ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধিতা
মুফতি শাব্বীর আহমদ | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। উত্তম আকৃতি দিয়ে মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কিছু মানুষকে আল্লাহতায়ালা জন্মগতভাবে সৃষ্টিগত কিছু ত্রুটি দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন অথবা কেউ জন্মের পর কোনো দুর্ঘটনায় তার অঙ্গ হানি বা শারীরিক কোনো সমস্যায় পতিত হন। যাকে আমরা প্রতিবন্ধী বলে অবহিত করি। বাস্তবে এদের এমন সৃষ্টির পেছনে তার উদ্দেশ্য ও মহান রহস্য একমাত্র তিনিই জানেন। তবে কিছু কারণ অনুমান করা যেতে পারে যেমন, বান্দা যেন মহান আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমন তিনি এর ব্যতিক্রমও করতে সক্ষম।
আল্লাহ যাকে এই আপদ থেকে নিরাপদে রেখেছেন সে যেন নিজের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে। অতঃপর তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও এমন করতে পারতেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থেকে আখেরাতের মহা সফলতা অর্জন করতে পারেন। ইসলাম মতে, একজন প্রতিবন্ধী মোত্তাকি মুমিন শতসহস্র সুস্থ-সবল কাফের খোদাদ্রোহীর চেয়ে উত্তম।
মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে নারী-পুরুষ, দুর্বল-সবল প্রতিবন্ধী-সুস্থ সবাই সমান। একে অপরের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেবল আল্লাহভীতিকে আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক পরহেজগার এবং আল্লাহভীরু।’ সুরা হুজুরাত : ১৩
প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা আমাদের পরিবারের সদস্য। সমাজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ন্যায্য পাওনা সম্পর্কে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মানুষকে কর্তব্য সচেতন হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। কারণ প্রতিবন্ধীরা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থসামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় না। প্রতিবন্ধী যেমনই হোক সে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর বান্দা। ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। বিপদাপদে প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি এবং ইমানি দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধী-অসহায়দের সঙ্গে অসদাচরণ কিংবা তাদের সঙ্গে উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, ঠাট্টা-মশকারা করা হারাম। এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়।
প্রতিবন্ধীর প্রতি দয়া-মায়া, সেবা-যতœ সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্য-সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা মুসলমানদের ওপর একান্ত কর্তব্য। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্য প্রাপ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদে বঞ্চিত ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে।’ সুরা জারিয়া : ১৯
তাফসিরে তাবারিতে বলা হয়েছে, এক যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয় এবং গণিমতের সম্পদ লাভ করে। তখন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনিমতের সম্পদের একটি অংশ অসহায়, দরিদ্র, প্রতিবন্ধীদের নামে বিলিয়ে দিতে বলেন। তাফসিরে
তাবারি : ২৬/১৫৮
হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও এবং বন্দিদের মুক্ত করে দাও।’ সহিহ্ বোখারি : ৫০
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবন্ধীদের সর্বদা ভালোবাসতেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) কে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপার স্নেহে ধন্য করেছেন। যখনই তাকে দেখতেন, বলতেন, স্বাগতম জানাই তাকে যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবিকে দুবার মদিনার অস্থায়ী শাসক নিযুক্ত করেন। মুসনাদে আহমাদ
এ জন্য প্রতিবন্ধীকে ভালোবাসা, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম সুন্নতও বটে। শারীরিক অক্ষম ও প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্র, সমাজ ও ধনীদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা, ভালোবাসা পাবে। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।’
ইসলামের ছায়াতলে প্রতিবন্ধীরা সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক দিগি¦জয়ী এবং বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের পুণ্যময় কীর্তির কারণে পৃথিবীতে চিরদিনের জন্য ভাস্বর হয়ে আছেন। যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন। এমনকি প্রতিবন্ধীদের ইসলামের বিধান পালনের শিথিলতা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজ দেন না।’ সুরা আল বাকারা : ২৮৬
অন্যত্র বলেন, ‘দুর্বল, রুগ্ণ, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোনো অপরাধ নেই।’ সুরা তাওবা : ৯১
আল্লামা কুরতুবি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলজামে লি আহকামিল কুরআনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আয়াতটি (শরিয়তের বিধান) অক্ষম ব্যক্তি থেকে (বিধান) রহিত করার মূলনীতি। সুতরাং যে ব্যক্তি যে বিধান পালনে অক্ষম, ওই বিধান তার থেকে রহিত হয়ে যাবে।’ তাফসিরে কুরতুবি : ৪/৫৪৮
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধের পরিবর্তন হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর নানাবিধ কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিবন্ধী বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গীকার প্রদান করছে। এটা খুবই ভালো খবর।
মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু আইনি সুরক্ষা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ইসলাম তাদের যেভাবে মর্যাদা দিয়েছে তা সবার মনে রাখা দরকার। আল্লাহর কাছে তাকওয়া ছাড়া শারীরিক অবকাঠামোর কোনো মূল্য নেই। প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। আর আল্লাহ পুরো মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন।
শেয়ার করুন
