মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত মসজিদ
সায়েম আহমাদ | ২১ মে, ২০২২ ০০:০০
আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। পৃথিবীর যাবতীয় অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোকিত করার মাধ্যম ইসলাম। ইসলাম সম্পর্কিত এত গুণ থাকার পরও মানুষ ইবাদত-বন্দেগি থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। দুনিয়ার মায়ায় পড়ে বিভিন্ন রঙ-তামাশায় লিপ্ত হয়, ভুলে যায় ইসলামের বিধিবিধান, মহান প্রভুর স্মরণে কথা ইবাদত-বন্দেগির কথা।
কথাগুলো বলার কারণ হলো, করোনাকাল কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর শহর থেকে ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে যাই। ঈদের পর এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাদের বাড়ির সামনের মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য গিয়ে প্রচণ্ডভাবে অবাক হই। চমৎকার সুন্দর মসজিদ, মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির আরও অনেক আয়োজন চলমান। বলতে গেলে, মসজিদের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো দায়। কিন্তু আফসোস, এত সৌন্দর্যে ভরপুর মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো মুসল্লি নেই! বলতে গেলে অনেকটা জনমানবশূন্য মসজিদ!
শুধু এই মসজিদ নয়, শুক্রবার বাদে আমাদের সমাজের বিশাল আয়তন আর সৌন্দর্য ভরপুর মসজিদগুলো বলতে গেলে এভাবে প্রায়ই জনমানবশূন্য থাকে। ফলে প্রশ্ন জাগে মনে, কী লাভ মসজিদ বড় করে, মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে? যদি না আমাদের মনের সৌন্দর্য ফুটে না ওঠে। আমাদের মন আল্লাহর বিধান মেনে চলতে তৎপর না হয়?
আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমানের মুসলমানরা মসজিদকে উপেক্ষা করে বাজারকে বেশি গুরুত্ব দেয়। মসজিদে না এসে বাজারের দিকে ছুটে যায়। অথচ মানবতার নবী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ জায়গা হচ্ছে বাজার, আর সবচেয়ে ভালো জায়গা মসজিদ।’ এ কারণে বলতে হয়, ‘এই মন কাঁদে না প্রভুর স্মরণে, কাঁদে শুধু দুনিয়ার লোভনীয় মায়ায়।’
আমাদের মধ্যে রমজান মাস আসে রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে। একসময় রমজান মাস শেষ হয়, কিন্তু রমজানের ফজিলত থেকে আমরা কতটুকু শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি? কতটুকু নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি সেটিই মুখ্য বিষয়। এমন বলার কারণ হলো, রমজানে প্রত্যেক মুসলমান ধর্মের প্রতিটি কাজে সচেতন হয়ে আমল-আখলাকে সোচ্চার হয়, মুয়াজ্জিনের আজান শুনে ছোট-বড় সব বয়সী মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদগুলো। কতই না সুন্দর সেসব দৃশ্য, মানুষ যে কত নিয়মানুবর্তিতার অধিকারী হতে পারে, তা রমজান মাসে বোঝা যায়। কিন্তু বড্ড আফসোস, রমজান-পরবর্তী সময়ে এমন কিছু আর হয়ে ওঠে না। মানুষ রমজানের মতো কোনো কিছু করার চেষ্টা করে না। তবে একেবারেই যে মানুষ চেষ্টা করে না, সেটা বলা ভুল। সংখ্যায় কম হলেও কিছু মানুষ আল্লাহর রহমত, বরকত আর নাজাত পাওয়ার জন্য ধর্মীয় বিধিবিধান নিজ জীবনে বাস্তবায়নে চেষ্টা করে। যারা নিজ নিজ জীবনে এগুলো বাস্তবায়ন করে তারাই সফলকাম, তারাই আল্লাহর রহমত বরকতের ভাগীদার।
