যাসিক ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা এসেছিলেন। তখন ঢাকা ক্লাবে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ।
দেশ রূপান্তর: আপনি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জনপ্রিয়। সমকালীন তিন প্রজন্মের চিন্তা, স্বপ্নকে প্রভাবিত করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
সমরেশ মজুমদার: আপনার বাসার কোনো মেয়ে যদি ভালোবেসে প্রেগনেন্ট হয়, বিয়ে থা না করে এবং একটা বাচ্চার মা হয় আপনি তাকে একসেপ্ট করবেন? আপনার বোনের ক্ষেত্রে ঘটলে আপনি একসেপ্ট করবেন? যারা বলবেন একসেপ্ট করবেন, তারা জেদের বশে বলবেন। কিন্তু জীবনের সত্য এটা না। আপনি এমন মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না এবং তাকে আপনি আদর করে বাসায় ডাকবেন না। আপনি যদি বলেন, হ্যাঁ ডাকব তবে আপনি মেকি কথা বলছেন। এই কথাটা আপনি আপনার স্ত্রীর সামনে, আপনার বাবার সামনে বা আপনার মায়ের সামনে বলতে পারবেন না। আপনি নিজেকে প্রগতিবাদী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য পাবলিকলি বলতে পারেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বলবেন না। আর একটা সমীক্ষা বলছে, দুজন করে পাঠক একটা বই পড়লে কালবেলা উপন্যাসটা দশ লক্ষ পাঠক পড়েছে। একটা সমীক্ষা বলছে, মাধবীলতা একসেপ্টেড বাই অল রিডার্স, প্রত্যেক পাঠকই মাধবীলতার ফ্যান। জীবনে যাকে একসেপ্ট করতে পারব না, বাসায় যাকে নিয়ে যেতে পারব না, তার ফ্যান কেন হচ্ছি? মানুষ তো ফ্যান হয় তারই যার আইডিয়া সে অনুসরণ করে, যার কাজকর্ম সে রেসপেক্ট করে, যাকে ভালোবাসে। মাধবীলতার কাজকর্ম আমি একসেপ্ট করি না অথচ তার জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস আমি পয়সা খরচ করে কিনি। বলি, আহা কালবেলা আমার প্রিয় উপন্যাস। এটা কি মিথ্যাচার নয়?
এমন হতে পারে আমি যা করতে পারি না, আমার পছন্দের চরিত্র তা করছে বলে আমি তার ফ্যান। আমার কল্পনার জগতে সে কাজ করতে পারে।
সমরেশ মজুমদার: আপনি যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে দশটা সৈন্যকে মোকাবিলা করে আসতে পারেন না। কিন্তু আরেকজন সেটা পারলে আপনি তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। কিন্তু এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এক সঙ্গে পড়ত। তারা পরস্পরের প্রেমে পড়ল। তাদের শারীরিক সম্পর্ক হলো। ছেলেটা মেয়েটার দায়িত্ব নেয়নি। না নিয়ে সে রাজনীতি করছিল। এত দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে। সে যে মেয়েটির জীবনে এত বড় একটা সর্বনাশ করল তা নিয়ে তার জীবনে কোনো অনুতাপ এলো না। তারপর তিন বা চার বছর পর সে যখন জেল থেকে বেরিয়ে জানল, সে যে কাজটি করেছে তা থেকে একটা শিশুর জন্ম হয়েছে তখন সে বলল, আমার উচিত তোমাকে বিয়ে করা। মেয়েটি তাকে রিফিউজ করল। বলল, বিয়ে করার কথা বলে তাকে সে অপমান করেছে। মেয়েটির এই অ্যাডামেন্ট অবস্থানের কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কেন এখন বিয়ের কথা বললে সে অপমানিত হবে। আমি লজিক খোঁজার চেষ্টা করছি, কেন এই উপন্যাসটা লোকে গ্রহণ করেছে?
এমন হতে পারে, লোকে পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত এতে পেয়েছে।
সমরেশ মজুমদার: কলকাতা শহরে বাড়িঅলার কাছে ভাড়া চাইতে এলেন দুজন। ভদ্রলোক একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। বয়স আঠাশ। ভদ্রমহিলা একটা বড় ফার্মে চাকরি করেন। বয়স ছাব্বিশ। বাড়িঅলা নাম জানতে চাইলে দেখলেন দুজনের দুটো আলাদা টাইটেল। আলাদা টাইটেল কেন? তারা বলে, আমরা তো বিয়ে-থা করিনি। আপনারা স্বামী-স্ত্রী না? না। এবার ভদ্রলোক একটু ঘাবড়ে গেলেন। স্বামী-স্ত্রী না হলে ভাড়া দেব কেন? তারা বলে, আমরা ভালোবাসি। এখনো আমাদের দেশে কেউ যদি বলে আমরা ভালোবাসি তাই একসঙ্গে থাকি, হজম করতে কষ্ট হয় অনেকের। কিন্তু এই পরিবর্তিত অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। আজ আমার মা যদি বেঁচে থাকতেন তিনি কি হজম করতে পারতেন যদি তার নাতনি এ কাজটি করত? তিনি একটা স্ট্রাকচারের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। সে স্ট্রাকচারে তিনি এতকাল যা শোভন বলে মনে করেছেন তা-ই তিনি আশা করেন। সেদিন একটা অনুষ্ঠানে আমি অনেক লোকের মাঝে এই প্রশ্নটা করেছিলাম, আপনারা মাধবীলতাকে সমর্থন করেন কি করেন না। কেউ কথা বলে না। শেষ পর্যন্ত একটা একুশ বছর বয়সী মেয়ে উঠে দাঁড়াল সে মাধবীলতাকে সমর্থন করে। সে তার মায়ের দৃষ্টান্ত বলেছে আমাকে। সে ঠিক আছে, কিন্তু বেশিরভাগই মুখোশ পরে হাঁটি। সাহিত্য কখনো কখনো ভালোলাগা বা না লাগা সত্তে¡ও জীবন থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা একটা জায়গায় পৌঁছে যায়।
কয়েকটা জেনারেশনকে ধারন করার যে ব্যাপার এটা আপনি কীভাবে পারলেন?
সমরেশ মজুমদার: আগেকার দিনে দেখা যেত, বাড়িতে কাজের লোক আছে। রান্নার লোক। বিধবা হয়ে আঠারো-উনিশ বছরে এসেছে। তারপর পঞ্চাশ বছর ধরে রান্না করছে। তখন যারা বাচ্চা ছিল তারা বড় হয়ে চলে যাচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। সে কিন্তু রান্না করে যাচ্ছে। অমুকের মা বলে ডাকে তাকে। অমুকের মার রান্না খেতে খুব মজা, খুব ভালো। ঠাকুরদা বলছে, বাবা বলছে, ছেলেও বলছে। কেন?
আপনাদের তারুণ্যে একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু উপমহাদেশের রাজনীতি সে স্বপ্নের পথে যাচ্ছে না। আপনি হতাশ হন না?
সমরেশ মজুমদার: এগুলো তো আমার হাতের মধ্যে নেই। আমি কলকাতা শহরে যে বাঙালিকে দেখি তাতে আমি আনন্দ পাই, আবার দুঃখ পাই। আবার ঢাকায় যখন আসি একই অনুভূতি হয়। আমি যখন প্রথম আসি তখন ইউনিভার্সিটিতেই বোরখা পরা মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তখন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেই মেয়েরা বোরখা খুলে ফেলত। রিকশা থেকে নামত। ফেরার পথে রিকশায় ওঠার আগে বোরখা পরে রিকশায় উঠত। হেঁটে রাস্তা দিয়ে আসত না। প্রথম এসে মেয়েদের রাস্তায় হাঁটতে খুব একটা দেখিনি। এখন মেয়েরা অনেক চলাফেরা করছে। কোথাও কোথাও মেয়েরা ফুটপাতে বসে সিগারেট খায়। এটা আমার খারাপ লাগেনি। নিজের সম্মান বজায় রেখে যদি এটা করতে পারে তবে ভালো। আরেকটা জিনিস দেখতে থাকলাম- বোরখা নয়, মুখঢাকা পোশাক বা হিজাব পরার চলটা যেন দিন দিন বাড়ছে। আমি ভাবতাম, আত্মরক্ষা করার জন্য হিজাব একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। মেয়েটি নিজেকে অন্যের কাছে এক্সপোজ করতে চায় না, তাই হিজাব পরে। এই আত্মরক্ষার প্রয়োজনটা হচ্ছে কেন। পুরুষদের হাত থেকে বাঁচবার জন্য আত্মরক্ষা করতে হচ্ছে? নিজেকে আমি জিজ্ঞেস করি। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে, আর বলবেন না দিনকে দিন হিজাব বেড়েই চলেছে। আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন। ধর্মান্ধতা নাকি সংস্কার কোনটি কারণ। মা হিজাব পরত না মেয়ে পরছে। আবার এও দেখছি, প্যান্ট, কামিজ পরে মাথায় হিজাব পরছে।
এখন পশ্চিমবঙ্গে যে অস্থিরতা চলছে, এনআরসি...
সমরেশ মজুমদার: এই যে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা সমুদ্র পেরিয়ে বাংলাদেশে এলো। আপনারা না পারছেন তাদের গিলতে, না পারছেন হজম করতে, না পারছেন বের করে দিতে। কেন পারছেন না? দেখুন অন্যকে আক্রমণ করতে খুব আনন্দ হয়। নিজে আক্রান্ত হলে দুঃখ হয়।
আমাদের পশ্চিবঙ্গের যিনি মুখ্যমন্ত্রী তার আবেগ মাঝে মাঝে আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল থাকে না। যখন আসামে দেখা গেল ১৯ লাখ লোক, এরা ভারতীয় না। এদের রেশনকার্ড নেই। কিচ্ছু নেই। উনিশ লক্ষ লোক কম না। তাদের যখন আশ্রয়হীন করার চেষ্টা হচ্ছে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আমি নিয়ে নেব। এরা বাঙালি। দেখা গেল, এদের সবাই বাঙালি নয়। সবাই হিন্দু নয়, প্রচুর মুসলমান আছে। তাকে বলা হলো, আপনার বাসায় চারজনকে দেওয়া হলে রাখবেন তো? তিনি বললেন, আমার বাসায় কেন? আমি তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করব। মানে আরেকটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করব, আরেকটা দণ্ডাকারণ্যের ব্যবস্থা করব। এর কোনো সুরাহা নেই। পৃথিবী জুড়ে হচ্ছে। এই যে লোকগুলো গেল, কেন গেল? আমি তো এখানে কত বছর ধরে আসছি। আমি সে-রকম জাতিগত দাঙ্গা তো দেখিনি এখানে। এখান থেকে যারা যাচ্ছে তারা আতঙ্কে যাচ্ছে? কীসের আতঙ্ক? নাকি আরেকটু বড় কিছু প্রাপ্তির আশায় যাচ্ছে?
