স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন
তাহমিদুল ইসলাম | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০
স্বাস্থ্য ও সুস্থতা আল্লাহতায়ালার অশেষ অনুগ্রহ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা কোনো ধরনের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে অসুস্থ হলে কিয়ামতের দিন তাকে এ জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে, সেটা তার সুস্থতাবিষয়ক। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ সুনানে তিরমিজি সুস্থতা প্রতিটি মানুষের চাওয়া। সুস্থতা কামনা করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুস্থতা-অসুস্থতায় ভিত্তি করে মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্ম-পরিধি। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো।’ সহিহ মুসলিম : ২৬৬৪
ইসলামি শরিয়তের মৌলিক উদ্দেশ্য পাঁচটি। যথা : জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশগতি রক্ষা ও ধর্ম রক্ষা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমার শরীরেরও হক রয়েছে তোমার ওপর।’ সহিহ মুসলিম ও তিরমিজি শরীরের হক হলো স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এ জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন। তিনি মানবজাতির জন্য সর্বকালের সর্বোত্তম আদর্শ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে বিশদ আলোচনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও কোনো রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতি রয়েছে জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ইসলাম রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বারোপ করেছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করেছে। এজন্য আমরা দেখতে পাই, যে বিষয়গুলোর কারণে মানুষের রোগ হয় ইসলাম আগেই সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলামে হালাল-হারাম খাবারের বিবরণ দেখলে তা সহজেই অনুমেয়। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের কর্তব্য হলো, সর্বদা শরীর ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকা।
একজন মুমিন প্রথমত খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়েন এবং কখনো অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কোনো অলসতা করা যাবে না। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে, যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য।’ সুনানে আবু দাউদ
অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইবাদত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা রোগ দেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেন। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে।’ জাদুল মাআদ
কাজেই স্বাস্থ্য সচেতনতা, শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং রোগ-বালাই হলে চিকিৎসা নেওয়া একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম প্রধান অবলম্বন হলো পবিত্রতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এটা ইবাদত-বন্দেগি পালন ও শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এভাবে ইসলামে ছেলেদের খতনা করানোর নির্দেশ রয়েছে, যা তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মদ পান করার দ্বারা হৃৎরোগ ও ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ হয়। ইসলাম মনে করে, কোনো অবস্থাতেই শরীরের যথেচ্ছ ব্যবহার উচিত নয়। এজন্য পরিমিত ও সময়ানুগ খাবার গ্রহণ জরুরি।
শেয়ার করুন
তাহমিদুল ইসলাম | ৮ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০

স্বাস্থ্য ও সুস্থতা আল্লাহতায়ালার অশেষ অনুগ্রহ। ইচ্ছাকৃতভাবে কিংবা কোনো ধরনের উদাসীনতা ও অবহেলার কারণে অসুস্থ হলে কিয়ামতের দিন তাকে এ জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে প্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে, সেটা তার সুস্থতাবিষয়ক। তাকে বলা হবে, আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ সুনানে তিরমিজি সুস্থতা প্রতিটি মানুষের চাওয়া। সুস্থতা কামনা করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুস্থতা-অসুস্থতায় ভিত্তি করে মানুষের জীবনযাত্রা ও কর্ম-পরিধি। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে। আর যা তোমাকে উপকৃত করবে, সেটিই কামনা করো।’ সহিহ মুসলিম : ২৬৬৪
ইসলামি শরিয়তের মৌলিক উদ্দেশ্য পাঁচটি। যথা : জীবন রক্ষা, সম্পদ রক্ষা, জ্ঞান রক্ষা, বংশগতি রক্ষা ও ধর্ম রক্ষা। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমার শরীরেরও হক রয়েছে তোমার ওপর।’ সহিহ মুসলিম ও তিরমিজি শরীরের হক হলো স্বাস্থ্য সুরক্ষা। এ জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন ছিলেন। তিনি মানবজাতির জন্য সর্বকালের সর্বোত্তম আদর্শ। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে বিশদ আলোচনা। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে ইসলাম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও কোনো রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতি রয়েছে জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ইসলাম রোগ প্রতিরোধেও গুরুত্বারোপ করেছে। রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করেছে। এজন্য আমরা দেখতে পাই, যে বিষয়গুলোর কারণে মানুষের রোগ হয় ইসলাম আগেই সেগুলোকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ইসলামে হালাল-হারাম খাবারের বিবরণ দেখলে তা সহজেই অনুমেয়। প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের কর্তব্য হলো, সর্বদা শরীর ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকা।
একজন মুমিন প্রথমত খেয়াল রাখবেন, তিনি যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়েন এবং কখনো অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবেন। এ বিষয়ে কোনো অলসতা করা যাবে না। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
নবী করিম (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো, কেননা মহান আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে, যার কোনো প্রতিষেধক নেই, তা হলো বার্ধক্য।’ সুনানে আবু দাউদ
অসুস্থ হলে চিকিৎসা গ্রহণ করা ইবাদত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা রোগ দেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেন। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে।’ জাদুল মাআদ
কাজেই স্বাস্থ্য সচেতনতা, শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং রোগ-বালাই হলে চিকিৎসা নেওয়া একজন মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম প্রধান অবলম্বন হলো পবিত্রতা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। এটা ইবাদত-বন্দেগি পালন ও শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত। এভাবে ইসলামে ছেলেদের খতনা করানোর নির্দেশ রয়েছে, যা তাকে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্ত রাখে। স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য দাঁত ও মুখ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হয়েছে। ইসলামে মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মদ পান করার দ্বারা হৃৎরোগ ও ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ হয়। ইসলাম মনে করে, কোনো অবস্থাতেই শরীরের যথেচ্ছ ব্যবহার উচিত নয়। এজন্য পরিমিত ও সময়ানুগ খাবার গ্রহণ জরুরি।