
সাগরে জোয়ারের সময় শামুক-ঝিনুকগুলো সাগরের উপকূলে ভেসে আসে। ভোরে এগুলো সংগ্রহ করা হয়। এসবের মধ্যে আছে কাঁটা শামুক, কড়ই, কালো প্রবাল, করতাল, আংটি শঙ্খ, ছাদক শঙ্খ, জিঙ্গর শামুক, ক্যাঙ্গারু, রাজমুকুট, বিচ্ছু, বাঘমাড়ি, মালপুরি, নীল শামুক ও লাল শামুক। সারা বছর এগুলো দিয়ে নানা ধরনের উপকারী ও দৃষ্টিনন্দন জিনিস তৈরি করেন শিল্পীরা।
এগুলো সব মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে দান। সুতরাং আমরা এগুলোকে নারীদের অলংকার, বাড়ির ব্যবহার্যসামগ্রী বা ঘরের শোভাবর্ধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারি। ইসলামের দৃষ্টিতে এতে কোনো আপত্তি নেই। পবিত্র কোরআনে এসেছে, তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীর সবকিছু তোমাদের কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন...।’ সুরা বাকারা : ২৯
সাগরে পাওয়া যায় অত্যন্ত মূল্যবান অলংকারসামগ্রী। এগুলো মানুষের জন্য আল্লাহর দান। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) সাগরকে (তোমাদের) অধীন করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা গোশত আহার করতে পারো এবং যাতে তা থেকে রত্নাবলি আহরণ করতে পারো, যা তোমরা অলংকাররূপে পরিধান করো। তোমরা দেখতে পাও সমুদ্রের বুক চিরে জলযান চলাচল করে। এটা এজন্য যে যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’ সুরা নাহল : ১৪
সুতরাং সাগরবক্ষ থেকে সংগৃহীত আল্লাহর দেওয়া এসব নিয়ামত দ্বারা প্রস্তুতকৃত মালা, দুল, চুড়ি, ব্রেসলেট, ক্লিপ, ল্যাম্পশেড, ঝাড়বাতি ইত্যাদি তৈরি, ক্রয়-বিক্রয়, ঘরে সংরক্ষণ ও ব্যবহারে কোনো সমস্যা নেই।
গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরে-বন্দরে অনুষ্ঠিত ওয়াজ মাহফিলে সন্তানদের যেতে বাবা-মা কিংবা অন্য কোনো মুরব্বির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আসে না, বরং উৎসাহ দেওয়া হয়। এখন ওয়াজ মাহফিলের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, বাড়ির মুরব্বি ও মা-খালারা উৎসাহের সঙ্গে সন্তানদের ওয়াজে পাঠাতেন। ওয়াজ থেকে ফেরার পর মা-খালা-চাচি-মামি-নানি-দাদি সবাইকে শুনাতে হতো কোন বক্তা কী বলেছেন। তাদের কাছে ওয়াজ মাহফিল ছিল ইসলাম শেখার মাধ্যম বিশেষ।
সত্যিকারের ওয়াজের মাধ্যমে এখনো ইসলাম সম্পর্কে জানার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। যদিও অনেক বক্তা লম্বা সময় ধরে ওয়াজ করেন। কিন্তু এই সুদীর্ঘ ওয়াজে না উচ্চারিত হয় কোরআনের কোনো আয়াত, না কোনো হাদিস। তারা পুরো সময়টা নানাবিধ কিস্সা-কাহিনীর পাশাপাশি বিরোধী পক্ষকে ধোলাই করেন। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। অনেক বক্তা ওয়াজকে ক্লাসে পরিণত করেছেন। সুন্দর-সাবলীল বাংলা বলার পাশাপাশি ইংরেজি উপমা, উর্দু-ফারসি, আরবি ও বাংলা কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে ওয়াজকে করেছেন নান্দনিক। ওয়াজে কিছুক্ষণ পর পর শ্রোতাদের কাছ থেকে ‘ফিডব্যাক’ নিয়ে শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