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পাঠকের মধ্যে কোনো পার্থক্য আপনি দেখেন?
সমরেশ মজুমদার: ১৯৭১ এর আগে এখানে বাংলা বই খুব কম আসত। আমার বলতে লজ্জাও নেই, দ্বিধাও নেই একাত্তরের পর এখানে যত পাঠক হয়েছে সব হুমায়ূনের কল্যাণে তৈরি হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ না জন্মালে বাংলাদেশে এত পাঠক তৈরি হতো না। হুমায়ূনের আগে যারা লিখতেন, অনেক পাওয়ারফুল লেখক ছিলেন তারা। তাদের তুলনায় হুমায়ূন কিছুই না, কিন্তু তাদের বই বিক্রি হতো না। এই ঢাকা ক্লাবে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এমন অনেক বড় লেখক আছেন- খুব বিনয়ী, কিন্তু খুব দরিদ্র। তাদের বই বিক্রি হতো না। আমি হুমায়ূনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার এ ব্যাপারে কী বক্তব্য। হুমায়ূন বলেছে, সমরেশ দা, যে ছেলে বা মেয়ে ষোলো বছর বয়সে হুমায়ূন পড়া ধরে না তাকে আমি বাঙালি বলে মনে করি না। আর যে ২৪ বছরের পরও হুমায়ূন পড়ে সে মানুষ না। ২৪-এর পর একটা অ্যাডাল্ট লোক যার বোধবুদ্ধি আছে সে হুমায়ূন পড়বে কেন? যেখানে কোনোরকম ডেপথ নেই, কোনো রকম গভীরতা নেই একমাত্র হিমু চরিত্র ছাড়া। সে নিজে বলেছে আমাকে। আমি এটা লিখেওছি অনেক জায়গায়। ও নিজেকে জানত খুব ভালোভাবে।
আপনি সম্প্রতি বললেন, বাংলা সাহিত্যের রাজধানী ঢাকায় চলে এসেছে। এর তাৎপর্য কী? সাহিত্যের নিজস্ব একটা ধারা আছে এখানে, কিন্তু সেই অর্থে স্থায়ী পাঠক কম বা বই প্রকাশের সংস্কৃতি তত জোরালো নয়।
সমরেশ মজুমদার: বাংলাভাষায় সমরেশ মজুমদার নামে একজন লেখক আছেন। তিনি যে গল্প উপন্যাস লিখছেন সেগুলো বিক্রি হয়। কিন্তু পাঠকের ইচ্ছা আরও সমরেশ মজুমদার হোক। আমি যত বই লিখেছি তার থেকে বেশি বই এখানে চলে। আমার নামে বই লিখে এখানে চালানো হয়। পাঠকরা বাংলা পড়তে পারে, পড়তে চায়, পড়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। সেটাকে এক্সপ্লোয়েট করছে কিছু খারাপ ব্যবসায়ী। পাঠক নেই, এটা বলছেন কেন? এখানে পাঠক রয়েছে। প্রচন্ড পাঠক আছে। হুমায়ূনের বই বিক্রি হচ্ছে। মৃত্যুর পর সুনীলের বই বিক্রি একদম কমে গেছে। কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পর হুমায়ূনের বই বিক্রি হচ্ছে। একজন প্রকাশক আমাকে বলেছেন হয়তো ১০% বিক্রি কমেছে। পশ্চিমবাংলার বইমেলাতে ২১ থেকে ২২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়, এগুলো কি ভূতে কেনে? অথচ বলা হয় পশ্চিমবাংলায় পাঠক নেই। আপনাদের এখানে বলা হয়, পাঠক কমে গেছে। কিন্তু একুশের মেলা থেকে বাংলাবাজারের পাবলিশাররা ৫০% আয় করেন। নভেম্বর মাসে এখানে একটা আন্তর্জাতিক বইমেলা হবে। দুটো বইমেলা করার দরকার কী যদি বিক্রি না হবে?
আপনি অনেক লিখেছেন। এখন একেবারে পরিণত বয়স আপনার। লেখা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
সমরেশ মজুমদার: সকালে ঘুম থেকে উঠি ধরেন সাড়ে ছ’টায়। ব্রাশট্রাশ করার পর এক কাপ চা হাতে সূর্য ওঠা দেখতে খুব মজা লাগে। খবরের কাগজ আসে। চার চারটে কাগজ। সেটা পড়তে আরম্ভ করি। পড়তে পড়তে নটা বাজে। তখন নাস্তা খাই। নাস্তা খাওয়ার পর ফোন করি, একে ওকে তাকে। ধরেন, দশটা বেজে গেল। দশটা সাড়ে দশটা বেজে গেলে আর তো লেখার টাইম নাই। আর কখন লিখব। এখন লিখতে ইচ্ছা করে না বলে যত রকমের বাহানা আছে নিজেকে দিই। আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন যে পাড়ায় আমি থাকতাম সে পাড়ায় একজন বিখ্যাত লেখক থাকতেন, তার নাম শিবরাম চক্রবর্তী। তিনি আমাদের ছোটবেলায় হাসির লেখক হিসেবে আমাদের বুকের মধ্যে ছিলেন। আমি একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি সকাল থেকে কী করেন। তিনি বললেন, ঘুম থেকে উঠি। তারপর? তারপর চা খাই। তারপর? বিনাপয়সার কাগজ পড়ি। বিনাপয়সার মানে? আমাকে আনন্দবাজার পত্রিকা বিনাপয়সায় কাগজ পাঠায়, ওটা পড়ি। পড়তে পড়তে ঘুম পেয়ে যায়। আবার শুয়ে, ঘুমিয়ে পড়ি। আবার উঠি। তারপর? উঠে গোসল করতে যাই। ভাত খাই। ভাত খেলে ঘুম পায়। ঘুমায়ে পড়ি। বিকাল হয়, আমি সাজুগুজু করে বাস ধরে আমার প্রেমিকাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। প্রেমিকা? কেন, পড়োনি আমার লেখার মধ্যে? আটটা অব্দি তাদের সঙ্গে গল্প করে গল্প করে মন প্রফুল্ল হয়। তুমি দেখবে, মেয়েদের সঙ্গে গল্প করলে তোমার মন অনেক বড় হয়ে যাবে। তারপর ঘরে আসি। আবার ভাত খাই। ঘুমায়ে পড়ি। আমি তখন বললাম, আপনি লেখেন কখন? কেন, পরের দিন সকালে। পরের দিন সকালটা কবে আমি জানি না। আমি এখন সেই জায়গায়। লিখতে ইচ্ছা করে না। সাধারণত আমি সকালে লিখি। এখন বাধ্যবাধকতার জন্যই লিখতে হয়। অল্প বয়সে অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিল, তখন যখন ইচ্ছা তখন লিখতাম।
[৪ অক্টোবর, ২০১৯ দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত]
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে বলা হচ্ছে তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
দেশ রূপান্তর: গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। বিএনপি সরে দাঁড়ানোয় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কঠিন হয়ে গেল কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি বিশ্বাস করি মানুষ ভোট দিতে আসবে।দেখুন বিএনপি সরে গেলেও, ভোটের মাঠে জাতীয় পাটি,ইসলামি আন্দোলন সহ ৬জন মেয়র প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।
দেশ রূপান্তর: ব্যক্তি জীবনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কেমন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি।তারপর তো রাজনীতিতে আসি।রাজনীতির মাঠে তো মানুষকে নিয়েই সব কাজ কারবার। ব্যক্তিজীবনে আমি ধূমপান থেকে শুরু করে সব বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র হতে পারলে সিলেটের উন্নয়নে বড় কোন পরিকল্পনা আছে কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে সিলেটে হাই স্পিড ট্রেন চালু করার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছি।এটা আমার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর পায়ে ধরে হলেও আমি এটা বাস্তবায়ন করব।কেবলমাত্র সিলেট সিটির বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে একজন প্রবাসী। হঠাৎ করে কেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ তৈরি হল?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: হঠাৎ করে আমি সিলেটের রাজনীতিতে আসিনি।আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম পরে, উপজেলা যুবলীগের কমিটিতেও ছিলাম। তারপর ইউকে চলে যাই। সেখানে লন্ডন সিটি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি,পরবর্তীতে ইউকে যুবলীগের সভাপতি হই।কেন্দ্রীয় যুবলীগের নানক-আজম পরিষদের সদস্য ছিলাম। গত ২০ বছর ধরে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে নির্বাচন করার জন্য রাজনীতির মাঠে আমি সক্রিয় ছিলাম।সুতরাং কোনোভাবেই আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছি এটা বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
দেশ রূপান্তর: আপনি তো আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে কি আপনি জনতার মেয়র হতে পারবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শিক প্রশ্নে আমি ছাড় দেবো না। সিটি নির্বাচনে যদি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেয় তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি দলের নয় জনতার মেয়র হিসেবে কাজ করব। আমি যার কাছ থেকে রাজনৈতিক দীক্ষা পেয়েছি,বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের সাথে থেকে তাদের জন্য রাজনীতি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশ রূপান্তর: বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোয়, ভোটের মাঠে আপনার সমীকরণ অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে কী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সত্যি বলতে উনার নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাকে মর্মাহত করেছে।ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম,তিনি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক।তারপর জনগণে তাদের মতামত জানাক।
দেশ রূপান্তর: অনেকের ধারণা, আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট-লন্ডন যাতায়াতের মধ্যে থাকবেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: ফলাফল যাইহোক আমি কিন্ত আর যুক্তরাজ্য ফিরে যাচ্ছি না।আমি সিলেটের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।দেখুন আমার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে।যুক্তরাজ্যে আমার যে ব্যবসা বাণিজ্য এটা তারাই দেখবে। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী দেশে ফিরে এসেছেন। আমরা হয়তো ছুটি কাটাতে ইউকে যেতে পারি, কিন্ত স্থায়ী ভাবে আমরা কখনও ফিরে যাবো না।এটা দেশ রূপান্তরের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই।
দেশ রূপান্তর: শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্ত সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে সড়ে দাঁড়ালেও,ভোটের মাঠে তারা আপনার জন্য কাজ করছেন কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন দ্বন্ধ নেই।দলের সবাই আমার জন্য কাজ করছেন এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। আমার প্রচার-প্রচারণা চালাতে কিংবা কর্মসূচি চালাতে আমি সকলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি এবং সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি।বলতে পারেন টোটাল প্ল্যানিং টা দলের।
দেশ রূপান্তর: আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: নির্বাচনে জয়ের বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে।ভোটারদের কাছে যেতে হবে।আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানাতে হবে।
দেশ রূপান্তর: মানুষ কেনো আপনাকে ভোট দেবে?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মানুষ পরিবর্তন চায়,মানুষ উন্নয়ন চায়।দেখুন আমি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। আমার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই।আমি এই শহরে বড় হয়েছি। আমি দেশের বাইরে থাকার সময়ও সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতাম।ফলে আমি জানি মানুষ কি চায়।সুতরাং আমি মনে করি ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবে।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোন ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: শহরকে সবুজ এবং পরিষ্কার নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করবো।মশক নিধন ও নতুন কিছু স্কুল নির্মাণ এই ৫টি বিষয় আমার প্রায়োরিটি লিস্টে রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: সিলেটের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার বিশেষ কোন প্ল্যান আছে কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: এখন একটু উপরের দিকে পরিকল্পনা করতে হবে।আমি এখানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে চাই।ফ্রিলান্সারদের জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ গড়তে চাই।যেনো তারা সিলেটে বসে ডলার উপার্জন করতে পারে।আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৫ বছরে ৫০হাজার আউটসোর্সার তৈরি করা।
দেশ রূপান্তর: প্রবাসীদের কীভাবে সিলেটের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করে তাদেরকে উৎসাহিত করবো সিলেটে বিনিময় করার জন্য। সিলেটে কিন্ত বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে। এখানে প্রবাসী বিনিয়োগ আসলে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করা গেলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। একটা হাসপাতাল তৈরি করতে চাই,যেখানে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর: পর্যটন শিল্পের বিকাশে আপনার কি কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমার ফোকাস হবে পর্যটন।দেখুন আমাদের কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী তরুণ প্রজন্মকে যদি সিলেটের পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় তাহলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব। সিলেট শহরে কোন রিসোর্ট নেই।পর্যটক বান্ধব পরিবেশ নেই।এ খাত নিয়ে আমার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র হতে পারলে নগরবাসীর সাথে কীভাবে
যোগাযোগ স্থাপন করবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি একটা অ্যাপস তৈরির পরিকল্পনা করেছি।মানুষ যেনো আমাদের কাছে না আসতে হয়,আমরাই তাদের কাছে ছুটে যাবো।অ্যাপসে তারা যেকোনো সমস্যার কথা জানাবে,আমাদের টিম সেখানে পৌঁছে যাবে।আমি 'কুইক একশন রেসপন্স টীম গড়ে তুলব '।
দেশ রূপান্তর: সিলেটের ছেলেমেয়েরা ইন্টার পাশ করেই ইউরোপ চলে যাচ্ছে।পড়াশোনা শেষ করে তারা সেসব দেশেই স্থায়ী হচ্ছে। ফলে একদিকে দেশের মেধা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: এখন একটা পরিবর্তন ঘটেছে। আগে ছেলে মেয়েরা ইউরো গিয়েই কাজে লেগে পড়ত এখন কিন্ত একটা বড় অংশ পড়াশোনা করছে।তাদের অনেকেই দেশে ফিরেও আসছে।আমি আউটসোর্সিং এর উপর গুরুত্ব দিতে চাই।যেন তারা দেশে বসে ডলার ইনকাম করতে পারে।আমি মেয়র হতে পারলে আগামী ৫বছরে ৫০হাজার ফ্রিলান্সার তৈরি করার একটা বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও ডলার সংকটের মধ্যেই নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে সরকার।
এছাড়া রয়েছে আইএমএফের ঋণের শর্তে অর্থনৈতিক সংস্কারের বাধ্যবাধকতা। নানা কারণেই এবারের বাজেট বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। প্রস্তাবিত এই বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলের মধ্যে এবারই বাজেটের আলাদা গুরুত্ব কী?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এই বাজেটের গুরুত্ব অনেকগুলো। প্রথম কথা হলো যেহেতু তিন ধাপে এই সরকার প্রায় ১৫ বছর দেশ চালিয়েছে, তো এই দেড় দশকে তার অর্জনকে এই বাজেটের ভেতর দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তো, সেই চেষ্টাটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত হলো যেহেতু এইটা নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেট সেহেতু নির্বাচনকে মাথায় রেখে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বিবেচনায় নিয়ে সে কিছু কথা বলবে, কিছু পদক্ষেপ নেবে এটাও প্রত্যাশিত, স্বাভাবিক। আর এই বাজেটের গুরুত্বের জায়গা হলো আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি করার পরে সরকারের এটা প্রথম বাজেট। ফলে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতির কাঠামোর ভেতরে সে বাজেট প্রস্তুত করেছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। সেইটা হলো নতুনত্ব।
তো সর্বোপরি হলো দেশের ভেতরে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল। যা আমরা সবাই জানি। মূল্যস্ফীতি মানুষকে বিপর্যস্ত করছে। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না। সেজন্য আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু থাকতে পারছে না। লোডশেডিং হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আমাদের দেশের ব্যাংকব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর এবং সেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ হওয়ার মতো অর্থ ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা পাচ্ছে না। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের পরিস্থিতি খুবই চাপের মধ্যে থাকায় টাকায় মূল্যমান পড়ে যাচ্ছে... ইত্যাদি। তো অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-কৌশলগত ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক রেষারেষির প্রতিফলন এখন আমরা বাংলাদেশের মধ্যেও দেখতে পাই। অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এটাও বিবেচনায় নিতে হয়। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিত এবারের বাজেটে আমি দেখতে পাচ্ছি।
বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে থেকেই আইএমএফের শর্তেও বিষয়গুলো আলোচনায় ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব শর্তের প্রতিফলন কেমন দেখছেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সবচেয়ে বড় প্রতিফলন হলো হঠাৎ করে সরকার কর আহরণের জন্য জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত তুলনীয় দেশের চাইতে অন্যতমভাবে কম। এটা আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু এবার আমরা প্রথম লক্ষ করলাম সরকার কর আহরণের জন্য বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন বেপরোয়া হয়েছে যে আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও তাদের ওপর ২০০০ টাকা করে কর আরোপের চিন্তা করেছে। এইটা একটা যেমন।
দ্বিতীয়ত, অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার ভেতরে বেশ কিছু কথা আছে, যেটাতে দেখা যায় যে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের যে সমস্ত শর্ত বা প্রতিশ্রুতি আছে তার প্রতিফলন রয়েছে। যেমন, টাকার মূল্যমানের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের সামঞ্জস্যকরণ, একীভূতকরণ। আমাদের ব্যাংকের যে নয়-ছয় সুদের হার বেঁধে দেওয়া আছে তাকে সুদের করিডরে নিয়ে আসা। নতুনভাবে মুদ্রানীতির চিন্তা করার প্রতিশ্রুতি। যেখানে আগে আমরা ঋণপ্রবাহের ওপর মনোযোগ দিতাম, এখন মূল্যস্ফীতির ওপর মনোযোগ দেব।
এছাড়া আমাদের দায়দেনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে মূল্যায়ন, ব্যয় কাঠামোর খাত নিয়ে আমাদের যেখানে করের বিভিন্ন রেয়াত আছে সেগুলোকে কীভাবে সামঞ্জস্যকরণ করা যায় ইত্যাদি বহু বিষয় আছে যেটাকে আইএমএফের শর্তের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।
রিটার্ন জমা দিলেই ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। আবার সাড়ে ৩ লাখ টাকা করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে ন্যূনতম করমুক্ত আয়ের সীমা কোনটি?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এটা তো প্রত্যক্ষভাবেই বৈপরীত্য আর কি। আইন অনুযায়ী সাড়ে তিন লাখ টাকার যে করমুক্ত সীমা সেটাই কার্যকর হওয়ার কথা। আর ওনারা যেটা বলছেন, সেটা হলো যে সরকারের বেশ কিছু পরিষেবা যিনি পাবেন তার সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় আছে তা মনে করতে হবে। সেটাও ঠিক আছে।
কিন্তু... কেউ যদি পরিষেবা নাও নেয়, শুধু মাত্র এলাকাতে থাকবে এজন্যও সে বাধ্য হতে পারে রিটার্ন দিতে...
বিষয়টা তো খুবই বিস্তৃত। ব্যবসা বা যে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে এই ৪৪ সেবা যে কারোর লাগতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স করা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র কেনা, ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত, জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা, সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা...।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওই যে বললাম, কর আদায়ের জন্য সরকার হঠাৎ করে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবং যেটা আইএমএফের কাছে জিডিপির আড়াই শতাংশ করে কর বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি সেটা পালনের চেষ্টা থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এই পদক্ষেপগুলোকে আরও বৈপরীত্যমূলক এজন্য যে, ধনী ও সম্পদশালীদের সম্পদের যে সারচার্জ থাকে সেখানে কিন্তু রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তিন কোটি থেকে বাড়িয়ে চার কোটি করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের ওপরে যেভাবে আমরা চাপ দিলাম, সেখানে আমরা সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর থেকে আবার সেই চাপটা তুলে নিলাম।
একটার বেশি গাড়ি থাকলে যে দ্বিগুণ করের ব্যাপারটা...?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি এটার বিরুদ্ধে না।
যদি এমন হয় যে, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে মিলিয়ে চারজন রয়েছে। তো একেকজনের নামে একটা করে গাড়ি থাকলেও তো চারটা গাড়ি...?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওনারা বলতে পারবেন যে- পরিবার হিসেবে না যেহেতু আলাদা আলাদা হিসেবে ওনারা কর দেন সেহেতু ওনাদের আলাদা হিসেবে এটা বিবেচিত হবে। আমি তো তাই আন্দাজ করি। ব্যক্তিগত গাড়িতে আপনি যতই কর ধরেন না কেন বিষয়টা হলো অন্য জায়গায়, যদি দেশের ভেতরে গণপরিবহন সুলভ ও শোভন না হয় তাহলে তো মানুষ গাড়ি কিনেই চলার চেষ্টা করবে।
সেহেতু যেটা মনে রাখতে হবে, যখন আমরা প্রত্যেক সময়ে করের কথা বলি তখন একইসঙ্গে সরকারের ব্যয়ের গুণমান সম্পর্কেও আমাদের কথা বলতে হবে।
একটি বাড়তি করের টাকা দিলে প্রত্যেক করদাতা চিন্তা করে যে, এর বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে সে কী পেতে যাচ্ছে। তো বাজেট বক্তৃতায় সেই জায়গায় আমি কোনো গুরুত্ব দেখি না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, সামাজিক সুরক্ষা, নাগরিক নিরাপত্তা এ সমস্ত ক্ষেত্রে মানুষের যে অভিযোগ, অসন্তোষ আছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সেবা-পরিষেবার গুণমানকে ভালো করার মাধ্যমে কর আহরণের জন্য প্রণোদিত করা এমন কোনো কৌশল তো আমি লক্ষ করি না।
এখন তো বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা একটা বড় ইস্যু। তো আইএমএফের শর্তের কারণেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক কৃষকের ভর্তুকি কমানো কি ঠিক হয়েছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন পর্যন্ত শক্তির একটা জায়গা তো আমাদের শস্য উৎপাদন। এখানে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। লক্ষ রাখার বিষয় যে এই অর্থনৈতিক সংকটের সময় এই খাত যেন দুর্বল হয়ে না যায়।
তাই সরকারের পক্ষ থেকে যতই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভর্তুকি কমানোর কথা হোক না কেন সেচের বিদ্যুৎ, ডিজেল, উৎপাদনের জন্য সার, কীটনাশক, বীজ এসবের যেন কোনো টান না পড়ে এটা লক্ষ রাখা উচিত। বাজেটের ভেতরে এই কথাগুলো খুব স্পষ্টভাবে নেই, যে কৃষককে আমরা যেসব সমর্থন দিই সেটা তো কমাবই না বরং এই সময়ে সেগুলো বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
আরেকটা বড় জায়গা যেটা আছে, সেটা হলো কৃষকের কাছ থেকে আমরা যে ধান-চাল, শস্য সংগ্রহ করি সেটার লক্ষ্যমাত্রা আমাদের কোনো সময়ই পূরণ হয় না। এখানে কৃষককে হয়রানি করা হয়, মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকে, মিলাররা থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো বাজারকে সুসম বা আরও মসৃণ করা বা কার্যকর করার ক্ষেত্রেও আমরা কিন্তু কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা শুনি না।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে অঙ্ক অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবে পেশ করেছেন তা অর্জন কি সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটিও বাস্তবসম্মত না। প্রথম কথা হলো উনি জিডিপি সাড়ে ৭ শতাংশ বলেছেন, সেটা বাস্তবতার নিরিখে মেলে না। এবং এটা মেলাতে গিয়ে উনি ব্যক্তি বিনিয়োগের একটা অবাস্তব সংখ্যা দিয়েছেন। এটাও মেলে না। সবচেয়ে বড় কথা মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে আনতে হলে এখন যে ৮ বা ৯ শতাংশ যে মূল্যস্ফীতি চলছে সেটার খুব দ্রুত তিন মাসের মধ্যে নিচে নেমে আসতে হবে। এটা তো বাস্তব না। সেহেতু উনি এই অর্থবছরের যে গড় মূল্যস্ফীতি বলেছেন- সেটা মোটেও বাস্তবসম্মত না।
আগামী বছরের প্রবৃদ্ধিও যে প্রাক্কলন করেছেন সেটাও অত্যন্ত উচ্চাশার। এটার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু সেই অবাস্তব ভিত্তিকে স্থাপন করার জন্য যে বিনিয়োগের সংখ্যা বলেছেন ব্যক্তি খাতের, ওইটা কেউ কল্পনার মধ্যেও আনতে পারবে না। আর ওই বিনিয়োগকে কার্যকর করার জন্য যে ধরনের ঋণ প্রবাহ থাকা দরকার, যে ধরনের আমদানি ইত্যাদি করতে হতে পারে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের ব্যাংকগুলোর নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নেই।
বৈশ্বিক বাস্তবতা, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভসহ নানামুখী চাপের মধ্যে সরকারের ‘স্মার্ট বাজেট’ কতটুকু স্মার্টনেস দেখাতে পেরেছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি তো মনে করি যে স্মার্ট হওয়ার জন্য যে ন্যূনতম প্রসাধন দরকার পড়ে, ওনারা সেই প্রসাধনটাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি। আমার অত্যন্ত দুঃখ লাগে, পরিতাপ হয় যে সরকার গত ১৫ বছরে অনেক ভালো কাজ করেছে, সেই ভালো কাজগুলোর সম্মিলিত যে প্রশংসা যেটা পাওয়ার কথা ছিল এই বাজেটের মাধ্যমে, এই নির্বাচনের প্রাক্কালে সেটা সরকার নিতে পারল না।
নির্বাচনী বাজেটের যে প্রবণতা আমরা দেখে আসছি, সামনে তো নির্বাচন যার কথা আপনিও উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি, জনতুষ্টির বিষয় থাকে। তো আগের নির্বাচনী বাজেটের সফলতা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে ফলাফল তার সাথে এবারের বাজেটের তুলনা কীভাবে করবেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এক কথায় বললে এইবারের বাজেট, নির্বাচনী বাজেট হয়নি। প্রথম কথা হলো আগের দুই নির্বাচনী বাজেট, ২০১৪ এবং ২০১৮ এর, তার ভালো-মন্দ বিচারে আমি যাচ্ছি না। ওই সময় অর্থনীতির যে শক্তি ছিল, প্রবৃদ্ধিও হারের যে গতি ছিল, বিনিয়োগ ছিল, মূল্যস্ফীতি নিচে ছিল, বৈদেশিক লেনদেনের যে শক্তি ছিল- সেগুলোর কিছুই এখন নেই। সেহেতু এই বছরের নির্বাচনের প্রাক্কালে আগের দুই নির্বাচনের আগের বাজেটের মতো আচরণ করার পরিস্থিতিও সরকারের ছিল না।
তা সত্ত্বেও যতটুকু ছিল, সেইটুকুও করার মতো সাহস বা উদ্যোগ আমরা দেখিনি। কারণ, যেহেতু বাজেট ঘাটতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে, জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের আশপাশে, সেহেতু টাকা ঋণ করে হলেও একটু চেষ্টা করতে পারত সরকার। দুঃখের বিষয় হলো টাকা ঋণ করে নেওয়ার জায়গাটাও সেই অর্থে সীমিত। আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিতেও সরকার টাকা না ডলার কোনোটাই সে মেলাতে পারেনি। আর তারপরও যেটুকু যা আছে, সেটুকুও যে খুব ভালোমতো খরচ করতে পারবে সেই বিশ্বাসও বোধহয় সরকারের নেই। সেজন্য এটা কোনো নির্বাচনী বাজেট হয়নি।
নির্বাচনী বাজেট করার জন্য যে ধরনের জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যে মনকাড়া বিভিন্ন চিন্তা থাকে- বাজেটে সে ধরনের কোনো চিন্তাও নেই। কারণ হলো আমি সন্দেহ করি যে এই বাজেট কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দিয়ে তৈরি হয়নি। রাজনীতি অংশের মানুষরা যদি যুক্ত থাকতেন তাহলে আমি নিশ্চিত যে ওনারা সেই সমস্ত বিষয় ও চিন্তা এই বাজেটে সন্নিবেশিত করতেন। এটা আমার ধারণা।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আপনাকে ও দেশ রূপান্তরকেও অনেক ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান এনপিপি, বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৮৪ সালের ২৪ জুলাই। ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন। এরপর দায়িত্ব পালন করেছেন নৌবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। সাফল্যের সঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে।
এম. শাহজাহান তার আগে ছিলেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের উপ-মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্যের (হারবার ও মেরিন) দায়িত্বে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনমি সেলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের বন্দর, ব্লু ইকোনমি, বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট-হাব হিসেবে গড়ে তোলাসহ সার্বিক মেরিটাইম খাত এবং ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বঙ্গোপসাগর ও তার নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সঙ্গে।
তার সঙ্গে আলাপ করেছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের হেড অব ইভেন্টস অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং শিমুল সালাহ্উদ্দিন।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা শুনে খুব আনন্দিত যে চট্টগ্রাম বন্দর অনেকগুলো সাফল্য অর্জন করেছে আপনার নেতৃত্বে। প্রথমে জানতে চাই, লয়েড’স লিস্টে আমাদের বন্দরের এখনকার অবস্থান কত?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: লয়েড’স লিস্টে আমাদের বর্তমান অবস্থান ৬৪তম। এর মানে পৃথিবীর এক শ ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন চৌষট্টি।
আপনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন এ বন্দর কততম অবস্থানে ছিল? সারা বিশ্বের যে বন্দরগুলো, তার তুলনায় আমাদের বন্দরের ইতিহাস যে রকম পুরোনো..., বন্দরটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক কারণে, আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য কী ছিল?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমি চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বভার গ্রহণ করি ৩১ জানুয়ারি ২০২১-এ। যখন একদম কোভিডের মাঝপথে আমরা এসে পৌঁছেছি, কোভিড আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছিল। তখন চট্টগ্রাম বন্দর মোটামুটি স্থবির হয়ে ছিল, আমরা লয়েড’স লিস্টেও ছিলাম না। শুধু চট্টগ্রাম বন্দর না, সারা বিশ্বের সব বন্দরই মোটামুটি বন্ধ অবস্থায় ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা দ্রুত অনেক ভালো অবস্থায় নিয়ে যাই। আমরা, বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা চব্বিশ ঘণ্টা সচল রেখেছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে দর্শন ছিল, যে জীবন এবং জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে- আমরা সেভাবে সেই দর্শন লালন করে, বুকে ধারণ করে কার্যক্রম পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখেছিলাম। এতে আমাদের বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ সচল ছিল এবং সেই পিরিয়ডেও কিন্তু আমাদের ১৩% গ্রোথ হয়ে ছিল। এর বিনিময়ে আমাদের ৫৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমরা হারিয়েছি। আজকে আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
১৯৭৭ সালে ছয়টি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের। এ বন্দর এখন বছরে ৩২ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করছে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের যাত্রাটি চমকপ্রদ। কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরোনো, প্রায় আড়াই হাজার বছরের। তবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং শুরু হয় ১৯৭৭ সালে, মাত্র ছয় টিইইউ কনটেইনার দিয়ে। সে সময় অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। ১০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের মাইলফলক স্পর্শ করতে আমাদের ৩১ বছর লেগে গেছে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমবারের মতো ১০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। এর পরের অর্থাৎ ২০০৯ সাল পরবর্তী সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০ লাখ টিইইউর মাইলফলক স্পর্শ করতে সময় লেগেছে মাত্র সাত বছর। ২০১৫ সালেই ২০ লাখ টিইইউর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর। এর মাত্র চার বছর পর ২০১৯ সালে ৩০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে নজির সৃষ্টি করে বন্দর। ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ টিইইউর ঘরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এ সাফল্যে প্রধান ভূমিকা রেখেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনা এবং সেই আলোকে সরকারের গৃহীত বন্দরকেন্দ্রিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা। সরকারের ও আমরা যারা বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি, তাদের ধারাবাহিকতাও এ ক্ষেত্রে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর, যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব পরিসংখ্যানে।
এই পর্যায়ে আসতে বন্দরের দক্ষতা ও সক্ষমতা অনেক বাড়াতে হয়েছে। সেটা কীভাবে হয়েছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান: পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই দেখবেন চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। গত পাঁচ বছর গড়ে ১২-১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধিকে সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি অর্থাৎ সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়াতে হচ্ছে। এখন আমাদের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫৮০ টিইইউ। আমাদের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে এবং বিশ্বের যেকোনো আধুনিক বন্দরের সঙ্গে একে তুলনা করা যায়।
এ ছাড়া ইকুইপমেন্টও বেড়েছে। আমি যখন চট্টগ্রাম বন্দরে সদস্য (হারবার ও মেরিন) হিসেবে যোগ দিই ২০১০ সালে, তখন সিসিটিতে মাত্র চারটি কিউজিসি (কি গ্যানট্রি ক্রেন) ছিল। বর্তমানে আমাদের কিউজিসি ১৮টি। সেই সময় আমাদের আরটিজি ছিল ৭টার মতো। আরটিজির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এখন ৪৭। আরএমজিসি (রেল মাউন্টেড গ্যানট্রি ক্রেন) বন্দরে যুক্ত হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করেছি। ফলে আমাদের বন্দরের সক্ষমতা চার মিলিয়ন টিইইউতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বা কনটেইনারের কোনো জট নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ইচ্ছায় এত অল্প সময়ে আমরা এই সক্ষমতা বাড়াতে পেরেছি।
সব মিলিয়ে বলতে পারি, বিভিন্ন ধারণক্ষমতার বিপুলসংখ্যক যেসব ক্রেন আমাদের বহরে যুক্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে সেগুলো বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং অভূতপূর্ব একটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বন্দরের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সরকার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সব ধরনের নীতি ও বিনিয়োগ দিয়েছে বলেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আজ আমরা একটা আধুনিক বন্দরে উন্নীত করতে পেরেছি। বন্দরের ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা দুটোই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
কর্ণফুলী চ্যানেলকে আমরা প্রশস্ত করেছি। ড্রাফটও বেড়েছে। বন্দরে আগে ১৮৬ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসতে পারত না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে আনতে পেরেছি।
বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দর এ ক্ষেত্রে কতটা এগিয়েছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দরকে এক সময় ম্যানুয়াল বন্দর বলা হতো। সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। বন্দরে আমরা টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টস) চালু করেছি। সবচেয়ে বড় যে কাজটা আমরা করেছি তা হলো ইলেকট্রনিক ডেলিভারি সিস্টেম। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভেহিকল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রাকের ফি আদায় অটোমেশনের আওতায় এসেছে। পুরোপুরি না হলেও সেমি-অটোমেটিক বন্দরে আমরা উন্নীত হয়েছি।
বহির্নোঙর ও চ্যানেলে চলাচলকারী জাহাজ নজরদারিতে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) চালু রয়েছে। বহির্নোঙরের (পোর্ট লিমিট) আওতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাহাজ পাইলটিংয়ে পাইলট সার্ভিস অটোমেশন চালু করা হয়েছে।
বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা। নিরাপদ বন্দর নিশ্চিতে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার, রয়েছে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম। যান চলাচল নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অটোমেটিক গেট কন্ট্রোল সিস্টেম, আন্ডার ভেহিকল সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (ইউভিএসএস) ও স্ক্যানার।
এসব অর্জন আপনাকে কোথাও কী তৃপ্ত করছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সব সময় আমাদের আমাদের লক্ষ্যই থাকে অংশীজন ও ব্যবহারকারীদের সর্বোৎকৃষ্ট সেবা দেওয়া। সেটা নিশ্চিত করতেই বন্দরকেন্দ্রিক এত আয়োজন। কাঙ্ক্ষিত সেবা যে এখন পাওয়া যাচ্ছে, ব্যবহারকারীরাই তা বলছেন। কোভিডকালীন সারা বিশ্বের বন্দর যেখানে স্থবির হয়ে গিয়েছিল, তখনো আমরা অংশীজন ও ব্যবহারকারীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে গেছি। কোভিডকালেও ৪১ শতাংশ জাহাজ অন-অ্যারাইভাল বার্থিং পেয়েছে। এখন আমরা ৮০ শতাংশ জাহাজকে অন-অ্যারাইভাল বার্থিং দিচ্ছি।
এ ছাড়া অটোমেশনের বৈশ্বিক স্বীকৃতি ও সুফল দুটোই আমরা পাচ্ছি। যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথের গবেষণা যখন বলে যে, এশিয়া অঞ্চলের ৬৫টি সেমি-অটোমেটিক বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান সবার ওপরে তখন ভালো তো লাগেই। তবে এ অর্জন বন্দরের একার নয়, সব ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদেরও।
২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার যে অভীষ্ট তা অর্জনেও বড় ভূমিকা রয়েছে বন্দরের। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বর্ধিত চাহিদা পূরণে বন্দরের দক্ষতা ও সক্ষমতা আরো বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। সে ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তুতি কী?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে প্রয়াস তাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে আমাদের এখানেই থেমে থাকলে হবে না। ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি। আমরা ইতিমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করেছি। আমাদের আরো ইয়ার্ড তৈরির কার্যক্রম চলছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে ৫৫ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণ করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া আমরা বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনাল নির্মাণ করছি। বে টার্মিনালের কাজ শেষ হলে ২৮৫ মিটার দীর্ঘ ও ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সেখানে আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যেখানে ৩ হাজার টিইইউর জাহাজ আসে আর বে টার্মিনালে আসবে ৫-৬ হাজার টিইইউর জাহাজ। মাতারবাড়িতে ড্রাফট ১৮ মিটার। সেখানে ১০-১২ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসতে পারবে। তখন আমরা বাংলাদেশকে অত্র অঞ্চলের ট্রান্সশিপমেন্ট হাব বানাতে পারব। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে পারবে।
মাতারবাড়ি ও বে টার্মিনাল কবে নাগাদ কার্যক্রমে আসতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালের মূল চ্যানেলের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা কনটেইনারবাহী জাহাজের বেসিন তৈরি করছি। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী ১১৭টির বেশি জাহাজ এরই মধ্যে সেখানে এসেছে। আমরা টাগবোট ও কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করেছি। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালের কাজ পুরোদমে চলছে এবং আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে কনটেইনার পরিবহনের সুফল আমরা পাব।
বে টার্মিনালের ডিটেইল ড্রয়িং ও ডিজাইনের জন্য আমরা দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি এবং এরই মধ্যে তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল খননের জন্যও আন্তর্জাতিক একটি যৌথ কোম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ শেষ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এটি কার্যক্রমে আসবে বলে আমরা আশা করতে পারি। বে টার্মিনালে মোট তিনটি টার্মিনাল থাকবে; একটি মাল্টিপারপাস এবং দুটি কনটেইনার টার্মিনাল।
বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ঘোষণা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমি শুরু থেকেই এ কথাটি বলে আসছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৭ কোটি জনগণ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ দর্শনই আমাদের জন্য দিক-নির্দেশনা এবং বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
সাবরিজিয়নাল ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হওয়ার অর্থ হলো অন্যান্য দেশ আমাদের এ বন্দরকে ব্যবহার করবে। সে জন্য আমাদের বন্দরের উন্নত অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংযোগ, সেবার প্রাপ্যতা, দক্ষ জনশক্তি সর্বোপরি পর্যাপ্ত নাব্যতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়াটাও জরুরি। সবগুলো সুবিধাই আমাদের আছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনাল চালু হলে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা (বর্তমানে শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর), হলদিয়া, বিশাখাপত্তম, কাকিনাদা ও আন্দামান-নিকবরের অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর বেল্টের বন্দরগুলো এটি ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারের আকিয়াব, ইয়াঙ্গুন এবং থাইল্যান্ডের ফুকেটসহ আরো দুই-একটি ছোট বন্দরও এটি ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ এ বন্দরগুলো হবে মাতারবাড়ি-কেন্দ্রীক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারা মাতারবাড়ি ব্যবহার করবে? কারণ এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ির ড্রাফট সবচেয়ে বেশি। ১৮ মিটার ড্রাফট হওয়ায় ১০ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এখানে। এখন একটি জাহাজে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টিইইউ কনটেইনার আনা হয়। এর পরিবর্তে ১০ হাজার টিইইউ কনটেইনার আনলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফ্রেইট কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা তখন এমনিতেই মাতারবাড়ি বন্দরকে বেছে নেবেন। কারণ, ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দ্রুত পণ্যের ডেলিভারিও তারা পাবেন। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর তখন মাতারবাড়িকে ফিডার পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করবে।
এ ছাড়া মাতারবাড়ি চালু হলে এখান থেকে জাহাজগুলো সরাসরি পাড়ি দেবে ইউরোপ ও আমেরিকার বন্দরের উদ্দেশ্যে। ফলে সময় অনেক কমে যাবে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যবর্তী ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হয়ে ইউরোপীয় গন্তব্যে পণ্য পরিবহনে এখন গড়ে ৬-৭ সপ্তাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যে গড়ে ১২-১৬ সপ্তাহ সময় লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা গেলে পণ্য পরিবহনে সময় অর্ধেকে নেমে আসবে। ইউরোপের যেসব দেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু হয়েছে সেখানে আমরা ১৬-২০ দিনের মধ্যে জাহাজ পৌঁছাতে পারছি।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে আপনি এরই মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করেছেন। এটা অব্যাহত রাখা কতটা জরুরি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও ইতালির পোর্ট অব র্যাভেনা বন্দরের মধ্য দিয়ে এটি শুরু হয় এবং পরবর্তীতে স্লোভেনিয়ার কোপার বন্দরের সঙ্গেও সেবাটি চালু হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটেনের পোর্টসমাউথের ফ্লেক্সটো পোর্ট, পর্তুগাল, জার্মানির পোর্ট অব হামবুর্গের সঙ্গেও সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালুর প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ বাঁচাতে সেবাটি অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য প্রয়োজন গভীর সমুদ্রবন্দর। সেই অর্জনের দিকেই যাচ্ছি আমরা।
একটা কথা আপনি প্রায়ই বলে থাকেন এবং তা হলো লায়াবিলিটিজকে আমাদের অ্যাসেটে পরিণত করতে হবে। ট্রান্সশিপমেন্ট হাবের মাধ্যমে লায়াবিলিটিজকে নিশ্চয় অ্যাসেটে রূপান্তরের একটা সুযোগ তৈরি হবে। সেটা কীভাবে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাজ হলো দায়কে সম্পদে পরিণত করা। এটাই মূল। অর্থাৎ, আমাদের দায়কে যদি আমরা সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারি তাহলেই আর কোনো সমস্যা থাকে না। আমাদের বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে উন্নীত করার মধ্য দিয়েও সেটা সম্ভব। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। এখন কোনো কনটেইনার চার দিনের বেশি বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে থাকলে আমদানিকারককে ডিটেনশন চার্জ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু যদি বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যায়, তখন এমএলওদের খালি কনটেইনার সিঙ্গাপুর বা কলম্বো ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে নিতে হবে না। তারা তখন কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরেই রাখবে। আমাদের স্পেস রেন্ট বাবদ ফি পরিশোধ করবে। তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়। অর্থাৎ, ব্যবসায়ীদের আর ডিটেনশন বা ড্যামারেজ চার্জ দিতে হবে না এবং স্পেস রেন্ট হিসেবে বন্দর রাজস্ব পাবে এমএলওদের থেকে। একদিকে ব্যবসায়ীদের খরচ বাঁচবে, অন্যদিকে বন্দরের আয় বাড়বে। বন্দরের আয় বৈদেশিক মুদ্রায় হওয়ায় এর একটা বড় প্রভাব পড়বে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
বন্দরের দায় আসলে কী কী এখন, একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমরা এর আগে আমাদের সার্ভিসগুলো সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা, ফার ইস্টার্ন কান্ট্রি চীন-জাপানে পাঠাতে পারতাম না। কেন না আমাদের এটা হাব হিসেবে আগে পরিচিত ছিল না। আমাদের বন্দরটা থেকে যদি আমরা সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা এবং অন্যান্য ডেস্টিনেশনে প্রেরণ করতে পারি, তাহলে কিন্তু ট্রানজিট টাইমটা কমে যাবে। আমাদের ট্রানশিপমেন্ট হাবগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে না, ফলে আমাদের সেখানে ট্রান্সশিপমেন্টের যে ব্যয়, সেটাও কমে যাবে। এবং যে সময় লাগে, এখান থেকে সিঙ্গাপুর অথবা পোর্ট ক্লিয়ং অথবা তিয়ানজিং পোর্ট অথবা কলম্বো হাব আমরা ব্যবহার করি বর্তমানে। সেই হাবগুলো যদি আমাদের ব্যবহার করতে না হয়, আমরা যদি সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকাতে পাঠাতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের এই যে অতিরিক্ত সময় এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়, হাব পোর্টে সেটা আমাদের সাশ্রয় হবে। এবং সে ক্ষেত্রে আমরা যদি এই চট্টগ্রাম বন্দরকে, যেটা আমাদের বে-টার্মিনাল, এবং মাতারবাড়িতে যেই ডিপ সি টার্মিনাল হচ্ছে, সেটাকে যদি আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারি, তাহলে এখন বর্তমানে আমাদের যে ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জ দিতে হয় পোর্টে, অনেক বেশি ফিক্সড অপারেটিং কস্ট আমাদের পে করতে হয় জাহাজের অবস্থানের জন্য, সেই সব কস্ট আর আমাদের বহন করতে হবে না। তখন এই যে কন্টেইনারগুলো আসে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে, যখন আসে, প্রথম চার দিন এমএলও-রা আমাদের ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে। ওই চার দিনের পর থেকে তারা কিন্তু কন্টেইনারের ওপর ডিটেনশন চার্জ ও ডেমারেজ চার্জ আরোপ করে ফেলে। এটা থেকে আমরা মুক্তি পাই তখনই, যখন আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে আবার খালি কন্টেইনারটাকে ফেরত পাঠাতে পারি অথবা লোডেড কন্টেইনারটাকে ফেরত পাঠাতে পারি। এই যে ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে তারা যখন যায়, সেখানে কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে এমএলও-রা ট্রান্সশিপমেন্ট স্পেস রেন্ট দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আমাদের তাদের কন্টেইনারের ভাড়াই দিতে হয়, যে তার একটা কন্টেইনার আমার এখানে পড়ে আছে, সেজন্য। আমি যদি এটাকে হাবে পরিণত করতে পারি, তাহলে আমাকে ওই কন্টেইনারটা এম্পটি হওয়ার পরে আর এটার জন্য কোন ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ দিতে হবে না, বরং আমার যে স্পেসের ভেতর তার কন্টেইনারটাকে স্টোর করে রাখা হবে, এবং এখান থেকে অন্যান্য জায়গায় পরবর্তীতে সে খালি কন্টেইনারটা রপ্তানি করবে, সে জন্য উল্টো আমাকে চার্জ পরিশোধ করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতিবছর যে কন্টেইনারগুলো আমরা এখানে ইউজ করে থাকি, আমাদের এখানে আসা-যাওয়া করে যে কন্টেইনার, সেটার পরিমাণ ৩.২ মিলিয়ন ছিল গত বছর, গড়ে। প্রতি কনটেইনারে ১০০০ ডলারও যদি ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জ আসে, সেখানে কিন্তু বিশাল বড় অঙ্ক। আমি অত্যন্ত নগণ্য একটা এমাউন্ট বললাম, হিসাবের সুবিধার জন্য। ৩.২ ইনটু ১০০০ হলো ৩.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তো ৩.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার যদি ফরেন ক্যাশের সাশ্রয় হয়, ডেমারেজ এবং ডিটেনশন চার্জ বাবদ দিতে না হয়, তাহলে এটা রিজার্ভে আরও বড় অবদান রাখবে। এটা তো একটা সেগমেন্ট। এ রকম আরো পাঁচ-সাতটা সেগমেন্ট আছে- ডিটেনশন, ডেমারেজ, ফিক্সড অপারেটিং কস্ট এগুলোর ওপর ভিত্তি করে; তখন দেখা যায় যে বিশাল এমাউন্ট। আমাদের এই বর্তমানে যে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার আমরা ক্রস করেছি, সেটার সঙ্গে যদি আরো ২০/৩০ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়, এটা তো বিশাল একটা এমাউন্ট, আমাদের রিজার্ভ অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বন্দরগুলা যদি রিজওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমরা কিন্তু নিজেরা নিজেদের বন্দরকে রিজওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের মাতারবাড়িটা যদি ডিপ সি টার্মিনাল হিসেবে আমরা ইউজ করি, এই মাতারবাড়িটা হবে আমাদের হাব; এবং চিটাগাং পোর্ট, মোংলা পোর্ট, পায়রা পোর্ট-এ তিনটা হবে আমাদের অ্যান্ড ইউজার পোর্ট অথবা আমাদের ফাইনাল ডেস্টিনেশন। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর এবং মোংলা ও পায়রা-এ তিন বন্দরের একটা অ্যাডভান্টেজ হলো, আমাদের এখানে কারো কার্গোর ওপর আমাদের ডিপেন্ড করতে হয় না। যেমন সিঙ্গাপুর, পোর্ট ক্লাং, কলম্বো এরা কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল হাব। এদের কিন্তু কার্গো অ্যাট্রাক্ট করতে হয়। আরেকজনের থেকে কার্গোটা ছিনিয়ে আনতে হয়, কম পয়সা দিয়ে, বা ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা নয়। আমাদের কার্গোটাই... ধরেন চায়না থেকে র’ ম্যাটেরিয়াল আসে, সিঙ্গাপুরে ট্রান্সশিপমেন্ট হয়, অথবা সিঙ্গাপুরে না হলেও পোর্ট ক্লাং-এ হয়, অথবা কলম্বোয় হয়। এখন কলম্বো, পোর্ট ক্লাং এবং সিঙ্গাপুর, এরা যখন ইউজারকে ফ্যাসিলিটিজ দেয়, তখন তারা তাদের ওখানে যায়। আমাদের এখানে সে সমস্যা নাই। আমাদের এখানে তাদের কোনো সুবিধা দিতে হয় না। ওখানে দেখা যায় তারা প্রতি কনটেইনারে টু পার্সেন্ট, থ্রি পার্সেন্ট, ফাইভ পার্সেন্ট করে তারা তাদের কনসেশন দেয়, যেটা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রযোজ্য নয়। চট্টগ্রাম বন্দর হলো অ্যান্ড ইউজার পোর্ট, এটা হল ফাইনাল ডেস্টিনেশন। আমরাই ইম্পোর্টার আমরাই এক্সপোর্টার, আমাদের এখানে আসতেই হয়। বরং আমাদের বন্দরে আসতে হলে আমরা তাদের স্পেশাল পারমিশন দিয়ে থাকি। আমরা সব জাহাজকে সমভাবে পারমিশন দিই না। তার কারণ হলো, বড় জাহাজগুলোকে আমরা পারমিশন দিয়ে থাকি যেন আমাদের বন্দরে একটা সিঙ্গেল জাহাজও যদি আনা যায়, দেখা যাবে যে আমাদের ফ্রেট কমে যাবে, আমাদের সময় কমে যাবে, ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জগুলো থেকে আমরা অব্যাহতি পাব। এ জন্য আমাদের বন্দরের যে সুবিধাগুলা, এই যে লায়াবিলিটিজ, একে আমরা যদি অ্যাসেটে কনভার্ট করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের দেশটাকে উন্নত বিশ্বে নেয়ার আমাদের যে লক্ষ্য, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, ২০৪১ সালের ভেতর উন্নত বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন; আমার মনে হয় সেটা আমরা দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে পারব। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এ অপ্রত্যাশিত খরচগুলো আমরা যদি কমাতে পারি, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ৯৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত করা বেশি কষ্টের বিষয় নয়, এক বা দুই বছরেই সেটা আয় করা সম্ভব, শুধু পোর্টের ফ্যাসিলিটিজ এবং পোর্টকে ইউজ করে।
বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহের কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: বাংলাদেশের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর উড়ন্ত প্রবৃদ্ধি। সেই সঙ্গে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের বিশাল বাজার। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও বঙ্গোপসাগর ঘিরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাপানের অর্থায়নে ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ বা বিগ-বি কার্যক্রম চলছে। তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বিগ-বি। প্রথমটি শিল্প ও বাণিজ্য, যার মূলে আছে গভীর সমুদ্রবন্দর। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য অংশের বাণিজ্যের দুয়ার হিসেবে কাজ করবে। দ্বিতীয় স্তম্ভটি হলো জ্বালানি। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিগ-বি আওতাভুক্ত এলাকা শুধু নয়, পুরো বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করবে। তৃতীয় স্তম্ভটি পরিবহন ব্যবস্থা। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের স্বার্থে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহন’ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী, এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের মতো বাড়বে।
সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর ‘ব্লু ইকোনমি’ বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা কোন অবস্থানে আছি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে আজকের এই যে উচ্ছ্বাস তার ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গোপসাগরের ওপর আমাদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালেই তিনি ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। আনক্লজ (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি) আসে এরও আট বছর পর, ১৯৮২ সালে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিস্তৃত এ সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদ আহরণে আগে প্রয়োজন তা নিয়ে জরিপ, অনুসন্ধান ও গবেষণা। সমুদ্র গবেষণার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি জাহাজ রয়েছে। বানৌজা অনুসন্ধান নামে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ হাইড্রোগ্রাফি সংক্রান্ত জরিপ পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমুদ্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হয় বিএনটি খাদেম নামের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ওশান গোয়িং স্যালভেজ শিপ।
সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: বাংলাদেশের অধিকারে আসা বঙ্গোপসাগরের বিপুল সমুদ্রসম্পদ কেবল আহরণ করলেই হবে না। এর সুরক্ষাও দিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমাদের একটি সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে নাবিক ও জেলেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের খনিজ ও মৎস্যসম্পদ সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ অর্জন সম্ভব হবে। আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোস্ট গার্ডকেও আমাদের দীর্ঘ উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অধিকতর সক্ষম করে তুলছেন। বাহিনী দুটির উত্তরোত্তর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। যা বঙ্গোপসাগর জুড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও জোরদার করছে।
প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মেরিন জনশক্তি এ মুহূর্তে আমাদের অনেক বেশি দরকার। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সেই মেরিন জনশক্তি আমরা কতটা তৈরি করতে পারছি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল কাজে লাগাতে সমুদ্র জ্ঞান সমৃদ্ধ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। এ জন্য নতুন চারটিসহ আমাদের রয়েছে পাঁচটি সরকারি মেরিন একাডেমি। রয়েছে বেসরকারি আরও কয়েকটি মেরিন একাডেমি। বিশেষায়িত জ্ঞান আহরণের জন্য আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। তবে মেরিন একাডেমি থেকে বের হওয়া মেরিনারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে আমাদের নিবন্ধিত জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া মার্চেন্ট শিপিং অরডিন্যান্স সংশোধন করে চট্টগ্রাম বন্দরেও যাতে জাহাজ নিবন্ধিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তখন বাধ্যতামূলকভাবে এসব জাহাজকে বাংলাদেশের মেরিনারদের চাকরি দিতে হবে। এর ফলে আরো বেশি মেরিনারের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটানো যাবে। চূড়ান্ত বিচারে বৈদেশিক আয়ও বাড়বে। আপনি এর আগে কোস্টগার্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন। বন্দর একটা দারুণ স্মার্ট অবস্থায় এসেছে আপনার সময়ে। আমরা শুনতে পাচ্ছি দ্রুতই আপনার মেয়াদ শেষ হবে। তো আপনার পরে যিনি দায়িত্ব নেবেন, তার জন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: তার জন্য আমার পরামর্শ থাকবে যে, আমাদের যেসব কার্যকলাপ বা প্রোগ্রাম আমরা গ্রহণ করেছি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। ইতিমধ্যে আমাদের কিছু কিছু টার্মিনালকে প্রাইভেটাইজেশনের জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেসব পদক্ষেপগুলো আরো দ্রুত এগিয়ে নেয়া। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, এ কার্যক্রমের ট্রানজেকশনের অ্যাডভাইজারের রিপোর্টটা আমরা যথাসময়ে পাইনি। তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কেন না ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার যখন স্টাডি করে, তাদেরও অনেক সময় দিতে হয়, অনেক তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে তাদের বের করতে হয়। কিন্তু আমাদের তো তাড়াতাড়ি দরকার। সেই তাড়াতাড়ির জন্য আমরা তাদের বলেছি এবং তারা সেভাবেই কাজ করছে। আশা করি ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার আমাদের রিপোর্টগুলো দিলে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা আমাদের প্রাইভেট টার্মিনালের অপারেটর, ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের অপারেটর যারা আছেন তাদের দ্রুত নিয়োগ করতে পারব। তখন দেখা যাবে আমাদের এখানে আরো কমপিটিশন বাড়বে এবং আমাদের দক্ষতা এবং তাদের দক্ষতা দুটো মিলে আমাদের বন্দরকে আমরা অন্য একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। এ ছাড়া বন্দরের যেসব উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো আছে, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনাল এগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব। ২০৪১ সালের ভেতরে আমাদের যে ডিমান্ড হবে, সেই ডিমান্ড আমরা অ্যাড্রেস করতে পারব।
বন্দর তো নানারকম বাণিজ্যের একটা জায়গা, অর্থ লেনদেনেরও জায়গা, আবার বন্দর ঘিরে নানা অপরাধও ঘটে। আপনার সময়ে আপনি অপরাধ এবং দুর্নীতি দমনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা ম্যাক্সিমাম জিনিস অটোমেশন করে ফেলেছি। এটা হলো ডিজিটালাইজেশনের একটা সুফল, যার ফলে অনেক কম পরিমাণ জনবল সম্পৃক্ত থাকে, তখন দুর্নীতিটা সেখানে হ্রাস পায়। আর আরেকটা জিনিস হলো পেমেন্ট সিস্টেমগুলো... এখন কিন্তু আগে যেভাবে ম্যানুয়ালি হাতে হাতে টাকা পয়সা লেনদেন হতো, এখন অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আপনাকে পেমেন্ট করতে হয়। সুতরাং যেখানে অর্থের সরাসরি লেনদেন নাই, সেখানে দুর্নীতির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এ ছাড়া আমরা বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। এই ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে একই জায়গায় একই রুমের ভেতর থেকে সবার সঙ্গে চেইন সিস্টেমে..., পাশাপাশি বসা- সবার সামনে জিনিসগুলো লেনদেন হচ্ছে, সুতরাং স্বচ্ছতা অনেক বেশি। আমাদের যে বার্থিং মিটিংটা হয় প্রতিদিন, সেই বার্থিং মিটিংটা কিন্তু অত্যন্ত স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়া, যেটাতে অনলাইনেও চাইলে যে কেউ যুক্ত হতে পারে। আমাদের জাহাজেও পুরো অটোমেশন বার্থিং সিস্টেম। আমাদের ভিটিএমআইএস আছে, যার মাধ্যমে কোন জাহাজ কখন কার আগে কে আসল, একদম পুরো রেকর্ড হয়ে থাকে। এখানে কোনো জাহাজকে আগে-পিছে করার কোন সুযোগ নাই। আগে-পিছে করতে গেলেই তখন তাকে জবাবদিহির ভেতর পড়ে যেতে হয়। সেই দুর্নীতিটা এখন আর করার সুযোগ নাই। একসময় যখন ছিল ম্যানুয়ালি, তখন হয়তো অনেকে অনেক কিছু চিন্তা করত। কিন্তু এখন টোটালি অটোমেটেড একটা বার্থিং সিস্টেম, সেখানে কারো হাত দেওয়ার কিছু নাই। কেউ চাইলেই কোনো সিস্টেমে এটা টেম্পারিং করতে পারে না, কারণ কম্পিউটারে কোন জাহাজ কয়টার সময় আসবে, সেই টাইম উল্লেখ করা থাকে-কোন সময় কোন জাহাজ কোন জায়গায় এসেছে এবং কোথায় নোঙর করেছে। এটা একটা জিনিস। আরেকটা হলো, যে পাইরেসির ব্যাপারে, আমাদের এখানে যে জলদস্যুতা এবং বহির্নোঙরে যে চুরি-ডাকাতি হতো, সেটাও ইনশা আল্লাহ আমাদের এখানে কমে গেছে। গত পরপর কয়েক বছর ধরে যে রেকর্ড আপনারা দেখতে পাবেন, সে রেকর্ডে আমরা কিন্তু ‘জিরো পাইরেসি’ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং পোর্টের যে সিকিউরিটি, সবাই মিলে আমরা যেভাবে কাজ করি এবং আমাদের টাস্কফোর্সের যে লোকবল, সবাই মিলে যৌথভাবে যে অপারেশন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার সুফল আমরা পেয়েছি। এর ফলে আমাদের বন্দরে দুর্ঘটনা, পাইরেসি, জলদস্যুতা বা ছিঁচকে চুরি-ডাকাতির ঘটনা এখন নাই বললেই চলে।