আত্মীয়দের প্রতি দায়িত্ব
আমিনুর রহমান হাসান | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
আল্লাহতায়ালা মানব সমাজকে সৃষ্টি করে তাদের বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এর অন্যতম হলো, আত্মীয়তার বন্ধন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধন। এ বন্ধন অটুট রাখলে যেভাবে নেকি রয়েছে, তেমনি ছিন্নকারীর জন্য রয়েছে ভয়াবহ জাহান্নামের শাস্তি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহতায়ালা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।’ -সুরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩
কোরআনে কারিমের অন্য আয়াতে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহতায়ালা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ বাসস্থান।’ -সুরা রাদ : ২৫
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের জন্য ভয়াবহ আজাবের কথা বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -সহিহ বোখারি : ৫৯৮৪
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ -মুসনাদে আহমদ : ১০২৭৭
অন্যান্য অপরাধের শাস্তি মহান আল্লাহ শুধু আখেরাতে দিলেও, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর শাস্তি দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জায়গায় দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি গোনাহ ছাড়া এমন কোনো গোনাহ নেই যে গোনাহগারের শাস্তি আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতেই দেবেন এবং তা দেওয়াই উচিত; উপরন্তু তার জন্য আখেরাতের শাস্তি তো আছেই। গোনাহ দু’টি হচ্ছে, অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৫১১
তাছাড়া কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আল্লাহতায়ালাও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বলল, এটিই হচ্ছে- সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহতায়ালা বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করব যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে এবং আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে। তখন সে বলল, আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি হে আমার রব! তখন আল্লাহ বললেন, তা হলে তোমার জন্য তাই হোক।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮৩০
বর্তমান সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে, ধনী আত্মীয়দের দাওয়াত করা হয় এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। পক্ষান্তরে আত্মীয় গরিব হলে তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করা হয় না। এমনকি গরিব আত্মীয়ের দাওয়াত গ্রহণে অনেকের মন সায় দেয় না। তাদের আন্তরিকভাবে মেহমানদারি করতে মনে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। নিঃসন্দেহে এসব মারাত্মক গোনাহের কাজ। এমন মন্দ অভ্যাস পরিত্যাজ্য।
শেয়ার করুন
আমিনুর রহমান হাসান | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

আল্লাহতায়ালা মানব সমাজকে সৃষ্টি করে তাদের বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এর অন্যতম হলো, আত্মীয়তার বন্ধন। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বন্ধন। এ বন্ধন অটুট রাখলে যেভাবে নেকি রয়েছে, তেমনি ছিন্নকারীর জন্য রয়েছে ভয়াবহ জাহান্নামের শাস্তি। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন, ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। আল্লাহতায়ালা এদেরকেই করেন অভিশপ্ত, বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন।’ -সুরা মুহাম্মাদ : ২২-২৩
কোরআনে কারিমের অন্য আয়াতে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহকে দেওয়া দৃঢ় অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহতায়ালা আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে তাদের জন্য রয়েছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যই রয়েছে মন্দ বাসস্থান।’ -সুরা রাদ : ২৫
আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার জন্য হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীদের জন্য ভয়াবহ আজাবের কথা বর্ণনা করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -সহিহ বোখারি : ৫৯৮৪
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের আমলসমূহ প্রতি বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (আল্লাহর কাছে) উপস্থাপন করা হয়। তখন আত্মীয়তার বন্ধন বিচ্ছিন্নকারীর আমল গ্রহণ করা হয় না।’ -মুসনাদে আহমদ : ১০২৭৭
অন্যান্য অপরাধের শাস্তি মহান আল্লাহ শুধু আখেরাতে দিলেও, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর শাস্তি দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জায়গায় দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি গোনাহ ছাড়া এমন কোনো গোনাহ নেই যে গোনাহগারের শাস্তি আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতেই দেবেন এবং তা দেওয়াই উচিত; উপরন্তু তার জন্য আখেরাতের শাস্তি তো আছেই। গোনাহ দু’টি হচ্ছে, অত্যাচার ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী।’ -সুনানে তিরমিজি : ২৫১১
তাছাড়া কেউ আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করলে আল্লাহতায়ালাও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক ছিন্ন করেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালার সৃষ্টিকুল সৃজন শেষে আত্মীয়তার বন্ধন (দাঁড়িয়ে) বলল, এটিই হচ্ছে- সম্পর্ক বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। আল্লাহতায়ালা বললেন, হ্যাঁ, ঠিকই। তুমি কি এ কথায় সন্তুষ্ট নও যে, আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করব যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করবে এবং আমি ওর সঙ্গেই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করব, যে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে। তখন সে বলল, আমি এ কথায় অবশ্যই রাজি আছি হে আমার রব! তখন আল্লাহ বললেন, তা হলে তোমার জন্য তাই হোক।’ -সহিহ বোখারি : ৪৮৩০
বর্তমান সমাজের অবস্থা এমন হয়েছে যে, ধনী আত্মীয়দের দাওয়াত করা হয় এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। পক্ষান্তরে আত্মীয় গরিব হলে তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করা হয় না। এমনকি গরিব আত্মীয়ের দাওয়াত গ্রহণে অনেকের মন সায় দেয় না। তাদের আন্তরিকভাবে মেহমানদারি করতে মনে এক ধরনের দ্বিধা কাজ করে। নিঃসন্দেহে এসব মারাত্মক গোনাহের কাজ। এমন মন্দ অভ্যাস পরিত্যাজ্য।