আল্লাহর ইবাদত
শাহাদাত হোসেন | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ মহান আল্লাহর আদেশ যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সদকা প্রদান করা এবং আল্লাহর নিষেধ যেমন সুদ, ঘুষ, হারাম, জিনা, বেপর্দা ইত্যাদি পরিহার করে চলাকে ইবাদত বলে। তেমনিভাবে নবী-রাসুলের দেখানো পথ অনুযায়ী একে অপরের সঙ্গে উত্তম আচার ব্যবহার করাও ইবাদত। মূলত ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্ব প্রকাশ করা যায়। ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।
ইবাদত আরবি শব্দ। এর অর্থ আনুগত্য করা, দাসত্ব করা, গোলামি, বন্দেগি, বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া। ইসলামি পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সব কাজকর্মে আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়। ইবাদত তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত। প্রথমত, অন্তর দ্বারা ইবাদত করা যেমন, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভরসা রাখা, ভালোবাসা, আশা-আকাক্সক্ষা, আগ্রহ, সৎনিয়ত, আল্লাহকে মনে মনে স্মরণ করা। দ্বিতীয়ত, মুখের ভাষা ও অন্তর দ্বারা ইবাদত যেমন, তাসবিহ-তাহলিল দোয়া ও জিকির পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা ইত্যাদি। তৃতীয়ত, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অন্তর দ্বারা ইবাদত যেমন, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি।
আল্লাহতায়ালা মানবজাতি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে সহজভাবে জীবনযাপনের জন্য অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের কর্তব্য। মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলেন, ‘আমার ইবাদতের জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ সুরা আয যারিয়াত : ৫৬
ইবাদত সম্পূর্ণরূপে কোরআন-সুন্নাহ নির্ভর বিষয়। আল্লাহ কীভাবে কিংবা কোন পদ্ধতিতে তার ইবাদত পছন্দ করেন, তা কেবল কোরআন ও আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে জানা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ সুরা আল বাইয়্যিনা : ৫
মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে মূল সংযোগকারী বিষয় হলো ইবাদত-বন্দেগি। ইবাদতকারী প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়। ইবাদতহীন ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু। তবে ইবাদতকারীকে হতে হবে কোরআন ও হাদিসের অনুসারী। তিনি নিজের মর্জিমাফিক কোনো কাজ করবেন না। প্রত্যেকটি কাজ করার আগে চিন্তা করবেন, এই কাজে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি আছে কি না? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এই কাজ কতটুকু, কখন এবং কীভাবে করেছেন? তিনি জেনে নেবেন কোন কাজের গুরুত্ব কতটুকু। পরিশুদ্ধ অল্প আমলই একজন ইবাদতকারীর নাজাতের জন্য যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘তোমার ইমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’
বস্তুত আল্লাহতায়ালার মানুষ সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো, বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে জীব-জন্তু কিংবা তাদের থেকেও অধম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জি¦ন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।’ সুরা আল আরাফ : ১৭৯
ইবাদত বলতে কেবলমাত্র উপাসনা করাকে বোঝায় না। বরং আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে সব কাজ আল্লাহর বিধানমতো সম্পূর্ণ করাই ইবাদত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সুরা আল জুমুআ : ১০
আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও অন্যান্য কাজ এবং বৈধপন্থায় সম্পদ উপার্জন করা ও দুনিয়ায় সব ভালো কাজ করা ইবাদত। আর এমনভাবেই আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা, তার রহমতের আশা, শাস্তির ভয়, ধৈর্য, শোকর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব কাজ ইবাদতের মধ্যে শামিল।
শেয়ার করুন
শাহাদাত হোসেন | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ মহান আল্লাহর আদেশ যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, সদকা প্রদান করা এবং আল্লাহর নিষেধ যেমন সুদ, ঘুষ, হারাম, জিনা, বেপর্দা ইত্যাদি পরিহার করে চলাকে ইবাদত বলে। তেমনিভাবে নবী-রাসুলের দেখানো পথ অনুযায়ী একে অপরের সঙ্গে উত্তম আচার ব্যবহার করাও ইবাদত। মূলত ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য ও দাসত্ব প্রকাশ করা যায়। ইবাদতের মধ্যেই রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।
