ইমানের লক্ষণ
শায়খ আহমাদ বিন তালেব বিন হামিদ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
কোনো মানুষ নিজের ইমানকে পরিপূর্ণ করতে সক্ষম নয়, যতক্ষণ না সে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণভাবে ভরসা করে, সবকিছু তার ওপর ন্যস্ত করে, তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তার ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ও বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে। যে ব্যক্তি কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্য অপছন্দ করে, আল্লাহর জন্যই কিছু দেয় ও আল্লাহর জন্যই দেওয়া থেকে বিরত থাকে; সেই তো ইমানকে পরিপূর্ণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘কাজেই তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করো, আর আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মোমিন হও। মোমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তার আয়াতগুলো তাদের কাছে পাঠ করা হলে তা তাদের ইমান বর্ধিত করে। আর তারা তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে। যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমরা তাদের যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তারাই প্রকৃত মোমিন। তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ সুরা আল আনফাল : ১-৪
মনে রাখতে হবে, মানুষ অবস্থান করছে এমন এক বিষয়ের (দ্বীনের) সামনে, যার সত্যতা ও যথার্থতা সুস্পষ্ট। সুতরাং এসব বিষয়কে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। মানুষ এমন বিষয়ের সম্মুখীন, যার অসারতা সুস্পষ্ট; কাজেই তা পরিহার করতে হবে। অনুরূপভাবে সন্দেহ ও সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়ের সামনে নিজেদের দ্বীন ও সম্মান রক্ষার্থে সেগুলো থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর কিছু মতভেদপূর্ণ কোনো সমানে আসলে তা, জ্ঞানী ও আলেম সমাজের কাছে সোপর্দ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আসমানে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহর কাছেই সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে।’ সুরা আলে ইমরান : ১০৯
মানুষের আরও জানা উচিত, কেউই নিছক পরিশ্রম দ্বারা আল্লাহর রিজিক অর্জন করতে পারবেন না এবং সৃষ্টির কেউ নিজ কর্মগুণে নাজাত পাবে না; বরং এগুলো কিছু মাধ্যম যার দ্বারা আমরা মহাদয়ালু ও দাতার শরণাপন্ন হই। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন; তাই তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তার দেওয়া রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর পুনরুত্থান তো তারই কাছে। সুরা আল মুলক : ১৫
কাজেই সুসংবাদ তার জন্য, যে ব্যক্তি অন্যের দোষ-ত্রুটির দিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে নিজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, চাহিদার অতিরিক্ত সম্পদ দান করে, অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে, দুস্থ ও মিসকিনদের প্রতি দয়া করে এবং জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা করে।
ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে তার রবের আনুগত্য করে, হৃদয়কে পরিশীলিত করে, চরিত্রকে সুন্দর করে, তার ভেতরের অবস্থাকে সংশোধন করে, তার ভালো ও কল্যাণকর বিষয়কে প্রকাশ করে এবং খারাপ বিষয়কে পরিত্যাগ করে।
সেই ব্যক্তি কতই না ভালো, যে তার জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতকেই যথেষ্ট মনে করে এবং কোনো বেদআতি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় না।