যারা প্রতিনিয়ত ইসলামের সব বিধিমালা নিজ জীবন পরিচালনা করেন, তারাই সফলকাম। আবার কিছু মানুষ আছেন, নামধারী মুসলমান। তারা রমজান মাসে খুব হাঁকডাক করে নামাজ-রোজা করে, আবার রমজান ফুরিয়ে গেলে পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া তো দূরের কথা, শুক্রবারের জুমার নামাজেও তাদের দেখা মেলে না। অথচ তারা একটুও ভাবে না, ইসলামের বিধানে নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আরেক বিষয়ে না বললেই নয়। মসজিদগুলোতে দেখা যায়, একটু হাঁটাচলা, দুষ্টুমি কিংবা উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে ছোট বাচ্চাদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। অনেকে আবার ছোট বাচ্চাদের কাতারে দাঁড়াতে দেন না। কোন যুক্তিতে এমন কাজ ও আচরণ করা হয়, তা জানি না। কিছু মুসল্লি আছে, তারা ছোট বাচ্চাদের প্রতি অস্বাভাবিক আচরণের জন্য মুখিয়ে থাকে। তারা ছোট বাচ্চাদের মসজিদে দেখতেই পারে না। ফলশ্রুতিতে, ছোট বাচ্চাদের মনে এক ধরনের ক্ষোভ জন্মে, পরবর্তী জীবনের তারা আর মসজিদে যেতে চায় না। অথচ আমরা বুঝতে চাই না, ছোট বয়সে মসজিদমুখী হয়ে উঠলে পরবর্তী সময়ে তারাই মসজিদে নিয়মিত হবে, মসজিদ পরিচালনা থেকে শুরু করে সব কাজে নেতৃত্ব দেবে, এভাবেই তারা আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবে।
ছোট বাচ্চাদের যদি মসজিদমুখী না করার নির্দেশ থাকত, তাহলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান-হোসাইন (রা.)-কে কখনোই মসজিদে ঢুকতে দিতেন না। অথচ বহু হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান-হোসাইন (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে যেতেন, তারা মসজিদে দুষ্টুমিও করত।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (আমরা) নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সেজদায় গেলেন, তখন হাসান ও হোসাইন (রা.) নবী করিম (সা.)-এর পিঠে উঠে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেজদা থেকে মাথা ওঠালেন তখন তাদের নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন রাসুল (সা.) দ্বিতীয়বার সেজদায় গেলেন তখন হাসান-হোসাইন (রা.) দ্বিতীয়বার এমনই করল। এমনকি রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলেন এবং উভয়কে আপন রানে (কোলে) বসালেন। মুসনাদে আহমদ : ৩/৫৯৩
বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাচ্চাদের প্রতি অর্থাৎ ইমাম হাসান-হোসাইনের প্রতি কতটা আন্তরিকতা নিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন, তা ফুটে উঠেছে যা ভাবনার বিষয়। আমাদের সমাজে যারা মসজিদে বাচ্চাদের প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করেন, এই ঘটনা থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
শেয়ার করুন
সায়েম আহমাদ | ২১ মে, ২০২২ ০০:০০

আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম। পৃথিবীর যাবতীয় অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোকিত করার মাধ্যম ইসলাম। ইসলাম সম্পর্কিত এত গুণ থাকার পরও মানুষ ইবাদত-বন্দেগি থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। দুনিয়ার মায়ায় পড়ে বিভিন্ন রঙ-তামাশায় লিপ্ত হয়, ভুলে যায় ইসলামের বিধিবিধান, মহান প্রভুর স্মরণে কথা ইবাদত-বন্দেগির কথা।
কথাগুলো বলার কারণ হলো, করোনাকাল কাটিয়ে প্রায় দুই বছর পর শহর থেকে ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে যাই। ঈদের পর এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে তাদের বাড়ির সামনের মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য গিয়ে প্রচণ্ডভাবে অবাক হই। চমৎকার সুন্দর মসজিদ, মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির আরও অনেক আয়োজন চলমান। বলতে গেলে, মসজিদের দিকে তাকালে চোখ ফেরানো দায়। কিন্তু আফসোস, এত সৌন্দর্যে ভরপুর মসজিদে নামাজ আদায়ের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো মুসল্লি নেই! বলতে গেলে অনেকটা জনমানবশূন্য মসজিদ!
শুধু এই মসজিদ নয়, শুক্রবার বাদে আমাদের সমাজের বিশাল আয়তন আর সৌন্দর্য ভরপুর মসজিদগুলো বলতে গেলে এভাবে প্রায়ই জনমানবশূন্য থাকে। ফলে প্রশ্ন জাগে মনে, কী লাভ মসজিদ বড় করে, মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে? যদি না আমাদের মনের সৌন্দর্য ফুটে না ওঠে। আমাদের মন আল্লাহর বিধান মেনে চলতে তৎপর না হয়?
আফসোসের সঙ্গে বলতে হয়, বর্তমানের মুসলমানরা মসজিদকে উপেক্ষা করে বাজারকে বেশি গুরুত্ব দেয়। মসজিদে না এসে বাজারের দিকে ছুটে যায়। অথচ মানবতার নবী হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ জায়গা হচ্ছে বাজার, আর সবচেয়ে ভালো জায়গা মসজিদ।’ এ কারণে বলতে হয়, ‘এই মন কাঁদে না প্রভুর স্মরণে, কাঁদে শুধু দুনিয়ার লোভনীয় মায়ায়।’
আমাদের মধ্যে রমজান মাস আসে রহমত, বরকত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে। একসময় রমজান মাস শেষ হয়, কিন্তু রমজানের ফজিলত থেকে আমরা কতটুকু শিক্ষা অর্জন করতে পেরেছি? কতটুকু নিজ জীবনে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি সেটিই মুখ্য বিষয়। এমন বলার কারণ হলো, রমজানে প্রত্যেক মুসলমান ধর্মের প্রতিটি কাজে সচেতন হয়ে আমল-আখলাকে সোচ্চার হয়, মুয়াজ্জিনের আজান শুনে ছোট-বড় সব বয়সী মুসল্লির পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদগুলো। কতই না সুন্দর সেসব দৃশ্য, মানুষ যে কত নিয়মানুবর্তিতার অধিকারী হতে পারে, তা রমজান মাসে বোঝা যায়। কিন্তু বড্ড আফসোস, রমজান-পরবর্তী সময়ে এমন কিছু আর হয়ে ওঠে না। মানুষ রমজানের মতো কোনো কিছু করার চেষ্টা করে না। তবে একেবারেই যে মানুষ চেষ্টা করে না, সেটা বলা ভুল। সংখ্যায় কম হলেও কিছু মানুষ আল্লাহর রহমত, বরকত আর নাজাত পাওয়ার জন্য ধর্মীয় বিধিবিধান নিজ জীবনে বাস্তবায়নে চেষ্টা করে। যারা নিজ নিজ জীবনে এগুলো বাস্তবায়ন করে তারাই সফলকাম, তারাই আল্লাহর রহমত বরকতের ভাগীদার।
যারা প্রতিনিয়ত ইসলামের সব বিধিমালা নিজ জীবন পরিচালনা করেন, তারাই সফলকাম। আবার কিছু মানুষ আছেন, নামধারী মুসলমান। তারা রমজান মাসে খুব হাঁকডাক করে নামাজ-রোজা করে, আবার রমজান ফুরিয়ে গেলে পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া তো দূরের কথা, শুক্রবারের জুমার নামাজেও তাদের দেখা মেলে না। অথচ তারা একটুও ভাবে না, ইসলামের বিধানে নামাজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আরেক বিষয়ে না বললেই নয়। মসজিদগুলোতে দেখা যায়, একটু হাঁটাচলা, দুষ্টুমি কিংবা উচ্চৈঃস্বরে কথা বললে ছোট বাচ্চাদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। অনেকে আবার ছোট বাচ্চাদের কাতারে দাঁড়াতে দেন না। কোন যুক্তিতে এমন কাজ ও আচরণ করা হয়, তা জানি না। কিছু মুসল্লি আছে, তারা ছোট বাচ্চাদের প্রতি অস্বাভাবিক আচরণের জন্য মুখিয়ে থাকে। তারা ছোট বাচ্চাদের মসজিদে দেখতেই পারে না। ফলশ্রুতিতে, ছোট বাচ্চাদের মনে এক ধরনের ক্ষোভ জন্মে, পরবর্তী জীবনের তারা আর মসজিদে যেতে চায় না। অথচ আমরা বুঝতে চাই না, ছোট বয়সে মসজিদমুখী হয়ে উঠলে পরবর্তী সময়ে তারাই মসজিদে নিয়মিত হবে, মসজিদ পরিচালনা থেকে শুরু করে সব কাজে নেতৃত্ব দেবে, এভাবেই তারা আল্লাহর কাছে প্রিয় বান্দা হিসেবে বিবেচিত হবে।
ছোট বাচ্চাদের যদি মসজিদমুখী না করার নির্দেশ থাকত, তাহলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান-হোসাইন (রা.)-কে কখনোই মসজিদে ঢুকতে দিতেন না। অথচ বহু হাদিসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত হাসান-হোসাইন (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে মসজিদে যেতেন, তারা মসজিদে দুষ্টুমিও করত।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন (আমরা) নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করছিলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সেজদায় গেলেন, তখন হাসান ও হোসাইন (রা.) নবী করিম (সা.)-এর পিঠে উঠে বসল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সেজদা থেকে মাথা ওঠালেন তখন তাদের নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন রাসুল (সা.) দ্বিতীয়বার সেজদায় গেলেন তখন হাসান-হোসাইন (রা.) দ্বিতীয়বার এমনই করল। এমনকি রাসুল (সা.) নামাজ শেষ করলেন এবং উভয়কে আপন রানে (কোলে) বসালেন। মুসনাদে আহমদ : ৩/৫৯৩
বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বাচ্চাদের প্রতি অর্থাৎ ইমাম হাসান-হোসাইনের প্রতি কতটা আন্তরিকতা নিয়ে কাছে টেনে নিয়েছেন, তা ফুটে উঠেছে যা ভাবনার বিষয়। আমাদের সমাজে যারা মসজিদে বাচ্চাদের প্রতি অস্বাভাবিক আচরণ করেন, এই ঘটনা থেকে তাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।