দোয়া কবুল হয় না কেন?
মুফতি মুহাম্মদ তাসনীম | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
দোয়া ইবাদতের মগজ। সর্বাবস্থায় যারা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি দোয়াই কবুল করেন। কিছু দোয়ার ফলাফল তাড়াতাড়ি দেন, কিছু দোয়ার ফলাফল আখেরাতের জন্য জমা রেখে দেন। কিন্তু মানুষের কিছু ভুলের কারণে কখনো কখনো দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আমাদের উচিত, দোয়ার যথাযথ ফলাফল পাওয়ার জন্য সেসব ভুল শুধরে নেওয়া। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলোর কারণে কখনো কখনো বান্দার দোয়া বিফলে যেতে পারে।
একনিষ্ঠতার অভাব : মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের (একনিষ্ঠভাবে) সঙ্গে দোয়া করতে হয়। পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দোয়াও একটি ইবাদত। সুনানে আবু দাউদ : ১৪৭৯
আর ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাইতো পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সঙ্গে ইবাদতের আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের কেবল এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তারই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।’ সুরা বাইয়্যিনা : ০৫
অতএব, আল্লাহর অন্যান্য ইবাদতের মতো দোয়াও ইখলাসের সঙ্গে করতে হবে। অন্যথায় সেই দোয়া বিফলে যেতে পারে।
দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া : অনেক সময় মানুষ দোয়ার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে। দোয়া করার পর দ্রুত ফলাফল না পেলে হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি এ রকমও বলতে শুরু করে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন না। এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। ফলে তার দোয়া বিফলে যাওয়াই স্বাভাবিক।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ সহিহ্ বোখারি : ৬৩৪০
অতএব, দোয়া করার ক্ষেত্রে কখনো তার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না এবং ফলাফল পেতে দেরি হলে আল্লাহর ব্যাপারে অসংলগ্ন কথা বলা যাবে না।
অমনোযোগ : দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ সুনানে তিরমিজি : ৩৪৭৯
গোনাহে অবিচলতা : দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো গোনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গোনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহ তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ সুরা রদ : ১১
হারাম ভক্ষণ : কখনো কখনো হারাম ভক্ষণ ও হারাম উপার্জনের কারণে মানুষের দোয়া কবুল হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কীভাবে সে সম্পদ অর্জন করল, হালাল উপায়ে, নাকি হারাম উপায়ে!’ (বোখারি : ২০৮৩)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ সহিহ্ মুসলিম : ২২৩৬
দোয়া কবুল হওয়ার জন হালাল ভক্ষণ করতে হবে। হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিকভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন।
শেয়ার করুন
মুফতি মুহাম্মদ তাসনীম | ২০ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

দোয়া ইবাদতের মগজ। সর্বাবস্থায় যারা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। আল্লাহ আমাদের প্রতিটি দোয়াই কবুল করেন। কিছু দোয়ার ফলাফল তাড়াতাড়ি দেন, কিছু দোয়ার ফলাফল আখেরাতের জন্য জমা রেখে দেন। কিন্তু মানুষের কিছু ভুলের কারণে কখনো কখনো দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই আমাদের উচিত, দোয়ার যথাযথ ফলাফল পাওয়ার জন্য সেসব ভুল শুধরে নেওয়া। নিম্নে এমন কিছু বিষয় তুলে ধরা হলো, যেগুলোর কারণে কখনো কখনো বান্দার দোয়া বিফলে যেতে পারে।
একনিষ্ঠতার অভাব : মহান আল্লাহর দরবারে ইখলাসের (একনিষ্ঠভাবে) সঙ্গে দোয়া করতে হয়। পরিপূর্ণ ইখলাস না থাকলে সে দোয়া বিফলে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দোয়াও একটি ইবাদত। সুনানে আবু দাউদ : ১৪৭৯
আর ইবাদত করতে হয় একমাত্র আল্লাহর জন্য। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। তাইতো পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সঙ্গে ইবাদতের আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের কেবল এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তারই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।’ সুরা বাইয়্যিনা : ০৫
অতএব, আল্লাহর অন্যান্য ইবাদতের মতো দোয়াও ইখলাসের সঙ্গে করতে হবে। অন্যথায় সেই দোয়া বিফলে যেতে পারে।
দোয়া কবুলের জন্য তাড়াহুড়া : অনেক সময় মানুষ দোয়ার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে। দোয়া করার পর দ্রুত ফলাফল না পেলে হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি এ রকমও বলতে শুরু করে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন না। এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। ফলে তার দোয়া বিফলে যাওয়াই স্বাভাবিক।
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ সহিহ্ বোখারি : ৬৩৪০
অতএব, দোয়া করার ক্ষেত্রে কখনো তার ফলাফল পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না এবং ফলাফল পেতে দেরি হলে আল্লাহর ব্যাপারে অসংলগ্ন কথা বলা যাবে না।
অমনোযোগ : দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ সুনানে তিরমিজি : ৩৪৭৯
গোনাহে অবিচলতা : দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো গোনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গোনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহ তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ সুরা রদ : ১১
হারাম ভক্ষণ : কখনো কখনো হারাম ভক্ষণ ও হারাম উপার্জনের কারণে মানুষের দোয়া কবুল হয় না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের ওপর এমন এক যুগ অবশ্যই আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবে না যে কীভাবে সে সম্পদ অর্জন করল, হালাল উপায়ে, নাকি হারাম উপায়ে!’ (বোখারি : ২০৮৩)। অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না।’ সহিহ্ মুসলিম : ২২৩৬
দোয়া কবুল হওয়ার জন হালাল ভক্ষণ করতে হবে। হালাল উপায়ে উপার্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবার ত্রুটিবিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধক অভ্যাসগুলো ত্যাগ করে সঠিকভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন।