
সুগন্ধি ব্যবহারের উপকারিতা
সুগন্ধি পবিত্রতার নিদর্শন। সুগন্ধির কথা শুনলেই মনে একটা প্রশান্তি অনুভূত হয়। সুগন্ধি পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সুগন্ধি ঘ্রাণের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের হয়। সুগন্ধি ব্যবহারের প্রধান কারণ, এটি ব্যবহারে দূর করে শরীরের দুর্গন্ধ ও শরীরকে সজীব রাখে সারা দিন। ভালো সুগন্ধি ব্যবহারে মন ভালো থাকে যা মেজাজ শান্ত থাকতে অনেক সহায়ক। সুগন্ধি ব্যবহারে মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আপনি সারা দিন কাজ করতে পারবেন। এটি আপনার শরীরে সারা দিন সুগন্ধ ধরে রাখবে। সুগন্ধি ব্যবহারে মনমানসিকতা ভালো থাকে, মানসিক চাপ কমায়, মাথাব্যথা কমিয়ে ভালো ঘুম নিশ্চিত করে। সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত।
সুগন্ধির প্রতি নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রচণ্ড অনুরাগ ছিল। তিনি নিয়মিত সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। সুগন্ধি ব্যবহার নবী-রাসুলের সুন্নত। হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘চারটি বস্তু সব নবীর সুন্নত। আতর, বিয়ে, মেসওয়াক ও লজ্জাস্থান আবৃত রাখা।’ -মুসনাদে
আহমাদ : ২২৪৭৮
একদিন ঠিকই আফসোস হবে
ঘুমের চেয়ে নামাজ উত্তম জেনেও ফজরের সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকে।
কোরআন মাজিদ তেলাওয়াতে অন্তরে প্রশান্তি আসে, তারপরও মানুষ কোরআন তেলাওয়াত ত্যাগ করে অন্য কাজে ব্যস্ত থাকে।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার জিকির সারা দিনের কাজেকর্মে বরকত আনে জেনেও মানুষ অলসতা করে জিকির ছেড়ে দিয়েছে।
তওবা-ইস্তেগফারে রিজিক বৃদ্ধি করে জেনেও, মানুষ তা থেকে উদাসীন।
তাহাজ্জুদের নামাজ মানুষের জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুস্থিরতাসহ আরও অসংখ্য উপকারিতা নিয়ে আসে জেনেও, এমন মহার্ঘ্য তাহাজ্জুদ হেলায় ছেড়ে দিয়েছে।
তওবার দরজা সদা-সর্বদা উন্মুক্ত, তার পরও আজ করছি, কাল করছি করে আর তওবা করা হয় না। এভাবেই মানুষ একদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হয় কিংবা অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গোনাহ ত্যাগ করলে, আল্লাহ মানুষে বিপদ-আপদ দূর করে দেন, দুশ্চিন্তা লাঘব করেন। এটা জেনেও মানুষ গোনাহের কাজে অনড় থেকেছে, গোনাহে লিপ্ত থেকেছে।
এ জন্য একদিন আফসোস করতে হবে, কিন্তু সেদিনকার ওই আফসোস কোনো কাজে আসবে না।
মানুষের সঙ্গে কথোপকথন একটি অপরিহার্য যোগসূত্র। যাতে জ্ঞানার্জন, বিবেক-বুদ্ধির পূর্ণতা, অন্তরের প্রশান্তি এবং দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় নিহিত। পারস্পরিক সম্বোধনে উত্তম কথোপকথন, সুন্দর কথামালা, মহৎ চরিত্র, শ্রেষ্ঠতর গুণ ও সুউচ্চ মর্যাদা অন্তর্ভুক্ত। সম্বোধিত ব্যক্তি কিংবা শ্রোতাদের সম্মানার্থে যে ব্যক্তি তার কথাকে অলংকৃত করে, বাণীকে সাজিয়ে বলে, ভাষাকে পরিমার্জিত করে, বক্তব্যকে শোভিত করে এবং ভাষণকে সুসজ্জিত করে; মানুষের ভালোবাসাপূর্ণ অন্তর ও প্রীতিপূর্ণ হৃদয় তার অনুগত হয়। মহান আল্লাহ মানুষের অন্তরকে শ্রুতিমধুর ও মিষ্টি ভাষায় সম্বোধনকারীর প্রতি ভালোবাসার সহজাত বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অনুরূপভাবে কটুভাষী ও গালিবাজের প্রতি অসন্তোষ, অশ্লীল ও বেপরোয়া ভাষা ব্যবহারকারীর প্রতি ঘৃণার জন্মগত বৈশিষ্ট্য দিয়েছেন।
নম্র ভাষা হৃদয়ের মধ্যে লুকায়িত বিদ্বেষ ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়। মিষ্টি কথা প্রতিটি বঞ্চিত, আহত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়। হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ভালো কথা বলা সদকা সমতুল্য।’ -সহিহ বোখারি
সুতরাং মানুষকে সম্বোধন করুন এমন ভাষায় যা সর্বোত্তম, অতি সুন্দর ও কোমল। যে ভাষা হীনতা, অশ্লীলতা ও কর্কশতা থেকে দূরে এবং সম্বোধনকৃত ব্যক্তিকে কষ্ট প্রদান, অবমাননা ও হেয়প্রতিপন্ন করে না। আপনার ভাষাকে এমন শব্দ ব্যবহার থেকে মুক্ত রাখুন, যা শ্রোতাকে বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা এবং মর্যাদাহানি করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে সদালাপ করবে।’ -সুরা আল বাকারা: ৮৩
বলা হয়, যুদ্ধের সূচনা হয় কথার মাধ্যমে আর সমাপ্তি ঘটে ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে। বড় অনিষ্টের শুরু হয় তুচ্ছ কারণ থেকে। তেমনি যুদ্ধের সূচনা হয় কথার লড়াই দ্বারা। ব্যক্তি জিহ্বা দিয়ে তা-ই উচ্চারণ করে, যা তার অন্তরে লালন করে; ভালো হলে ভালো, আর খারাপ হলে খারাপ। মানুষের জিহ্বা তার অন্তরের চাবি, সে যা গোপন রাখেÑ মুখ তা প্রকাশ করে। মুহাম্মাদ বিন আলী বলেন, ‘ইতর ব্যক্তির অস্ত্র হলো নিকৃষ্ট কথা।’
যাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় শব্দ চয়নে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, তারা হলেন পিতামাতা। পিতামাতার উচ্চ মর্যাদা, সম্মান ও অধিকারের কারণে তাদের সম্বোধনের সময় সুন্দর শব্দের মাধ্যমে উত্তম অর্থ সংবলিত বাক্য ব্যবহার করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তাদের উফ্ বলো না এবং তাদের ধমক দিয়ো না। আর তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ -সুরা বনি ইসরাঈল: ২৩
বর্ণিত আয়াতে আল্লাহতায়ালা বিরক্তি ও অসন্তুষ্টিসূচক ‘উফ্’ শব্দ দ্বারা তাদের সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। তাদের সঙ্গে সুন্দর কথা বলতে আদেশ করেছেন যা সদাচরণ এবং তাদের অধিকার, হক ও মর্যাদা সংরক্ষণের প্রতি আহ্বান করে। তাদের নাম ধরে ডাকবে না, তাদের উপস্থিতিতে অযথা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলবে না। কেননা তা দুর্ব্যবহার ও অসদাচরণের শামিল। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) পিতার হক সম্পর্কে বলেন, ‘তাকে নাম ধরে ডাকবে না, তার সামনে হাঁটবে না এবং তার আগে বসবে না।’ - আদাবুল মুফরাদ
সম্বোধনের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদেরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। স্ত্রীদের বলা হয়েছে, আপনার স্বামী আপনার আশ্রয়, ছায়া, শক্তি ও সুখের দ্বার। কাজেই তাকে এমনভাবে সম্বোধন করবেন না, যা তাকে কষ্ট দেয়। অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে তাকে রাগান্বিত করবেন না। তাকে সম্মান করুন ও মর্যাদা দিন। সেই সঙ্গে স্বামীদের বলা হয়েছে, আপনার স্ত্রী আপনার সহধর্মিণী ও সঙ্গিনী। সে আপনার কাছ থেকে উপকার, সমর্থন, নম্রতা ও নিরাপদ শব্দ প্রত্যাশা করে। কাজেই তার সঙ্গে কথা বলার সময় স্নেহমাখা, আনন্দদায়ক, সম্মানজনক ও কোমল বাক্য ব্যবহার করুন। তাকে চুপ করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে লাঞ্ছিত করবেন না, তিরস্কার, নিন্দা ও ভর্ৎসনা দ্বারা বিরক্ত করবেন না এবং তালাক ও বিচ্ছেদের হুমকি দিয়ে আতঙ্কিত করবেন না।
পিতামাতাদের ক্ষেত্রে ইসলামের পরামর্শ হলো, সন্তান অন্তরের ফল ও হৃদয়ের সুগন্ধি। কাজেই তাদের নম্রতা, দয়া, সহানুভূতি, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের আহ্বান শোনান। তাদের উৎসাহ, উদ্বুদ্ধ, আকর্ষণ ও তৃপ্তির বাণী শোনান। যে ব্যক্তি তার সন্তানকে নির্বোধ, বোকা, উদাসীন ও উদ্ভট বলে আখ্যায়িত করে, সে মূলত সুষ্ঠু প্রতিপালনের পরিপন্থী দুর্ব্যবহারমূলক আচরণ করল; যদিও সে শব্দগুলো হারাম পর্যায়ের নয়। কোনো পিতার জন্য সমীচীন নয়, সে তার সন্তান ও পরিবারের জন্য গালমন্দ ও অভিশাপকারী হবে। কোনো কোনো বিদ্বানের মতে, শরিয়ত পরিপন্থী শব্দ ব্যবহারে যে ব্যক্তি স্বীয় সন্তান ও পরিবারকে গালমন্দে অভ্যস্ত হবে, তার গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে এবং সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যাত হবে।
সন্তানের হেদায়েত, তওফিক ও সততার জন্য দোয়া করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করা উচিত নয়। কোনো কোনো বাপ-মা রয়েছেন, যারা অদূরদর্শিতা, অস্থিরতা ও ধৈর্যহীনতার কারণে বিরক্তি ও ক্রোধের সময় নিজের এবং পরিবার ও সন্তানের বিরুদ্ধে ত্বরিত মৃত্যু ও ধ্বংসের বদদোয়া করেন। অনুরূপভাবে এমন কিছু দোয়া করেন, যা কবুল হওয়া তিনি পছন্দ করেন না। যদি তার কল্যাণের দোয়ার মতো বদদোয়াগুলো কবুল হতো তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যেত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর মানুষ অকল্যাণের দোয়া করে, যেমন তার দোয়া হয় কল্যাণের জন্য আর মানুষ অতি ত্বরাপ্রবণ।’ -সুরা বনি ইসরাঈল: ১১
হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের ওপর, সন্তানদের ওপর ও নিজের ধন-সম্পদের ওপর বদদোয়া করবে না। এমন যেন না হয় যে, তোমরা এমন মুহূর্তে বদদোয়া করছো- যখন আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা কবুল করেন।’ -সহিহ মুসলিম
উপদেশ যখন উত্তম ও সহজ শব্দ দ্বারা হয়, তখন তা অন্তরের জন্য সুমিষ্ট ও মন আকৃষ্টকারী হয়। যখন তা উচ্চ বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রকাশ করা হয়, সুন্দর অর্থে সজ্জিত করা হয় তখন শ্রবণশক্তি ও মন তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সুতরাং ত্রুটিকারীদের ভয় ও নিরাশার সুরে সম্বোধন করবেন না, তাদের সঙ্গে বিরক্তিভাব নিয়ে সাক্ষাৎ করবেন না। বরং বন্ধুত্ব, আন্তরিকতা ও উৎসাহের বাণী শোনান। মনে রাখবেন, নরম কথা ঔদ্ধত্য আচরণকারীর ধৃষ্টতার দেয়ালকে চুরমার করে দেয় এবং সীমালঙ্ঘনকারীর কঠোরতাকে কোমল করে।
তাই উচ্চ সম্মান ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উপযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে সম্বোধন করা উচিত। উত্তম শিষ্টাচারের অন্তর্গত হলো মানুষের মর্যাদা সম্পর্কে জানা আর তাদের সঙ্গে যথোপযুক্ত মেলামেশা ও বাক্য ব্যবহার করা। যে ব্যক্তির ভাষা খারাপ, আচরণ মন্দ, বাচাল প্রকৃতির এবং গুণীজনদের মানহানির ব্যাপারে উদগ্রীব; তাকে মানুষেরা অপছন্দ করে এবং বন্ধু-বান্ধবরা পরিত্যাগ করে। হজরত আবু উসমান (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজে মর্যাদাবান হয়, সে অন্যের মান-মর্যাদা বুঝতে পারে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আত্মমর্যাদাহীন হয়, সে অন্যের মর্যাদাকে ছোট করে দেখে।’
হে মুসলিমরা! পেশাগত ক্ষেত্রে সমকক্ষ, সহকর্মী এবং ব্যবসায়িক অঙ্গনে অংশীদারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাষায় সম্বোধন করা উচিত, শত্রুতাপূর্ণ ভাষায় নয়। তার সঙ্গে কথাবার্তা বলা উচিত নিকটজনের ভাষায়, কর্র্তৃত্ববাদী ভাষায় নয়। এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যে তার সঙ্গী ও সমকক্ষকে ইচ্ছাকৃতভাবে মন্দ ভাষায় সম্বোধন করে। সহকর্মীর সঙ্গে জনসম্মুখে বিবাদে লিপ্ত হয়, মর্যাদাহানি ও অবমূল্যায়নের উদ্দেশ্যে, সহকর্মীর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে হেয় করে। এগুলো দাম্ভিক, স্বৈরাচার, কর্র্তৃত্ববাদী, লোলুপ ব্যক্তির কর্মকাণ্ড। এগুলো ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, ধোঁকা ও মোনাফিক ব্যক্তির স্বভাব, যা কোনো আদর্শবান ব্যক্তির চরিত্র নয়।
২৩ সেপ্টেম্বর মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবা। অনুবাদ মুহাম্মদ আতিকুর রহমান
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।