অতএব, আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং তার কাছেই সুন্দরভাবে যাচনা করুন। কোনো নফসই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক পরিপূর্ণ গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। কাজেই রিজিকের মন্থরতা যেন আপনাদের কাউকে অন্যায়ভাবে রিজিক অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে; কেননা আল্লাহতায়ালার আনুগত্য ছাড়া তার দয়া ও অনুগ্রহ অর্জন করা সম্ভব নয়।
এ কথা কোনোভাবেই ভুললে চলবে না, প্রত্যেকের রিজিক যেকোনো উপায়ে তার কাছে আসবেই। যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট হয়, সে তাতে বরকতপ্রাপ্ত হয় এবং তাই তার জন্য যথেষ্ট হয়। আর যে ব্যক্তি তাতে অসন্তুষ্ট থাকে সে তাতে বরকত পায় না এবং তা তার জন্য যথেষ্টও হয় না। নিশ্চয় রিজিক ব্যক্তিকে সেভাবে তালাশ করে যেভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আয়ু তালাশ করে।
এ দুনিয়ার সব দ্বার উন্মুক্ত, উপাদান ও মাধ্যমগুলো বিস্তৃত এবং এর প্রতি দুনিয়াবাসীদের দৃষ্টি সম্প্রসারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে কেউ প্রচেষ্টা চালায়, সে তো নিজের জন্যই প্রচেষ্টা চালায়; আল্লাহ তো সৃষ্টিকূল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ সুরা আল আনকাবুত : ৬
কাজেই মানুষের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে এর বিপরীতে সংগ্রাম করে নিরাপদ থাকতে পেরেছে অথবা এর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে কৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে অথবা এর দ্বারা প্রচেষ্টা করে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা তাদের অবশ্যই আমাদের পথগুলোর হেদায়েত দেব। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা আল আনকাবুত : ৬৯
কাজেই আপনারা এ পার্থিব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করুন, এর প্রতি ভালোবাসা হৃদয়ে ঠাঁই দেবেন না। যার হৃদয়ে দুনিয়ার প্রীতি-ভালোবাসা ও টান স্থান করে নিয়েছে, সে এই তিনটি জিনিসে জড়িয়ে পড়বে এক. এমন ব্যস্ততা যে পরিশ্রম শেষ হবে না। দুই. এমন চাহিদা যা থেকে সে মুক্ত হবে না। তিন. এমন আকাক্সক্ষা ও লোভ যার পরিসমাপ্তি নেই।
মানুষ দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাই কামনা করে এবং উভয়টিই কাক্সিক্ষত। যে ব্যক্তি আখেরাতের আকাক্সক্ষা করে, দুনিয়া তাকে তালাশ করে, যেন সে তার রিজিক পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়া খুঁজে বেড়ায়, পরকাল তাকে তালাশ করতে থাকে, অবশেষে মৃত্যু তার ঘাড় চেপে ধরে।
ধন্য ও সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে চিরস্থায়ী জীবন ও স্থায়ী নেয়ামত রাজির বিষয়ে প্রাধান্য দেয়; অস্থায়ী ও ক্ষণিকের জীবনের বিপরীতে। জাহান্নাম তো বড় কঠিন জায়গা, যার শাস্তি শেষ হওয়ার নয়। সেই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে সে তার মালিকানায় যা আছে, তা থেকে খরচ করে অগ্রিম পাঠায় অনন্ত জীবনের জন্য; যার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে। মৃত্যু আসার আগে, সম্পদগুলো অন্যের (ওয়ারিশ) হাতে যাওয়ার আগে যা খরচ করা হবে, সেটা থেকে লাভবান হওয়া যাবে। অন্যথায় অনিশ্চয়তা আর অনিশ্চয়তা। অথচ তার অঢেল সম্পদ রয়েছে গচ্ছিত নিজের কাছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তা কোনো কাজেই আসল না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ও আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। আর যখন তারা দেখে কোনো ব্যবসা কিংবা খেল-তামাশা, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে তা খেল-তামাশা ও ব্যবসার চেয়ে উৎকৃষ্ট। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সুরা জুমুআ : ১০-১১
৩ ডিসেম্বর মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
শেয়ার করুন
শায়খ আহমাদ বিন তালেব বিন হামিদ | ৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

