
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। দেশে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও ডলার সংকটের মধ্যেই নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছে সরকার।
এছাড়া রয়েছে আইএমএফের ঋণের শর্তে অর্থনৈতিক সংস্কারের বাধ্যবাধকতা। নানা কারণেই এবারের বাজেট বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। প্রস্তাবিত এই বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দেশ রূপান্তরের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সম্পাদকীয় বিভাগের সাঈদ জুবেরী।
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিনবারের শাসনামলের মধ্যে এবারই বাজেটের আলাদা গুরুত্ব কী?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এই বাজেটের গুরুত্ব অনেকগুলো। প্রথম কথা হলো যেহেতু তিন ধাপে এই সরকার প্রায় ১৫ বছর দেশ চালিয়েছে, তো এই দেড় দশকে তার অর্জনকে এই বাজেটের ভেতর দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করবে এটাই স্বাভাবিক। তো, সেই চেষ্টাটা হয়েছে। দ্বিতীয়ত হলো যেহেতু এইটা নির্বাচনের আগে সরকারের শেষ বাজেট সেহেতু নির্বাচনকে মাথায় রেখে, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে বিবেচনায় নিয়ে সে কিছু কথা বলবে, কিছু পদক্ষেপ নেবে এটাও প্রত্যাশিত, স্বাভাবিক। আর এই বাজেটের গুরুত্বের জায়গা হলো আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি করার পরে সরকারের এটা প্রথম বাজেট। ফলে এক ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতির কাঠামোর ভেতরে সে বাজেট প্রস্তুত করেছে বা করতে বাধ্য হচ্ছে। সেইটা হলো নতুনত্ব।
তো সর্বোপরি হলো দেশের ভেতরে এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল। যা আমরা সবাই জানি। মূল্যস্ফীতি মানুষকে বিপর্যস্ত করছে। দেশে যথেষ্ট পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় আমরা জ্বালানি আমদানি করতে পারছি না। সেজন্য আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালু থাকতে পারছে না। লোডশেডিং হচ্ছে ব্যাপকভাবে। আমাদের দেশের ব্যাংকব্যবস্থা একেবারেই ভঙ্গুর এবং সেখান থেকে যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ হওয়ার মতো অর্থ ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তারা পাচ্ছে না। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের পরিস্থিতি খুবই চাপের মধ্যে থাকায় টাকায় মূল্যমান পড়ে যাচ্ছে... ইত্যাদি। তো অর্থনৈতিক এই পরিস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভূ-কৌশলগত ব্যাপার। বিভিন্ন দেশের মধ্যকার আন্তর্জাতিক রেষারেষির প্রতিফলন এখন আমরা বাংলাদেশের মধ্যেও দেখতে পাই। অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এটাও বিবেচনায় নিতে হয়। এ ধরনের বেশ কিছু গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিত এবারের বাজেটে আমি দেখতে পাচ্ছি।
বাজেট প্রস্তাব পেশের আগে থেকেই আইএমএফের শর্তেও বিষয়গুলো আলোচনায় ছিল। প্রস্তাবিত বাজেটে সেসব শর্তের প্রতিফলন কেমন দেখছেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সবচেয়ে বড় প্রতিফলন হলো হঠাৎ করে সরকার কর আহরণের জন্য জেগে উঠেছে। বাংলাদেশের কর জিডিপির অনুপাত তুলনীয় দেশের চাইতে অন্যতমভাবে কম। এটা আমরা বহুদিন ধরে বলে আসছি। কিন্তু এবার আমরা প্রথম লক্ষ করলাম সরকার কর আহরণের জন্য বেশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এমন বেপরোয়া হয়েছে যে আপনার করযোগ্য আয় না থাকলেও তাদের ওপর ২০০০ টাকা করে কর আরোপের চিন্তা করেছে। এইটা একটা যেমন।
দ্বিতীয়ত, অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতার ভেতরে বেশ কিছু কথা আছে, যেটাতে দেখা যায় যে আইএমএফের সঙ্গে আমাদের যে সমস্ত শর্ত বা প্রতিশ্রুতি আছে তার প্রতিফলন রয়েছে। যেমন, টাকার মূল্যমানের ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের সামঞ্জস্যকরণ, একীভূতকরণ। আমাদের ব্যাংকের যে নয়-ছয় সুদের হার বেঁধে দেওয়া আছে তাকে সুদের করিডরে নিয়ে আসা। নতুনভাবে মুদ্রানীতির চিন্তা করার প্রতিশ্রুতি। যেখানে আগে আমরা ঋণপ্রবাহের ওপর মনোযোগ দিতাম, এখন মূল্যস্ফীতির ওপর মনোযোগ দেব।
এছাড়া আমাদের দায়দেনা পরিস্থিতি সম্বন্ধে মূল্যায়ন, ব্যয় কাঠামোর খাত নিয়ে আমাদের যেখানে করের বিভিন্ন রেয়াত আছে সেগুলোকে কীভাবে সামঞ্জস্যকরণ করা যায় ইত্যাদি বহু বিষয় আছে যেটাকে আইএমএফের শর্তের প্রতিফলন হিসেবে দেখা যায়।
রিটার্ন জমা দিলেই ২০০০ টাকা কর দিতে হবে। আবার সাড়ে ৩ লাখ টাকা করমুক্ত আয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাহলে ন্যূনতম করমুক্ত আয়ের সীমা কোনটি?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এটা তো প্রত্যক্ষভাবেই বৈপরীত্য আর কি। আইন অনুযায়ী সাড়ে তিন লাখ টাকার যে করমুক্ত সীমা সেটাই কার্যকর হওয়ার কথা। আর ওনারা যেটা বলছেন, সেটা হলো যে সরকারের বেশ কিছু পরিষেবা যিনি পাবেন তার সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় আছে তা মনে করতে হবে। সেটাও ঠিক আছে।
কিন্তু... কেউ যদি পরিষেবা নাও নেয়, শুধু মাত্র এলাকাতে থাকবে এজন্যও সে বাধ্য হতে পারে রিটার্ন দিতে...
বিষয়টা তো খুবই বিস্তৃত। ব্যবসা বা যে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে এই ৪৪ সেবা যে কারোর লাগতে পারে। ট্রেড লাইসেন্স করা থেকে শুরু করে সঞ্চয়পত্র কেনা, ১০ লাখ টাকার বেশি আমানত, জমি-ফ্ল্যাট কেনাবেচা, সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত। এছাড়া রয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ, মোটরসাইকেলের নিবন্ধন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কেনাবেচা...।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওই যে বললাম, কর আদায়ের জন্য সরকার হঠাৎ করে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এবং যেটা আইএমএফের কাছে জিডিপির আড়াই শতাংশ করে কর বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি সেটা পালনের চেষ্টা থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয়। এই পদক্ষেপগুলোকে আরও বৈপরীত্যমূলক এজন্য যে, ধনী ও সম্পদশালীদের সম্পদের যে সারচার্জ থাকে সেখানে কিন্তু রেয়াত দেওয়া হয়েছে। তিন কোটি থেকে বাড়িয়ে চার কোটি করা হয়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের আয়ের ওপরে যেভাবে আমরা চাপ দিলাম, সেখানে আমরা সম্পদশালীদের সম্পদের ওপর থেকে আবার সেই চাপটা তুলে নিলাম।
একটার বেশি গাড়ি থাকলে যে দ্বিগুণ করের ব্যাপারটা...?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি এটার বিরুদ্ধে না।
যদি এমন হয় যে, পরিবারে স্বামী-স্ত্রীসহ ছেলেমেয়ে মিলিয়ে চারজন রয়েছে। তো একেকজনের নামে একটা করে গাড়ি থাকলেও তো চারটা গাড়ি...?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: ওনারা বলতে পারবেন যে- পরিবার হিসেবে না যেহেতু আলাদা আলাদা হিসেবে ওনারা কর দেন সেহেতু ওনাদের আলাদা হিসেবে এটা বিবেচিত হবে। আমি তো তাই আন্দাজ করি। ব্যক্তিগত গাড়িতে আপনি যতই কর ধরেন না কেন বিষয়টা হলো অন্য জায়গায়, যদি দেশের ভেতরে গণপরিবহন সুলভ ও শোভন না হয় তাহলে তো মানুষ গাড়ি কিনেই চলার চেষ্টা করবে।
সেহেতু যেটা মনে রাখতে হবে, যখন আমরা প্রত্যেক সময়ে করের কথা বলি তখন একইসঙ্গে সরকারের ব্যয়ের গুণমান সম্পর্কেও আমাদের কথা বলতে হবে।
একটি বাড়তি করের টাকা দিলে প্রত্যেক করদাতা চিন্তা করে যে, এর বিপরীতে সরকারের কাছ থেকে সে কী পেতে যাচ্ছে। তো বাজেট বক্তৃতায় সেই জায়গায় আমি কোনো গুরুত্ব দেখি না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, সামাজিক সুরক্ষা, নাগরিক নিরাপত্তা এ সমস্ত ক্ষেত্রে মানুষের যে অভিযোগ, অসন্তোষ আছে, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সেবা-পরিষেবার গুণমানকে ভালো করার মাধ্যমে কর আহরণের জন্য প্রণোদিত করা এমন কোনো কৌশল তো আমি লক্ষ করি না।
এখন তো বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা একটা বড় ইস্যু। তো আইএমএফের শর্তের কারণেই হোক বা যে কোনো কারণেই হোক কৃষকের ভর্তুকি কমানো কি ঠিক হয়েছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন পর্যন্ত শক্তির একটা জায়গা তো আমাদের শস্য উৎপাদন। এখানে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। লক্ষ রাখার বিষয় যে এই অর্থনৈতিক সংকটের সময় এই খাত যেন দুর্বল হয়ে না যায়।
তাই সরকারের পক্ষ থেকে যতই বিভিন্ন জায়গা থেকে ভর্তুকি কমানোর কথা হোক না কেন সেচের বিদ্যুৎ, ডিজেল, উৎপাদনের জন্য সার, কীটনাশক, বীজ এসবের যেন কোনো টান না পড়ে এটা লক্ষ রাখা উচিত। বাজেটের ভেতরে এই কথাগুলো খুব স্পষ্টভাবে নেই, যে কৃষককে আমরা যেসব সমর্থন দিই সেটা তো কমাবই না বরং এই সময়ে সেগুলো বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে।
আরেকটা বড় জায়গা যেটা আছে, সেটা হলো কৃষকের কাছ থেকে আমরা যে ধান-চাল, শস্য সংগ্রহ করি সেটার লক্ষ্যমাত্রা আমাদের কোনো সময়ই পূরণ হয় না। এখানে কৃষককে হয়রানি করা হয়, মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকে, মিলাররা থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। তো বাজারকে সুসম বা আরও মসৃণ করা বা কার্যকর করার ক্ষেত্রেও আমরা কিন্তু কোনো ধরনের পদক্ষেপের কথা শুনি না।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির যে অঙ্ক অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবে পেশ করেছেন তা অর্জন কি সম্ভব বলে মনে করেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: একটিও বাস্তবসম্মত না। প্রথম কথা হলো উনি জিডিপি সাড়ে ৭ শতাংশ বলেছেন, সেটা বাস্তবতার নিরিখে মেলে না। এবং এটা মেলাতে গিয়ে উনি ব্যক্তি বিনিয়োগের একটা অবাস্তব সংখ্যা দিয়েছেন। এটাও মেলে না। সবচেয়ে বড় কথা মূল্যস্ফীতিকে ৬ শতাংশে আনতে হলে এখন যে ৮ বা ৯ শতাংশ যে মূল্যস্ফীতি চলছে সেটার খুব দ্রুত তিন মাসের মধ্যে নিচে নেমে আসতে হবে। এটা তো বাস্তব না। সেহেতু উনি এই অর্থবছরের যে গড় মূল্যস্ফীতি বলেছেন- সেটা মোটেও বাস্তবসম্মত না।
আগামী বছরের প্রবৃদ্ধিও যে প্রাক্কলন করেছেন সেটাও অত্যন্ত উচ্চাশার। এটার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু সেই অবাস্তব ভিত্তিকে স্থাপন করার জন্য যে বিনিয়োগের সংখ্যা বলেছেন ব্যক্তি খাতের, ওইটা কেউ কল্পনার মধ্যেও আনতে পারবে না। আর ওই বিনিয়োগকে কার্যকর করার জন্য যে ধরনের ঋণ প্রবাহ থাকা দরকার, যে ধরনের আমদানি ইত্যাদি করতে হতে পারে সেটা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের ব্যাংকগুলোর নেই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নেই।
বৈশ্বিক বাস্তবতা, মূল্যস্ফীতি, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভসহ নানামুখী চাপের মধ্যে সরকারের ‘স্মার্ট বাজেট’ কতটুকু স্মার্টনেস দেখাতে পেরেছে?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আমি তো মনে করি যে স্মার্ট হওয়ার জন্য যে ন্যূনতম প্রসাধন দরকার পড়ে, ওনারা সেই প্রসাধনটাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেনি। আমার অত্যন্ত দুঃখ লাগে, পরিতাপ হয় যে সরকার গত ১৫ বছরে অনেক ভালো কাজ করেছে, সেই ভালো কাজগুলোর সম্মিলিত যে প্রশংসা যেটা পাওয়ার কথা ছিল এই বাজেটের মাধ্যমে, এই নির্বাচনের প্রাক্কালে সেটা সরকার নিতে পারল না।
নির্বাচনী বাজেটের যে প্রবণতা আমরা দেখে আসছি, সামনে তো নির্বাচন যার কথা আপনিও উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি, জনতুষ্টির বিষয় থাকে। তো আগের নির্বাচনী বাজেটের সফলতা বা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে ফলাফল তার সাথে এবারের বাজেটের তুলনা কীভাবে করবেন?
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: এক কথায় বললে এইবারের বাজেট, নির্বাচনী বাজেট হয়নি। প্রথম কথা হলো আগের দুই নির্বাচনী বাজেট, ২০১৪ এবং ২০১৮ এর, তার ভালো-মন্দ বিচারে আমি যাচ্ছি না। ওই সময় অর্থনীতির যে শক্তি ছিল, প্রবৃদ্ধিও হারের যে গতি ছিল, বিনিয়োগ ছিল, মূল্যস্ফীতি নিচে ছিল, বৈদেশিক লেনদেনের যে শক্তি ছিল- সেগুলোর কিছুই এখন নেই। সেহেতু এই বছরের নির্বাচনের প্রাক্কালে আগের দুই নির্বাচনের আগের বাজেটের মতো আচরণ করার পরিস্থিতিও সরকারের ছিল না।
তা সত্ত্বেও যতটুকু ছিল, সেইটুকুও করার মতো সাহস বা উদ্যোগ আমরা দেখিনি। কারণ, যেহেতু বাজেট ঘাটতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে, জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের আশপাশে, সেহেতু টাকা ঋণ করে হলেও একটু চেষ্টা করতে পারত সরকার। দুঃখের বিষয় হলো টাকা ঋণ করে নেওয়ার জায়গাটাও সেই অর্থে সীমিত। আমদানি-রপ্তানি পরিস্থিতিতেও সরকার টাকা না ডলার কোনোটাই সে মেলাতে পারেনি। আর তারপরও যেটুকু যা আছে, সেটুকুও যে খুব ভালোমতো খরচ করতে পারবে সেই বিশ্বাসও বোধহয় সরকারের নেই। সেজন্য এটা কোনো নির্বাচনী বাজেট হয়নি।
নির্বাচনী বাজেট করার জন্য যে ধরনের জনতুষ্টিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যে মনকাড়া বিভিন্ন চিন্তা থাকে- বাজেটে সে ধরনের কোনো চিন্তাও নেই। কারণ হলো আমি সন্দেহ করি যে এই বাজেট কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দিয়ে তৈরি হয়নি। রাজনীতি অংশের মানুষরা যদি যুক্ত থাকতেন তাহলে আমি নিশ্চিত যে ওনারা সেই সমস্ত বিষয় ও চিন্তা এই বাজেটে সন্নিবেশিত করতেন। এটা আমার ধারণা।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: আপনাকে ও দেশ রূপান্তরকেও অনেক ধন্যবাদ।
আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তাকে বলা হচ্ছে তিনি বাইরে থেকে এসেছেন। অন্যদিকে সিলেটের বর্তমান মেয়র বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় সিদ্ধান্তে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারসহ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
দেশ রূপান্তর: গত কয়েকটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম দেখা গেছে। বিএনপি সরে দাঁড়ানোয় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কঠিন হয়ে গেল কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি বিশ্বাস করি মানুষ ভোট দিতে আসবে।দেখুন বিএনপি সরে গেলেও, ভোটের মাঠে জাতীয় পাটি,ইসলামি আন্দোলন সহ ৬জন মেয়র প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী সক্রিয় থেকে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে আসবে বলেই আমার বিশ্বাস।
দেশ রূপান্তর: ব্যক্তি জীবনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কেমন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি।তারপর তো রাজনীতিতে আসি।রাজনীতির মাঠে তো মানুষকে নিয়েই সব কাজ কারবার। ব্যক্তিজীবনে আমি ধূমপান থেকে শুরু করে সব বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র হতে পারলে সিলেটের উন্নয়নে বড় কোন পরিকল্পনা আছে কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে সিলেটে হাই স্পিড ট্রেন চালু করার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এনেছি।এটা আমার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর পায়ে ধরে হলেও আমি এটা বাস্তবায়ন করব।কেবলমাত্র সিলেট সিটির বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করার জন্য ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে একজন প্রবাসী। হঠাৎ করে কেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ তৈরি হল?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: হঠাৎ করে আমি সিলেটের রাজনীতিতে আসিনি।আমি উপজেলা ছাত্রলীগের সমাজ সেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলাম পরে, উপজেলা যুবলীগের কমিটিতেও ছিলাম। তারপর ইউকে চলে যাই। সেখানে লন্ডন সিটি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি,পরবর্তীতে ইউকে যুবলীগের সভাপতি হই।কেন্দ্রীয় যুবলীগের নানক-আজম পরিষদের সদস্য ছিলাম। গত ২০ বছর ধরে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জে নির্বাচন করার জন্য রাজনীতির মাঠে আমি সক্রিয় ছিলাম।সুতরাং কোনোভাবেই আমি হঠাৎ করে রাজনীতিতে এসেছি এটা বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
দেশ রূপান্তর: আপনি তো আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে দলীয় পরিচয় ছাপিয়ে কি আপনি জনতার মেয়র হতে পারবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শিক প্রশ্নে আমি ছাড় দেবো না। সিটি নির্বাচনে যদি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেয় তবে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি দলের নয় জনতার মেয়র হিসেবে কাজ করব। আমি যার কাছ থেকে রাজনৈতিক দীক্ষা পেয়েছি,বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়েছেন।তিনি সবসময় সাধারণ মানুষের সাথে থেকে তাদের জন্য রাজনীতি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
দেশ রূপান্তর: বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোয়, ভোটের মাঠে আপনার সমীকরণ অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে কী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সত্যি বলতে উনার নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাকে মর্মাহত করেছে।ব্যক্তিগতভাবে আমি চেয়েছিলাম,তিনি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করুক।তারপর জনগণে তাদের মতামত জানাক।
দেশ রূপান্তর: অনেকের ধারণা, আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট-লন্ডন যাতায়াতের মধ্যে থাকবেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: ফলাফল যাইহোক আমি কিন্ত আর যুক্তরাজ্য ফিরে যাচ্ছি না।আমি সিলেটের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।দেখুন আমার সন্তানরা বড় হয়ে গেছে।যুক্তরাজ্যে আমার যে ব্যবসা বাণিজ্য এটা তারাই দেখবে। ইতিমধ্যে আমার স্ত্রী দেশে ফিরে এসেছেন। আমরা হয়তো ছুটি কাটাতে ইউকে যেতে পারি, কিন্ত স্থায়ী ভাবে আমরা কখনও ফিরে যাবো না।এটা দেশ রূপান্তরের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই।
দেশ রূপান্তর: শুরুর দিকে আওয়ামী লীগ থেকে অনেকেই প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্ত সবাই দলের সিদ্ধান্ত মেনে সড়ে দাঁড়ালেও,ভোটের মাঠে তারা আপনার জন্য কাজ করছেন কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: সিলেট আওয়ামী লীগের মধ্যে কোন দ্বন্ধ নেই।দলের সবাই আমার জন্য কাজ করছেন এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। আমার প্রচার-প্রচারণা চালাতে কিংবা কর্মসূচি চালাতে আমি সকলের কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছি এবং সিলেট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যেভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন আমি সেভাবেই কাজ করছি।বলতে পারেন টোটাল প্ল্যানিং টা দলের।
দেশ রূপান্তর: আপনি জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: নির্বাচনে জয়ের বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং তবে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। এ জন্য আমাদের আরও কাজ করতে হবে।ভোটারদের কাছে যেতে হবে।আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানাতে হবে।
দেশ রূপান্তর: মানুষ কেনো আপনাকে ভোট দেবে?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: মানুষ পরিবর্তন চায়,মানুষ উন্নয়ন চায়।দেখুন আমি নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদ। আমার বিরুদ্ধে কোন ধরনের অভিযোগ নেই।আমি এই শহরে বড় হয়েছি। আমি দেশের বাইরে থাকার সময়ও সাধারণ মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতাম।ফলে আমি জানি মানুষ কি চায়।সুতরাং আমি মনে করি ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবে।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোন ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দেবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: শহরকে সবুজ এবং পরিষ্কার নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করবো।মশক নিধন ও নতুন কিছু স্কুল নির্মাণ এই ৫টি বিষয় আমার প্রায়োরিটি লিস্টে রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: সিলেটের বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার বিশেষ কোন প্ল্যান আছে কি?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: এখন একটু উপরের দিকে পরিকল্পনা করতে হবে।আমি এখানে হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে চাই।ফ্রিলান্সারদের জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ গড়তে চাই।যেনো তারা সিলেটে বসে ডলার উপার্জন করতে পারে।আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ৫ বছরে ৫০হাজার আউটসোর্সার তৈরি করা।
দেশ রূপান্তর: প্রবাসীদের কীভাবে সিলেটের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ তৈরি করে তাদেরকে উৎসাহিত করবো সিলেটে বিনিময় করার জন্য। সিলেটে কিন্ত বেকারত্ব সমস্যা রয়েছে। এখানে প্রবাসী বিনিয়োগ আসলে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করা গেলে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।হাইটেক পার্ক নির্মাণ করতে প্রবাসীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। একটা হাসপাতাল তৈরি করতে চাই,যেখানে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন।
দেশ রূপান্তর: পর্যটন শিল্পের বিকাশে আপনার কি কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমার ফোকাস হবে পর্যটন।দেখুন আমাদের কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী তরুণ প্রজন্মকে যদি সিলেটের পর্যটনের প্রতি আকৃষ্ট করা যায় তাহলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করা সম্ভব। সিলেট শহরে কোন রিসোর্ট নেই।পর্যটক বান্ধব পরিবেশ নেই।এ খাত নিয়ে আমার বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর: আপনি মেয়র হতে পারলে নগরবাসীর সাথে কীভাবে
যোগাযোগ স্থাপন করবেন?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: আমি একটা অ্যাপস তৈরির পরিকল্পনা করেছি।মানুষ যেনো আমাদের কাছে না আসতে হয়,আমরাই তাদের কাছে ছুটে যাবো।অ্যাপসে তারা যেকোনো সমস্যার কথা জানাবে,আমাদের টিম সেখানে পৌঁছে যাবে।আমি 'কুইক একশন রেসপন্স টীম গড়ে তুলব '।
দেশ রূপান্তর: সিলেটের ছেলেমেয়েরা ইন্টার পাশ করেই ইউরোপ চলে যাচ্ছে।পড়াশোনা শেষ করে তারা সেসব দেশেই স্থায়ী হচ্ছে। ফলে একদিকে দেশের মেধা পাচার হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। তাদেরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায়?
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী: এখন একটা পরিবর্তন ঘটেছে। আগে ছেলে মেয়েরা ইউরো গিয়েই কাজে লেগে পড়ত এখন কিন্ত একটা বড় অংশ পড়াশোনা করছে।তাদের অনেকেই দেশে ফিরেও আসছে।আমি আউটসোর্সিং এর উপর গুরুত্ব দিতে চাই।যেন তারা দেশে বসে ডলার ইনকাম করতে পারে।আমি মেয়র হতে পারলে আগামী ৫বছরে ৫০হাজার ফ্রিলান্সার তৈরি করার একটা বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশ রূপান্তর : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী : দেশ রূপান্তরকেও ধন্যবাদ।
কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিণী- এই ট্রিলজি কয়েক প্রজন্মের বাঙালি পাঠককে মোহিত, তাড়িত ও অনুপ্রাণিত করেছে। এর বাইরে অনেক পাঠকপ্রিয় উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন সমরেশ মজুমদার।
সোমবার আমাদের ছেড়ে চলে যান এ কথাসাহিত্যিক।
তার জন্ম ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। ছেলেবেলা কেটেছে জলপাইগুড়ির ডুয়ার্সে। পড়েছেন স্কটিশ চার্চ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
পাঠকপ্রিয় এ ঔপন্যাসিক ২০১৯ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকা এসেছিলেন। তখন ঢাকা ক্লাবে তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ।
দেশ রূপান্তর: আপনি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জনপ্রিয়। সমকালীন তিন প্রজন্মের চিন্তা, স্বপ্নকে প্রভাবিত করেছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
সমরেশ মজুমদার: আপনার বাসার কোনো মেয়ে যদি ভালোবেসে প্রেগনেন্ট হয়, বিয়ে থা না করে এবং একটা বাচ্চার মা হয় আপনি তাকে একসেপ্ট করবেন? আপনার বোনের ক্ষেত্রে ঘটলে আপনি একসেপ্ট করবেন? যারা বলবেন একসেপ্ট করবেন, তারা জেদের বশে বলবেন। কিন্তু জীবনের সত্য এটা না। আপনি এমন মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না এবং তাকে আপনি আদর করে বাসায় ডাকবেন না। আপনি যদি বলেন, হ্যাঁ ডাকব তবে আপনি মেকি কথা বলছেন। এই কথাটা আপনি আপনার স্ত্রীর সামনে, আপনার বাবার সামনে বা আপনার মায়ের সামনে বলতে পারবেন না। আপনি নিজেকে প্রগতিবাদী হিসেবে প্রমাণ করার জন্য পাবলিকলি বলতে পারেন কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনে বলবেন না। আর একটা সমীক্ষা বলছে, দুজন করে পাঠক একটা বই পড়লে কালবেলা উপন্যাসটা দশ লক্ষ পাঠক পড়েছে। একটা সমীক্ষা বলছে, মাধবীলতা একসেপ্টেড বাই অল রিডার্স, প্রত্যেক পাঠকই মাধবীলতার ফ্যান। জীবনে যাকে একসেপ্ট করতে পারব না, বাসায় যাকে নিয়ে যেতে পারব না, তার ফ্যান কেন হচ্ছি? মানুষ তো ফ্যান হয় তারই যার আইডিয়া সে অনুসরণ করে, যার কাজকর্ম সে রেসপেক্ট করে, যাকে ভালোবাসে। মাধবীলতার কাজকর্ম আমি একসেপ্ট করি না অথচ তার জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস আমি পয়সা খরচ করে কিনি। বলি, আহা কালবেলা আমার প্রিয় উপন্যাস। এটা কি মিথ্যাচার নয়?
এমন হতে পারে আমি যা করতে পারি না, আমার পছন্দের চরিত্র তা করছে বলে আমি তার ফ্যান। আমার কল্পনার জগতে সে কাজ করতে পারে।
সমরেশ মজুমদার: আপনি যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে দশটা সৈন্যকে মোকাবিলা করে আসতে পারেন না। কিন্তু আরেকজন সেটা পারলে আপনি তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেন। কিন্তু এখানে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে এক সঙ্গে পড়ত। তারা পরস্পরের প্রেমে পড়ল। তাদের শারীরিক সম্পর্ক হলো। ছেলেটা মেয়েটার দায়িত্ব নেয়নি। না নিয়ে সে রাজনীতি করছিল। এত দায়িত্বজ্ঞানহীন ছেলে। সে যে মেয়েটির জীবনে এত বড় একটা সর্বনাশ করল তা নিয়ে তার জীবনে কোনো অনুতাপ এলো না। তারপর তিন বা চার বছর পর সে যখন জেল থেকে বেরিয়ে জানল, সে যে কাজটি করেছে তা থেকে একটা শিশুর জন্ম হয়েছে তখন সে বলল, আমার উচিত তোমাকে বিয়ে করা। মেয়েটি তাকে রিফিউজ করল। বলল, বিয়ে করার কথা বলে তাকে সে অপমান করেছে। মেয়েটির এই অ্যাডামেন্ট অবস্থানের কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। কেন এখন বিয়ের কথা বললে সে অপমানিত হবে। আমি লজিক খোঁজার চেষ্টা করছি, কেন এই উপন্যাসটা লোকে গ্রহণ করেছে?
এমন হতে পারে, লোকে পরিবর্তনের একটা ইঙ্গিত এতে পেয়েছে।
সমরেশ মজুমদার: কলকাতা শহরে বাড়িঅলার কাছে ভাড়া চাইতে এলেন দুজন। ভদ্রলোক একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করেন। বয়স আঠাশ। ভদ্রমহিলা একটা বড় ফার্মে চাকরি করেন। বয়স ছাব্বিশ। বাড়িঅলা নাম জানতে চাইলে দেখলেন দুজনের দুটো আলাদা টাইটেল। আলাদা টাইটেল কেন? তারা বলে, আমরা তো বিয়ে-থা করিনি। আপনারা স্বামী-স্ত্রী না? না। এবার ভদ্রলোক একটু ঘাবড়ে গেলেন। স্বামী-স্ত্রী না হলে ভাড়া দেব কেন? তারা বলে, আমরা ভালোবাসি। এখনো আমাদের দেশে কেউ যদি বলে আমরা ভালোবাসি তাই একসঙ্গে থাকি, হজম করতে কষ্ট হয় অনেকের। কিন্তু এই পরিবর্তিত অবস্থা শুরু হয়ে গেছে। আজ আমার মা যদি বেঁচে থাকতেন তিনি কি হজম করতে পারতেন যদি তার নাতনি এ কাজটি করত? তিনি একটা স্ট্রাকচারের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। সে স্ট্রাকচারে তিনি এতকাল যা শোভন বলে মনে করেছেন তা-ই তিনি আশা করেন। সেদিন একটা অনুষ্ঠানে আমি অনেক লোকের মাঝে এই প্রশ্নটা করেছিলাম, আপনারা মাধবীলতাকে সমর্থন করেন কি করেন না। কেউ কথা বলে না। শেষ পর্যন্ত একটা একুশ বছর বয়সী মেয়ে উঠে দাঁড়াল সে মাধবীলতাকে সমর্থন করে। সে তার মায়ের দৃষ্টান্ত বলেছে আমাকে। সে ঠিক আছে, কিন্তু বেশিরভাগই মুখোশ পরে হাঁটি। সাহিত্য কখনো কখনো ভালোলাগা বা না লাগা সত্তে¡ও জীবন থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা একটা জায়গায় পৌঁছে যায়।
কয়েকটা জেনারেশনকে ধারন করার যে ব্যাপার এটা আপনি কীভাবে পারলেন?
সমরেশ মজুমদার: আগেকার দিনে দেখা যেত, বাড়িতে কাজের লোক আছে। রান্নার লোক। বিধবা হয়ে আঠারো-উনিশ বছরে এসেছে। তারপর পঞ্চাশ বছর ধরে রান্না করছে। তখন যারা বাচ্চা ছিল তারা বড় হয়ে চলে যাচ্ছে। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হচ্ছে। সে কিন্তু রান্না করে যাচ্ছে। অমুকের মা বলে ডাকে তাকে। অমুকের মার রান্না খেতে খুব মজা, খুব ভালো। ঠাকুরদা বলছে, বাবা বলছে, ছেলেও বলছে। কেন?
আপনাদের তারুণ্যে একটা স্বপ্ন ছিল। কিন্তু উপমহাদেশের রাজনীতি সে স্বপ্নের পথে যাচ্ছে না। আপনি হতাশ হন না?
সমরেশ মজুমদার: এগুলো তো আমার হাতের মধ্যে নেই। আমি কলকাতা শহরে যে বাঙালিকে দেখি তাতে আমি আনন্দ পাই, আবার দুঃখ পাই। আবার ঢাকায় যখন আসি একই অনুভূতি হয়। আমি যখন প্রথম আসি তখন ইউনিভার্সিটিতেই বোরখা পরা মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। তখন ইউনিভার্সিটিতে ঢুকেই মেয়েরা বোরখা খুলে ফেলত। রিকশা থেকে নামত। ফেরার পথে রিকশায় ওঠার আগে বোরখা পরে রিকশায় উঠত। হেঁটে রাস্তা দিয়ে আসত না। প্রথম এসে মেয়েদের রাস্তায় হাঁটতে খুব একটা দেখিনি। এখন মেয়েরা অনেক চলাফেরা করছে। কোথাও কোথাও মেয়েরা ফুটপাতে বসে সিগারেট খায়। এটা আমার খারাপ লাগেনি। নিজের সম্মান বজায় রেখে যদি এটা করতে পারে তবে ভালো। আরেকটা জিনিস দেখতে থাকলাম- বোরখা নয়, মুখঢাকা পোশাক বা হিজাব পরার চলটা যেন দিন দিন বাড়ছে। আমি ভাবতাম, আত্মরক্ষা করার জন্য হিজাব একটা বড় ভূমিকা নিচ্ছে। মেয়েটি নিজেকে অন্যের কাছে এক্সপোজ করতে চায় না, তাই হিজাব পরে। এই আত্মরক্ষার প্রয়োজনটা হচ্ছে কেন। পুরুষদের হাত থেকে বাঁচবার জন্য আত্মরক্ষা করতে হচ্ছে? নিজেকে আমি জিজ্ঞেস করি। কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলে, আর বলবেন না দিনকে দিন হিজাব বেড়েই চলেছে। আপনারা আরও ভালো বলতে পারবেন। ধর্মান্ধতা নাকি সংস্কার কোনটি কারণ। মা হিজাব পরত না মেয়ে পরছে। আবার এও দেখছি, প্যান্ট, কামিজ পরে মাথায় হিজাব পরছে।
এখন পশ্চিমবঙ্গে যে অস্থিরতা চলছে, এনআরসি...
সমরেশ মজুমদার: এই যে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা সমুদ্র পেরিয়ে বাংলাদেশে এলো। আপনারা না পারছেন তাদের গিলতে, না পারছেন হজম করতে, না পারছেন বের করে দিতে। কেন পারছেন না? দেখুন অন্যকে আক্রমণ করতে খুব আনন্দ হয়। নিজে আক্রান্ত হলে দুঃখ হয়।
আমাদের পশ্চিবঙ্গের যিনি মুখ্যমন্ত্রী তার আবেগ মাঝে মাঝে আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। বাস্তবের সঙ্গে কোনো মিল থাকে না। যখন আসামে দেখা গেল ১৯ লাখ লোক, এরা ভারতীয় না। এদের রেশনকার্ড নেই। কিচ্ছু নেই। উনিশ লক্ষ লোক কম না। তাদের যখন আশ্রয়হীন করার চেষ্টা হচ্ছে, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বললেন, আমি নিয়ে নেব। এরা বাঙালি। দেখা গেল, এদের সবাই বাঙালি নয়। সবাই হিন্দু নয়, প্রচুর মুসলমান আছে। তাকে বলা হলো, আপনার বাসায় চারজনকে দেওয়া হলে রাখবেন তো? তিনি বললেন, আমার বাসায় কেন? আমি তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করব। মানে আরেকটা কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ব্যবস্থা করব, আরেকটা দণ্ডাকারণ্যের ব্যবস্থা করব। এর কোনো সুরাহা নেই। পৃথিবী জুড়ে হচ্ছে। এই যে লোকগুলো গেল, কেন গেল? আমি তো এখানে কত বছর ধরে আসছি। আমি সে-রকম জাতিগত দাঙ্গা তো দেখিনি এখানে। এখান থেকে যারা যাচ্ছে তারা আতঙ্কে যাচ্ছে? কীসের আতঙ্ক? নাকি আরেকটু বড় কিছু প্রাপ্তির আশায় যাচ্ছে?
বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের পাঠকের মধ্যে কোনো পার্থক্য আপনি দেখেন?
সমরেশ মজুমদার: ১৯৭১ এর আগে এখানে বাংলা বই খুব কম আসত। আমার বলতে লজ্জাও নেই, দ্বিধাও নেই একাত্তরের পর এখানে যত পাঠক হয়েছে সব হুমায়ূনের কল্যাণে তৈরি হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ না জন্মালে বাংলাদেশে এত পাঠক তৈরি হতো না। হুমায়ূনের আগে যারা লিখতেন, অনেক পাওয়ারফুল লেখক ছিলেন তারা। তাদের তুলনায় হুমায়ূন কিছুই না, কিন্তু তাদের বই বিক্রি হতো না। এই ঢাকা ক্লাবে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এমন অনেক বড় লেখক আছেন- খুব বিনয়ী, কিন্তু খুব দরিদ্র। তাদের বই বিক্রি হতো না। আমি হুমায়ূনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমার এ ব্যাপারে কী বক্তব্য। হুমায়ূন বলেছে, সমরেশ দা, যে ছেলে বা মেয়ে ষোলো বছর বয়সে হুমায়ূন পড়া ধরে না তাকে আমি বাঙালি বলে মনে করি না। আর যে ২৪ বছরের পরও হুমায়ূন পড়ে সে মানুষ না। ২৪-এর পর একটা অ্যাডাল্ট লোক যার বোধবুদ্ধি আছে সে হুমায়ূন পড়বে কেন? যেখানে কোনোরকম ডেপথ নেই, কোনো রকম গভীরতা নেই একমাত্র হিমু চরিত্র ছাড়া। সে নিজে বলেছে আমাকে। আমি এটা লিখেওছি অনেক জায়গায়। ও নিজেকে জানত খুব ভালোভাবে।
আপনি সম্প্রতি বললেন, বাংলা সাহিত্যের রাজধানী ঢাকায় চলে এসেছে। এর তাৎপর্য কী? সাহিত্যের নিজস্ব একটা ধারা আছে এখানে, কিন্তু সেই অর্থে স্থায়ী পাঠক কম বা বই প্রকাশের সংস্কৃতি তত জোরালো নয়।
সমরেশ মজুমদার: বাংলাভাষায় সমরেশ মজুমদার নামে একজন লেখক আছেন। তিনি যে গল্প উপন্যাস লিখছেন সেগুলো বিক্রি হয়। কিন্তু পাঠকের ইচ্ছা আরও সমরেশ মজুমদার হোক। আমি যত বই লিখেছি তার থেকে বেশি বই এখানে চলে। আমার নামে বই লিখে এখানে চালানো হয়। পাঠকরা বাংলা পড়তে পারে, পড়তে চায়, পড়ার আকাঙ্ক্ষা আছে। সেটাকে এক্সপ্লোয়েট করছে কিছু খারাপ ব্যবসায়ী। পাঠক নেই, এটা বলছেন কেন? এখানে পাঠক রয়েছে। প্রচন্ড পাঠক আছে। হুমায়ূনের বই বিক্রি হচ্ছে। মৃত্যুর পর সুনীলের বই বিক্রি একদম কমে গেছে। কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পর হুমায়ূনের বই বিক্রি হচ্ছে। একজন প্রকাশক আমাকে বলেছেন হয়তো ১০% বিক্রি কমেছে। পশ্চিমবাংলার বইমেলাতে ২১ থেকে ২২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়, এগুলো কি ভূতে কেনে? অথচ বলা হয় পশ্চিমবাংলায় পাঠক নেই। আপনাদের এখানে বলা হয়, পাঠক কমে গেছে। কিন্তু একুশের মেলা থেকে বাংলাবাজারের পাবলিশাররা ৫০% আয় করেন। নভেম্বর মাসে এখানে একটা আন্তর্জাতিক বইমেলা হবে। দুটো বইমেলা করার দরকার কী যদি বিক্রি না হবে?
