নৈতিক অবক্ষয় রোধে করণীয়
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০
ইসলাম সব ধরনের অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অশ্লীলতা, অসংগত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ প্রদান করেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ সুরা আন নাহল : ৯০
অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে অশ্লীলতা এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে গোটাজাতিকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। অশ্লীলতার বিষক্রিয়া সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পচন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের প্রত্যক্ষভাবে জানান দিচ্ছে যে, অশ্লীলতার দূষণক্রিয়ায় গোটা জাতি বিপর্যস্ত। অশ্লীলতার ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ স্বকীয়তা হারিয়ে কীভাবে ল-ভ- হয়ে গেছে সে কথা এখন ঘরে বসেই আন্দাজ করা যায়। রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, নাটক, ফ্যাশন শো, মেলা, বিজ্ঞাপন শিল্প, স্যাটেলাইট সংস্কৃতি, সংগীত, আর্ট, ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে অশ্লীলতা প্রবেশ করেছে। যা মুসলিম জাতির নৈতিক মূল্যবোধ চুরমার করে দিচ্ছে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সহজে ও অল্পসময়ে যোগাযোগ কিংবা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে।
আমরা প্রায়শই ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, ইমু, ভাইবার, রেডডিট, স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্যান্য আরও বেশ কিছু সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করে থাকি। এর সবগুলোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভয়াবহ দিক হলো স্বদেশীয় সামাজিক আচরণের নীতিকে অবহেলা করে অশ্লীলতার বিস্তার। রাতারাতি তারকার খ্যাতি অর্জনে তরুণ প্রজন্ম এখন বেসামাল। এতে করে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে টিকটক ও বিগো লাইভ। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে উদ্ভট সাজ, অঙ্গভঙ্গি এবং সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট শিক্ষণীয় বার্তার পরিবর্তে সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে অশ্লীল পোশাকে নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমেই তরুণ-তরুণীরা এতে নিজেদের তুলে ধরছে। অশ্লীলতার ছড়াছড়ি এসব ভিডিও তৈরিতে অনেকে আবার জীবনের ঝুঁকিও নিচ্ছে। অন্যের মনোযোগ আকর্ষণে এতে যুক্ত হয়েছে তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ। তবে এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অশ্লীলতার আরেক ভয়ানক রূপ হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। ওয়েব সিরিজগুলোতে কোনো সেন্সরের সুযোগ না থাকায় অবাধে খ্যাতিমান তারকারা অশ্লীলতার চর্চায় প্রতিনিয়ত সীমালংঘন করছে। বাস্তব জীবনে অশ্লীলতার প্রভাবে তরুণ সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং অসামাজিক মানসিকতার বিস্তার ঘটছে।
পাশ্চাত্যের ডিস কালচার আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ক্রমান্বয়ে অশ্লীলতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। এরই কারণে আজকাল রাস্তা-ঘাটে, পার্কে-ময়দানে, হাটে-বাজারে একশ্রেণির যুবক-যুবতির উগ্র চালচলন দেখা যায়। তারা শর্টকাট পোশাক পরে ছুড়ে দিচ্ছে সুস্থ জীবনবোধের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। বিনোদনে যদি অশ্লীলতা না থাকে তাহলে সেটা কী করে বিনোদন হয়? এই মানসিকতা নিয়ে তারা হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অশ্লীলতা প্রচার করছে। ভিনদেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী দেখানো হয় শুধু ছায়াছবির গান আর নৃত্য।
অথচ আমরা টিভি বলতে বুঝি অনুষ্ঠান নির্ভর একটি মিডিয়া কর্মসূচি, যা পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করা যায়। সুস্থ জীবনবোধ ও মেধার চর্চা থাকবে টিভির প্রতিটি প্রোগ্রামে। ভারতের যেসব অনুষ্ঠান আমরা ডিসের কল্যাণে ঘরে বসে দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ওরা আমাদের যুব সমাজকে ইসলামি নৈতিকতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার জন্য এ সব ভোগবাদী কালচার প্রচার করে চলেছে। আর এ দিকে উন্মুক্ত আকাশ দখলের প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোও স্বকীয়তা হারিয়ে অশ্লীলতার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারতীয় অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ চলচ্চিত্রের আকর্ষণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও অশ্লীল কাহিনী নির্ভর হয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র এখন ঢালিউডে আধিপত্য বিস্তার করছে। তাদের অনুকরণে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্পীরাও মানহীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। চলচ্চিত্রের রসাস্বাদনে অক্ষরজ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। অজ্ঞ-অশিক্ষিতরা পর্যন্ত ছায়াছবির বক্তব্য সহজেই বুঝতে পারে এবং সেভাবে অনুপ্রাণিত হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধগুলো যেভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার মূলে রয়েছে এসব অশ্লীল চলচ্চিত্র।