কোনো মানুষ নিজের ইমানকে পরিপূর্ণ করতে সক্ষম নয়, যতক্ষণ না সে আল্লাহতায়ালার ওপর পরিপূর্ণভাবে ভরসা করে, সবকিছু তার ওপর ন্যস্ত করে, তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তার ফয়সালায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে ও বিপদ-আপদে ধৈর্যধারণ করে। যে ব্যক্তি কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসে ও আল্লাহর জন্য অপছন্দ করে, আল্লাহর জন্যই কিছু দেয় ও আল্লাহর জন্যই দেওয়া থেকে বিরত থাকে; সেই তো ইমানকে পরিপূর্ণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘কাজেই তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করো এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করো, আর আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করো, যদি তোমরা মোমিন হও। মোমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তার আয়াতগুলো তাদের কাছে পাঠ করা হলে তা তাদের ইমান বর্ধিত করে। আর তারা তাদের রবের ওপরই নির্ভর করে। যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমরা তাদের যা রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। তারাই প্রকৃত মোমিন। তাদের রবের কাছে তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ, ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা।’ সুরা আল আনফাল : ১-৪
মনে রাখতে হবে, মানুষ অবস্থান করছে এমন এক বিষয়ের (দ্বীনের) সামনে, যার সত্যতা ও যথার্থতা সুস্পষ্ট। সুতরাং এসব বিষয়কে সঠিকভাবে অনুসরণ করতে হবে। মানুষ এমন বিষয়ের সম্মুখীন, যার অসারতা সুস্পষ্ট; কাজেই তা পরিহার করতে হবে। অনুরূপভাবে সন্দেহ ও সাদৃশ্যপূর্ণ বিষয়ের সামনে নিজেদের দ্বীন ও সম্মান রক্ষার্থে সেগুলো থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আর কিছু মতভেদপূর্ণ কোনো সমানে আসলে তা, জ্ঞানী ও আলেম সমাজের কাছে সোপর্দ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আসমানে যা কিছু আছে ও জমিনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহর কাছেই সবকিছু প্রত্যাবর্তিত হবে।’ সুরা আলে ইমরান : ১০৯
মানুষের আরও জানা উচিত, কেউই নিছক পরিশ্রম দ্বারা আল্লাহর রিজিক অর্জন করতে পারবেন না এবং সৃষ্টির কেউ নিজ কর্মগুণে নাজাত পাবে না; বরং এগুলো কিছু মাধ্যম যার দ্বারা আমরা মহাদয়ালু ও দাতার শরণাপন্ন হই। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন; তাই তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ করো এবং তার দেওয়া রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর পুনরুত্থান তো তারই কাছে। সুরা আল মুলক : ১৫
কাজেই সুসংবাদ তার জন্য, যে ব্যক্তি অন্যের দোষ-ত্রুটির দিকে ভ্রƒক্ষেপ না করে নিজের ভুল-ত্রুটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, চাহিদার অতিরিক্ত সম্পদ দান করে, অহেতুক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে, দুস্থ ও মিসকিনদের প্রতি দয়া করে এবং জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিদের সঙ্গে ওঠাবসা করে।
ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে তার রবের আনুগত্য করে, হৃদয়কে পরিশীলিত করে, চরিত্রকে সুন্দর করে, তার ভেতরের অবস্থাকে সংশোধন করে, তার ভালো ও কল্যাণকর বিষয়কে প্রকাশ করে এবং খারাপ বিষয়কে পরিত্যাগ করে।
সেই ব্যক্তি কতই না ভালো, যে তার জ্ঞান অনুযায়ী আমল করে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নতকেই যথেষ্ট মনে করে এবং কোনো বেদআতি কর্মকাণ্ডে জড়িত হয় না।