কিছু বক্তা বিষয়বস্তুর সঙ্গে রেফারেন্সসহ হাদিস বলে শ্রোতাদের কাছে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। এর মাধ্যমে বক্তব্যের প্রামাণ্যতা যেমন বেড়েছে, ঘটেছে সর্বসাধারণের সঙ্গে পবিত্র হাদিস শরিফের সংযোগ। ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য বিষয়টির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আবার কোনো কোনো বক্তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম ধারায় কথা বলেন। বক্তব্য প্রদান অপেক্ষা প্রশ্নের উত্তর প্রদানে বেশি সময় ব্যয় করেন। এর মাধ্যমে মানুষ প্রভূত উপকৃত হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অনুরোধ থাকবে, বিতর্কিত মাসয়ালাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার, নচেৎ ফিতনা বাড়বে। কিছু বক্তা আছেন, তারা উম্মাহর জন্য জরুরি বিষয়গুলো অত্যন্ত চাঁছাছোলা ভাষায় বলে থাকেন। উচ্চ আওয়াজের দরুণ তারা বেশ পরিচিত। যুবক শ্রোতাদের কাছে তারা দারুণভাবে আদৃত।
প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে ওয়াজ শোনা অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। ইদানীং এমন কোনো ওয়াজ এদেশে হয় না, যেটা ২-৪ দিন পরে কোনো না কোনো মাধ্যমে ইন্টারনেটে না আসে। ওয়াজের ব্যাপারে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় অবদান ৩টি। ১. কর্মব্যস্ততার কারণে সশরীরে ওয়াজের মাঠে যাওয়ার সময় বের করা না গেলেও, প্রিয় বক্তার ওয়াজ শোনার জন্য দেড় দু’-ঘণ্টা সময় মানুষ ঠিকই বের করে নেয়। ২. এক সময় ওয়াজ না শুনতে পারার আফসোস করতেন নারীরা। ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন আর আফসোস করতে হয় না। তারাও এখন ইচ্ছামতো বয়ান শুনতে পারেন। ৩. ভাষা জানলে ভিনদেশের বক্তাদের ওয়াজও শোনা যায়। এর দ্বারা মনে জানার ক্ষুধা কমে, নতুন নতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের সুযোগ মেলে।
ওয়াজের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন আর জানার ক্ষুধা কমানোর ক্ষেত্রে বর্তমানের বক্তারা কতটুকু ভূমিকা রাখছেন, সেটা তর্ক সাপেক্ষ বিষয়। তবে আলোচনা হতে পারে, বর্তমান যুব সমাজ কেমন ওয়াজ শুনতে চায়, সে বিষয় নিয়ে। মনে হয়, এটাই বেশি কার্যকর বিষয়। কারণ অধিকাংশ বক্তা এ বিষয়ে খুব একটা নজর দেন, সেটা একবাক্যে বলার সুযোগ নেই। সমালোচকরা বলেন, এখনকার বক্তারা শ্রোতাদের রুচি এবং চাহিদার প্রতি খেয়াল করেন না, ফলে তরুণ সমাজ ধীরে ধীরে ওয়াজ মাহফিলবিমুখ
হয়ে যাচ্ছেন।
মনে রাখতে হবে, বর্তমান প্রজন্ম প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করে, সেটা খেলাধুলা-রাজনীতি-গানবাজনা হোক কিংবা দ্বীনি বিষয় হোক। এর ফলে ওয়াজ শোনার ব্যাপারে তাদের একটা ‘কমন’ রুচি তৈরি হয়ে গেছে। ওই রুচির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো- ১. ওয়াজের নামে তারা বানোয়াট গল্প শুনতে চায় না। ২. তারা জাল হাদিস শুনতে বিন্দুমাত্র পছন্দ করে না। যখন তাদের সামনে কোনো হাদিস বর্ণনা করা হয়, তারা ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে। যদি দেখে হাদিসটি ‘দুর্বল’ তবে বক্তার প্রতি শ্রদ্ধা শেষ হয়ে যায়। আর যদি দেখে, হাদিসটি ‘জাল (মাওযু)’ তবে তো আর কথা নেই। বক্তাকে যতভাবে পচানো যায়, তার সর্বাত্মক চেষ্টা সে করে। ৩. যেকোনো ব্যাপারে ‘কোরআনের সরাসরি ভাষ্য’ শুনতে তারা খুব আগ্রহী। ৪. ভাটিয়ালি সুর এই প্রজন্মের কাছে বিরক্তিকর। ৫. উর্দু-ফার্সি পঙ্ক্তির তুলনায় বাংলা কবিতা এই প্রজন্মের পছন্দ। ৬. কারও বিরুদ্ধে গালিগালাজ বর্তমান প্রজন্মের কাছে ভীষণ অপছন্দনীয়। ৭. ফরজ-ওয়াজিব নিদেনপক্ষে সুন্নতে-মোয়াক্কাদা নয়, এমন সব মাসয়ালা নিয়ে আলোচনা বর্তমান প্রজন্মের কাছে চক্ষুশূল।
বক্তারা যদি বর্তমান যুগের শ্রোতাদের মন-মেধা-মানসিকতাকে ভালোভাবে উপলব্ধি করতে না পারেন, তবে তারা শ্রোতা হারিয়ে স্বাভাবিকভাবেই অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়বেন। মানুষ ময়দানে হাজির হওয়ার চেয়ে নেটে বিদেশি বক্তাদের শুনতে বেশি আগ্রহবোধ করবে। ফলে ওয়াজ-মাহফিল ক্রমান্বয়ে কমে যাবে। এর ফলে সামাজিক অধঃপতন বাড়তে থাকবে।
আমরা চাই ওয়াজ-মাহফিলের ধারার যুগ যুগ ধরে চালু থাকুক। সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম হাতিয়ার ওয়াজ, যদি সেটা উদ্দেশ্যমূলক হয়ে থাকে। হাজারো আইন-আদালত-পুলিশ যে লোকটিকে পরিবর্তন করে না, শুধু একটিমাত্র ওয়াজ দিল দিয়ে শুনার কারণে ওই লোক আপাদমস্তক নিজকে বদলে ফেলেছে।
এমন ঘটনা কেবল একটি বা দুটি নয়, হাজার হাজার। দিলটাকে আখেরাতমুখী করার জন্য দিনান্তের কর্মশেষে কিছুক্ষণ ওয়াজ শ্রবণ করা বাংলাদেশের মুসলমানদের আবহমান কালের চরিত্র। এটা যদি হারিয়ে কিংবা বন্ধ হয়ে যায়, তবে আখেরাতমুখী হওয়ার এই সহজ সুযোগ নষ্ট হয়ে যাবে। আর আখেরাতের সফলতাই একজন মুমিনের জিন্দেগির প্রকৃত সাফল্য।
জীবনের নানা সময় আমরা দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণে যাই। অতি প্রয়োজনে কিংবা আনন্দঘন সময় কাটাতে মানুষ ভ্রমণে বের হয়। এ সময় ]আল্লাহর কাছে পরিবার, সন্তান-সন্ততি, সম্পদ ও সফরের নিরাপত্তা চাওয়া মুসলিম হিসেবে কর্তব্য। তা ছাড়া ভ্রমণকালে সব ধরনের ঝামেলা, দুর্ঘটনা বা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে সুরক্ষার জন্য দোয়া করা জরুরি। এজন্য নবী করিম (সা.) সফরে যাওয়ার আগ মুহূর্তে এবং সফর থেকে ফেরার পর কিছু দোয়া ও আমল করতেন। প্রথমে তিনি বাহনে আরোহণ করে তিনবার আল্লাহু আকবার এবং তিনবার আলহামদুলিল্লাহ পড়তেন। এরপর দোয়াটি পড়তেন উচ্চারণ : সুবহানাল্লাজি সাখখারালানা হাজা, ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়াইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফারিনা হাজা বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা। আল্লাহুম্মা হাউইন আলাইনা সাফারানা হাজা, ওয়াতবি আন্না বুদাহ। আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মি উয়াসাইস সাফারি ওয়া কাআবাতিল মানজারি, ওয়া সুইল মুনকালাবি ফিল মালি ওয়াল আহাল। ... আইবুনা, তাইবুনা আবিদুনা লি রব্বিনা হামিদুন।
অর্থ : ওই সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি আমাদের জন্য এই বাহনকে বশীভূত করেছেন। আমরা তা বশীভূত করতে সক্ষম নই। বস্তুত আমরা তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। হে আল্লাহ, এই সফরে আমরা আপনার কাছে কল্যাণ, আল্লাহভীতি ও তোমার সন্তুষ্টিদায়ক আমল চাই। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের এই সফরকে সহজ করুন এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দিন। হে আল্লাহ, আপনি সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ, আপনার কাছে সফরের কষ্ট, অপ্রীতিকর দৃশ্য এবং ফেরার পর সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।
নবী করিম (সা.) যখন সফর থেকে ফিরতেন তখনো এই দোয়া পড়তেন এবং অতিরিক্ত বলতেন (অর্থ) : আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, গোনাহ থেকে তওবাকারী, আমাদের প্রতিপালকের ইবাদতকারী ও প্রশংসাকারী।
হাদিস : হজরত আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সফরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে বাহনে আরোহণ করতেন, তখন তিনি তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। এরপর (উল্লিখিত) দোয়াটি পড়তেন। এরপর সফর থেকে ফিরেও দোয়াটি পড়তেন এবং অতিরিক্ত দোয়াটি পড়তেন। সহিহ মুসলিম : ১৩৪২
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।