সমাজ বদলে করণীয়
মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০
চলার পথে, চায়ের আড্ডায় কিংবা আলাপচারিতায় প্রায়ই শোনা যায়, চলমান সময় আর সমাজের বিরুদ্ধে মানুষের অসংখ্য অভিযোগ। সময় বদলে গেছে, মানুষ এখন আর মানুষ নেই, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ এসব বিদায় নিয়েছে, শালীনতা ও নৈতিকতার মৃত্যু হয়েছে এমন হাজারো অভিযোগ। অভিযোগগুলো যে একেবারে অমূলক, তা কিন্তু নয়। সমাজের যেদিকে তাকাবেন দেখবেন, নৈতিক অধঃপতনের মহামারী চলছে! মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়, কেউ এসব গর্হিত কাজ পছন্দ করে না। মানুষ পরিবর্তন চায় ঘুণে ধরা সমাজের। তাই মানুষ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে, সামগ্রিকভাবে সমাজে এর প্রভাব সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এত চেষ্টার পরও চারদিকে অবক্ষয় আর নিরাশার পদধ্বনি। কিন্তু কেন?
নিশ্চয় প্রচেষ্টায় ত্রুটি কিংবা পদ্ধতি ও প্রয়োগগত সমস্যা আছে। ঘাটতি রয়েছে সঠিক ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গির। আমরা প্রায়ই অপরকে বদলানোর চেষ্টা করি, বিভিন্ন উপদেশ দিই, অন্যের গর্হিত কাজের জন্য তিরস্কার করি। সমাজকে ঢেলে সাজাতে চাই, আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কথা বলি। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রথমেই যে নিজের পরিবর্তন দরকার তা ভাবি না।
আমরা পৃথিবী বদলাতে চাই, কিন্তু নিজেকে বদলাতে চাই না। কিন্তু চির সত্য সূত্র হলো পৃথিবী বদলাতে হলে সবার আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সমাজ কিংবা পৃথিবী বদলানোর প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। নিজেকে বদলাতে হলে প্রথমে নিজেকে ভালোভাবে চিনতে হবে। নিজের ব্যাপারে জানাশোনা যত বাড়বে চিন্তা ও কাজের সাফল্য তত বাড়বে। নিজের সামর্থ্য ও দুর্বলতা, ইতিবাচক ও নেতিবাচক স্বভাবের ব্যাপারে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে নিজেকে বদলানো সহজ হবে। তবে নিজেকে চেনা-জানা খুব সহজ কাজ নয়। নিজেকে যদি ভালো করে না জানেন তাহলে নিজেকে বদলাতে পারবেন না আর নিজেকে বদলাতে না পারলে সমাজ বদলানো সম্ভব নয়।
নিজেকে না বদলিয়ে সমাজ বদলানোর ইচ্ছা শুধু প্রচেষ্টা হয়েই থাকবে। প্রত্যেকে যদি নিজের অবস্থান থেকে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিকমতো পালন এবং অসত্য ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, তাহলে ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনের পরিবর্তন আসতে বাধ্য। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার নিজেরা পরিবর্তন করে।’ সুরা রাদ : ১১
সমাজে কী ভুল আছে সে সম্পর্কে প্রত্যেকে নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করে, এটি খুব সহজ। কিন্তু নিজের কী ভুল আছে তা খুঁজে বের করা কঠিন, যা সমাজের অধিকাংশ মানুষ করে না। অথচ প্রতিনিয়ত সমাজের নানা অভিযোগ-অসংগতির কথা বলে বেড়ায়। অথচ এই সমাজ-সংসারে অস্থিরতা, অপূর্ণতা থাকবে তার ভেতরেও আপনি চাইলে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন। এজন্য দরকার, নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
সত্যিকার অর্থে বাইরের পরিস্থিতি ততটা খারাপ না, যতটা আপনি-আমি ভাবি। চলমান বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে চাইলে আজ থেকেই পরিবর্তন শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আপনি যদি হতাশ, রাগান্বিত বা অন্য কোনো বিব্রতকর অবস্থা বোধ করেন তাহলে কৌতূহলী হয়ে উঠুন এবং আপনার সেই অংশে কাজ করুন, যা বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আপনার মানসিকতা, অভ্যাস এবং কর্মপরিবর্তন করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে। এটি পরিহার করুন, মিথ্যা কিংবা ভণিতার আশ্রয় নেওয়া বন্ধ করুন, আপনার বিশ্বাসের প্রতি আরও দৃঢ় ও মজবুত হন, কারও কাছে অধিক ভালো দেখানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন দেখবে মানুষ কৃপণতা করছে, প্রবৃত্তির পেছনে ছুটছে, পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, প্রত্যেকে নিজের মতামতে মুগ্ধ, এমন পরিস্থিতিতে নিজের সংশোধনে বিশেষ মনোযোগ দাও। সাধারণ মানুষের পথ পরিহার করো।’ সুনানে আবু দাউদ
কতই না সুন্দর ও বাস্তবধর্মী দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন মানবতার মুক্তির কান্ডারি প্রিয় রাসুল (সা.)। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের পরিস্থিতিতে হতাশ, ক্ষুব্ধ। আসলে কিছু বিষয় আছে, যা কারও হাতে নেই, এমন বিষয় নিয়ে ভেবে নিজের সাবলীল জীবনধারায় হতাশা ডেকে আনা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং চেতনাকে জাগ্রত করুন, নতুন করে ভাবুন। নিজেকে কীভাবে বদলানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। এটি ভাববেন না যে, আপনি একজন বদলালে কি সমাজ পরিবর্তন হবে বা আপনার পরিবর্তনে কি সমাজে প্রভাব পড়বে? এমন ভাবনা আপনাকে পেছনে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি একা হয়তো সমাজ পরিবর্তন করতে পারবেন না, কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের ধারায় একটি মাত্রা যোগ করতে পারেন।
পৃথিবীর শত অন্যায় ও অনৈতিক কাজ আছে, যা কেউ পছন্দ করে না। সবাই চায় এসব গর্হিত কাজ বন্ধ হোক, কিন্তু যখন নিজের বেলায় আসে, তখন সময়ের দোহাই দিয়ে তা ভালো করে ভোগ করি। দুঃখজনক হলেও এটিই হলো বর্তমান সমাজের বেশির ভাগ মানুষের দ্বৈতনীতি।
মাদকের বিরুদ্ধে কনসার্ট হয়, আবার ওই কনসার্টেই মাদক সেবনের আসর বসে। আমরা সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলি, আবার সবার অলক্ষ্যে তা গ্রহণ করি। ন্যায়বিচারের কথা বলি আবার বিচারকের আসনে বসে অনৈতিক রায় ঘোষণা করি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কথা বলি, সভা-সেমিনার করি আবার ওইসব সভা-সেমিনারে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অতিথি হয়, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বলি আবার অশ্লীলতার আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিই, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি আবার বাসায় গিয়ে নারী নির্যাতন করি, নাগরিক অধিকারের কথা বলি আবার জোর জবরদস্তি ভোট নিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করি, বিশ্বব্যাপী শান্তির কথা বলি আবার দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে এক পক্ষকে অস্ত্রের জোগান দিই, এমন শঠতা আমাদের মধ্যে বিরাজমান। এই দ্বিমুখী আচরণ আর চিন্তাধারা দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা দুরূহ ব্যাপার।
মোট কথা, যে যার অবস্থান থেকে যদি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন এবং নিজের ভেতরকার দোষ-ত্রুটি শোধরানোর চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের চারপাশ এমনিতেই বদলে যাবে এবং সমাজ হয়ে উঠবে ন্যায়ভিত্তিক, সুন্দর ও সাবলীল। মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেছেন, ‘গতকাল চালাক ছিলাম, তাই পৃথিবীকে বদলাতে চেয়েছিলাম, আজ আমি বিজ্ঞ, তাই নিজেকে বদলাতে চাই।’
শেয়ার করুন
মুহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাত | ৬ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০

চলার পথে, চায়ের আড্ডায় কিংবা আলাপচারিতায় প্রায়ই শোনা যায়, চলমান সময় আর সমাজের বিরুদ্ধে মানুষের অসংখ্য অভিযোগ। সময় বদলে গেছে, মানুষ এখন আর মানুষ নেই, আন্তরিকতা, সহমর্মিতা, পরস্পর শ্রদ্ধাবোধ এসব বিদায় নিয়েছে, শালীনতা ও নৈতিকতার মৃত্যু হয়েছে এমন হাজারো অভিযোগ। অভিযোগগুলো যে একেবারে অমূলক, তা কিন্তু নয়। সমাজের যেদিকে তাকাবেন দেখবেন, নৈতিক অধঃপতনের মহামারী চলছে! মানুষ এসব থেকে মুক্তি চায়, কেউ এসব গর্হিত কাজ পছন্দ করে না। মানুষ পরিবর্তন চায় ঘুণে ধরা সমাজের। তাই মানুষ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে এ বিষয়ে কাজ করে আসছে, সামগ্রিকভাবে সমাজে এর প্রভাব সেভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এত চেষ্টার পরও চারদিকে অবক্ষয় আর নিরাশার পদধ্বনি। কিন্তু কেন?
নিশ্চয় প্রচেষ্টায় ত্রুটি কিংবা পদ্ধতি ও প্রয়োগগত সমস্যা আছে। ঘাটতি রয়েছে সঠিক ও কার্যকর দৃষ্টিভঙ্গির। আমরা প্রায়ই অপরকে বদলানোর চেষ্টা করি, বিভিন্ন উপদেশ দিই, অন্যের গর্হিত কাজের জন্য তিরস্কার করি। সমাজকে ঢেলে সাজাতে চাই, আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কথা বলি। কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের জন্য প্রথমেই যে নিজের পরিবর্তন দরকার তা ভাবি না।
আমরা পৃথিবী বদলাতে চাই, কিন্তু নিজেকে বদলাতে চাই না। কিন্তু চির সত্য সূত্র হলো পৃথিবী বদলাতে হলে সবার আগে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যক্তিজীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। তবেই সমাজ কিংবা পৃথিবী বদলানোর প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে। নিজেকে বদলাতে হলে প্রথমে নিজেকে ভালোভাবে চিনতে হবে। নিজের ব্যাপারে জানাশোনা যত বাড়বে চিন্তা ও কাজের সাফল্য তত বাড়বে। নিজের সামর্থ্য ও দুর্বলতা, ইতিবাচক ও নেতিবাচক স্বভাবের ব্যাপারে ভাবতে হবে। এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকলে নিজেকে বদলানো সহজ হবে। তবে নিজেকে চেনা-জানা খুব সহজ কাজ নয়। নিজেকে যদি ভালো করে না জানেন তাহলে নিজেকে বদলাতে পারবেন না আর নিজেকে বদলাতে না পারলে সমাজ বদলানো সম্ভব নয়।
নিজেকে না বদলিয়ে সমাজ বদলানোর ইচ্ছা শুধু প্রচেষ্টা হয়েই থাকবে। প্রত্যেকে যদি নিজের অবস্থান থেকে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য ঠিকমতো পালন এবং অসত্য ও অসুন্দরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, তাহলে ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক জীবনের পরিবর্তন আসতে বাধ্য। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার নিজেরা পরিবর্তন করে।’ সুরা রাদ : ১১
সমাজে কী ভুল আছে সে সম্পর্কে প্রত্যেকে নিজস্ব মতামত উপস্থাপন করে, এটি খুব সহজ। কিন্তু নিজের কী ভুল আছে তা খুঁজে বের করা কঠিন, যা সমাজের অধিকাংশ মানুষ করে না। অথচ প্রতিনিয়ত সমাজের নানা অভিযোগ-অসংগতির কথা বলে বেড়ায়। অথচ এই সমাজ-সংসারে অস্থিরতা, অপূর্ণতা থাকবে তার ভেতরেও আপনি চাইলে সুন্দর জীবনযাপন করতে পারেন। এজন্য দরকার, নিজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
সত্যিকার অর্থে বাইরের পরিস্থিতি ততটা খারাপ না, যতটা আপনি-আমি ভাবি। চলমান বাস্তবতাকে পরিবর্তন করতে চাইলে আজ থেকেই পরিবর্তন শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আপনি যদি হতাশ, রাগান্বিত বা অন্য কোনো বিব্রতকর অবস্থা বোধ করেন তাহলে কৌতূহলী হয়ে উঠুন এবং আপনার সেই অংশে কাজ করুন, যা বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করছে। আপনার মানসিকতা, অভ্যাস এবং কর্মপরিবর্তন করতে হবে। বেশির ভাগ মানুষ নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে। এটি পরিহার করুন, মিথ্যা কিংবা ভণিতার আশ্রয় নেওয়া বন্ধ করুন, আপনার বিশ্বাসের প্রতি আরও দৃঢ় ও মজবুত হন, কারও কাছে অধিক ভালো দেখানোর জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই।
নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যখন দেখবে মানুষ কৃপণতা করছে, প্রবৃত্তির পেছনে ছুটছে, পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, প্রত্যেকে নিজের মতামতে মুগ্ধ, এমন পরিস্থিতিতে নিজের সংশোধনে বিশেষ মনোযোগ দাও। সাধারণ মানুষের পথ পরিহার করো।’ সুনানে আবু দাউদ
কতই না সুন্দর ও বাস্তবধর্মী দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন মানবতার মুক্তির কান্ডারি প্রিয় রাসুল (সা.)। সমাজের বেশির ভাগ মানুষ তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের পরিস্থিতিতে হতাশ, ক্ষুব্ধ। আসলে কিছু বিষয় আছে, যা কারও হাতে নেই, এমন বিষয় নিয়ে ভেবে নিজের সাবলীল জীবনধারায় হতাশা ডেকে আনা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। সুতরাং চেতনাকে জাগ্রত করুন, নতুন করে ভাবুন। নিজেকে কীভাবে বদলানো যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। এটি ভাববেন না যে, আপনি একজন বদলালে কি সমাজ পরিবর্তন হবে বা আপনার পরিবর্তনে কি সমাজে প্রভাব পড়বে? এমন ভাবনা আপনাকে পেছনে টেনে নিয়ে যাবে। আপনি একা হয়তো সমাজ পরিবর্তন করতে পারবেন না, কিন্তু সমাজ পরিবর্তনের ধারায় একটি মাত্রা যোগ করতে পারেন।
পৃথিবীর শত অন্যায় ও অনৈতিক কাজ আছে, যা কেউ পছন্দ করে না। সবাই চায় এসব গর্হিত কাজ বন্ধ হোক, কিন্তু যখন নিজের বেলায় আসে, তখন সময়ের দোহাই দিয়ে তা ভালো করে ভোগ করি। দুঃখজনক হলেও এটিই হলো বর্তমান সমাজের বেশির ভাগ মানুষের দ্বৈতনীতি।
মাদকের বিরুদ্ধে কনসার্ট হয়, আবার ওই কনসার্টেই মাদক সেবনের আসর বসে। আমরা সুদ-ঘুষের বিরুদ্ধে কথা বলি, আবার সবার অলক্ষ্যে তা গ্রহণ করি। ন্যায়বিচারের কথা বলি আবার বিচারকের আসনে বসে অনৈতিক রায় ঘোষণা করি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার কথা বলি, সভা-সেমিনার করি আবার ওইসব সভা-সেমিনারে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অতিথি হয়, অশ্লীলতার বিরুদ্ধে বলি আবার অশ্লীলতার আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিই, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি আবার বাসায় গিয়ে নারী নির্যাতন করি, নাগরিক অধিকারের কথা বলি আবার জোর জবরদস্তি ভোট নিয়ে জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করি, বিশ্বব্যাপী শান্তির কথা বলি আবার দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে এক পক্ষকে অস্ত্রের জোগান দিই, এমন শঠতা আমাদের মধ্যে বিরাজমান। এই দ্বিমুখী আচরণ আর চিন্তাধারা দিয়ে সমাজ পরিবর্তন করা দুরূহ ব্যাপার।
মোট কথা, যে যার অবস্থান থেকে যদি নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন এবং নিজের ভেতরকার দোষ-ত্রুটি শোধরানোর চেষ্টা করি, তাহলে আমাদের চারপাশ এমনিতেই বদলে যাবে এবং সমাজ হয়ে উঠবে ন্যায়ভিত্তিক, সুন্দর ও সাবলীল। মাওলানা জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেছেন, ‘গতকাল চালাক ছিলাম, তাই পৃথিবীকে বদলাতে চেয়েছিলাম, আজ আমি বিজ্ঞ, তাই নিজেকে বদলাতে চাই।’