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের নানা অভিযোগ শোনা যায় বন্দর নিয়ে। আপনারা কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং নিয়ে এত দুর্দান্ত উন্নয়ন করেছেন, ঠিক সময় নেমে যাচ্ছে, কিন্তু বন্দর থেকে সেটা ছাড়ানোর জন্য অনেক ব্যবসায়ীকে নাকি স্পিড মানি দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগ আপনি কীভাবে দেখেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: স্পিড মানির কথা আপনাকে আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে এ সমস্যাটা চট্টগ্রাম বন্দরে নেই। এই সমস্যাটা হলো কাস্টমসের। লোকজন আমাদের বেশির ভাগ সময় গুলিয়ে ফেলে। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ হলো জাহাজ থেকে কার্গোটা নামিয়ে আমাদের ইয়ার্ডে আমরা স্টেক করে রাখি, এর পরে সবকিছু কিন্তু কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের। আর কাস্টমস থেকে দেখা যায়, অনেক সময় কোনো একটা জিনিসকে টেস্ট করতে পাঠায়, কোনো একটা জিনিসের এইচএস কোডে সমস্যা থাকে, ডিজি কার্গোর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে... তখন তাদের সঙ্গে যখন কাজটা হয়, সেখানে তাদের বিলম্ব হয়। সেই বিলম্বের জন্য কিন্তু আসলে সবাই বলে যে বন্দরে বিলম্ব হচ্ছে, দেরি হচ্ছে, অনেক সমস্যা, কিন্তু আসলে সেটা বন্দরের সমস্যা না। বন্দর অন্যের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বসে আছে। যখনই কাস্টমসের ডকুমেন্ট আমরা পাই, আমরা কিন্তু দুই-চার ঘণ্টার ভেতরে আমাদের বন্দর থেকে কার্গোটা গেট দিয়ে আউট করে দিই। কাস্টমস এনবিআর-এর আন্ডারে, তাদের সমস্যাটা তাদেরই লুক আফটার করতে হবে। তারাও চেষ্টা করছে, কিছু কিছু অটোমেশন তারাও করেছে। কাস্টমসের তো জনবলের অনেক স্বল্পতা আছে, ইকুইপমেন্টের স্বল্পতা আছে, আর ল্যাবরেটরির সমস্যাটা হলো সবচেয়ে বেশি প্রকট। বিভিন্ন জিনিস টেস্ট করতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। তারাও চেষ্টা করছে নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন করার জন্য এবং বাইরে আউটসোর্সিং করেও কিছু দেওয়া যায় কিনা সেটাও তারা চেষ্টা করছে। আশা করি এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের বন্দরের বাইরে বিভিন্ন সময়ে আপনারা বিভিন্ন লিটারেচর দেখবেন- চট্টগ্রাম বন্দরে কনজেশন, চট্টগ্রাম বন্দরে ইয়ার্ড স্পেস কম, চট্টগ্রাম বন্দরে ইকুইপমেন্ট কম–এগুলো কিন্তু ওয়ানস আপন এ টাইম ছিল। এখন কিন্তু সেটা নাই। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা পর্যাপ্ত, ইকুইপমেন্ট পর্যাপ্ত। আমি যখন মেম্বার হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে এখানে কাজ করি, তখন মাত্র চারটা কি গ্রেনটি ক্রেইন এখানে ছিল। এখন সেখানে ১৮টা, এবং প্রত্যেকটা জাহাজে আমরা তিনটা করে ক্রেনকে একসঙ্গে দিতে পারি। সুতরাং আগে যেখানে জাহাজ কন্টেইনার নিয়ে এসে তিন থেকে পাঁচ দিন লেগে যেত ডেলিভারি ডিসচার্জ করতে, এখন সেখানে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর তারা ডেলিভারি করে চলে যায়। এক সময় জেটিতে আসার জন্য জাহাজকে বহির্নোঙরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, এখন সেটা নেই। এখন জাহাজের জন্য জেটি খালি হয়ে থাকে, আমরা জাহাজ আসার সঙ্গে সঙ্গে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর ডিসচার্জ করে জাহাজকে সেল আউট করে দিচ্ছি। সেই ইফিসিয়েন্সি এখন আমাদের অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। সুতরাং আমাদের চিন্তা করতে হবে, যে সব লিটারেচরগুলো আছে আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে ইন্টারনেটের ওই সব লিটারেচরগুলাকে দূরীভূত করার। চট্টগ্রাম বন্দর এখন আর সেই দশ বছর আগের বন্দর নয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমাদের যেভাবে ইকুইপমেন্ট দিয়েছেন, যেভাবে অর্থ বরাদ্দ করেছেন, যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেই দিকনির্দেশনার জন্য আজকে চট্টগ্রাম বন্দর এ অবস্থানে আসতে পেরেছে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের যতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবগুলো করিয়েছেন। আজকে যে আমরা এ জায়গায় এসে পৌঁছেছি, তার কিন্তু কৃতিত্ব আমাদের আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে বন্দরগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বন্দরগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি যেভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি দেশের অন্যান্য সেক্টর যেভাবে ডেভেলপ করছেন, চিটাগাং পোর্টের জন্যও তিনি সেভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তিনি আমাদের অনুমোদন দিয়েছেন বে-টার্মিনালের, অনুমোদন দিয়েছেন মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনালের, অনুমোদন দিয়েছেন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের। সম্প্রতি ১০৪টা ইকুইপমেন্ট কেনারও তিনি অনুমোদন দিয়েছেন, যে ইকুইপমেন্ট প্রাইসের অর্ধেক অংশ ইতিমধ্যে আমাদের বহরে যুক্ত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এখানে এখন কোনো ইকুইপমেন্টের স্বল্পতা নাই। ইয়ার্ড স্পেস সম্বন্ধে বলি, আমাদের এখানে আমি যখন জয়েন করি, তখন ইয়ার্ড স্পেস ছিল ৩৯ হাজার টিইউস-এর মতো। এখন সেখানে ইয়ার্ড স্পেস হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইউস-এর বেশি। সেটা দিন দিন আমরা বাড়াচ্ছি। এর ভেতর আরো কয়েকটা ইয়ার্ড আমাদের বাড়ছে। সেগুলা হলে আগামী এক মাস/দেড় মাসের ভেতর ৫৫ হাজার টিইউস–এ উন্নীত হবে। সুতরাং আমাদের ইয়ার্ড স্পেস খালি। আগে যেখানে কন্টেইনার স্তূপ হয়ে থাকত। এখন আমাদের কন্টেইনার ইয়ার্ডে দেখবেন যেখানে কন্টেইনার আগে সিক্স আই হয়ে থাকত, এখন সেখানে থ্রি আই/ফোর আই-তে নেমে এসেছে। মানে আমাদের ইয়ার্ড স্পেস আমরা এখন অনেক বেশি পাচ্ছি। আমরা ওভার ফ্লো ইয়ার্ড তৈরি করেছি। আমাদের এলসিএল যে কার্গোগুলো আছে, সেগুলো আগে জেটির ভেতর থেকেই ডিসচার্জ করতে হতো। এখনো করে, কিন্তু আমরা তার পাশাপাশি এক্স ওয়াই শিপকে বন্দরের বাইরে একটা স্থানে নিয়ে গেছি। আগামী অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেটাও চালু হবে এবং সেখানে এলসিএল কার্গোগুলো আসলে জেটির ভেতর থেকে যেই কার্গো ডিসচার্জের প্রক্রিয়া, সেটা বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটা হলে বন্দরের ভেতর অনেক কম পরিমাণ ট্রাক ঢুকবে। এভাবেই কিন্তু বন্দরটা কনজেশন ফ্রি হয়। আমাদের বন্দরে এখন কোনো কনজেশন নেই, কোনো ইয়ার্ড স্পেস শর্টেজ নাই, কোনো ইকুইপমেন্টেরও শর্টেজ নাই। এখন আন্তর্জাতিক যেকোনো বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে তুলনা করতে পারি। যে কেউ বন্দরে এসে একবার ভিজিট করে গেলে বুঝবে যে আমরা সিঙ্গাপুর বলেন, কলম্বো বলেন, মালয়েশিয়া বলেন, ইন্দোনেশিয়া বলেন -সব জায়গাতেই যে বন্দরগুলা আছে, আমাদের এশিয়ার যে বন্দরগুলো আছে, প্রত্যেকটা বন্দরের সঙ্গে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনা করা যায়। একসময় আমাদের বন্দরের ওপর একটা স্টাডি হয়েছিল লন্ডন ভিত্তিক একটা জায়গা থেকে, তারা বলেছিল যে এশিয়ান রিজনে যে ৬৯টা বন্দর আছে, তার ভেতরে সেমি-অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল মুডে যে বন্দরগুলো চলে, তার ভেতরে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এক নম্বর।
যোগাযোগ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু? কীভাবে এই বিনিয়োগ খাতটিকে আরো এগিয়ে নিতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: পরিবহন এবং লজিস্টিক খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা আনতে বেসরকারি বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞ বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে ভালো একটি বিকল্প হতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখানকার সড়ক এবং রেলের ফ্রেইট পরিবহন কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরীণ শিপিং লাইনগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে নতুন ধরনের ফিডার বার্জ-সার্ভিস চালু করা সম্ভব হলে সড়কপথে ট্রাকযোগে কার্গো পরিবহনের ওপর চাপ কমবে। ফলে নৌপথের ব্যবহার বাড়লে লজিস্টিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি আমরা। আমাদের বন্দর, রেল, সড়ক ও নৌপরিবহন সেবাসহ প্রতিটি খাতের অব্যাহত উন্নয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালেও বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আগামী দিনের ‘এশিয়ান টাইগার’ হয়ে ওঠার পথে দেশকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে আমরাও প্রস্তুত।
দেশ রূপান্তরকে সময় দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে দৈনিক দেশ রূপান্তরের সবাইকে ধন্যবাদ ও ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
দেশের ক্রিকেট নিয়ে নানা সময়ে আলোচিত-সমালোচিত বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপান। জাতীয় দলের প্রায় প্রতিটি বিষয় নিয়েই মাথা ঘামান তিনি। তার এই তৎপরতাকে কীভাবে দেখেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রশ্ন করা হয়েছিল সাকিবে। তার সোজাসাপটা জবাব, ‘আমার সঙ্গে (সম্পর্ক) কখনো অস্বস্তির হয়নি। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো। আমি ওনাকে বুঝি। উনি আমাকে বোঝেন। আমাদের মধ্যে কথা হয়, এমন হলে ভালো হতো, অমন হলে ভালো হতো। যে আলোচনাটা হয়, ফলদায়ক হয়। আমার কাছে (তাঁর সঙ্গে কাজ করা) সমস্যা হয়নি কখনো।’
নাজমুলের আগে বিসিবি সভাপতি ছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল। তিনিও জাতীয় দলের সঙ্গে বেশ ভালোভাবেই জড়িত ছিলেন বলে জানান সাকিব। তবে নাজমুল অনেক বেশি জড়িত বলে মনে করেন সাকিব, 'কামাল ভাইও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। হয়তো তখন এত মিডিয়া ছিল না, উনি হয়তো মিডিয়াতে অত কথা বলেন নাই। যে কারণে জানা যেত না। কিন্তু দলে কী হচ্ছে, এসবে উনিও জড়িত ছিলেন। আর পাপন ভাই যেটাকে বলে ইন হ্যান্ডস জড়িত। অনেক বেশি যুক্ত। এমন বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাওয়াও কঠিন।’
অনেক বেশি জড়িত থাকা বোর্ডপ্রধান ভালো কি মন্দ, প্রশ্ন করা হলে সাকিবের চটজলদি জবাব, ‘দুটোই। নিতে পারলে ভালো। যারা নিতে পারে না, তাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট।’
নাজমুল হাসানের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করার সুবাদে তার মধ্যে যদি একটা ভালো দিক খুঁজতে বলেন প্রশ্নকর্তা। সাকিব বলেন ‘বিশেষভাবে জাতীয় দলের জন্য সবকিছু করতে রাজি আছেন।'আর মন্দ দিক কোনটি? হাসতে হাসতে সাকিবের জবাব, ‘মে বি ইন্টারভিউ (হয়তো সাক্ষাৎকার)’।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।