ইবাদত আরবি শব্দ। এর অর্থ আনুগত্য করা, দাসত্ব করা, গোলামি, বন্দেগি, বিনয় প্রকাশ করা এবং নমনীয় হওয়া। ইসলামি পরিভাষায় দৈনন্দিন জীবনের সব কাজকর্মে আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে চলাকে ইবাদত বলা হয়। ইবাদত তিনটি ক্ষেত্রে বিভক্ত। প্রথমত, অন্তর দ্বারা ইবাদত করা যেমন, আল্লাহর প্রতি ভয় ও ভরসা রাখা, ভালোবাসা, আশা-আকাক্সক্ষা, আগ্রহ, সৎনিয়ত, আল্লাহকে মনে মনে স্মরণ করা। দ্বিতীয়ত, মুখের ভাষা ও অন্তর দ্বারা ইবাদত যেমন, তাসবিহ-তাহলিল দোয়া ও জিকির পাঠ করা, আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা ইত্যাদি। তৃতীয়ত, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অন্তর দ্বারা ইবাদত যেমন, নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত ইত্যাদি।
আল্লাহতায়ালা মানবজাতি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে সহজভাবে জীবনযাপনের জন্য অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা আমাদের কর্তব্য। মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টি প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বলেন, ‘আমার ইবাদতের জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি।’ সুরা আয যারিয়াত : ৫৬
ইবাদত সম্পূর্ণরূপে কোরআন-সুন্নাহ নির্ভর বিষয়। আল্লাহ কীভাবে কিংবা কোন পদ্ধতিতে তার ইবাদত পছন্দ করেন, তা কেবল কোরআন ও আল্লাহর রাসুল (সা.) এর সুন্নাহ ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে জানা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা পৃথিবীতে যত ইবাদতই করি না কেন ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য না হলে আল্লাহ কবুল করবেন না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদের এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ সুরা আল বাইয়্যিনা : ৫
মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে মূল সংযোগকারী বিষয় হলো ইবাদত-বন্দেগি। ইবাদতকারী প্রত্যেক ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়। ইবাদতহীন ব্যক্তি শয়তানের বন্ধু। তবে ইবাদতকারীকে হতে হবে কোরআন ও হাদিসের অনুসারী। তিনি নিজের মর্জিমাফিক কোনো কাজ করবেন না। প্রত্যেকটি কাজ করার আগে চিন্তা করবেন, এই কাজে আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি আছে কি না? হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এই কাজ কতটুকু, কখন এবং কীভাবে করেছেন? তিনি জেনে নেবেন কোন কাজের গুরুত্ব কতটুকু। পরিশুদ্ধ অল্প আমলই একজন ইবাদতকারীর নাজাতের জন্য যথেষ্ট। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ‘তোমার ইমানকে খাঁটি করো, অল্প আমলই নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’
বস্তুত আল্লাহতায়ালার মানুষ সৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হলো, বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞানের। যদি মানুষ বিবেক-বুদ্ধি ও জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর ইবাদত করতে না পারে তাহলে সে জীব-জন্তু কিংবা তাদের থেকেও অধম। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর আমি সৃষ্টি করেছি দোজখের জন্য বহু জি¦ন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হলো গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।’ সুরা আল আরাফ : ১৭৯
ইবাদত বলতে কেবলমাত্র উপাসনা করাকে বোঝায় না। বরং আল্লাহর প্রতিনিধি (খলিফা) হিসেবে সব কাজ আল্লাহর বিধানমতো সম্পূর্ণ করাই ইবাদত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ সুরা আল জুমুআ : ১০
আল্লাহর আদিষ্ট কাজগুলো পরিপূর্ণভাবে আদায় করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি ও অন্যান্য কাজ এবং বৈধপন্থায় সম্পদ উপার্জন করা ও দুনিয়ায় সব ভালো কাজ করা ইবাদত। আর এমনভাবেই আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ভালোবাসা, তার রহমতের আশা, শাস্তির ভয়, ধৈর্য, শোকর, তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সব কাজ ইবাদতের মধ্যে শামিল।