বক্তব্যে সংযম ও সতর্কতা
এ এস এম মারুফ বিল্লাহ | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০
অলংকারপূর্ণ ভাষায় প্রাঞ্জলতার সঙ্গে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্টভাবে কথা বলা ও আবেগ প্রকাশই বক্তৃতা। আকর্ষণীয় বক্তৃতা করার শক্তি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মহা অনুকম্পা। আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো কোনো বক্তৃতায় জাদুর মতো প্রভাব থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩৪)
বক্তৃতার মধ্যে মোহনীয় ও আকর্ষণীয় প্রভাব থাকায় তা মানুষকে দ্রুত প্রভাবিত করে এবং অন্তরকে আকৃষ্ট করে। তবে বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি যাতে অপ্রয়োজনীয় শব্দ, অশালীনতা, চাটুকারিতা ও অসত্য কথা প্রকাশ না পায়।
অনর্থক বাড়াবাড়ি এবং অযথা ভাষায় পান্ডিত্য প্রকাশ করে শব্দদূষণ ইসলাম পছন্দ করে না। যারা বক্তৃতায় অতিরঞ্জন করে রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কথায় বাড়াবাড়িকারীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৩৬৫৫)
বাড়াবাড়ি করার কারণে মানুষ বিপদে পড়ে যায়। ফিতনা সৃষ্টি করে ও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। মানুষের কথা ও শব্দ ছোট-বড় অসংখ্য গুনাহের অন্যতম উৎস। অপবাদ আরোপ, পরনিন্দা, গালমন্দ, তিরস্কার ও মিথ্যা কথাগুলো কথা দিয়েই প্রকাশ পায়। আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ওপর পাপাচারের অপবাদ আরোপ করবে না এবং কুফরের দুর্নাম নিক্ষেপ করবে না। যদি সে লোক এরূপ না হয়, তবে তার অপবাদ তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৯৮)
সবসময় সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা বুদ্ধিমানের কাজ এবং ইমানের পরিচায়ক। মুমিন কথা বলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করে। অসমীচীন ও অশালীন ব্যবহার থেকে দূরে থাকে। কেননা যারা অশোভন কথা থেকে দূরে থাকে, তারা সফলকাম হবে বলে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(তারা সফল) যারা অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ০৩)
অতিরঞ্জনমূলক বেফাঁস বক্তব্য মুনাফিকির অন্যতম একটি শাখা। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘লজ্জাশীলতা ও জিহ্বা সংযত রাখা ইমানের দুটি শাখা। পক্ষান্তরে অশ্লীল ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা নিফাকির দুটি শাখা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২২৩১২) বস্তুত মুনাফিকরাই অতিরঞ্জন করে, অযথা, অপ্রয়োজনীয় ও বেহায়াপূর্ণ কথা বলে। বাকচাতুরতার সঙ্গে অন্যের দুর্নাম রটায় ও হীনস্বার্থ চরিত্রার্থ করার জন্য অযোগ্য ব্যক্তির প্রশংসা করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন আছে, যার কথা তোমাকে চমৎকৃত করে, আর সে ব্যক্তি তার অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে অথচ সে ব্যক্তি খুবই ঝগড়াটে।’ (সুরা বাকারা, হাদিস : ২০৪)।
মিতভাষী হওয়া চরিত্রের বিশেষ একটি গুণ। আর বেশি কথার অবতারণায় সাবধানতা থাকে না, ফলে তা মিথ্যা সৃষ্টি করে ও সত্যকে চাপা দেয়। আবু সালাবা আল-খুশানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়তম এবং তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে নিকটতম হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে চরিত্রবান। আর আমার কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত এবং আমার থেকে সবচেয়ে দূরতম সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক চরিত্রহীন। আর তাদের পরিচয় হচ্ছে তারা বেশি বেশি কথা বলে, অসতর্কভাবে যা-তা বলে এবং অহংকার করে থাকে।’ (তাবারানি, হাদিস : ১০৪২৪)
কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে একদল লোকের চরিত্র এমন হবে যে, তারা জিহ্বা দিয়ে খাদ্য উপার্জন করবে। জীবিকা নির্বাহ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা মিথ্যা প্রশংসা করবে এবং কুৎসা রটাবে। এতে তারা হালাল-হারামের তোওয়াক্কা করবে না। সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না এমন এক দলের আবির্ভাব হবে, যারা নিজেদের জিহ্বার সাহায্যে ভক্ষণ করবে যেভাবে গাভী তার জিহ্বার সাহায্যে ভক্ষণ করে থাকে।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৮৫৮)
দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও প্রচার করা মুমিনের দায়িত্ব। কিন্তু পার্থিব স্বার্থের জন্য এটি করা মহাপাপ। যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থে মানুষের আকর্ষণ পাওয়ার লক্ষ্যে এবং বাকপটুতা শেখে ও প্রদর্শন করে তাহলে পরকালীন জীবনে তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর পরিণতি। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বক্তব্যের বিভিন্ন বর্ণনাশৈলী শিক্ষা গ্রহণ করে, যাতে সে তারা লোকের অন্তর আকৃষ্ট করতে পারে; কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তার কোনো ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।’ (আদাবুল বায়হাকি, হাদিস : ৩১৭)
