দান-সদকার নানা রূপ
মাওলানা আবদুল জাব্বার | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
কখনো কি এ রকম হয়েছে যে, আপনি কাউকে সাহায্য করতে চাইছেন কিন্তু আপনার কাছে সাহায্য করার মতো অর্থ নেই। ধরুন আপনি যাত্রাপথে আছেন কিন্তু পকেটে টাকা নেই কিংবা এমন সময় আপনার কাছে আপনার ভাই সাহায্য চাইল, যখন মাসের শেষ, আপনার হাতে বেতন আসেনি কিংবা বাসা থেকে টাকা পাঠায়নি।
উত্তরটি অনেকের ক্ষেত্রেই হবে, হ্যাঁ। অনেকেই নেকনিয়ত পোষণ করেছেন, দান-খয়রাত করতে গিয়েছেন, কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
যারা এ রকম পরিস্থিতির শিকার, যাদের সীমিত আয় দান-খয়রাতের মতো ভালো কাজের নিয়ত ও আগ্রহকে আটকে দিচ্ছে, ধনীদের প্রচুর দান-সদকা আদায় করতে দেখে সীমিত আয়ের যেসব ভাইবোনেরা মন খারাপ করেন, ইশ! আমিও যদি দান করতে পারতাম, কোনো অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হতাম! তাদের জন্য আছে একটি সুখবর এবং একটি বিকল্প পন্থা।
সদকা আরবি শব্দ। এটি একটি ইসলামি পরিভাষা। জাকাত প্রদানের বাইরে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গরিব-অসহায় মানুষকে যে দান-খয়রাত করা হয়, সেটাই সদকা। শরিয়ত মতে, উত্তম যেকোনো কাজে সদকার অর্থ ব্যয় করা যায়।
প্রথমত সুখবরটি শুনে নেওয়া যাক।
আপনার আয় সীমিত, আপনার পকেট ফাঁকা কিংবা আপনি নিজেই অভাবী কিন্তু তারপরও আপনি নিয়ত করলেন আপনার থেকে অভাবগ্রস্ত কাউকে সাহায্য করবেন, এই যে আপনার নেকনিয়ত; তা আপনার অন্তরের পরিচ্ছন্ন ইচ্ছার কথা আল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দিল এবং আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে লক্ষ করেন।’ সহিহ্ মুসলিম : ৬৭০৮
অর্থাৎ নিয়তের মাধ্যমে আপনি আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। তা হলো, আল্লাহর নজরে নিজের অবস্থান ঠিক করা। এটি সুসংবাদের একটি অংশ এবং অপর অংশ হলো, আল্লাহর তরফ থেকে আসা প্রতিদান। যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করল, কিন্তু বাস্তবে সে কাজ করতে পারল না, সে ব্যক্তির জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ সহিহ্ মুসলিম : ৩৫৪
অর্থাৎ সওয়াব পেয়ে গেছেন আপনি। আপনার আমলনামায় জমা হয়েছে সদকার সওয়াব, যার ব্যাপারে আপনি শুধু ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।
এবার নজর দেওয়া যাক বিকল্প পন্থার দিকে। আপনার বহু আগে, আপনার আমার থেকে ইমান ও আমলে বহুগুণে উত্তম সাহাবিরা নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! ধনীরা তো সওয়াব সব নিয়ে গেল! আমরা যেমন নামাজ আদায় করি, তারাও করে। আমাদের মতো তারাও রোজা পালন করে। উপরন্তু তারা সম্পদও দান করতে পারে।’
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দান-সদকা করার মতো কিছুই কি আল্লাহ তোমাদের দেননি? এক একবার সুবহানাল্লাহ বলা এক একটি সদকা, এক একবার আল্লাহু আকবার বলা এক একটি সদকা, এক একবার আলহামদুলিল্লাহ বলা এক একটি সদকা। এক একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এক একটি সদকা, সৎকাজের আদেশ একটি সদকা এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ একটি সদকা। স্ত্রীদের কাছে গমন করাও সদকা!’