আপনি অনেক লিখেছেন। এখন একেবারে পরিণত বয়স আপনার। লেখা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
সমরেশ মজুমদার: সকালে ঘুম থেকে উঠি ধরেন সাড়ে ছ’টায়। ব্রাশট্রাশ করার পর এক কাপ চা হাতে সূর্য ওঠা দেখতে খুব মজা লাগে। খবরের কাগজ আসে। চার চারটে কাগজ। সেটা পড়তে আরম্ভ করি। পড়তে পড়তে নটা বাজে। তখন নাস্তা খাই। নাস্তা খাওয়ার পর ফোন করি, একে ওকে তাকে। ধরেন, দশটা বেজে গেল। দশটা সাড়ে দশটা বেজে গেলে আর তো লেখার টাইম নাই। আর কখন লিখব। এখন লিখতে ইচ্ছা করে না বলে যত রকমের বাহানা আছে নিজেকে দিই। আমি যখন তরুণ ছিলাম, তখন যে পাড়ায় আমি থাকতাম সে পাড়ায় একজন বিখ্যাত লেখক থাকতেন, তার নাম শিবরাম চক্রবর্তী। তিনি আমাদের ছোটবেলায় হাসির লেখক হিসেবে আমাদের বুকের মধ্যে ছিলেন। আমি একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি সকাল থেকে কী করেন। তিনি বললেন, ঘুম থেকে উঠি। তারপর? তারপর চা খাই। তারপর? বিনাপয়সার কাগজ পড়ি। বিনাপয়সার মানে? আমাকে আনন্দবাজার পত্রিকা বিনাপয়সায় কাগজ পাঠায়, ওটা পড়ি। পড়তে পড়তে ঘুম পেয়ে যায়। আবার শুয়ে, ঘুমিয়ে পড়ি। আবার উঠি। তারপর? উঠে গোসল করতে যাই। ভাত খাই। ভাত খেলে ঘুম পায়। ঘুমায়ে পড়ি। বিকাল হয়, আমি সাজুগুজু করে বাস ধরে আমার প্রেমিকাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। প্রেমিকা? কেন, পড়োনি আমার লেখার মধ্যে? আটটা অব্দি তাদের সঙ্গে গল্প করে গল্প করে মন প্রফুল্ল হয়। তুমি দেখবে, মেয়েদের সঙ্গে গল্প করলে তোমার মন অনেক বড় হয়ে যাবে। তারপর ঘরে আসি। আবার ভাত খাই। ঘুমায়ে পড়ি। আমি তখন বললাম, আপনি লেখেন কখন? কেন, পরের দিন সকালে। পরের দিন সকালটা কবে আমি জানি না। আমি এখন সেই জায়গায়। লিখতে ইচ্ছা করে না। সাধারণত আমি সকালে লিখি। এখন বাধ্যবাধকতার জন্যই লিখতে হয়। অল্প বয়সে অফুরন্ত প্রাণশক্তি ছিল, তখন যখন ইচ্ছা তখন লিখতাম।
[৪ অক্টোবর, ২০১৯ দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত]
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে ক্যাডেট হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান এনপিপি, বিসিজিএমএস, এনডিসি, পিএসসি কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৮৪ সালের ২৪ জুলাই। ১৯৮৭ সালের ১ জানুয়ারি তিনি কমিশন প্রাপ্ত হন। এরপর দায়িত্ব পালন করেছেন নৌবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। সাফল্যের সঙ্গে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যোগ দেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হিসেবে।
এম. শাহজাহান তার আগে ছিলেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের উপ-মহাপরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্যের (হারবার ও মেরিন) দায়িত্বে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্লু ইকোনমি সেলের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশের বন্দর, ব্লু ইকোনমি, বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট-হাব হিসেবে গড়ে তোলাসহ সার্বিক মেরিটাইম খাত এবং ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা বঙ্গোপসাগর ও তার নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি তিনি কথা বলেছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের সঙ্গে।
তার সঙ্গে আলাপ করেছেন দৈনিক দেশ রূপান্তরের হেড অব ইভেন্টস অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং শিমুল সালাহ্উদ্দিন।
দৈনিক দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা শুনে খুব আনন্দিত যে চট্টগ্রাম বন্দর অনেকগুলো সাফল্য অর্জন করেছে আপনার নেতৃত্বে। প্রথমে জানতে চাই, লয়েড’স লিস্টে আমাদের বন্দরের এখনকার অবস্থান কত?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: লয়েড’স লিস্টে আমাদের বর্তমান অবস্থান ৬৪তম। এর মানে পৃথিবীর এক শ ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন চৌষট্টি।
আপনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন এ বন্দর কততম অবস্থানে ছিল? সারা বিশ্বের যে বন্দরগুলো, তার তুলনায় আমাদের বন্দরের ইতিহাস যে রকম পুরোনো..., বন্দরটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক কারণে, আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য কী ছিল?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমি চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বভার গ্রহণ করি ৩১ জানুয়ারি ২০২১-এ। যখন একদম কোভিডের মাঝপথে আমরা এসে পৌঁছেছি, কোভিড আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছিল। তখন চট্টগ্রাম বন্দর মোটামুটি স্থবির হয়ে ছিল, আমরা লয়েড’স লিস্টেও ছিলাম না। শুধু চট্টগ্রাম বন্দর না, সারা বিশ্বের সব বন্দরই মোটামুটি বন্ধ অবস্থায় ছিল। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা দ্রুত অনেক ভালো অবস্থায় নিয়ে যাই। আমরা, বন্দরের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী, চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা চব্বিশ ঘণ্টা সচল রেখেছি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে দর্শন ছিল, যে জীবন এবং জীবিকার সঙ্গে সমন্বয় রেখে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে- আমরা সেভাবে সেই দর্শন লালন করে, বুকে ধারণ করে কার্যক্রম পরিকল্পনা করেছিলাম। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখেছিলাম। এতে আমাদের বন্দরের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ সচল ছিল এবং সেই পিরিয়ডেও কিন্তু আমাদের ১৩% গ্রোথ হয়ে ছিল। এর বিনিময়ে আমাদের ৫৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমরা হারিয়েছি। আজকে আমি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।
১৯৭৭ সালে ছয়টি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দরের। এ বন্দর এখন বছরে ৩২ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করছে। সে হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের যাত্রাটি চমকপ্রদ। কীভাবে এটা সম্ভব হলো?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরোনো, প্রায় আড়াই হাজার বছরের। তবে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং শুরু হয় ১৯৭৭ সালে, মাত্র ছয় টিইইউ কনটেইনার দিয়ে। সে সময় অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল। ১০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের মাইলফলক স্পর্শ করতে আমাদের ৩১ বছর লেগে গেছে। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দর প্রথমবারের মতো ১০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে। এর পরের অর্থাৎ ২০০৯ সাল পরবর্তী সাফল্য ঈর্ষণীয়। ২০ লাখ টিইইউর মাইলফলক স্পর্শ করতে সময় লেগেছে মাত্র সাত বছর। ২০১৫ সালেই ২০ লাখ টিইইউর বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে চট্টগ্রাম বন্দর। এর মাত্র চার বছর পর ২০১৯ সালে ৩০ লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করে নজির সৃষ্টি করে বন্দর। ২০২১ সালে কনটেইনার হ্যান্ডেলিং বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ লাখ টিইইউর ঘরে।
চট্টগ্রাম বন্দরের এ সাফল্যে প্রধান ভূমিকা রেখেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনা এবং সেই আলোকে সরকারের গৃহীত বন্দরকেন্দ্রিক নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা। সরকারের ও আমরা যারা বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি, তাদের ধারাবাহিকতাও এ ক্ষেত্রে বড় একটা ভূমিকা রেখেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাহিদাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর, যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব পরিসংখ্যানে।
এই পর্যায়ে আসতে বন্দরের দক্ষতা ও সক্ষমতা অনেক বাড়াতে হয়েছে। সেটা কীভাবে হয়েছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান: পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই দেখবেন চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। গত পাঁচ বছর গড়ে ১২-১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধিকে সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি অর্থাৎ সক্ষমতা প্রতিনিয়ত বাড়াতে হচ্ছে। এখন আমাদের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার ৫৮০ টিইইউ। আমাদের সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে এবং বিশ্বের যেকোনো আধুনিক বন্দরের সঙ্গে একে তুলনা করা যায়।
এ ছাড়া ইকুইপমেন্টও বেড়েছে। আমি যখন চট্টগ্রাম বন্দরে সদস্য (হারবার ও মেরিন) হিসেবে যোগ দিই ২০১০ সালে, তখন সিসিটিতে মাত্র চারটি কিউজিসি (কি গ্যানট্রি ক্রেন) ছিল। বর্তমানে আমাদের কিউজিসি ১৮টি। সেই সময় আমাদের আরটিজি ছিল ৭টার মতো। আরটিজির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এখন ৪৭। আরএমজিসি (রেল মাউন্টেড গ্যানট্রি ক্রেন) বন্দরে যুক্ত হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ শেষ করেছি। ফলে আমাদের বন্দরের সক্ষমতা চার মিলিয়ন টিইইউতে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ বা কনটেইনারের কোনো জট নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ইচ্ছায় এত অল্প সময়ে আমরা এই সক্ষমতা বাড়াতে পেরেছি।
সব মিলিয়ে বলতে পারি, বিভিন্ন ধারণক্ষমতার বিপুলসংখ্যক যেসব ক্রেন আমাদের বহরে যুক্ত হয়েছে। নিঃসন্দেহে সেগুলো বন্দরের সক্ষমতা বাড়িয়েছে এবং অভূতপূর্ব একটা পরিবর্তন এনে দিয়েছে। বন্দরের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। সরকার ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সব ধরনের নীতি ও বিনিয়োগ দিয়েছে বলেই চট্টগ্রাম বন্দরকে আজ আমরা একটা আধুনিক বন্দরে উন্নীত করতে পেরেছি। বন্দরের ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা দুটোই বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
কর্ণফুলী চ্যানেলকে আমরা প্রশস্ত করেছি। ড্রাফটও বেড়েছে। বন্দরে আগে ১৮৬ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসতে পারত না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এটি ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দরের জেটিতে আনতে পেরেছি।
বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অটোমেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম বন্দর এ ক্ষেত্রে কতটা এগিয়েছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দরকে এক সময় ম্যানুয়াল বন্দর বলা হতো। সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। বন্দরে আমরা টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম (টস) চালু করেছি। সবচেয়ে বড় যে কাজটা আমরা করেছি তা হলো ইলেকট্রনিক ডেলিভারি সিস্টেম। এটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ভেহিকল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে ট্রাকের ফি আদায় অটোমেশনের আওতায় এসেছে। পুরোপুরি না হলেও সেমি-অটোমেটিক বন্দরে আমরা উন্নীত হয়েছি।
বহির্নোঙর ও চ্যানেলে চলাচলকারী জাহাজ নজরদারিতে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ভিটিএমআইএস) চালু রয়েছে। বহির্নোঙরের (পোর্ট লিমিট) আওতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে জাহাজ পাইলটিংয়ে পাইলট সার্ভিস অটোমেশন চালু করা হয়েছে।
বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে একগুচ্ছ উন্নয়ন পরিকল্পনা। নিরাপদ বন্দর নিশ্চিতে স্থাপন করা হয়েছে অত্যাধুনিক সিসিটিভি কন্ট্রোল সেন্টার, রয়েছে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম। যান চলাচল নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে অটোমেটিক গেট কন্ট্রোল সিস্টেম, আন্ডার ভেহিকল সার্ভিল্যান্স সিস্টেম (ইউভিএসএস) ও স্ক্যানার।
এসব অর্জন আপনাকে কোথাও কী তৃপ্ত করছে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সব সময় আমাদের আমাদের লক্ষ্যই থাকে অংশীজন ও ব্যবহারকারীদের সর্বোৎকৃষ্ট সেবা দেওয়া। সেটা নিশ্চিত করতেই বন্দরকেন্দ্রিক এত আয়োজন। কাঙ্ক্ষিত সেবা যে এখন পাওয়া যাচ্ছে, ব্যবহারকারীরাই তা বলছেন। কোভিডকালীন সারা বিশ্বের বন্দর যেখানে স্থবির হয়ে গিয়েছিল, তখনো আমরা অংশীজন ও ব্যবহারকারীদের ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে গেছি। কোভিডকালেও ৪১ শতাংশ জাহাজ অন-অ্যারাইভাল বার্থিং পেয়েছে। এখন আমরা ৮০ শতাংশ জাহাজকে অন-অ্যারাইভাল বার্থিং দিচ্ছি।
এ ছাড়া অটোমেশনের বৈশ্বিক স্বীকৃতি ও সুফল দুটোই আমরা পাচ্ছি। যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথের গবেষণা যখন বলে যে, এশিয়া অঞ্চলের ৬৫টি সেমি-অটোমেটিক বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান সবার ওপরে তখন ভালো তো লাগেই। তবে এ অর্জন বন্দরের একার নয়, সব ব্যবসায়ী ও বন্দর ব্যবহারকারীদেরও।
২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার যে অভীষ্ট তা অর্জনেও বড় ভূমিকা রয়েছে বন্দরের। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বর্ধিত চাহিদা পূরণে বন্দরের দক্ষতা ও সক্ষমতা আরো বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। সে ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তুতি কী?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে প্রয়াস তাকে বাস্তবে রূপ দিতে গেলে আমাদের এখানেই থেমে থাকলে হবে না। ধারণক্ষমতা ও সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজও করছি। আমরা ইতিমধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করেছি। আমাদের আরো ইয়ার্ড তৈরির কার্যক্রম চলছে। সেগুলো সম্পন্ন হলে ৫৫ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণ করা সম্ভব হবে।
এ ছাড়া আমরা বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনাল নির্মাণ করছি। বে টার্মিনালের কাজ শেষ হলে ২৮৫ মিটার দীর্ঘ ও ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ সেখানে আসতে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যেখানে ৩ হাজার টিইইউর জাহাজ আসে আর বে টার্মিনালে আসবে ৫-৬ হাজার টিইইউর জাহাজ। মাতারবাড়িতে ড্রাফট ১৮ মিটার। সেখানে ১০-১২ হাজার টিইইউ কনটেইনার ধারণক্ষমতার ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ আসতে পারবে। তখন আমরা বাংলাদেশকে অত্র অঞ্চলের ট্রান্সশিপমেন্ট হাব বানাতে পারব। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে পারবে।
মাতারবাড়ি ও বে টার্মিনাল কবে নাগাদ কার্যক্রমে আসতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালের মূল চ্যানেলের কাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা কনটেইনারবাহী জাহাজের বেসিন তৈরি করছি। মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সরঞ্জামবাহী ১১৭টির বেশি জাহাজ এরই মধ্যে সেখানে এসেছে। আমরা টাগবোট ও কন্ট্রোল রুমের ব্যবস্থা করেছি। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালের কাজ পুরোদমে চলছে এবং আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে কনটেইনার পরিবহনের সুফল আমরা পাব।
বে টার্মিনালের ডিটেইল ড্রয়িং ও ডিজাইনের জন্য আমরা দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছি এবং এরই মধ্যে তারা তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ ও চ্যানেল খননের জন্যও আন্তর্জাতিক একটি যৌথ কোম্পানিকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ শেষ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে এটি কার্যক্রমে আসবে বলে আমরা আশা করতে পারি। বে টার্মিনালে মোট তিনটি টার্মিনাল থাকবে; একটি মাল্টিপারপাস এবং দুটি কনটেইনার টার্মিনাল।
বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ঘোষণা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমি শুরু থেকেই এ কথাটি বলে আসছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পূর্ব এশিয়া, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমে চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যবর্তী হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এবং ভারতের ব্যবসার অন্যতম ক্ষেত্র হতে পারে। আমরা এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক হাব হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারি। আমাদের নিজস্ব ১৭ কোটি জনগণ ছাড়াও প্রায় ৩০০ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজারের যোগাযোগের পথ হতে পারে বাংলাদেশ।’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ দর্শনই আমাদের জন্য দিক-নির্দেশনা এবং বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।
সাবরিজিয়নাল ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হওয়ার অর্থ হলো অন্যান্য দেশ আমাদের এ বন্দরকে ব্যবহার করবে। সে জন্য আমাদের বন্দরের উন্নত অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সংযোগ, সেবার প্রাপ্যতা, দক্ষ জনশক্তি সর্বোপরি পর্যাপ্ত নাব্যতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়াটাও জরুরি। সবগুলো সুবিধাই আমাদের আছে।
মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনাল চালু হলে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতা (বর্তমানে শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় বন্দর), হলদিয়া, বিশাখাপত্তম, কাকিনাদা ও আন্দামান-নিকবরের অর্থাৎ বঙ্গোপসাগর বেল্টের বন্দরগুলো এটি ব্যবহার করতে পারবে। আমাদের আরেক প্রতিবেশী মিয়ানমারের আকিয়াব, ইয়াঙ্গুন এবং থাইল্যান্ডের ফুকেটসহ আরো দুই-একটি ছোট বন্দরও এটি ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ এ বন্দরগুলো হবে মাতারবাড়ি-কেন্দ্রীক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন তারা মাতারবাড়ি ব্যবহার করবে? কারণ এ অঞ্চলের বন্দরগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ির ড্রাফট সবচেয়ে বেশি। ১৮ মিটার ড্রাফট হওয়ায় ১০ হাজার টিইইউ ধারণক্ষমতার জাহাজ ভিড়তে পারবে এখানে। এখন একটি জাহাজে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টিইইউ কনটেইনার আনা হয়। এর পরিবর্তে ১০ হাজার টিইইউ কনটেইনার আনলে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ফ্রেইট কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা তখন এমনিতেই মাতারবাড়ি বন্দরকে বেছে নেবেন। কারণ, ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি দ্রুত পণ্যের ডেলিভারিও তারা পাবেন। চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দর তখন মাতারবাড়িকে ফিডার পোর্ট হিসেবে ব্যবহার করবে।
এ ছাড়া মাতারবাড়ি চালু হলে এখান থেকে জাহাজগুলো সরাসরি পাড়ি দেবে ইউরোপ ও আমেরিকার বন্দরের উদ্দেশ্যে। ফলে সময় অনেক কমে যাবে। বাংলাদেশ থেকে মধ্যবর্তী ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হয়ে ইউরোপীয় গন্তব্যে পণ্য পরিবহনে এখন গড়ে ৬-৭ সপ্তাহ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যে গড়ে ১২-১৬ সপ্তাহ সময় লাগে। যুক্তরাষ্ট্রের গন্তব্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা গেলে পণ্য পরিবহনে সময় অর্ধেকে নেমে আসবে। ইউরোপের যেসব দেশের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল চালু হয়েছে সেখানে আমরা ১৬-২০ দিনের মধ্যে জাহাজ পৌঁছাতে পারছি।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে আপনি এরই মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু করেছেন। এটা অব্যাহত রাখা কতটা জরুরি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন গন্তব্যে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর ও ইতালির পোর্ট অব র্যাভেনা বন্দরের মধ্য দিয়ে এটি শুরু হয় এবং পরবর্তীতে স্লোভেনিয়ার কোপার বন্দরের সঙ্গেও সেবাটি চালু হয়েছে। এ ছাড়া ব্রিটেনের পোর্টসমাউথের ফ্লেক্সটো পোর্ট, পর্তুগাল, জার্মানির পোর্ট অব হামবুর্গের সঙ্গেও সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালুর প্রস্তুতি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ বাঁচাতে সেবাটি অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য প্রয়োজন গভীর সমুদ্রবন্দর। সেই অর্জনের দিকেই যাচ্ছি আমরা।
একটা কথা আপনি প্রায়ই বলে থাকেন এবং তা হলো লায়াবিলিটিজকে আমাদের অ্যাসেটে পরিণত করতে হবে। ট্রান্সশিপমেন্ট হাবের মাধ্যমে লায়াবিলিটিজকে নিশ্চয় অ্যাসেটে রূপান্তরের একটা সুযোগ তৈরি হবে। সেটা কীভাবে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের নীতিনির্ধারকদের কাজ হলো দায়কে সম্পদে পরিণত করা। এটাই মূল। অর্থাৎ, আমাদের দায়কে যদি আমরা সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারি তাহলেই আর কোনো সমস্যা থাকে না। আমাদের বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে উন্নীত করার মধ্য দিয়েও সেটা সম্ভব। একটা উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। এখন কোনো কনটেইনার চার দিনের বেশি বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে থাকলে আমদানিকারককে ডিটেনশন চার্জ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু যদি বন্দরকে ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে ঘোষণা দেওয়া যায়, তখন এমএলওদের খালি কনটেইনার সিঙ্গাপুর বা কলম্বো ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে নিতে হবে না। তারা তখন কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরেই রাখবে। আমাদের স্পেস রেন্ট বাবদ ফি পরিশোধ করবে। তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়। অর্থাৎ, ব্যবসায়ীদের আর ডিটেনশন বা ড্যামারেজ চার্জ দিতে হবে না এবং স্পেস রেন্ট হিসেবে বন্দর রাজস্ব পাবে এমএলওদের থেকে। একদিকে ব্যবসায়ীদের খরচ বাঁচবে, অন্যদিকে বন্দরের আয় বাড়বে। বন্দরের আয় বৈদেশিক মুদ্রায় হওয়ায় এর একটা বড় প্রভাব পড়বে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে।
বন্দরের দায় আসলে কী কী এখন, একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করবেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমরা এর আগে আমাদের সার্ভিসগুলো সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা, ফার ইস্টার্ন কান্ট্রি চীন-জাপানে পাঠাতে পারতাম না। কেন না আমাদের এটা হাব হিসেবে আগে পরিচিত ছিল না। আমাদের বন্দরটা থেকে যদি আমরা সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকা এবং অন্যান্য ডেস্টিনেশনে প্রেরণ করতে পারি, তাহলে কিন্তু ট্রানজিট টাইমটা কমে যাবে। আমাদের ট্রানশিপমেন্ট হাবগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে না, ফলে আমাদের সেখানে ট্রান্সশিপমেন্টের যে ব্যয়, সেটাও কমে যাবে। এবং যে সময় লাগে, এখান থেকে সিঙ্গাপুর অথবা পোর্ট ক্লিয়ং অথবা তিয়ানজিং পোর্ট অথবা কলম্বো হাব আমরা ব্যবহার করি বর্তমানে। সেই হাবগুলো যদি আমাদের ব্যবহার করতে না হয়, আমরা যদি সরাসরি ইউরোপ-আমেরিকাতে পাঠাতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের এই যে অতিরিক্ত সময় এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়, হাব পোর্টে সেটা আমাদের সাশ্রয় হবে। এবং সে ক্ষেত্রে আমরা যদি এই চট্টগ্রাম বন্দরকে, যেটা আমাদের বে-টার্মিনাল, এবং মাতারবাড়িতে যেই ডিপ সি টার্মিনাল হচ্ছে, সেটাকে যদি আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট হাব হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারি, তাহলে এখন বর্তমানে আমাদের যে ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জ দিতে হয় পোর্টে, অনেক বেশি ফিক্সড অপারেটিং কস্ট আমাদের পে করতে হয় জাহাজের অবস্থানের জন্য, সেই সব কস্ট আর আমাদের বহন করতে হবে না। তখন এই যে কন্টেইনারগুলো আসে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে, যখন আসে, প্রথম চার দিন এমএলও-রা আমাদের ফ্রি টাইম দিয়ে থাকে। ওই চার দিনের পর থেকে তারা কিন্তু কন্টেইনারের ওপর ডিটেনশন চার্জ ও ডেমারেজ চার্জ আরোপ করে ফেলে। এটা থেকে আমরা মুক্তি পাই তখনই, যখন আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে আবার খালি কন্টেইনারটাকে ফেরত পাঠাতে পারি অথবা লোডেড কন্টেইনারটাকে ফেরত পাঠাতে পারি। এই যে ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে তারা যখন যায়, সেখানে কিন্তু ট্রান্সশিপমেন্ট হাবে এমএলও-রা ট্রান্সশিপমেন্ট স্পেস রেন্ট দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত কিন্তু আমাদের তাদের কন্টেইনারের ভাড়াই দিতে হয়, যে তার একটা কন্টেইনার আমার এখানে পড়ে আছে, সেজন্য। আমি যদি এটাকে হাবে পরিণত করতে পারি, তাহলে আমাকে ওই কন্টেইনারটা এম্পটি হওয়ার পরে আর এটার জন্য কোন ডিটেনশন বা ডেমারেজ চার্জ দিতে হবে না, বরং আমার যে স্পেসের ভেতর তার কন্টেইনারটাকে স্টোর করে রাখা হবে, এবং এখান থেকে অন্যান্য জায়গায় পরবর্তীতে সে খালি কন্টেইনারটা রপ্তানি করবে, সে জন্য উল্টো আমাকে চার্জ পরিশোধ করতে হবে। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতিবছর যে কন্টেইনারগুলো আমরা এখানে ইউজ করে থাকি, আমাদের এখানে আসা-যাওয়া করে যে কন্টেইনার, সেটার পরিমাণ ৩.২ মিলিয়ন ছিল গত বছর, গড়ে। প্রতি কনটেইনারে ১০০০ ডলারও যদি ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জ আসে, সেখানে কিন্তু বিশাল বড় অঙ্ক। আমি অত্যন্ত নগণ্য একটা এমাউন্ট বললাম, হিসাবের সুবিধার জন্য। ৩.২ ইনটু ১০০০ হলো ৩.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। তো ৩.২ বিলিয়ন ইউএস ডলার যদি ফরেন ক্যাশের সাশ্রয় হয়, ডেমারেজ এবং ডিটেনশন চার্জ বাবদ দিতে না হয়, তাহলে এটা রিজার্ভে আরও বড় অবদান রাখবে। এটা তো একটা সেগমেন্ট। এ রকম আরো পাঁচ-সাতটা সেগমেন্ট আছে- ডিটেনশন, ডেমারেজ, ফিক্সড অপারেটিং কস্ট এগুলোর ওপর ভিত্তি করে; তখন দেখা যায় যে বিশাল এমাউন্ট। আমাদের এই বর্তমানে যে ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ইউএস ডলার আমরা ক্রস করেছি, সেটার সঙ্গে যদি আরো ২০/৩০ বিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়, এটা তো বিশাল একটা এমাউন্ট, আমাদের রিজার্ভ অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমাদের বন্দরগুলা যদি রিজওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমরা কিন্তু নিজেরা নিজেদের বন্দরকে রিজওনাল হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। আমাদের মাতারবাড়িটা যদি ডিপ সি টার্মিনাল হিসেবে আমরা ইউজ করি, এই মাতারবাড়িটা হবে আমাদের হাব; এবং চিটাগাং পোর্ট, মোংলা পোর্ট, পায়রা পোর্ট-এ তিনটা হবে আমাদের অ্যান্ড ইউজার পোর্ট অথবা আমাদের ফাইনাল ডেস্টিনেশন। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর এবং মোংলা ও পায়রা-এ তিন বন্দরের একটা অ্যাডভান্টেজ হলো, আমাদের এখানে কারো কার্গোর ওপর আমাদের ডিপেন্ড করতে হয় না। যেমন সিঙ্গাপুর, পোর্ট ক্লাং, কলম্বো এরা কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল হাব। এদের কিন্তু কার্গো অ্যাট্রাক্ট করতে হয়। আরেকজনের থেকে কার্গোটা ছিনিয়ে আনতে হয়, কম পয়সা দিয়ে, বা ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়ে। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে সেটা নয়। আমাদের কার্গোটাই... ধরেন চায়না থেকে র’ ম্যাটেরিয়াল আসে, সিঙ্গাপুরে ট্রান্সশিপমেন্ট হয়, অথবা সিঙ্গাপুরে না হলেও পোর্ট ক্লাং-এ হয়, অথবা কলম্বোয় হয়। এখন কলম্বো, পোর্ট ক্লাং এবং সিঙ্গাপুর, এরা যখন ইউজারকে ফ্যাসিলিটিজ দেয়, তখন তারা তাদের ওখানে যায়। আমাদের এখানে সে সমস্যা নাই। আমাদের এখানে তাদের কোনো সুবিধা দিতে হয় না। ওখানে দেখা যায় তারা প্রতি কনটেইনারে টু পার্সেন্ট, থ্রি পার্সেন্ট, ফাইভ পার্সেন্ট করে তারা তাদের কনসেশন দেয়, যেটা চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য প্রযোজ্য নয়। চট্টগ্রাম বন্দর হলো অ্যান্ড ইউজার পোর্ট, এটা হল ফাইনাল ডেস্টিনেশন। আমরাই ইম্পোর্টার আমরাই এক্সপোর্টার, আমাদের এখানে আসতেই হয়। বরং আমাদের বন্দরে আসতে হলে আমরা তাদের স্পেশাল পারমিশন দিয়ে থাকি। আমরা সব জাহাজকে সমভাবে পারমিশন দিই না। তার কারণ হলো, বড় জাহাজগুলোকে আমরা পারমিশন দিয়ে থাকি যেন আমাদের বন্দরে একটা সিঙ্গেল জাহাজও যদি আনা যায়, দেখা যাবে যে আমাদের ফ্রেট কমে যাবে, আমাদের সময় কমে যাবে, ডিটেনশন এবং ডেমারেজ চার্জগুলো থেকে আমরা অব্যাহতি পাব। এ জন্য আমাদের বন্দরের যে সুবিধাগুলা, এই যে লায়াবিলিটিজ, একে আমরা যদি অ্যাসেটে কনভার্ট করতে পারি, তাহলে কিন্তু আমাদের দেশটাকে উন্নত বিশ্বে নেয়ার আমাদের যে লক্ষ্য, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, ২০৪১ সালের ভেতর উন্নত বাংলাদেশ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন; আমার মনে হয় সেটা আমরা দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে পারব। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর এ অপ্রত্যাশিত খরচগুলো আমরা যদি কমাতে পারি, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে ৯৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারে উন্নীত করা বেশি কষ্টের বিষয় নয়, এক বা দুই বছরেই সেটা আয় করা সম্ভব, শুধু পোর্টের ফ্যাসিলিটিজ এবং পোর্টকে ইউজ করে।
বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এত আগ্রহের কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: বাংলাদেশের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের অন্যতম কারণ হচ্ছে এর উড়ন্ত প্রবৃদ্ধি। সেই সঙ্গে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের বিশাল বাজার। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেও বঙ্গোপসাগর ঘিরে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাপানের অর্থায়নে ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ বা বিগ-বি কার্যক্রম চলছে। তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে এই বিগ-বি। প্রথমটি শিল্প ও বাণিজ্য, যার মূলে আছে গভীর সমুদ্রবন্দর। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য অংশের বাণিজ্যের দুয়ার হিসেবে কাজ করবে। দ্বিতীয় স্তম্ভটি হলো জ্বালানি। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিগ-বি আওতাভুক্ত এলাকা শুধু নয়, পুরো বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করবে। তৃতীয় স্তম্ভটি পরিবহন ব্যবস্থা। দেশের শিল্প ও বাণিজ্যের স্বার্থে ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহন’ ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী, এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশের মতো বাড়বে।
সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির পর ‘ব্লু ইকোনমি’ বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। সে সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা কোন অবস্থানে আছি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সমুদ্র অর্থনীতি নিয়ে আজকের এই যে উচ্ছ্বাস তার ভিত্তি রচনা করে দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গোপসাগরের ওপর আমাদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালেই তিনি ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। আনক্লজ (ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি) আসে এরও আট বছর পর, ১৯৮২ সালে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিস্তৃত এ সমুদ্র অঞ্চলের সম্পদ আহরণে আগে প্রয়োজন তা নিয়ে জরিপ, অনুসন্ধান ও গবেষণা। সমুদ্র গবেষণার জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীর বেশ কয়েকটি জাহাজ রয়েছে। বানৌজা অনুসন্ধান নামে নৌবাহিনীর একটি জাহাজ হাইড্রোগ্রাফি সংক্রান্ত জরিপ পরিচালনায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সমুদ্রবিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণা কাজে ব্যবহৃত হয় বিএনটি খাদেম নামের বাংলাদেশ নৌবাহিনীর একটি ওশান গোয়িং স্যালভেজ শিপ।
সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: বাংলাদেশের অধিকারে আসা বঙ্গোপসাগরের বিপুল সমুদ্রসম্পদ কেবল আহরণ করলেই হবে না। এর সুরক্ষাও দিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমাদের একটি সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে নাবিক ও জেলেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের খনিজ ও মৎস্যসম্পদ সুরক্ষার গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ অর্জন সম্ভব হবে। আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর সদস্যরা আগে থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সমুদ্র এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নৌবাহিনীকে একটি ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপ দিয়েছেন। একই সঙ্গে কোস্ট গার্ডকেও আমাদের দীর্ঘ উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে অধিকতর সক্ষম করে তুলছেন। বাহিনী দুটির উত্তরোত্তর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। যা বঙ্গোপসাগর জুড়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেও জোরদার করছে।
প্রশিক্ষিত ও দক্ষ মেরিন জনশক্তি এ মুহূর্তে আমাদের অনেক বেশি দরকার। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত সেই মেরিন জনশক্তি আমরা কতটা তৈরি করতে পারছি?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: সমুদ্র অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল কাজে লাগাতে সমুদ্র জ্ঞান সমৃদ্ধ প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির বিকল্প নেই। এ জন্য নতুন চারটিসহ আমাদের রয়েছে পাঁচটি সরকারি মেরিন একাডেমি। রয়েছে বেসরকারি আরও কয়েকটি মেরিন একাডেমি। বিশেষায়িত জ্ঞান আহরণের জন্য আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। তবে মেরিন একাডেমি থেকে বের হওয়া মেরিনারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে আমাদের নিবন্ধিত জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো জরুরি। এ ছাড়া মার্চেন্ট শিপিং অরডিন্যান্স সংশোধন করে চট্টগ্রাম বন্দরেও যাতে জাহাজ নিবন্ধিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তখন বাধ্যতামূলকভাবে এসব জাহাজকে বাংলাদেশের মেরিনারদের চাকরি দিতে হবে। এর ফলে আরো বেশি মেরিনারের কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটানো যাবে। চূড়ান্ত বিচারে বৈদেশিক আয়ও বাড়বে। আপনি এর আগে কোস্টগার্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন। বন্দর একটা দারুণ স্মার্ট অবস্থায় এসেছে আপনার সময়ে। আমরা শুনতে পাচ্ছি দ্রুতই আপনার মেয়াদ শেষ হবে। তো আপনার পরে যিনি দায়িত্ব নেবেন, তার জন্য আপনার পরামর্শ কী থাকবে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: তার জন্য আমার পরামর্শ থাকবে যে, আমাদের যেসব কার্যকলাপ বা প্রোগ্রাম আমরা গ্রহণ করেছি, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা। ইতিমধ্যে আমাদের কিছু কিছু টার্মিনালকে প্রাইভেটাইজেশনের জন্য সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেসব পদক্ষেপগুলো আরো দ্রুত এগিয়ে নেয়া। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল, এ কার্যক্রমের ট্রানজেকশনের অ্যাডভাইজারের রিপোর্টটা আমরা যথাসময়ে পাইনি। তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কেন না ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার যখন স্টাডি করে, তাদেরও অনেক সময় দিতে হয়, অনেক তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে তাদের বের করতে হয়। কিন্তু আমাদের তো তাড়াতাড়ি দরকার। সেই তাড়াতাড়ির জন্য আমরা তাদের বলেছি এবং তারা সেভাবেই কাজ করছে। আশা করি ট্রানজেকশন অ্যাডভাইজার আমাদের রিপোর্টগুলো দিলে সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা আমাদের প্রাইভেট টার্মিনালের অপারেটর, ইন্টারন্যাশনাল টার্মিনালের অপারেটর যারা আছেন তাদের দ্রুত নিয়োগ করতে পারব। তখন দেখা যাবে আমাদের এখানে আরো কমপিটিশন বাড়বে এবং আমাদের দক্ষতা এবং তাদের দক্ষতা দুটো মিলে আমাদের বন্দরকে আমরা অন্য একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারব। এ ছাড়া বন্দরের যেসব উন্নয়ন কার্যক্রমগুলো আছে, বে-টার্মিনাল, মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনাল এগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পারলে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারব। ২০৪১ সালের ভেতরে আমাদের যে ডিমান্ড হবে, সেই ডিমান্ড আমরা অ্যাড্রেস করতে পারব।
বন্দর তো নানারকম বাণিজ্যের একটা জায়গা, অর্থ লেনদেনেরও জায়গা, আবার বন্দর ঘিরে নানা অপরাধও ঘটে। আপনার সময়ে আপনি অপরাধ এবং দুর্নীতি দমনে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা ম্যাক্সিমাম জিনিস অটোমেশন করে ফেলেছি। এটা হলো ডিজিটালাইজেশনের একটা সুফল, যার ফলে অনেক কম পরিমাণ জনবল সম্পৃক্ত থাকে, তখন দুর্নীতিটা সেখানে হ্রাস পায়। আর আরেকটা জিনিস হলো পেমেন্ট সিস্টেমগুলো... এখন কিন্তু আগে যেভাবে ম্যানুয়ালি হাতে হাতে টাকা পয়সা লেনদেন হতো, এখন অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে আপনাকে পেমেন্ট করতে হয়। সুতরাং যেখানে অর্থের সরাসরি লেনদেন নাই, সেখানে দুর্নীতির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এ ছাড়া আমরা বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনায় ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করেছি। এই ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে একই জায়গায় একই রুমের ভেতর থেকে সবার সঙ্গে চেইন সিস্টেমে..., পাশাপাশি বসা- সবার সামনে জিনিসগুলো লেনদেন হচ্ছে, সুতরাং স্বচ্ছতা অনেক বেশি। আমাদের যে বার্থিং মিটিংটা হয় প্রতিদিন, সেই বার্থিং মিটিংটা কিন্তু অত্যন্ত স্বচ্ছ একটা প্রক্রিয়া, যেটাতে অনলাইনেও চাইলে যে কেউ যুক্ত হতে পারে। আমাদের জাহাজেও পুরো অটোমেশন বার্থিং সিস্টেম। আমাদের ভিটিএমআইএস আছে, যার মাধ্যমে কোন জাহাজ কখন কার আগে কে আসল, একদম পুরো রেকর্ড হয়ে থাকে। এখানে কোনো জাহাজকে আগে-পিছে করার কোন সুযোগ নাই। আগে-পিছে করতে গেলেই তখন তাকে জবাবদিহির ভেতর পড়ে যেতে হয়। সেই দুর্নীতিটা এখন আর করার সুযোগ নাই। একসময় যখন ছিল ম্যানুয়ালি, তখন হয়তো অনেকে অনেক কিছু চিন্তা করত। কিন্তু এখন টোটালি অটোমেটেড একটা বার্থিং সিস্টেম, সেখানে কারো হাত দেওয়ার কিছু নাই। কেউ চাইলেই কোনো সিস্টেমে এটা টেম্পারিং করতে পারে না, কারণ কম্পিউটারে কোন জাহাজ কয়টার সময় আসবে, সেই টাইম উল্লেখ করা থাকে-কোন সময় কোন জাহাজ কোন জায়গায় এসেছে এবং কোথায় নোঙর করেছে। এটা একটা জিনিস। আরেকটা হলো, যে পাইরেসির ব্যাপারে, আমাদের এখানে যে জলদস্যুতা এবং বহির্নোঙরে যে চুরি-ডাকাতি হতো, সেটাও ইনশা আল্লাহ আমাদের এখানে কমে গেছে। গত পরপর কয়েক বছর ধরে যে রেকর্ড আপনারা দেখতে পাবেন, সে রেকর্ডে আমরা কিন্তু ‘জিরো পাইরেসি’ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছি। আমাদের বাংলাদেশের কোস্টগার্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং পোর্টের যে সিকিউরিটি, সবাই মিলে আমরা যেভাবে কাজ করি এবং আমাদের টাস্কফোর্সের যে লোকবল, সবাই মিলে যৌথভাবে যে অপারেশন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে, তার সুফল আমরা পেয়েছি। এর ফলে আমাদের বন্দরে দুর্ঘটনা, পাইরেসি, জলদস্যুতা বা ছিঁচকে চুরি-ডাকাতির ঘটনা এখন নাই বললেই চলে।
কিন্তু ব্যবসায়ীদের নানা অভিযোগ শোনা যায় বন্দর নিয়ে। আপনারা কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং নিয়ে এত দুর্দান্ত উন্নয়ন করেছেন, ঠিক সময় নেমে যাচ্ছে, কিন্তু বন্দর থেকে সেটা ছাড়ানোর জন্য অনেক ব্যবসায়ীকে নাকি স্পিড মানি দিতে হয়। ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগ আপনি কীভাবে দেখেন?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: স্পিড মানির কথা আপনাকে আমি ঠিক বলতে পারব না, তবে এ সমস্যাটা চট্টগ্রাম বন্দরে নেই। এই সমস্যাটা হলো কাস্টমসের। লোকজন আমাদের বেশির ভাগ সময় গুলিয়ে ফেলে। আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের কাজ হলো জাহাজ থেকে কার্গোটা নামিয়ে আমাদের ইয়ার্ডে আমরা স্টেক করে রাখি, এর পরে সবকিছু কিন্তু কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের। আর কাস্টমস থেকে দেখা যায়, অনেক সময় কোনো একটা জিনিসকে টেস্ট করতে পাঠায়, কোনো একটা জিনিসের এইচএস কোডে সমস্যা থাকে, ডিজি কার্গোর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থাকে... তখন তাদের সঙ্গে যখন কাজটা হয়, সেখানে তাদের বিলম্ব হয়। সেই বিলম্বের জন্য কিন্তু আসলে সবাই বলে যে বন্দরে বিলম্ব হচ্ছে, দেরি হচ্ছে, অনেক সমস্যা, কিন্তু আসলে সেটা বন্দরের সমস্যা না। বন্দর অন্যের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে বসে আছে। যখনই কাস্টমসের ডকুমেন্ট আমরা পাই, আমরা কিন্তু দুই-চার ঘণ্টার ভেতরে আমাদের বন্দর থেকে কার্গোটা গেট দিয়ে আউট করে দিই। কাস্টমস এনবিআর-এর আন্ডারে, তাদের সমস্যাটা তাদেরই লুক আফটার করতে হবে। তারাও চেষ্টা করছে, কিছু কিছু অটোমেশন তারাও করেছে। কাস্টমসের তো জনবলের অনেক স্বল্পতা আছে, ইকুইপমেন্টের স্বল্পতা আছে, আর ল্যাবরেটরির সমস্যাটা হলো সবচেয়ে বেশি প্রকট। বিভিন্ন জিনিস টেস্ট করতে অনেক বেশি সময় লেগে যায়। তারাও চেষ্টা করছে নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন করার জন্য এবং বাইরে আউটসোর্সিং করেও কিছু দেওয়া যায় কিনা সেটাও তারা চেষ্টা করছে। আশা করি এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমাদের বন্দরের বাইরে বিভিন্ন সময়ে আপনারা বিভিন্ন লিটারেচর দেখবেন- চট্টগ্রাম বন্দরে কনজেশন, চট্টগ্রাম বন্দরে ইয়ার্ড স্পেস কম, চট্টগ্রাম বন্দরে ইকুইপমেন্ট কম–এগুলো কিন্তু ওয়ানস আপন এ টাইম ছিল। এখন কিন্তু সেটা নাই। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে জেটির সংখ্যা পর্যাপ্ত, ইকুইপমেন্ট পর্যাপ্ত। আমি যখন মেম্বার হিসেবে ২০১০ থেকে ২০১৫ সালে এখানে কাজ করি, তখন মাত্র চারটা কি গ্রেনটি ক্রেইন এখানে ছিল। এখন সেখানে ১৮টা, এবং প্রত্যেকটা জাহাজে আমরা তিনটা করে ক্রেনকে একসঙ্গে দিতে পারি। সুতরাং আগে যেখানে জাহাজ কন্টেইনার নিয়ে এসে তিন থেকে পাঁচ দিন লেগে যেত ডেলিভারি ডিসচার্জ করতে, এখন সেখানে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর তারা ডেলিভারি করে চলে যায়। এক সময় জেটিতে আসার জন্য জাহাজকে বহির্নোঙরে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, এখন সেটা নেই। এখন জাহাজের জন্য জেটি খালি হয়ে থাকে, আমরা জাহাজ আসার সঙ্গে সঙ্গে ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টার ভেতর ডিসচার্জ করে জাহাজকে সেল আউট করে দিচ্ছি। সেই ইফিসিয়েন্সি এখন আমাদের অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। সুতরাং আমাদের চিন্তা করতে হবে, যে সব লিটারেচরগুলো আছে আমার মনে হয়, এখন সময় এসেছে ইন্টারনেটের ওই সব লিটারেচরগুলাকে দূরীভূত করার। চট্টগ্রাম বন্দর এখন আর সেই দশ বছর আগের বন্দর নয়। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমাদের যেভাবে ইকুইপমেন্ট দিয়েছেন, যেভাবে অর্থ বরাদ্দ করেছেন, যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, সেই দিকনির্দেশনার জন্য আজকে চট্টগ্রাম বন্দর এ অবস্থানে আসতে পেরেছে। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের যতগুলো উন্নয়ন প্রকল্প, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবগুলো করিয়েছেন। আজকে যে আমরা এ জায়গায় এসে পৌঁছেছি, তার কিন্তু কৃতিত্ব আমাদের আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। তিনি বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে হলে বন্দরগুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বন্দরগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। তিনি যেভাবে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি দেশের অন্যান্য সেক্টর যেভাবে ডেভেলপ করছেন, চিটাগাং পোর্টের জন্যও তিনি সেভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তিনি আমাদের অনুমোদন দিয়েছেন বে-টার্মিনালের, অনুমোদন দিয়েছেন মাতারবাড়ি ডিপ সি টার্মিনালের, অনুমোদন দিয়েছেন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের। সম্প্রতি ১০৪টা ইকুইপমেন্ট কেনারও তিনি অনুমোদন দিয়েছেন, যে ইকুইপমেন্ট প্রাইসের অর্ধেক অংশ ইতিমধ্যে আমাদের বহরে যুক্ত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এখানে এখন কোনো ইকুইপমেন্টের স্বল্পতা নাই। ইয়ার্ড স্পেস সম্বন্ধে বলি, আমাদের এখানে আমি যখন জয়েন করি, তখন ইয়ার্ড স্পেস ছিল ৩৯ হাজার টিইউস-এর মতো। এখন সেখানে ইয়ার্ড স্পেস হয়ে গিয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইউস-এর বেশি। সেটা দিন দিন আমরা বাড়াচ্ছি। এর ভেতর আরো কয়েকটা ইয়ার্ড আমাদের বাড়ছে। সেগুলা হলে আগামী এক মাস/দেড় মাসের ভেতর ৫৫ হাজার টিইউস–এ উন্নীত হবে। সুতরাং আমাদের ইয়ার্ড স্পেস খালি। আগে যেখানে কন্টেইনার স্তূপ হয়ে থাকত। এখন আমাদের কন্টেইনার ইয়ার্ডে দেখবেন যেখানে কন্টেইনার আগে সিক্স আই হয়ে থাকত, এখন সেখানে থ্রি আই/ফোর আই-তে নেমে এসেছে। মানে আমাদের ইয়ার্ড স্পেস আমরা এখন অনেক বেশি পাচ্ছি। আমরা ওভার ফ্লো ইয়ার্ড তৈরি করেছি। আমাদের এলসিএল যে কার্গোগুলো আছে, সেগুলো আগে জেটির ভেতর থেকেই ডিসচার্জ করতে হতো। এখনো করে, কিন্তু আমরা তার পাশাপাশি এক্স ওয়াই শিপকে বন্দরের বাইরে একটা স্থানে নিয়ে গেছি। আগামী অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেটাও চালু হবে এবং সেখানে এলসিএল কার্গোগুলো আসলে জেটির ভেতর থেকে যেই কার্গো ডিসচার্জের প্রক্রিয়া, সেটা বাইরে চলে যাচ্ছে। সেটা হলে বন্দরের ভেতর অনেক কম পরিমাণ ট্রাক ঢুকবে। এভাবেই কিন্তু বন্দরটা কনজেশন ফ্রি হয়। আমাদের বন্দরে এখন কোনো কনজেশন নেই, কোনো ইয়ার্ড স্পেস শর্টেজ নাই, কোনো ইকুইপমেন্টেরও শর্টেজ নাই। এখন আন্তর্জাতিক যেকোনো বন্দরের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে তুলনা করতে পারি। যে কেউ বন্দরে এসে একবার ভিজিট করে গেলে বুঝবে যে আমরা সিঙ্গাপুর বলেন, কলম্বো বলেন, মালয়েশিয়া বলেন, ইন্দোনেশিয়া বলেন -সব জায়গাতেই যে বন্দরগুলা আছে, আমাদের এশিয়ার যে বন্দরগুলো আছে, প্রত্যেকটা বন্দরের সঙ্গে আমাদের চট্টগ্রাম বন্দরের তুলনা করা যায়। একসময় আমাদের বন্দরের ওপর একটা স্টাডি হয়েছিল লন্ডন ভিত্তিক একটা জায়গা থেকে, তারা বলেছিল যে এশিয়ান রিজনে যে ৬৯টা বন্দর আছে, তার ভেতরে সেমি-অটোমেটিক এবং ম্যানুয়াল মুডে যে বন্দরগুলো চলে, তার ভেতরে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এক নম্বর।
যোগাযোগ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু? কীভাবে এই বিনিয়োগ খাতটিকে আরো এগিয়ে নিতে পারে?
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: পরিবহন এবং লজিস্টিক খাতে দক্ষতা ও গতিশীলতা আনতে বেসরকারি বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। অভিজ্ঞ বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে ভালো একটি বিকল্প হতে পারে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এখানকার সড়ক এবং রেলের ফ্রেইট পরিবহন কোম্পানিগুলো অভ্যন্তরীণ শিপিং লাইনগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে নতুন ধরনের ফিডার বার্জ-সার্ভিস চালু করা সম্ভব হলে সড়কপথে ট্রাকযোগে কার্গো পরিবহনের ওপর চাপ কমবে। ফলে নৌপথের ব্যবহার বাড়লে লজিস্টিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে। এ মুহূর্তে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে রয়েছি আমরা। আমাদের বন্দর, রেল, সড়ক ও নৌপরিবহন সেবাসহ প্রতিটি খাতের অব্যাহত উন্নয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক। বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র টার্মিনালেও বিদেশি বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আগামী দিনের ‘এশিয়ান টাইগার’ হয়ে ওঠার পথে দেশকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে আমরাও প্রস্তুত।
দেশ রূপান্তরকে সময় দিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এম. শাহজাহান: আপনাকে এবং আপনার মাধ্যমে দৈনিক দেশ রূপান্তরের সবাইকে ধন্যবাদ ও ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আইন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপি বলছে, আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে। সরকারের এমন নেতিবাচক সিদ্ধান্তের পর এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি দেয়নি দলটি। তবে এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে যোগ হতে পারে বলে জানা গেছে।
৫৩ দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া। বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও দলীয় নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর। বিদেশে নেওয়া ছাড়া তার উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে তার ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেন। এতে মতামত দিতে আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় আইন মন্ত্রণালয় এতে মতামত দেয়। এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়টি উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেছেন, তার সাময়িক মুক্তির আদেশটা বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে নেওয়া হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাসায় চিকিৎসা নেবেন এবং বিদেশে যেতে পারবেন না এমন দুটো শর্ত সাপেক্ষে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে দন্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। দরখাস্তটা নিষ্পত্তি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে আটবার দন্ড স্থগিত করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তিকৃত দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো সুযোগ আইনে থাকে না। আমরা ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫ ও ৬ ব্যাখ্যা করে মতামত পাঠিয়েছি। আমাদের মতামত হলো, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা অতীত এবং মীমাংসিত। এটা আর খোলার কোনো উপায় নেই।’
এক প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত রেখে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটা বাতিল করে তারপর পুনরায় বিবেচনা করার সুযোগ থাকলে সেটা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই উপমহাদেশে ৪০১ ধারার ক্ষমতা যখন প্রয়োগ করে, তখন এটি আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না বলে সিদ্ধান্তের নজির আছে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন যে আদেশটা আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, বাতিল করে তাকে (খালেদা জিয়া) যদি আবার কারাগারে নেওয়া হয়, তাহলে তিনি আদালতে যেতে পারেন। কিন্তু এ অবস্থায় আদালতে যেতে পারবেন না।’ খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের বিষয়টি বাতিল করা হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’
আইনমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এক বার্তায় বলেন, ‘আজকের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক ভয়ংকর তামাশা করা হচ্ছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, নির্বাহী বিভাগ চাইলেই কাউকে মুক্তি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি কী এখন ভাবছে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমেই সুরাহার পথ বের করতে হবে।’
আর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর নীলনকশার অংশ। মানবতাবিরোধী ও সরকারের বর্বর ইচ্ছা পূরণের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এই অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।’
দলটির নেতাদের অভিযোগ, বিএনপির চেয়ারপারসনের বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা না করে, রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করতে না পারলে বিএনপিপ্রধানের মুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমেই এই ইস্যুর সুরাহা করতে চায় দলটি।
কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। কিন্তু দেশে চিকিৎসা গ্রহণের শর্তারোপ করা হলে তা যে চিকিৎসার বিবেচনায় না করে রাজনীতির বিবেচনায় করা হবে, সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষের আছে।’
অসুস্থতার কারণে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের মার্চে করোনার সময় টানা দুই বছর কারাভোগের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ফিরেছিলেন খালেদা জিয়া। পরে এ পর্যন্ত তার মুক্তির মেয়াদ আটবার বাড়িয়েছে সরকার।
এরই মধ্যে অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদনটি পাঠায়।
বিএনপিপ্রধানকে নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি সরকার ইতিবাচকভাবে দেখতে পারে’। কিন্তু সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘বিদেশে যাওয়ার আবেদন করতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে ফেরত গিয়ে করতে হবে’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের পর সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় এবারও ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না। গত শনিবার এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এ শঙ্কাই প্রকাশ করেছিলেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা আছে, যেকোনো মূল্যে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকার মরিয়া। সে কারণে হয়তো খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি ঝুঁলিয়ে রাখতে চাইছে এমনটাই মনে করছে সরকারবিরোধীরা। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দিলেই সরকারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও বিরোধী নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথাই নেতাদের বলে রেখেছেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছেন, এ অবস্থায় চলমান এক দফার আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিষয়টি থাকলেও সেটাকে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে; যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নেয়।
জানা গেছে, এই ইস্যুতে ধারাবাহিক কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে দলটি। আজ সোমবার রাতে দলটির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক রয়েছে। সূত্র বলছে, জোটগত ছাড়াও দলীয়ভাবেও কর্মসূচি আসতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার এক চিকিৎসক জানান, হঠাৎ শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তার কেবিনে এক্স-রে মেশিন নেওয়া হয়েছিল গতকাল ভোরে। শ্বাসকষ্ট নিয়ন্ত্রণে না এলে সিসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ ছিল। দুপুরে তার ইসিজি ও ইকো ডায়াগ্রাম করানো হয়েছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের জন্য তার ডান পাশে যে ক্যাথেটার লাগানো ছিল, সেটা আপাতত খুলে ফেলা হয়েছে।
লিভার জটিলতা ছাড়াও ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ফুসফুস, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। গত ৯ আগস্ট ফিরোজায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দলীয় মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) সেটআপে কেবিনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দিচ্ছে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওনার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। সে জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে পাঠানো দরকার।’
সদ্যোজাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অনেক সময়েই নানা কারণে কানের ব্যথা দেখা যায়। কিছু ক্ষেত্রে দিন কয়েকের মধ্যেই তা সেরেও যায়। কিছু ক্ষেত্রে সেই ব্যথা ঘুরেফিরে আসে ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
দীর্ঘস্থায়ী কানে ব্যথা কখনোই অবহেলা করা উচিত না। যদি কানে ব্যথা বাড়তে থাকে, সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। মূলত কানের সংক্রমণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী এই ব্যথা হতে পারে।
অনেকেরই ধারণা থাকে যে, বাচ্চাদের কানে পানি ঢুকে বা সদ্যোজাতদের দুধ খাওয়ানোর সময়ে তা কানে ঢুকে সংক্রমণ হয়। এ ছাড়া কানে ময়লা জমেও কানে ব্যথা হয় বলে সাধারণ ধারণা রয়েছে। কিন্তু শিশু বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ধারণাগুলো ঠিক নয়। স্বাভাবিক অক্ষত কানের পর্দা ভেদ করে পানি, দুধ কানের একদম ভেতরে ঢুকতে পারে না।
শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে কান, গলা ও নাক এগুলো একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে গলায় সংক্রমণ হলে তা সহজেই কানে চলে আসে। বাচ্চার ঠান্ডা লেগে জ্বর, সর্দি-কাশি বা গলায় সংক্রমণ হলে তা কানেও ছড়িয়ে পড়ে। কানের সঙ্গে ফ্যারিঙ্কসের যোগসূত্র তৈরি হয় ইউস্টেশিয়ান টিউবের মাধ্যমে। ফলে যখন সন্তান বা বড়দের ফ্যারিঞ্জাইটিস, ল্যারিঞ্জাইটিস বা টনসিলাইটিস হচ্ছে, তখন সেই সংক্রমণ কানের মধ্যে চলে যেতে পারে।
এ ছাড়া শিশুদের সর্দি থেকেও কানে ব্যথা হয়। বিশেষ করে নবজাতকদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা যায়। বাচ্চারা যেহেতু নিজে থেকে কফ বার করতে পারে না। তাদের ঠান্ডা লেগে গলায় কফ জমে এবং কানেও তরল জমতে পারে। ফলে কানে ব্যথা হয় ও বাচ্চা কাঁদতে থাকে।
শিশুদের কানে ব্যথা হলেই অনেকে কানের ড্রপ দিতে শুরু করেন। কিন্তু এসব করতে বারণ করেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। বরং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যথা কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়ানো যেতে পারে।
শিশু এবং ছোট বাচ্চাদের কানের ব্যথা বা সংক্রমণ সম্পর্কে বোঝানোর ক্ষমতা থাকে না। তাই কিছু লক্ষণ দেখেই তাদের কানে সংক্রমণ নিশ্চিত করা যায়।
১. সংক্রমণের কারণে কানে ব্যথা এবং অস্বস্তি হয়। ব্যথা কমাতে শিশুরা তাদের কান ধরে টানতে থাকে।
২. সংক্রমণে আক্রান্ত শিশু শুয়ে থাকলে এটি মধ্যকর্ণে চাপের পরিবর্তন ঘটায়। যা ব্যথা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ফলে শিশুদের জন্য ঘুমানো বা শুয়ে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
৩. কানের সংক্রমণের একটি নিশ্চিত লক্ষণ হল শিশুর কান থেকে তরল বা পুঁজ বের হওয়া।
৪. সংক্রমণের কারণে কানের ব্যথা হয় যার ফলে শিশু অতিরিক্ত কান্না করে বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খিটখিটে মেজাজ হতে পারে।