মুফতি শাব্বীর আহমদ | ৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। উত্তম আকৃতি দিয়ে মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কিছু মানুষকে আল্লাহতায়ালা জন্মগতভাবে সৃষ্টিগত কিছু ত্রুটি দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন অথবা কেউ জন্মের পর কোনো দুর্ঘটনায় তার অঙ্গ হানি বা শারীরিক কোনো সমস্যায় পতিত হন। যাকে আমরা প্রতিবন্ধী বলে অবহিত করি। বাস্তবে এদের এমন সৃষ্টির পেছনে তার উদ্দেশ্য ও মহান রহস্য একমাত্র তিনিই জানেন। তবে কিছু কারণ অনুমান করা যেতে পারে যেমন, বান্দা যেন মহান আল্লাহর একচ্ছত্র ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পারে যে, তিনি সব বিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি যেমন স্বাভাবিক সুন্দর সৃষ্টি করতে সক্ষম, তেমন তিনি এর ব্যতিক্রমও করতে সক্ষম।
আল্লাহ যাকে এই আপদ থেকে নিরাপদে রেখেছেন সে যেন নিজের প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুকম্পাকে স্মরণ করে। অতঃপর তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কারণ আল্লাহ চাইলে তার ক্ষেত্রেও এমন করতে পারতেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যেন আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থেকে আখেরাতের মহা সফলতা অর্জন করতে পারেন। ইসলাম মতে, একজন প্রতিবন্ধী মোত্তাকি মুমিন শতসহস্র সুস্থ-সবল কাফের খোদাদ্রোহীর চেয়ে উত্তম।
মানুষ হিসেবে আল্লাহর কাছে নারী-পুরুষ, দুর্বল-সবল প্রতিবন্ধী-সুস্থ সবাই সমান। একে অপরের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কেবল আল্লাহভীতিকে আল্লাহতায়ালা শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক পরহেজগার এবং আল্লাহভীরু।’ সুরা হুজুরাত : ১৩
প্রতিবন্ধীরা সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা আমাদের পরিবারের সদস্য। সমাজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও ন্যায্য পাওনা সম্পর্কে ইসলাম গুরুত্ব প্রদান করেছে। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মানুষকে কর্তব্য সচেতন হওয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করেছে। কারণ প্রতিবন্ধীরা শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থসামাজিক অক্ষমতা বা অসুবিধার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয় না। প্রতিবন্ধী যেমনই হোক সে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর বান্দা। ইসলামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া অবশ্য কর্তব্য। বিপদাপদে প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি এবং ইমানি দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধী-অসহায়দের সঙ্গে অসদাচরণ কিংবা তাদের সঙ্গে উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ, ঠাট্টা-মশকারা করা হারাম। এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়।
প্রতিবন্ধীর প্রতি দয়া-মায়া, সেবা-যতœ সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্য-সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা মুসলমানদের ওপর একান্ত কর্তব্য। মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো তাদেরও ন্যায্য প্রাপ্য। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের (বিত্তবানদের) সম্পদে বঞ্চিত ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে।’ সুরা জারিয়া : ১৯
তাফসিরে তাবারিতে বলা হয়েছে, এক যুদ্ধে মুসলমানরা বিজয়ী হয় এবং গণিমতের সম্পদ লাভ করে। তখন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গনিমতের সম্পদের একটি অংশ অসহায়, দরিদ্র, প্রতিবন্ধীদের নামে বিলিয়ে দিতে বলেন। তাফসিরে
তাবারি : ২৬/১৫৮
হাদিসে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ-খবর নাও এবং বন্দিদের মুক্ত করে দাও।’ সহিহ্ বোখারি : ৫০
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিবন্ধীদের সর্বদা ভালোবাসতেন এবং বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) কে নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অপার স্নেহে ধন্য করেছেন। যখনই তাকে দেখতেন, বলতেন, স্বাগতম জানাই তাকে যার সম্পর্কে আমার প্রতিপালক আমাকে ভর্ৎসনা করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাহাবিকে দুবার মদিনার অস্থায়ী শাসক নিযুক্ত করেন। মুসনাদে আহমাদ
এ জন্য প্রতিবন্ধীকে ভালোবাসা, তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুপম সুন্নতও বটে। শারীরিক অক্ষম ও প্রতিবন্ধীরা রাষ্ট্র, সমাজ ও ধনীদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা, ভালোবাসা পাবে। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন, তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।’
ইসলামের ছায়াতলে প্রতিবন্ধীরা সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক দিগি¦জয়ী এবং বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন, যারা তাদের পুণ্যময় কীর্তির কারণে পৃথিবীতে চিরদিনের জন্য ভাস্বর হয়ে আছেন। যারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন। এমনকি প্রতিবন্ধীদের ইসলামের বিধান পালনের শিথিলতা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজ দেন না।’ সুরা আল বাকারা : ২৮৬
অন্যত্র বলেন, ‘দুর্বল, রুগ্ণ, ব্যয়ভার বহনে অসমর্থ লোকদের জন্য কোনো অপরাধ নেই।’ সুরা তাওবা : ৯১
আল্লামা কুরতুবি (রহ.) তার বিখ্যাত গ্রন্থ আলজামে লি আহকামিল কুরআনে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আয়াতটি (শরিয়তের বিধান) অক্ষম ব্যক্তি থেকে (বিধান) রহিত করার মূলনীতি। সুতরাং যে ব্যক্তি যে বিধান পালনে অক্ষম, ওই বিধান তার থেকে রহিত হয়ে যাবে।’ তাফসিরে কুরতুবি : ৪/৫৪৮
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি ও দায়িত্ববোধের পরিবর্তন হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর নানাবিধ কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রতিবন্ধী বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের অঙ্গীকার প্রদান করছে। এটা খুবই ভালো খবর।
মনে রাখা প্রয়োজন, শুধু আইনি সুরক্ষা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য যথেষ্ট নয়। এজন্য প্রয়োজন সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ইসলাম তাদের যেভাবে মর্যাদা দিয়েছে তা সবার মনে রাখা দরকার। আল্লাহর কাছে তাকওয়া ছাড়া শারীরিক অবকাঠামোর কোনো মূল্য নেই। প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। আর আল্লাহ পুরো মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন।