পরিবারের জন্য সময়
মাওলানা শফিকুল ইসলাম | ২১ মে, ২০২২ ০০:০০
পৃথিবীতে সুখে থাকার জন্য পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক। হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়া। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন।
তাদের বিভিন্নভাবে আনন্দ দিতেন। আমাদের সমাজের ধারণা যে পরিবারকে সব সময় শাসনে রাখলেই তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সুপথে থাকবে। এটি ভুল ধারণা, পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের মাঝেমধ্যে আনন্দ দিতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে তাদের পরিবারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহস পাবে। এতে আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যাই সমাধান হবে। অনেক সময় পরিবারপ্রধানের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কথাই তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না, ফলে পরিবারপ্রধানের সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, যা একটি সংসারে কখনোই শান্তি ডেকে আনে না। এখানে নবী করিম (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।
কন্যা ও জামাতার সঙ্গে আচরণ : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে কথার ছলে তার কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে এলেন, কিন্তু হজরত আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতেমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তার মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন হজরত আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তার শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! সহিহ্ বোখারি : ৪৪১
বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন, ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার হজরত আলী (রা.)-কে ধুলোবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ (মাটির বাবা) বলার উদ্দেশও ছিল আনন্দ দেওয়া।
স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। সহিহ্ বোখারি : ৬১৩০
এমনকি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। সুনানে আবু দাউদ : ২৫৭৮
নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানো : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সেজদা করলে হাসান-হোসাইন লাফ দিয়ে তার পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সেজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সেজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। মুসনাদ আহমাদ : ৭৮৭৬
অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আসকেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ সবাইকে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।
শেয়ার করুন
মাওলানা শফিকুল ইসলাম | ২১ মে, ২০২২ ০০:০০

পৃথিবীতে সুখে থাকার জন্য পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুসম্পর্ক। হালাল পন্থায় তাদের আনন্দ দেওয়া। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) পরিবারের সদস্যদের যেমন নতুন নতুন বিষয় শিক্ষা দিতেন, তেমনি তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণও করতেন।
তাদের বিভিন্নভাবে আনন্দ দিতেন। আমাদের সমাজের ধারণা যে পরিবারকে সব সময় শাসনে রাখলেই তারা নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সুপথে থাকবে। এটি ভুল ধারণা, পরিবারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে, তাদের মাঝেমধ্যে আনন্দ দিতে হবে, তাহলে তারা যেকোনো বিষয়ে তাদের পরিবারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করতে সাহস পাবে। এতে আমাদের পরিবারের অনেক সমস্যাই সমাধান হবে। অনেক সময় পরিবারপ্রধানের ভয়ে স্ত্রী-সন্তানরা অনেক কথাই তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারে না, ফলে পরিবারপ্রধানের সঙ্গে তাদের অনেক বিষয়েই মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, যা একটি সংসারে কখনোই শান্তি ডেকে আনে না। এখানে নবী করিম (সা.)-এর এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো, যেখানে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরিবারকে আনন্দ দিয়েছেন।
কন্যা ও জামাতার সঙ্গে আচরণ : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মাঝেমধ্যে কথার ছলে তার কন্যা ও জামাতাকেও আনন্দ দিয়েছেন। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত ফাতেমা (রা.)-এর ঘরে এলেন, কিন্তু হজরত আলী (রা.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতেমা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বলেন, আমার ও তার মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে অভিমান করে বাইরে চলে গেছেন। আমার কাছে দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে বলেন, দেখো তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এলেন, তখন হজরত আলী (রা.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তার শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বলেন, ওঠো, হে আবু তুরাব! ওঠো, হে আবু তুরাব! সহিহ্ বোখারি : ৪৪১
বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার মেয়েকে আনন্দ দেওয়ার জন্যই বলেছিলেন, ‘তোমার চাচাতো ভাই কোথায়?’ আবার হজরত আলী (রা.)-কে ধুলোবালিতে শুয়ে থাকতে দেখে ‘আবু তুরাব’ (মাটির বাবা) বলার উদ্দেশও ছিল আনন্দ দেওয়া।
স্ত্রীকে আনন্দ দেওয়া : হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) তার স্ত্রীদেরও আনন্দে রাখতে পছন্দ করতেন। তিনি তাদের আনন্দ নষ্ট হয় এমন কাজ করতে অপছন্দ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমার বান্ধবীরাও আমার সঙ্গে খেলা করত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত। সহিহ্ বোখারি : ৬১৩০
এমনকি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) হজরত আয়েশা (রা.)-কে আনন্দ দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা দিয়েছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, তিনি এক সফরে নবী করিম (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তার সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তার আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তার সঙ্গে আবারও দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পেছনে ফেলে দিলেন, বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা। সুনানে আবু দাউদ : ২৫৭৮
নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটানো : হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে এশার নামাজ পড়ছিলাম। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সেজদা করলে হাসান-হোসাইন লাফ দিয়ে তার পিঠে উঠত। রাসুল (সা.) সেজদা থেকে ওঠার সময় তাদের হাত দিয়ে নামিয়ে দিতেন। তিনি আবার সেজদা করলে তারাও আবার পিঠে উঠত। এভাবে তিনি নামাজ শেষ করেন। মুসনাদ আহমাদ : ৭৮৭৬
অন্যান্য হাদিসে রাসুল (সা.) স্বীয় নাতনি উমামা বিনতে আবুল আসকেও আনন্দ দিয়েছেন বলে জানা যায়। মহান আল্লাহ সবাইকে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পদাঙ্ক অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।