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ তার প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও সে সওয়াব পাবে? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘বলো তো, যদি কেউ তার চাহিদা হারামপন্থায় পূরণ করে, তবে কি তার গোনাহ হবে না? সুতরাং হালালপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ করায় তার সওয়াব হবে।’ সহিহ মুসলিম : ১০০৬
খেয়াল করুন, মুমিন হিসেবে আপনার হিসাবটাই অন্যরকম। সদকা কেবল আর্থিক সহায়তা প্রদানের মধ্যেই আল্লাহ আমাদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং সেটা তাসবিহ-তাহলিল-তাহমিদ থেকে শুরু করে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর মধ্যেও রেখেছেন। মোট কথা, হালাল পন্থায় থেকে যেকোনো ভালো কাজ করলে এবং ভালো কাজের উপদেশ দিলেও তা সদকা।
অতএব নিয়ত করুন, পারলে দান-সদকা করুন আর না পারলে সবর এবং সদকা সমতুল্য অন্যান্য ভালো কাজে নিমগ্ন থাকুন। মনে রাখবেন, আমরা মুমিন এবং আমাদের প্রতিটি কাজে আল্লাহর বরকত আছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটিই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ছাড়া অন্য কারও জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা (শোকরিয়া) প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্যধারণ
করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’ রিয়াদুস সলেহিন : ২৮
শেয়ার করুন
মাওলানা আবদুল জাব্বার | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

কখনো কি এ রকম হয়েছে যে, আপনি কাউকে সাহায্য করতে চাইছেন কিন্তু আপনার কাছে সাহায্য করার মতো অর্থ নেই। ধরুন আপনি যাত্রাপথে আছেন কিন্তু পকেটে টাকা নেই কিংবা এমন সময় আপনার কাছে আপনার ভাই সাহায্য চাইল, যখন মাসের শেষ, আপনার হাতে বেতন আসেনি কিংবা বাসা থেকে টাকা পাঠায়নি।
উত্তরটি অনেকের ক্ষেত্রেই হবে, হ্যাঁ। অনেকেই নেকনিয়ত পোষণ করেছেন, দান-খয়রাত করতে গিয়েছেন, কিন্তু পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
যারা এ রকম পরিস্থিতির শিকার, যাদের সীমিত আয় দান-খয়রাতের মতো ভালো কাজের নিয়ত ও আগ্রহকে আটকে দিচ্ছে, ধনীদের প্রচুর দান-সদকা আদায় করতে দেখে সীমিত আয়ের যেসব ভাইবোনেরা মন খারাপ করেন, ইশ! আমিও যদি দান করতে পারতাম, কোনো অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হতাম! তাদের জন্য আছে একটি সুখবর এবং একটি বিকল্প পন্থা।
সদকা আরবি শব্দ। এটি একটি ইসলামি পরিভাষা। জাকাত প্রদানের বাইরে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে গরিব-অসহায় মানুষকে যে দান-খয়রাত করা হয়, সেটাই সদকা। শরিয়ত মতে, উত্তম যেকোনো কাজে সদকার অর্থ ব্যয় করা যায়।
প্রথমত সুখবরটি শুনে নেওয়া যাক।
আপনার আয় সীমিত, আপনার পকেট ফাঁকা কিংবা আপনি নিজেই অভাবী কিন্তু তারপরও আপনি নিয়ত করলেন আপনার থেকে অভাবগ্রস্ত কাউকে সাহায্য করবেন, এই যে আপনার নেকনিয়ত; তা আপনার অন্তরের পরিচ্ছন্ন ইচ্ছার কথা আল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দিল এবং আল্লাহ হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও কর্মের দিকে লক্ষ করেন।’ সহিহ্ মুসলিম : ৬৭০৮
অর্থাৎ নিয়তের মাধ্যমে আপনি আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছেন। তা হলো, আল্লাহর নজরে নিজের অবস্থান ঠিক করা। এটি সুসংবাদের একটি অংশ এবং অপর অংশ হলো, আল্লাহর তরফ থেকে আসা প্রতিদান। যার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করল, কিন্তু বাস্তবে সে কাজ করতে পারল না, সে ব্যক্তির জন্য সওয়াব লেখা হবে।’ সহিহ্ মুসলিম : ৩৫৪
অর্থাৎ সওয়াব পেয়ে গেছেন আপনি। আপনার আমলনামায় জমা হয়েছে সদকার সওয়াব, যার ব্যাপারে আপনি শুধু ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন।
এবার নজর দেওয়া যাক বিকল্প পন্থার দিকে। আপনার বহু আগে, আপনার আমার থেকে ইমান ও আমলে বহুগুণে উত্তম সাহাবিরা নবী কারিম (সা.)-এর কাছে এই ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! ধনীরা তো সওয়াব সব নিয়ে গেল! আমরা যেমন নামাজ আদায় করি, তারাও করে। আমাদের মতো তারাও রোজা পালন করে। উপরন্তু তারা সম্পদও দান করতে পারে।’
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘দান-সদকা করার মতো কিছুই কি আল্লাহ তোমাদের দেননি? এক একবার সুবহানাল্লাহ বলা এক একটি সদকা, এক একবার আল্লাহু আকবার বলা এক একটি সদকা, এক একবার আলহামদুলিল্লাহ বলা এক একটি সদকা। এক একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা এক একটি সদকা, সৎকাজের আদেশ একটি সদকা এবং অসৎকাজ থেকে নিষেধ একটি সদকা। স্ত্রীদের কাছে গমন করাও সদকা!’
সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ তার প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও সে সওয়াব পাবে? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘বলো তো, যদি কেউ তার চাহিদা হারামপন্থায় পূরণ করে, তবে কি তার গোনাহ হবে না? সুতরাং হালালপন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ করায় তার সওয়াব হবে।’ সহিহ মুসলিম : ১০০৬
খেয়াল করুন, মুমিন হিসেবে আপনার হিসাবটাই অন্যরকম। সদকা কেবল আর্থিক সহায়তা প্রদানের মধ্যেই আল্লাহ আমাদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি। বরং সেটা তাসবিহ-তাহলিল-তাহমিদ থেকে শুরু করে নিজের স্ত্রীর সঙ্গে রাত কাটানোর মধ্যেও রেখেছেন। মোট কথা, হালাল পন্থায় থেকে যেকোনো ভালো কাজ করলে এবং ভালো কাজের উপদেশ দিলেও তা সদকা।
অতএব নিয়ত করুন, পারলে দান-সদকা করুন আর না পারলে সবর এবং সদকা সমতুল্য অন্যান্য ভালো কাজে নিমগ্ন থাকুন। মনে রাখবেন, আমরা মুমিন এবং আমাদের প্রতিটি কাজে আল্লাহর বরকত আছে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনের ব্যাপারটিই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ছাড়া অন্য কারও জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা (শোকরিয়া) প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্যধারণ
করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’ রিয়াদুস সলেহিন : ২৮