সমাজ সংস্কারে শিক্ষকের ভূমিকা
মাহফুজ আরেফীন | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০
শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। তারা জ্ঞানশূন্য মানবশিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ -সুরা বাকারা : ২৬৯
শিক্ষকরা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার ব্যাপারে শিক্ষকদের অবিস্মরণীয় অবদান। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষকের। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়, বরং ভালো মানুষ করে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বটাও থাকে শিক্ষকের ওপর। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয়, অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি ধৈর্যশীল।
শিক্ষাগ্রহণ ছাড়া জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে পারে না। মানবাত্মার সঠিক বিকাশের প্রধান উপায় হলো- শিক্ষালাভে জ্ঞানবৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের সত্তা উপলব্ধি করে জীবন সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করা। শিক্ষক হচ্ছেন, শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথপ্রদর্শক। কারও পক্ষে কোনো শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই-পুস্তক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে, সে কোনো দিন শিক্ষার পূর্ণতায় পৌঁছতে পারে না। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ -সুরা আলাক : ১-৫
শিক্ষকের দৃষ্টান্ত একজন মালির মতো। একটা বাগানের সমৃদ্ধি যেমন মালির পূর্ণ দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে, তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতি-অবনতি শিক্ষকদের দৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিলে ইহকালে পদমর্যাদার অধিকারী ও আখেরাতে বিরাট পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া সম্ভব। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ -সুরা জুমার : ৯
যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে এবং মানুষকে শিক্ষা দান করে, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে তাকেই মহান বলা হয়। সে সূর্যের মতো অপরকে আলো দান করে এবং নিজেও আলোকময়। সে মেশকের মতো অপরকে সুগন্ধিতে আমোদিত করে এবং নিজেও সুগন্ধিযুক্ত। আর যে ব্যক্তি অপরকে শিক্ষা দান করে কিন্তু নিজে আমল করে না সে শানের মতো লোহাকে ধারালো করে কিন্তু নিজে কাটে না, সে ব্যক্তি সুচের মতো যে অন্যের জন্য পোশাক তৈরি করে কিন্তু নিজে উলঙ্গ থাকে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব, যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ -সহিহ বোখারি : ৪৬৩৯
শিক্ষকরা আমাদের আত্মবোধ গড়ে দেন। তারাই আমাদের আত্মার আত্মীয়, আপনজন। জ্ঞানহীন মানুষ যদি পশুর সমান হয়ে থাকে, সেই মানুষের মনে জ্ঞানের আলোয় প্রকৃত মানুষ করে তোলে একজন আদর্শবান শিক্ষক। একজন মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ-দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আবার সেই শিক্ষার্থী জীবনে যত বড়ই হোক- গুরুজনকে ভক্তিভরে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্র-শিক্ষকের এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাঁথুনির সম্পর্ক।
শিক্ষক হলেন জনগণের প্রদীপ। দেশের স্তম্ভ। আগামী আদর্শ প্রজন্ম তৈরি করতে আদর্শ শিক্ষকের জুড়ি নেই। ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে শিক্ষকের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকতা শুধু পড়ানোর নাম নয়, চিন্তা, চেতনা, নৈতিকতা সংশোধনের নাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ -ইবনে মাজাহ : ২২৫
মানুষ প্রাকৃতিকভাবে মূর্ত ও প্রত্যক্ষ নমুনা দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়। পঠিত বই বা শ্রুতবাণী দ্বারা তেমন প্রভাবিত হয় না। আর একজন ছাত্রের সামনে মূর্ত নমুনা হলো, তার আদর্শ শিক্ষক। তার মন-মানসিকতা গঠন ও পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। ছাত্র প্রথমে শিক্ষককে দেখে এবং নিজের অজান্তেই তার অনুসরণ করতে থাকে। পিতা মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ছাত্রের জন্য কর্তব্য। পিতা-মাতা ও শিক্ষকের মাধ্যমে ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যতের পথ। তাই তাদের যা আদেশ ও নিষেধ তা মেনে চলা উচিত। পিতা-মাতা ও শিক্ষক আমাদের সর্বদা মঙ্গল কামনা করেন।
শেয়ার করুন
মাহফুজ আরেফীন | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০

শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা-মার চেয়ে শিক্ষকের অবদান কোনো অংশে কম নয়। পৃথিবী সম্পর্কে বুঝতে শেখে শিক্ষকদের কাছে। তারা জ্ঞানশূন্য মানবশিশুকে ভিন্ন চোখে বিশ্ব দেখতে শেখায়, প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যাকে জ্ঞান দান করা হয়েছে তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয়েছে।’ -সুরা বাকারা : ২৬৯
শিক্ষকরা সমাজের বিবেক ও স্পন্দন। সামাজিক কুসংস্কার ও ধর্মীয় গোঁড়ামি দূর করার ব্যাপারে শিক্ষকদের অবিস্মরণীয় অবদান। শিক্ষকরা হচ্ছেন দেশ গড়ার প্রধান নিয়ামক শক্তি। শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষকের। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়, বরং ভালো মানুষ করে গড়ে তোলার গুরুদায়িত্বটাও থাকে শিক্ষকের ওপর। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয়, অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি ধৈর্যশীল।
শিক্ষাগ্রহণ ছাড়া জ্ঞান বৃদ্ধি পেতে পারে না। মানবাত্মার সঠিক বিকাশের প্রধান উপায় হলো- শিক্ষালাভে জ্ঞানবৃদ্ধির মাধ্যমে নিজের সত্তা উপলব্ধি করে জীবন সমস্যা সমাধানে দক্ষতা অর্জন করা। শিক্ষক হচ্ছেন, শিক্ষার্থীর জন্য একজন সংশোধনকারী ও পথপ্রদর্শক। কারও পক্ষে কোনো শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া বিদ্যা অর্জন করা সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি শিক্ষক ছাড়া শুধু বই-পুস্তক পড়ে বিদ্যা অর্জন করে, সে কোনো দিন শিক্ষার পূর্ণতায় পৌঁছতে পারে না। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘পড়, তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একবিন্দু জমাট রক্ত থেকে। পড়, আর তোমার প্রতিপালক পরম সম্মানিত। যিনি কলমের দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ -সুরা আলাক : ১-৫
শিক্ষকের দৃষ্টান্ত একজন মালির মতো। একটা বাগানের সমৃদ্ধি যেমন মালির পূর্ণ দৃষ্টির ওপর নির্ভর করে, তেমনিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের উন্নতি-অবনতি শিক্ষকদের দৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। শিক্ষকতার দায়িত্ব আঞ্জাম দিলে ইহকালে পদমর্যাদার অধিকারী ও আখেরাতে বিরাট পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়া সম্ভব। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে?’ -সুরা জুমার : ৯
যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে এবং মানুষকে শিক্ষা দান করে, আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বে তাকেই মহান বলা হয়। সে সূর্যের মতো অপরকে আলো দান করে এবং নিজেও আলোকময়। সে মেশকের মতো অপরকে সুগন্ধিতে আমোদিত করে এবং নিজেও সুগন্ধিযুক্ত। আর যে ব্যক্তি অপরকে শিক্ষা দান করে কিন্তু নিজে আমল করে না সে শানের মতো লোহাকে ধারালো করে কিন্তু নিজে কাটে না, সে ব্যক্তি সুচের মতো যে অন্যের জন্য পোশাক তৈরি করে কিন্তু নিজে উলঙ্গ থাকে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন- ‘আল্লাহর পরে, রাসুলের পরে ওই ব্যক্তি সর্বাপেক্ষা মহানুভব, যে বিদ্যার্জন করে ও পরে তা প্রচার করে।’ -সহিহ বোখারি : ৪৬৩৯
শিক্ষকরা আমাদের আত্মবোধ গড়ে দেন। তারাই আমাদের আত্মার আত্মীয়, আপনজন। জ্ঞানহীন মানুষ যদি পশুর সমান হয়ে থাকে, সেই মানুষের মনে জ্ঞানের আলোয় প্রকৃত মানুষ করে তোলে একজন আদর্শবান শিক্ষক। একজন মানুষের জীবনে পিতামাতার পরই শিক্ষকের অবস্থান। ছাত্র-শিক্ষকের পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সম্পর্ক হাজার বছর ধরে চলে আসছে। শুধু শিক্ষা কিংবা জ্ঞানার্জন নয়, একজন ছাত্রের বিপদ-আপদ-দুর্দিনে ছায়ার মতো পাশে দাঁড়ান একজন শিক্ষক। আবার সেই শিক্ষার্থী জীবনে যত বড়ই হোক- গুরুজনকে ভক্তিভরে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে রয়েছে এক আশ্চর্য সেতুবন্ধন। যে বন্ধন কেবল পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর বিশ্বাসের ওপর গড়ে ওঠে। ছাত্র-শিক্ষকের এ সম্পর্ক বড় শক্ত গাঁথুনির সম্পর্ক।
শিক্ষক হলেন জনগণের প্রদীপ। দেশের স্তম্ভ। আগামী আদর্শ প্রজন্ম তৈরি করতে আদর্শ শিক্ষকের জুড়ি নেই। ব্যক্তিগত জীবনে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জীবন গঠনে শিক্ষকের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষকতা শুধু পড়ানোর নাম নয়, চিন্তা, চেতনা, নৈতিকতা সংশোধনের নাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘শিক্ষক হিসেবে আমি প্রেরিত হয়েছি।’ -ইবনে মাজাহ : ২২৫
মানুষ প্রাকৃতিকভাবে মূর্ত ও প্রত্যক্ষ নমুনা দ্বারাই বেশি প্রভাবিত হয়। পঠিত বই বা শ্রুতবাণী দ্বারা তেমন প্রভাবিত হয় না। আর একজন ছাত্রের সামনে মূর্ত নমুনা হলো, তার আদর্শ শিক্ষক। তার মন-মানসিকতা গঠন ও পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। ছাত্র প্রথমে শিক্ষককে দেখে এবং নিজের অজান্তেই তার অনুসরণ করতে থাকে। পিতা মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ছাত্রের জন্য কর্তব্য। পিতা-মাতা ও শিক্ষকের মাধ্যমে ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যতের পথ। তাই তাদের যা আদেশ ও নিষেধ তা মেনে চলা উচিত। পিতা-মাতা ও শিক্ষক আমাদের সর্বদা মঙ্গল কামনা করেন।