অতএব, আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং তার কাছেই সুন্দরভাবে যাচনা করুন। কোনো নফসই তার জন্য নির্ধারিত রিজিক পরিপূর্ণ গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ করবে না। কাজেই রিজিকের মন্থরতা যেন আপনাদের কাউকে অন্যায়ভাবে রিজিক অন্বেষণে উদ্বুদ্ধ না করে; কেননা আল্লাহতায়ালার আনুগত্য ছাড়া তার দয়া ও অনুগ্রহ অর্জন করা সম্ভব নয়।
এ কথা কোনোভাবেই ভুললে চলবে না, প্রত্যেকের রিজিক যেকোনো উপায়ে তার কাছে আসবেই। যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট হয়, সে তাতে বরকতপ্রাপ্ত হয় এবং তাই তার জন্য যথেষ্ট হয়। আর যে ব্যক্তি তাতে অসন্তুষ্ট থাকে সে তাতে বরকত পায় না এবং তা তার জন্য যথেষ্টও হয় না। নিশ্চয় রিজিক ব্যক্তিকে সেভাবে তালাশ করে যেভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আয়ু তালাশ করে।
এ দুনিয়ার সব দ্বার উন্মুক্ত, উপাদান ও মাধ্যমগুলো বিস্তৃত এবং এর প্রতি দুনিয়াবাসীদের দৃষ্টি সম্প্রসারিত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যে কেউ প্রচেষ্টা চালায়, সে তো নিজের জন্যই প্রচেষ্টা চালায়; আল্লাহ তো সৃষ্টিকূল থেকে অমুখাপেক্ষী।’ সুরা আল আনকাবুত : ৬
কাজেই মানুষের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে এর বিপরীতে সংগ্রাম করে নিরাপদ থাকতে পেরেছে অথবা এর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে কৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে অথবা এর দ্বারা প্রচেষ্টা করে সম্মানিতদের অন্তর্ভুক্ত হতে পেরেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, আমরা তাদের অবশ্যই আমাদের পথগুলোর হেদায়েত দেব। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুহসিনদের সঙ্গে আছেন।’ সুরা আল আনকাবুত : ৬৯
কাজেই আপনারা এ পার্থিব জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করুন, এর প্রতি ভালোবাসা হৃদয়ে ঠাঁই দেবেন না। যার হৃদয়ে দুনিয়ার প্রীতি-ভালোবাসা ও টান স্থান করে নিয়েছে, সে এই তিনটি জিনিসে জড়িয়ে পড়বে এক. এমন ব্যস্ততা যে পরিশ্রম শেষ হবে না। দুই. এমন চাহিদা যা থেকে সে মুক্ত হবে না। তিন. এমন আকাক্সক্ষা ও লোভ যার পরিসমাপ্তি নেই।
মানুষ দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টাই কামনা করে এবং উভয়টিই কাক্সিক্ষত। যে ব্যক্তি আখেরাতের আকাক্সক্ষা করে, দুনিয়া তাকে তালাশ করে, যেন সে তার রিজিক পরিপূর্ণভাবে গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শুধু দুনিয়া খুঁজে বেড়ায়, পরকাল তাকে তালাশ করতে থাকে, অবশেষে মৃত্যু তার ঘাড় চেপে ধরে।
ধন্য ও সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে চিরস্থায়ী জীবন ও স্থায়ী নেয়ামত রাজির বিষয়ে প্রাধান্য দেয়; অস্থায়ী ও ক্ষণিকের জীবনের বিপরীতে। জাহান্নাম তো বড় কঠিন জায়গা, যার শাস্তি শেষ হওয়ার নয়। সেই জাহান্নাম থেকে বাঁচতে সে তার মালিকানায় যা আছে, তা থেকে খরচ করে অগ্রিম পাঠায় অনন্ত জীবনের জন্য; যার দিকে সে অগ্রসর হচ্ছে। মৃত্যু আসার আগে, সম্পদগুলো অন্যের (ওয়ারিশ) হাতে যাওয়ার আগে যা খরচ করা হবে, সেটা থেকে লাভবান হওয়া যাবে। অন্যথায় অনিশ্চয়তা আর অনিশ্চয়তা। অথচ তার অঢেল সম্পদ রয়েছে গচ্ছিত নিজের কাছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তা কোনো কাজেই আসল না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং মহান আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো ও আল্লাহকে খুব বেশি স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। আর যখন তারা দেখে কোনো ব্যবসা কিংবা খেল-তামাশা, তখন তারা আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সেদিকে ছুটে যায়। বলুন, আল্লাহর কাছে যা আছে তা খেল-তামাশা ও ব্যবসার চেয়ে উৎকৃষ্ট। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ সুরা জুমুআ : ১০-১১
৩ ডিসেম্বর মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ করেছেন মুহাম্মদ আতিকুর রহমান