মুমিনের বৈশিষ্ট্য
উবায়দুল হক খান | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তারপরও এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যেন শেষ নেই। সবাই একটি অর্থপূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত জীবন চায়। তবে দুনিয়ার এ সাফল্যের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। কারও কাছে সাফল্য মানে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স, বড় বড় অট্টালিকা, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। তাদের কোরআন-হাদিসে দুনিয়ার দাস বলা হয়েছে। আরেক দল আছে, যারা দুনিয়ায় বসবাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, তাদের বলা হয় এই পৃথিবীর রক্ষাকারী। তাদের জন্য আল্লাহ এই পৃথিবী টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ যেদিন পৃথিবীতে আল্লাহকে ডাকার মতো একটা মানুষও থাকবে না, সেদিন আল্লাহ এই দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন। দুনিয়ার রক্ষাকারীদের কোরআন-হাদিসের ভাষায় মুমিন বলা হয়।
মুমিনের জীবন আল্লাহতায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তাই মুমিনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহতায়ালা মুমিনের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে। অবশ্যই তিনি (তার ওপর) সন্তুষ্ট হবেন। সুরা লাইল : ২০-২১
অন্যত্র আল্লাহতায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘(হে রাসুল!) বলুন, আমার নামাজ, আমার সব রকম ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহর জন্য।’ সুরা আনআম : ১৬২
মুমিন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, আবার কারও সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অপরদিকে মানুষের মধ্যে কেউ এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বিক্রি করে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়ই মেহেরবান।’ সুরা বাকারা : ২০৭
হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাউকে ভালোবাসল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিছু দান করল আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য, আবার দান থেকে বিরত থাকল তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেই ইমানের পূর্ণতা লাভ করল।’ আবু দাউদ
পৃথিবীর ইতিহাসে ইমানের পূর্ণতা লাভের জন্য এমন অনেক আল্লাহপ্রিয় আছেন, যারা একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। মুমিনের অন্যতম গুণ হচ্ছে, সে কখনো শিরক করবে না। আমাদের সমাজে শিরক একটি মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহর তুলনা করে শিরকের মতো জঘন্যতম পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যে ব্যক্তি শিরক করে, তাকে মুশরিক বলে। কিন্তু মুমিন ব্যক্তি কখনো আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে তুলনা করে না। মুমিন সবসময় নিজেকে আল্লাহর দিকে একমুখী রাখে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো একমুখী হয়ে তার দিকেই মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের মধ্যে শামিল নয়।’ সুরা আনআম : ৭৯
মুমিনের সামনে আল্লাহর নাম নিলে ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠবে এবং তারা একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সাচ্চা ইমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।’ সুরা আনফাল : ২
মুমিনরা পরস্পরের ভাই। তারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, যারা আমার খাতিরে পরস্পরকে ভালোবাসতে, তারা কোথায়? আজ তোমাদের আমার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজ আমার আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’ সহিহ্ মুসলিম : ৪৬৫৫
এছাড়া মুমিন কখনো জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না, পিতা-মাতার অবাধ্য হয় না, আমানতের খেয়ানত করে না, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, হালাল উপার্জন করে হারাম থেকে দূরে থাকে, মানুষের হক নষ্ট করে না ইত্যাদি।
শেয়ার করুন
উবায়দুল হক খান | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

পৃথিবীতে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। এ কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, প্রত্যেক মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তারপরও এ ক্ষণস্থায়ী জীবনে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার যেন শেষ নেই। সবাই একটি অর্থপূর্ণ সাফল্যমণ্ডিত জীবন চায়। তবে দুনিয়ার এ সাফল্যের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম। কারও কাছে সাফল্য মানে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স, বড় বড় অট্টালিকা, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। তাদের কোরআন-হাদিসে দুনিয়ার দাস বলা হয়েছে। আরেক দল আছে, যারা দুনিয়ায় বসবাস করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, তাদের বলা হয় এই পৃথিবীর রক্ষাকারী। তাদের জন্য আল্লাহ এই পৃথিবী টিকিয়ে রেখেছেন। কারণ যেদিন পৃথিবীতে আল্লাহকে ডাকার মতো একটা মানুষও থাকবে না, সেদিন আল্লাহ এই দুনিয়া ধ্বংস করে দেবেন। দুনিয়ার রক্ষাকারীদের কোরআন-হাদিসের ভাষায় মুমিন বলা হয়।
মুমিনের জীবন আল্লাহতায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তাই মুমিনের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। পবিত্র কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় আল্লাহতায়ালা মুমিনের জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে তো শুধু মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে এ কাজ করে। অবশ্যই তিনি (তার ওপর) সন্তুষ্ট হবেন। সুরা লাইল : ২০-২১
অন্যত্র আল্লাহতায়ালা মুমিনদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘(হে রাসুল!) বলুন, আমার নামাজ, আমার সব রকম ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই আল্লাহর জন্য।’ সুরা আনআম : ১৬২
মুমিন কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে, আবার কারও সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করবে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অপরদিকে মানুষের মধ্যে কেউ এমনও আছে, যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন বিক্রি করে দেয় এবং এমন বান্দাদের ওপর আল্লাহ বড়ই মেহেরবান।’ সুরা বাকারা : ২০৭
হজরত উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কাউকে ভালোবাসল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, শত্রুতা পোষণ করল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিছু দান করল আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য, আবার দান থেকে বিরত থাকল তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, সেই ইমানের পূর্ণতা লাভ করল।’ আবু দাউদ
পৃথিবীর ইতিহাসে ইমানের পূর্ণতা লাভের জন্য এমন অনেক আল্লাহপ্রিয় আছেন, যারা একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছেন। মুমিনের অন্যতম গুণ হচ্ছে, সে কখনো শিরক করবে না। আমাদের সমাজে শিরক একটি মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। মানুষ আল্লাহর বিভিন্ন সৃষ্টির সঙ্গে আল্লাহর তুলনা করে শিরকের মতো জঘন্যতম পাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। যে ব্যক্তি শিরক করে, তাকে মুশরিক বলে। কিন্তু মুমিন ব্যক্তি কখনো আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে তুলনা করে না। মুমিন সবসময় নিজেকে আল্লাহর দিকে একমুখী রাখে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তো একমুখী হয়ে তার দিকেই মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের মধ্যে শামিল নয়।’ সুরা আনআম : ৭৯
মুমিনের সামনে আল্লাহর নাম নিলে ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠবে এবং তারা একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সাচ্চা ইমানদার তো তারাই আল্লাহকে স্মরণ করা হলে যাদের অন্তর কেঁপে ওঠে আর আল্লাহর আয়াত যখন তাদের সামনে পড়া হয় তাদের ইমান বেড়ে যায় এবং তারা নিজেদের রবের ওপর ভরসা করে।’ সুরা আনফাল : ২
মুমিনরা পরস্পরের ভাই। তারা একে অপরকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা বলবেন, যারা আমার খাতিরে পরস্পরকে ভালোবাসতে, তারা কোথায়? আজ তোমাদের আমার আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেব। আজ আমার আরশের ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’ সহিহ্ মুসলিম : ৪৬৫৫
এছাড়া মুমিন কখনো জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না, পিতা-মাতার অবাধ্য হয় না, আমানতের খেয়ানত করে না, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে, হালাল উপার্জন করে হারাম থেকে দূরে থাকে, মানুষের হক নষ্ট করে না ইত্যাদি।