ব্যতিক্রমী স্থাপত্যের স্যানসাকলার মসজিদ
ইজাজুল হক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০
ইসলামি ঐতিহ্যের শহর ইস্তাম্বুলের অদূরে অবস্থিত স্যানসাকলার মসজিদ আধুনিক মুসলিম স্থাপত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঐতিহ্যবাহী অটোমান স্থাপত্যশৈলী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা নিয়ে প্রাকৃতিক আবহে গড়ে উঠেছে এই অনিন্দ্যসুন্দর আধ্যাত্মিক স্থাপনা। স্থানীয় স্যানসাকলার পরিবারের অর্থায়নে তুর্কি স্থপতি অ্যামর আরোলাতের নকশায় ২০১২ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখেই মসজিদের ডিজাইন করা হয়। সবুজ ঘাসে মোড়ানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ধাপে ধাপে সিঁড়িগুলো নেমে গেছে মাটির নিচে। পাশের স্বচ্ছ নীল পানিতে টলটল করা জলাধার ভারতের বিখ্যাত তাজমহলের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওপরে ঘাস ও লতাপাতা বেষ্টিত ছাদে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভের মতো ব্যতিক্রমী এক আয়তকার মিনার। মিনারের চূড়ায় নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি করে লেখা হয়েছে আল্লাহতায়ালার নাম। মসজিদপ্রাঙ্গণের সূর্যঘড়ি ও জয়তুন গাছ প্রাকৃতিক আবহের পূর্ণতা দিয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরে নানাভাবে আলোর ব্যবস্থা করা। মসজিদের ছাদে বিভিন্নভাবে বসানো হয়েছে নানা রঙের আলোকসজ্জার মেলা। ছাদের গঠনও অদ্ভুতভাবে ধাপে ধাপে সিঁড়ির মতো করে ওপরে উঠে মাঝখানে এসে মিলিত হয়েছে। ভেতরে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র নামাজের স্থান।
অ্যামর আরোলাতের সঙ্গে এই প্রকল্পের ডিজাইনে যুক্ত ছিলেন ইস্তাম্বুলের নারী স্থপতি জয়নব ফারিলিয়োগলু। তিনি বলেন, ‘অ্যামরের সঙ্গে এই স্থাপনার নকশার কাজে আরও বারোজন স্থপতি কাজ করেছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আধুনিক ভাবধারার সঙ্গে ইসলামের সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সত্যিকারের মুসলমানরা যাতে প্রাকৃতিক আবহে প্রশান্ত চিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারেন, তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল আমাদের।’
অভিনব স্থাপত্যশৈলীর কারণে মসজিদটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। মসজিদের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে বেশ কটি মূল্যবান স্থাপত্য পুরস্কার। ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড আর্কিটেক্ট ফেস্টিভাল’-এর ‘বেস্ট রিলিজিয়াস বিল্ডিং ক্যাটাগরিতে’ এটি প্রথম পুরস্কার লাভ করে। ২০১৫ সালে বিখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা ‘আর্কডেইলি’ থেকে ‘রিলিজিয়াস বিল্ডিং অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পায় এই মসজিদ। ২০১৮ সালে বিবিসির ‘সিভিলাইজেশন’ সিরিজের ঐতিহ্যগবেষক মেরি বেয়ার্ড এটিকে ‘আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা ধর্মীয় সৃষ্টি’ এবং ‘বিশে^র অন্যতম নান্দনিক নকশার মসজিদ’ আখ্যা দেন।
শেয়ার করুন
ইজাজুল হক | ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০

ইসলামি ঐতিহ্যের শহর ইস্তাম্বুলের অদূরে অবস্থিত স্যানসাকলার মসজিদ আধুনিক মুসলিম স্থাপত্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ঐতিহ্যবাহী অটোমান স্থাপত্যশৈলী থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা নিয়ে প্রাকৃতিক আবহে গড়ে উঠেছে এই অনিন্দ্যসুন্দর আধ্যাত্মিক স্থাপনা। স্থানীয় স্যানসাকলার পরিবারের অর্থায়নে তুর্কি স্থপতি অ্যামর আরোলাতের নকশায় ২০১২ সালে মসজিদটি নির্মিত হয়।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল রেখেই মসজিদের ডিজাইন করা হয়। সবুজ ঘাসে মোড়ানো বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ধাপে ধাপে সিঁড়িগুলো নেমে গেছে মাটির নিচে। পাশের স্বচ্ছ নীল পানিতে টলটল করা জলাধার ভারতের বিখ্যাত তাজমহলের কথা মনে করিয়ে দেয়। ওপরে ঘাস ও লতাপাতা বেষ্টিত ছাদে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতিস্তম্ভের মতো ব্যতিক্রমী এক আয়তকার মিনার। মিনারের চূড়ায় নান্দনিক ক্যালিগ্রাফি করে লেখা হয়েছে আল্লাহতায়ালার নাম। মসজিদপ্রাঙ্গণের সূর্যঘড়ি ও জয়তুন গাছ প্রাকৃতিক আবহের পূর্ণতা দিয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরে নানাভাবে আলোর ব্যবস্থা করা। মসজিদের ছাদে বিভিন্নভাবে বসানো হয়েছে নানা রঙের আলোকসজ্জার মেলা। ছাদের গঠনও অদ্ভুতভাবে ধাপে ধাপে সিঁড়ির মতো করে ওপরে উঠে মাঝখানে এসে মিলিত হয়েছে। ভেতরে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র নামাজের স্থান।
অ্যামর আরোলাতের সঙ্গে এই প্রকল্পের ডিজাইনে যুক্ত ছিলেন ইস্তাম্বুলের নারী স্থপতি জয়নব ফারিলিয়োগলু। তিনি বলেন, ‘অ্যামরের সঙ্গে এই স্থাপনার নকশার কাজে আরও বারোজন স্থপতি কাজ করেছেন। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল আধুনিক ভাবধারার সঙ্গে ইসলামের সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সত্যিকারের মুসলমানরা যাতে প্রাকৃতিক আবহে প্রশান্ত চিত্তে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারেন, তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল আমাদের।’
অভিনব স্থাপত্যশৈলীর কারণে মসজিদটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। মসজিদের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে বেশ কটি মূল্যবান স্থাপত্য পুরস্কার। ২০১৩ সালে ‘ওয়ার্ল্ড আর্কিটেক্ট ফেস্টিভাল’-এর ‘বেস্ট রিলিজিয়াস বিল্ডিং ক্যাটাগরিতে’ এটি প্রথম পুরস্কার লাভ করে। ২০১৫ সালে বিখ্যাত স্থাপত্য সংস্থা ‘আর্কডেইলি’ থেকে ‘রিলিজিয়াস বিল্ডিং অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পায় এই মসজিদ। ২০১৮ সালে বিবিসির ‘সিভিলাইজেশন’ সিরিজের ঐতিহ্যগবেষক মেরি বেয়ার্ড এটিকে ‘আধুনিক সময়ের অন্যতম সেরা ধর্মীয় সৃষ্টি’ এবং ‘বিশে^র অন্যতম নান্দনিক নকশার মসজিদ’ আখ্যা দেন।