বাংলাদেশের এক শ্রেণির যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী পাশ্চাত্য স্টাইলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব পালন করে, সেগুলোও নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। মাদকাসক্তি, মাদক চোরাচালান দেশে ভয়াবহরূপে বেড়ে গেছে, দেশে উচ্ছৃঙ্খলতা বাড়ছে, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণের মতো অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। এ সবও অশ্লীলতার কুফল।
ব্যভিচারকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যভিচার ঘটতে পারে এমন সব কার্যকারণ থেকেও দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। স্বল্প বসন পরিধান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নিভৃতে নারী-পুরুষের সাক্ষাৎ, নগ্ন ছবি, উত্তেজক গান-বাজনা শোনা বা দেখা ইত্যাদি ব্যভিচারের কারণ ঘটাতে পারে বিধায় ইসলামি জীবনাদর্শে এসব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ সুরা বনি ইসরাইল : ৩২
কিন্তু আমরা এ অশ্লীলতার বিরুদ্ধে শুধু ঘৃণা প্রকাশ করেই আমাদের দায়িত্ব পালন শেষ করছি। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। শুধু লিখে বা বক্তৃতার মাধ্যমে প্রচার করে অশ্লীলতা আদৌ বন্ধ করা যাবে না। বরং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে নৈতিকতার শিক্ষা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে দেখাতে হবে। তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি, জ্ঞানার্জন ও অনুশীলন প্রয়োজন। আজ যারা অশ্লীলতার বেড়াজালে আটকে গিয়ে অলস তন্দ্রা ঘোরে আচ্ছন্ন, তারাই সঠিক নির্দেশনা পেলে উজ্জীবিত হবে দুর্বার প্রাণশক্তিতে।
শেয়ার করুন
মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী | ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০

ইসলাম সব ধরনের অশ্লীলতা ও নগ্নতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পবিত্র কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অশ্লীলতা, অসংগত কাজ এবং অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ প্রদান করেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ সুরা আন নাহল : ৯০
অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে অশ্লীলতা এখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করে গোটাজাতিকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। অশ্লীলতার বিষক্রিয়া সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পচন ধরিয়ে দিয়ে আমাদের প্রত্যক্ষভাবে জানান দিচ্ছে যে, অশ্লীলতার দূষণক্রিয়ায় গোটা জাতি বিপর্যস্ত। অশ্লীলতার ফলে গোটা মুসলিম উম্মাহ স্বকীয়তা হারিয়ে কীভাবে ল-ভ- হয়ে গেছে সে কথা এখন ঘরে বসেই আন্দাজ করা যায়। রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, নাটক, ফ্যাশন শো, মেলা, বিজ্ঞাপন শিল্প, স্যাটেলাইট সংস্কৃতি, সংগীত, আর্ট, ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে অশ্লীলতা প্রবেশ করেছে। যা মুসলিম জাতির নৈতিক মূল্যবোধ চুরমার করে দিচ্ছে।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানব জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যার মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সঙ্গে সহজে ও অল্পসময়ে যোগাযোগ কিংবা তথ্য আদান-প্রদান করে থাকে।
আমরা প্রায়শই ফেইসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, লিংকডইন, ইউটিউব, ইমু, ভাইবার, রেডডিট, স্ন্যাপচ্যাটসহ অন্যান্য আরও বেশ কিছু সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করে থাকি। এর সবগুলোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে পরিচিত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভয়াবহ দিক হলো স্বদেশীয় সামাজিক আচরণের নীতিকে অবহেলা করে অশ্লীলতার বিস্তার। রাতারাতি তারকার খ্যাতি অর্জনে তরুণ প্রজন্ম এখন বেসামাল। এতে করে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে টিকটক ও বিগো লাইভ। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে উদ্ভট সাজ, অঙ্গভঙ্গি এবং সহিংস ও কুরুচিপূর্ণ কনটেন্ট শিক্ষণীয় বার্তার পরিবর্তে সমাজে অশ্লীলতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। ভিনদেশি অপসংস্কৃতি অনুসরণ করে অশ্লীল পোশাকে নাচ, গান ও অভিনয়ের মাধ্যমেই তরুণ-তরুণীরা এতে নিজেদের তুলে ধরছে। অশ্লীলতার ছড়াছড়ি এসব ভিডিও তৈরিতে অনেকে আবার জীবনের ঝুঁকিও নিচ্ছে। অন্যের মনোযোগ আকর্ষণে এতে যুক্ত হয়েছে তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ। তবে এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অশ্লীলতার আরেক ভয়ানক রূপ হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। ওয়েব সিরিজগুলোতে কোনো সেন্সরের সুযোগ না থাকায় অবাধে খ্যাতিমান তারকারা অশ্লীলতার চর্চায় প্রতিনিয়ত সীমালংঘন করছে। বাস্তব জীবনে অশ্লীলতার প্রভাবে তরুণ সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে এবং অসামাজিক মানসিকতার বিস্তার ঘটছে।
পাশ্চাত্যের ডিস কালচার আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে ক্রমান্বয়ে অশ্লীলতার শেষ প্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। এরই কারণে আজকাল রাস্তা-ঘাটে, পার্কে-ময়দানে, হাটে-বাজারে একশ্রেণির যুবক-যুবতির উগ্র চালচলন দেখা যায়। তারা শর্টকাট পোশাক পরে ছুড়ে দিচ্ছে সুস্থ জীবনবোধের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ। বিনোদনে যদি অশ্লীলতা না থাকে তাহলে সেটা কী করে বিনোদন হয়? এই মানসিকতা নিয়ে তারা হলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অশ্লীলতা প্রচার করছে। ভিনদেশি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে ২৪ ঘণ্টাব্যাপী দেখানো হয় শুধু ছায়াছবির গান আর নৃত্য।
অথচ আমরা টিভি বলতে বুঝি অনুষ্ঠান নির্ভর একটি মিডিয়া কর্মসূচি, যা পরিবারের সবাই মিলে উপভোগ করা যায়। সুস্থ জীবনবোধ ও মেধার চর্চা থাকবে টিভির প্রতিটি প্রোগ্রামে। ভারতের যেসব অনুষ্ঠান আমরা ডিসের কল্যাণে ঘরে বসে দেখছি তাতে মনে হচ্ছে ওরা আমাদের যুব সমাজকে ইসলামি নৈতিকতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার জন্য এ সব ভোগবাদী কালচার প্রচার করে চলেছে। আর এ দিকে উন্মুক্ত আকাশ দখলের প্রতিযোগিতায় আমাদের প্রচার মাধ্যমগুলোও স্বকীয়তা হারিয়ে অশ্লীলতার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হচ্ছে।
অন্যদিকে ভারতীয় অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ চলচ্চিত্রের আকর্ষণে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রও অশ্লীল কাহিনী নির্ভর হয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। ভারতীয় চলচ্চিত্র এখন ঢালিউডে আধিপত্য বিস্তার করছে। তাদের অনুকরণে আমাদের দেশের চলচ্চিত্র শিল্পীরাও মানহীন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। চলচ্চিত্রের রসাস্বাদনে অক্ষরজ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে না। অজ্ঞ-অশিক্ষিতরা পর্যন্ত ছায়াছবির বক্তব্য সহজেই বুঝতে পারে এবং সেভাবে অনুপ্রাণিত হয়।
বাংলাদেশে বর্তমানে খুন, ধর্ষণ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধগুলো যেভাবে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার মূলে রয়েছে এসব অশ্লীল চলচ্চিত্র।
বাংলাদেশের এক শ্রেণির যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী পাশ্চাত্য স্টাইলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উৎসব পালন করে, সেগুলোও নীতি-নৈতিকতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ নয়। মাদকাসক্তি, মাদক চোরাচালান দেশে ভয়াবহরূপে বেড়ে গেছে, দেশে উচ্ছৃঙ্খলতা বাড়ছে, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, অপহরণের মতো অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। এ সবও অশ্লীলতার কুফল।
ব্যভিচারকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ব্যভিচার ঘটতে পারে এমন সব কার্যকারণ থেকেও দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। স্বল্প বসন পরিধান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, নিভৃতে নারী-পুরুষের সাক্ষাৎ, নগ্ন ছবি, উত্তেজক গান-বাজনা শোনা বা দেখা ইত্যাদি ব্যভিচারের কারণ ঘটাতে পারে বিধায় ইসলামি জীবনাদর্শে এসব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট ভাষায় ইরশাদ করেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল ও মন্দ পথ।’ সুরা বনি ইসরাইল : ৩২
কিন্তু আমরা এ অশ্লীলতার বিরুদ্ধে শুধু ঘৃণা প্রকাশ করেই আমাদের দায়িত্ব পালন শেষ করছি। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছি। শুধু লিখে বা বক্তৃতার মাধ্যমে প্রচার করে অশ্লীলতা আদৌ বন্ধ করা যাবে না। বরং বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে নৈতিকতার শিক্ষা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করে দেখাতে হবে। তার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি, জ্ঞানার্জন ও অনুশীলন প্রয়োজন। আজ যারা অশ্লীলতার বেড়াজালে আটকে গিয়ে অলস তন্দ্রা ঘোরে আচ্ছন্ন, তারাই সঠিক নির্দেশনা পেলে উজ্জীবিত হবে দুর্বার প্রাণশক্তিতে।