৫. সংক্রমণের কারণে কানে তরল জমা হয়ে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে।
৬. জ্বর থাকতে পারে।
৭. ডায়রিয়া, বমি, ক্ষুধা কমে যাওয়া।
১. ঘরে বা রাস্তাঘাটে ধুলো নাক-মুখ দিয়ে ঢুকলে অনেক সময়ে আল্যার্জি ও প্রদাহ হয়। ফলে ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। তখন কানে ব্যথা হতে পারে।
২. বিমানে ওঠার সময়ে যেমন ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অনেকেরই কানে সমস্যা দেখা যায়। বাচ্চারা সেটা বোঝাতে বা বলতে না পেরে কেঁদে ওঠে। তখন বড় হোক বা বাচ্চা, ঢোঁক গিলতে হবে। তা হলেই আবার ইউস্টেশিয়ান টিউবের মুখটা খুলে যাবে। সন্তান খুব ছোট হলে পানি বা লজেন্স খাওয়ানো যায়। সেটা খাওয়ার সময়ে সে ঢোঁক গিললে সমস্যা মিটে যাবে।
৩. ইউস্টেশিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে গেলে বা কান বন্ধ হয়ে গেলে, তা ঠিক করার জন্য এক ধরনের ব্যায়াম ভালসালভা ম্যানুভার করা যেতে পারে। এর জন্য নাক দিয়ে অনেকটা শ্বাস গ্রহণ করে তারপরে নাক ও মুখ বন্ধ করে, বেলুন ফোলানোর মতো করে মুখ ফুলিয়ে সেই বাতাস বের করার চেষ্টা করতে হবে। এতে নাক ও মুখ বন্ধ থাকায় ভিতরের বাতাস কানের পথে বেরোনোর চেষ্টা করবে। ফলে বন্ধ কান খুলে যাবে।
৪. এ ছাড়া রাইনাইটিস বা নাকের ভিতরের শ্লেষ্মাঝিল্লির জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ থেকেও কানে ব্যথা হতে পারে। তখন ন্যাজ়াল ড্রপ দেন বিশেষজ্ঞরা।
গলার সংক্রমণ যেমন কানে ছড়াতে পারে ঠিক তেমনি কানের সংক্রমণ মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যেতে পারে। ট্রান্সভারস বা সিগময়েড সাইনাস কান ও মস্তিষ্কের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।
দীর্ঘদিন কানের ইনফেকশন অবহেলা করলে, এই সংক্রমণ সিগময়েড সাইনাস দিয়ে ব্রেনে চলে যেতে পারে। তখন রোগের জটিলতা বেড়ে যায়। যেমন, গলায় যদি স্ট্রেপটোকক্কাস ব্যাকটিরিয়ার দ্বারা সংক্রমণ হয়, তা ব্রেনের মধ্যে চলে গেলে সেখানে মস্তিষ্কে পুঁজ তৈরি করে। এতে বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, হাত-পায়ের দুর্বলতা দেখা যায়, চোখে কম দেখতে পারে সেই সময়।
তাই কানে সংক্রমণ বা ব্যথা হলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।সোমবার (২ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু কাপ আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা শেষে উপাচার্যের সামনেই এ ঘটনা ঘটে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনালে ২-০ গোলে আইন বিভাগকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। তবে খেলা শেষে পক্ষপাতিত্বমূলক সিদ্ধান্তের অভিযোগ এনে রেফারির দিকে তেড়ে যান আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা। এসময় সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত তাদেরকে থামাতে এগিয়ে গেলে তার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তি ঘটে। এক পর্যায়ে অমিত দত্তকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর নাজমুল হোসেন হৃদয় নামে এক শিক্ষার্থী দৌড়ে চলে যেতে লাগলে তাকে বাধা দেন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক। এরপর তাকে মারধর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী। এসময় আবারও হাতাহাতি শুরু হলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীও সেখানে গিয়ে যুক্ত হন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সে ফুটেজে এসবের সত্যতা মিলেছে।এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রক্টরিয়াল বডির যে কাজ ছিল, আমি তাই করেছি। শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে রেফারির দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। আমি থামাতে গেলে তারা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমি দু’বার মাটিতে পড়ে গিয়েছি।’তবে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল দাবি করেন, ‘খেলা শেষে আমি স্টেজের পাশেই ছিলাম। হুড়োহুড়ির মধ্যে অমিত স্যার আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। আমি যখন উঠি তখন আবার আমাকে ফেলে দেন। রানা স্যার, প্রক্টর ওমর সিদ্দিকী, অমিত স্যার, লাল শার্ট পরা আরেকজন (আইনুল হক) আমার কলার চেপে ধরেন। তারপর রানা স্যার আমাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পেছন থেকে আমাকে গলা চেপে ধরেন আরেক স্যার। ধাক্কা লেগে পড়ে গিয়ে আমার ব্লেডিং হয়েছে।’আইন বিভাগের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, ‘কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের দলের ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে। এরপর অমিত স্যার আমাদের একজনের কলার ধরে নিচে ফেলে মারধর করেন। শিক্ষকের এমন মারধর দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’তবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কাউকে মারিনি। প্রক্টরিয়াল বডি নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে।’
ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক মো. আইনুল হক বলেন, ঘটনার সময় দেখলাম একটা ছেলে দৌড়াচ্ছে। তখন তার দৌড় দেখে মনে হলো কেন সে দৌড়াচ্ছে। তখন তাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম। পরে শুনলাম ছেলেটা রেফারির সাথে উদ্ধত আচরণ করেছে। খেলায় যারা পরাজিত হয় তাদের একটা অভিযোগ থাকে। রেফারির বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সত্য নয়।উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈনের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোনো বক্তব্য দিবেন না বলে এই প্রতিবেদকের ফোন কল কেটে দেন।
হতাশায় শেষ খালেদার অপেক্ষা
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া হচ্ছে না। তার পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের ওপর গতকাল রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই।
যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
সাড়ে ৩ বছরে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স
দেশের বিদেশি মুদ্রা আয়ের অন্যতম হাতিয়ার প্রবাসী আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে। সদ্য সমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশে অবস্থানকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধপথে ও ব্যাংকের মাধ্যমে মাত্র ১৩৪ কোটি ডলারের বিদেশি মুদ্রার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। গত সাড়ে তিন বছরে এটি সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স। ৪১ মাস আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম ১০৯ কোটি ডলার সমপরিমাণের রেমিট্যান্স এসেছিল। রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হলে হুন্ডিতে লেনদেন বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজার ছাড়াল
এ বছর অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে ডেঙ্গু। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুতে মৃত্যু হাজারের কোটা ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৮৮২ জন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ মো. জাহিদুল ইসলামের সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
অকাজের ৩৭০০ কোটির সেতু
সেতু হয়। কিন্তু সড়ক হয় না। সেতু করার জন্য নানান প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু সেসব সেতু করেই দায়সারা বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়। ভোগান্তি সাধারণ মানুষের। আবার যতগুলো সেতু করার কথা ততগুলো না করেও প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করার প্রতিবেদনও দেওয়া হয়েছে। এমন ঘটনা ঘটেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সারা দেশের গ্রামের রাস্তাগুলোতে সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে। প্রকল্পের এসব অনিয়ম উঠে এসেছে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর দাবি আ.লীগ নেতার
আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার। গত শনিবার রাতে তার ফেসবুকে এ দাবি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তিনি।
মুহূর্তেই স্ট্যাটাসটি ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিএনপির অসংখ্য নেতা, কর্মী-সমর্থক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশংসা করেন। অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নিন্দা জানিয়ে দলীয় সব পদ থেকে তার বহিষ্কারের দাবি জানান।
আবদুল মোতালেব হাওলাদার তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আইন পরিবর্তন করে হলেও বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়া হউক।’
স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন অধরাই
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
ফুটপাত থেকে মদের বার সবখানে চাঁদাবাজি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের কমিটি পার করেছে পাঁচ বছরের বেশি সময়। মেয়াদোত্তীর্ণ এ কমিটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। কিছু নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। সর্বশেষ মদের বার ভাঙচুর ও লুট করে আবারও আলোচনায় এ কমিটির নেতাকর্মীরা।
নতুন কমিটি না হওয়ায় নেতারা বেপরোয়া আচরণের পাশাপাশি বিভিন্ন অপরাধে জড়াচ্ছেন বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। তারা বলেন, সংগঠনের কর্মকাণ্ডও স্থবির হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো. রিপন মিয়াকে সভাপতি ও মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়লকে সাধারণ সম্পাদক করে তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের এক বছরের জন্য আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে গত বছর ১২ জুন ৩২১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য।
নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আবাসন এখনো অধরা। দেশের দরিদ্র মানুষের একাংশ ভাসমান তারা ফুটপাত, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানে মানবেতর জীবন কাটায়। আর বড় অংশটি বস্তিতে ও নিম্নমানের পরিবেশে দিনাতিপাত করছে। সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে স্বল্প আয়ের মানুষ বাসযোগ্য আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
বছরের পর বছর আবাসন নিয়ে নৈরাজ্য চললেও সরকারের কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বিশ্ব বসতি দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। এ দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা বাণী দিয়েছেন। দেশজুড়ে দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। র্যালি, সেমিনার, ব্যানার ও ফেস্টুনের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে। টেলিভিশনে স্ক্রলও প্রচার করা হচ্ছে।
‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২ হাজার ১১৯। এ তালিকায় রয়েছে যারা রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মাজার, ফুটপাত, সিঁড়ি, ওভারব্রিজের নিচে, লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট, মার্কেটের বারান্দায় দিন কাটান। আর বস্তিতে বসবাস করছে ১৮ লাখ ৪৮৬ জন। তারা মূলত শহর ও উপশহর এলাকায় টিনের ঘর, সেমিপাকা ঘর বা ঘিঞ্জি পাকা ঘরে বাস করে। তবে বস্তিবাসী কারা সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১৬ সালে সরকার আবাসন নীতিমালা করেছে। আবাসন উন্নয়ন তহবিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। আবাসন সংকট নিরসন করতে হলে সরকারকে আবাসন তহবিল করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বস্তিবাসী, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত কারা তার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে। না হলে বোঝা যাবে না কত মানুষ বস্তিতে থাকে।’
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের নীতিসহায়তার অভাবে আবাসন সংকট কাটছে না। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আবাসন।’
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করে ৯ লাখ গৃহহীন মানুষকে চিহ্নিত করে। ইতিমধ্যে আট লাখ মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করেছে; প্রায় ৪০ লাখ মানুষের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বাকিদের জন্যও শেখ হাসিনা ব্যবস্থা করবেন। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্যও আবাসনের ব্যবস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা তার সৈনিক হিসেবে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
জানা যায়, বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার সবার জন্য আবাসন। অঙ্গীকার পূরণে সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারা দেশে ৩০টি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, নোয়াখালী, যশোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, মাগুরা, শরীয়তপুর, নড়াইল, খুলনা, মৌলভীবাজার, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসব প্রকল্পে ৬ হাজার ৪৩২টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৪টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৫ হাজার ৯৩০টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে। শেরপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, হবিগঞ্জ, সিলেট, ঝিনাইদহ, ঝালকাঠি, মাদারীপুর, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ১৩টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৩৫টি পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় রাজউক পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনেও বিভিন্ন সংস্থা আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্পদশালী ব্যক্তিরা। যাদের অনেক ফ্ল্যাট আছে তারা আরও ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু বাস্তুহারা, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত সরকারি এসব আবাসনের সুবিধা পাচ্ছেন না। অল্প দামে জমি অধিগ্রহণ করে সরকার আবাসন প্রকল্প তৈরি করে যাদের নামে বরাদ্দ দিচ্ছে তারা রাতারাতি কোটিপতি বনে যাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে জমির মালিক ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত।
জাতিসংঘ ১৯৮৫ সালে বিশ্ব বসতি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশে^ অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এ দিবসটি পালিত হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।