বক্তব্যে অতিরঞ্জন করতে গিয়ে অসংখ্য অসার কথার অবতারণা ঘটে, ফলে বক্তব্য অনেক দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ বক্তব্যের কারণে শ্রোতার বিরক্তিভাব দূর করতে প্যাঁচ খাঁটিয়ে আরও দীর্ঘায়িত করা হয়। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করা। আমর ইবনুল আস (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দিল। তখন আমর (রা.) বললেন, যদি সে তার বক্তব্য সংক্ষেপ করত তবে, তার জন্য কল্যাণ হতো। কেননা আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অবশ্যই আমি দেখেছি অথবা আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে, আমি যেন বক্তব্য সংক্ষেপ করি। কারণ বক্তব্য সংক্ষেপ করাই উত্তম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০৮)
কখনো কখনো কিছু বক্তা এমন সব অসত্য, বানোয়াট, বেফাঁস ও ভিত্তিহীন উদাহরণ উল্লেখ করেন, যা বক্তব্যকে অনেক বেশি রঞ্জিত করে। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আমি কোরআনে মানুষের জন্য সব ধরনের উদাহরণ পেশ করেছি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২৭)
সুতরাং কোরআন বোঝার জন্য কোরআনেই যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। কোরআনের বিষয়বস্তুগুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াতের মাধ্যমে সম্ভব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ উত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, বারবার পঠিত।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২৩)
কোরআনে উল্লিখিত উদাহরণগুলো মেধা-যুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক এবং সাধারণ ও ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা-কাহিনী নির্ভর। যারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং তা মানুষকে শিক্ষা দেয় তাদের উচিত কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে বয়ান করা। দুনিয়ার মোহ যেন তাদের আকৃষ্ট না করে। পার্থিব এ ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্য যেন জান্নাতের পথে অন্তরায় না হয়। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।
শেয়ার করুন
এ এস এম মারুফ বিল্লাহ | ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০

অলংকারপূর্ণ ভাষায় প্রাঞ্জলতার সঙ্গে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্টভাবে কথা বলা ও আবেগ প্রকাশই বক্তৃতা। আকর্ষণীয় বক্তৃতা করার শক্তি মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মহা অনুকম্পা। আবদুল্লাহ ইবন ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই কোনো কোনো বক্তৃতায় জাদুর মতো প্রভাব থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৪৩৪)
বক্তৃতার মধ্যে মোহনীয় ও আকর্ষণীয় প্রভাব থাকায় তা মানুষকে দ্রুত প্রভাবিত করে এবং অন্তরকে আকৃষ্ট করে। তবে বক্তৃতা করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখা জরুরি যাতে অপ্রয়োজনীয় শব্দ, অশালীনতা, চাটুকারিতা ও অসত্য কথা প্রকাশ না পায়।
অনর্থক বাড়াবাড়ি এবং অযথা ভাষায় পান্ডিত্য প্রকাশ করে শব্দদূষণ ইসলাম পছন্দ করে না। যারা বক্তৃতায় অতিরঞ্জন করে রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কথায় বাড়াবাড়িকারীরা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৩৬৫৫)
বাড়াবাড়ি করার কারণে মানুষ বিপদে পড়ে যায়। ফিতনা সৃষ্টি করে ও পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। মানুষের কথা ও শব্দ ছোট-বড় অসংখ্য গুনাহের অন্যতম উৎস। অপবাদ আরোপ, পরনিন্দা, গালমন্দ, তিরস্কার ও মিথ্যা কথাগুলো কথা দিয়েই প্রকাশ পায়। আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির ওপর পাপাচারের অপবাদ আরোপ করবে না এবং কুফরের দুর্নাম নিক্ষেপ করবে না। যদি সে লোক এরূপ না হয়, তবে তার অপবাদ তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৯৮)
সবসময় সতর্কতার সঙ্গে কথা বলা বুদ্ধিমানের কাজ এবং ইমানের পরিচায়ক। মুমিন কথা বলার সময় সাবধানতা অবলম্বন করে। অসমীচীন ও অশালীন ব্যবহার থেকে দূরে থাকে। কেননা যারা অশোভন কথা থেকে দূরে থাকে, তারা সফলকাম হবে বলে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘(তারা সফল) যারা অসার কথাবার্তা এড়িয়ে চলে।’ (সুরা মুমিনুন, আয়াত : ০৩)
অতিরঞ্জনমূলক বেফাঁস বক্তব্য মুনাফিকির অন্যতম একটি শাখা। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘লজ্জাশীলতা ও জিহ্বা সংযত রাখা ইমানের দুটি শাখা। পক্ষান্তরে অশ্লীল ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা নিফাকির দুটি শাখা।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২২৩১২) বস্তুত মুনাফিকরাই অতিরঞ্জন করে, অযথা, অপ্রয়োজনীয় ও বেহায়াপূর্ণ কথা বলে। বাকচাতুরতার সঙ্গে অন্যের দুর্নাম রটায় ও হীনস্বার্থ চরিত্রার্থ করার জন্য অযোগ্য ব্যক্তির প্রশংসা করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন আছে, যার কথা তোমাকে চমৎকৃত করে, আর সে ব্যক্তি তার অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে অথচ সে ব্যক্তি খুবই ঝগড়াটে।’ (সুরা বাকারা, হাদিস : ২০৪)।
মিতভাষী হওয়া চরিত্রের বিশেষ একটি গুণ। আর বেশি কথার অবতারণায় সাবধানতা থাকে না, ফলে তা মিথ্যা সৃষ্টি করে ও সত্যকে চাপা দেয়। আবু সালাবা আল-খুশানি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়তম এবং তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে নিকটতম হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে চরিত্রবান। আর আমার কাছে সর্বাধিক ঘৃণিত এবং আমার থেকে সবচেয়ে দূরতম সেই ব্যক্তি, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক চরিত্রহীন। আর তাদের পরিচয় হচ্ছে তারা বেশি বেশি কথা বলে, অসতর্কভাবে যা-তা বলে এবং অহংকার করে থাকে।’ (তাবারানি, হাদিস : ১০৪২৪)
কিয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে একদল লোকের চরিত্র এমন হবে যে, তারা জিহ্বা দিয়ে খাদ্য উপার্জন করবে। জীবিকা নির্বাহ ও স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা মিথ্যা প্রশংসা করবে এবং কুৎসা রটাবে। এতে তারা হালাল-হারামের তোওয়াক্কা করবে না। সাদ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত হবে না, যতক্ষণ না এমন এক দলের আবির্ভাব হবে, যারা নিজেদের জিহ্বার সাহায্যে ভক্ষণ করবে যেভাবে গাভী তার জিহ্বার সাহায্যে ভক্ষণ করে থাকে।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৩৮৫৮)
দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও প্রচার করা মুমিনের দায়িত্ব। কিন্তু পার্থিব স্বার্থের জন্য এটি করা মহাপাপ। যদি কোনো ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থে মানুষের আকর্ষণ পাওয়ার লক্ষ্যে এবং বাকপটুতা শেখে ও প্রদর্শন করে তাহলে পরকালীন জীবনে তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর পরিণতি। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বক্তব্যের বিভিন্ন বর্ণনাশৈলী শিক্ষা গ্রহণ করে, যাতে সে তারা লোকের অন্তর আকৃষ্ট করতে পারে; কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা তার কোনো ফরজ ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না।’ (আদাবুল বায়হাকি, হাদিস : ৩১৭)
বক্তব্যে অতিরঞ্জন করতে গিয়ে অসংখ্য অসার কথার অবতারণা ঘটে, ফলে বক্তব্য অনেক দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ বক্তব্যের কারণে শ্রোতার বিরক্তিভাব দূর করতে প্যাঁচ খাঁটিয়ে আরও দীর্ঘায়িত করা হয়। অথচ ইসলামের শিক্ষা হলো স্থান, কাল, পাত্রভেদে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করা। আমর ইবনুল আস (রা.)-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে দীর্ঘ বক্তব্য দিল। তখন আমর (রা.) বললেন, যদি সে তার বক্তব্য সংক্ষেপ করত তবে, তার জন্য কল্যাণ হতো। কেননা আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অবশ্যই আমি দেখেছি অথবা আমাকে আদেশ করা হয়েছে যে, আমি যেন বক্তব্য সংক্ষেপ করি। কারণ বক্তব্য সংক্ষেপ করাই উত্তম।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০০৮)
কখনো কখনো কিছু বক্তা এমন সব অসত্য, বানোয়াট, বেফাঁস ও ভিত্তিহীন উদাহরণ উল্লেখ করেন, যা বক্তব্যকে অনেক বেশি রঞ্জিত করে। অথচ আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আমি কোরআনে মানুষের জন্য সব ধরনের উদাহরণ পেশ করেছি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২৭)
সুতরাং কোরআন বোঝার জন্য কোরআনেই যথেষ্ট উদাহরণ রয়েছে। কোরআনের বিষয়বস্তুগুলো পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এক আয়াতের ব্যাখ্যা অন্য আয়াতের মাধ্যমে সম্ভব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ উত্তম বাণী অবতীর্ণ করেছেন, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ, বারবার পঠিত।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ২৩)
কোরআনে উল্লিখিত উদাহরণগুলো মেধা-যুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক এবং সাধারণ ও ঐতিহাসিক সত্য ঘটনা-কাহিনী নির্ভর। যারা দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং তা মানুষকে শিক্ষা দেয় তাদের উচিত কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে বয়ান করা। দুনিয়ার মোহ যেন তাদের আকৃষ্ট না করে। পার্থিব এ ক্ষণস্থায়ী চাকচিক্য যেন জান্নাতের পথে অন্তরায় না হয়। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন।