
আমাদের জীবন পাপে পূর্ণ। পাপের শাস্তি অনিবার্য। তাই পাপ থেকে আমরা তওবা করি। তবে দুটি পাপ এমন, যা আমরা তুচ্ছজ্ঞান করি। কিন্তু এর শাস্তি ভয়াবহ। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। তখন রাস্তার পাশে দুটি কবর দেখতে পেলেন। কবর দুটির কাছে পৌঁছে তিনি সেদিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এই দুই কবরবাসীর ওপর আজাব হচ্ছে। তবে বড় কোনো গোনাহের কারণে তাদের আজাব দেওয়া হচ্ছে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি জানো এই আজাব কেন হচ্ছে? তারপর নিজেই উত্তর দিলেন, দুই কারণে তাদের ওপর আজাব হচ্ছে। একজন চোগলখুরি (আড়ালে অন্যের নিন্দা) করত। আর অপরজন পেশাবের ছিটা থেকে সতর্কতা অবলম্বন করত না। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) খেজুরের একটি কাঁচা ডাল দুই টুকরো করলেন। তারপর কবরের ওপর পুঁতে দিলেন। আর বললেন হয়তো এ কারণে তাদের আজাব কিছুটা লাঘব করা হবে, যত দিন পর্যন্ত এ ডাল দুটি শুকিয়ে না যাবে। সহিহ মুসলিম : ৫৭০
হাদিসে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ইচ্ছে করলে এবং সতর্ক থাকলে উপরোক্ত কাজ থেকে বেঁচে থাকা কঠিন কিছু ছিল না; কিন্তু তারা সেটা করেনি।
আলোচ্য হাদিসে দুটি পাপের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এক. পেশাবের ছিটা। এ থেকে সতর্কতা অবশ্য কর্তব্য। পবিত্রতার শিষ্টাচার ইসলামে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পাশ্চাত্য সভ্যতার অশুভ দাপটে মানুষ বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা তো মোটামুটি শেখে, কিন্তু শরিয়ত নির্দেশিত পবিত্রতা শেখে না। দেখা যায়, বিভিন্ন শপিং মল, বাস স্টপেজ, বাজার-ঘাট, আধুনিক হোটেলগুলোতে টয়লেট এমনভাবে বানানো হয়, ইচ্ছে করলেও পেশাবের ছিটা থেকে বাঁচা মুশকিল হয়ে যায়। আবার কিছু মানুষ ইচ্ছে করেই পেশাব করে পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা অবলম্বন করে না। অথচ হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা পেশাব থেকে বেঁচে থাকো। কারণ অধিকাংশ কবরের আজাব পেশাবের কারণে হয়ে থাকে।’ জামে তিরমিজি : ১০২
দুই. চুগলি বা আড়ালে নিন্দা। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) এহইয়াউল উলুম গ্রন্থে লিখেছেন, ‘কারও গোপন কথা বা তথ্য ফাঁস করে দেওয়াও চুগলির অন্তর্ভুক্ত। যেমন, কারও ভালো কিংবা মন্দ বিষয়; যার প্রকাশ সে চায় না। অথচ তা প্রচার করা হলো। তাহলে এটাও চোগলখুরি, যা সম্পূর্ণ হারাম। অথবা কেউ কোনো পারিবারিক পরিকল্পনা করেছে। আর সেটা কোনোভাবে জানার সুযোগে অন্যের কাছে বলে বেড়ানো এটাও চুগলখুরির শামিল। বর্ণিত হাদিস থেকে গোনাহ দুটির ভয়াবহতা আমরা জানতে পেরেছি। এ গোনাহদ্বয় যে পরিমাণের জঘন্য, আমরা সে পরিমাণে উদাসীন। এ বিষয়ে মুমিন-মুসলমানদের সতর্কতা কাম্য।
মুমিন ব্যক্তিকে সময়ের গুরুত্ব দিতে হবে। জীবনকে করতে হবে পুণ্যময়। ইমানি চেতনা ইমানদারদের সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন করতে অনুপ্রাণিত করে। সে লক্ষ্যে কয়েকটি বিষয় সামনে রাখা উচিত। সেগুলো হলো আশা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া : মানুষ প্রায়ই অতীতের ভুলভ্রান্তি ও পাপরাশির কারণে হতাশ হয়ে যায়। অথচ মুমিনের ডিকশনারিতে হতাশা নামক শব্দের কোনো অস্তিত্ব নেই। মুমিন সর্বময় আশার আলোকচ্ছটা দেখে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী,) বলে দাও হে আমার বান্দারা! যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।’ সুরা আয যুমার : ৫৩
আজকের দিন গতকালের চেয়ে উত্তম হওয়া : সময় আপন গতিতে চলমান। সে বুঝে না রাজা, প্রজা, শাসক, শাসিত, ছোট, বড়, ধনী, গরিব, ধর্ম, বর্ণ, জাত ও প্রজাত। সে নাটকীয়ভাবে চলছে তার গন্তব্যে। তাই আমাদের আজকের দিন গতকালের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া ও উত্তমরূপে কাটানো। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য, যার আজকের দিনটি গতকালের চেয়ে উত্তম হলো না।’
অনর্থক এবং নিষ্ফল কাজ পরিত্যাগ : আমরা জীবনের বেশির ভাগ সময় বেহুদা ও নিরর্থক কাজে অতিবাহিত করি। এভাবে সময় কাটানো বন্ধ করতে হবে। দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যেন অনর্থক সময় অতিবাহিত না হয়। মুমিন কখনো সেই কাজ করতে পারে না, যার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা অর্থহীন বিষয় থেকে বিমুখ থাকে, তারাই প্রকৃত মুমিন।’ সুরা আল মুমিনুন : ৩
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর ইমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।’ সহিহ মুসলিম : ৭৭
তওবাভিত্তিক জীবন অতিবাহিত করা : মানুষ স্বভাবতই ভুলকারী। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তাই আমাদের ভুলভ্রান্তি থেকে তওবা করে আল্লাহর রহমতের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একজন প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি তার জীবনকে তওবাভিত্তিক জীবনে অতিবাহিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! আল্লাহর কাছে তওবা করো, প্রকৃত তওবা।’ সুরা আত তাহরিম : ৮
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ত্রুটিশীল ও অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে উত্তম তারা যারা তওবা করে।’ মিশকাত : ২৩৪০
তাকওয়াভিত্তিক জীবনযাপন : তাকওয়া বা আল্লাহভীতি মানব জীবনের মূলভিত্তি। মুমিন জীবনে তাকওয়ার এমন মিনার গড়ে তুলতে হবে, যেন মহান রবের সীমারেখায় জীবন পরিচালিত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! আল্লাহকে ভয় করো। আর প্রত্যেকেই যেন লক্ষ রাখে, সে আগামীকালের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আল্লাহ নিশ্চিতভাবেই তোমাদের সেসব কাজ সম্পর্কে অবহিত যা তোমরা করে থাকো।’ সুরা আল হাশর : ১৮
আল্লাহর হুকুমে মাথানত করে দেওয়া : জীবনের কোনো মুহূর্ত অশ্লীলতা, গোনাহ ও হারামের রঙে রঙিন না করে বরং মহান রবের রঙে রঙিন করা। আল্লাহর রঙ হলো, আল্লাহর বিধান এবং আদেশ-নিষেধ মেনে জীবনকে পরিচালনা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আল্লাহর রঙ ধারণ করো! আর কার রঙ তার চেয়ে ভালো? আমরা তো তারই ইবাদতকারী।’ সুরা আল বাকারা : ১৩৮
আত্মপর্যালোচনা : পৃথিবীতে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম, যারা নিজেদের আত্মপর্যালোচনা করে বরং মানুষ অপরের সমালোচনায় ব্যস্ত। এমন অভ্যাস কোনোভাবেই কাম্য নয়। জীবনকে সুশোভিত করতে প্রয়োজন, নিজেকে নিয়ে বেশি বেশি আত্মবিশ্লেষণ করা, আত্মপর্যালোচনার মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পড়ো, নিজের আমলনামা, আজ নিজের হিসাব করার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট।’ সুরা বনি ইসরাইল : ১৪
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজের হিসাব করে নাও, তোমার কাজ পরিমাপ করার আগে নিজেই নিজের কাজের পরিমাপ করে নাও।’ জামে তিরমিজি : ৬৩
আল্লাহর নিদর্শন থেকে শিক্ষালাভ : সূর্য ও চন্দ্র মহান আল্লাহর অপূর্ব সৃষ্টি ও অন্যতম নিদর্শন। বিশ্ব ব্যবস্থাপনা সূর্য ও চন্দ্রের গতি ও কিরণ-রশ্মির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। সূর্য ও চন্দ্রের গতি ও নিজ কক্ষপথে বিচরণব্যবস্থা একটি বিশেষ হিসাব ও পরিমাপ অনুযায়ী চলছে। এর মাধ্যমেই রাত-দিনের পার্থক্য, ঋতুর পরিবর্তন এবং মাস-বছর নির্ধারিত হয়। এসব নিদর্শন থেকে শিক্ষা লাভ করে আল্লাহমুখী হওয়া ইমানি চেতনার আবেদন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চন্দ্রকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং এর মনজিল (কক্ষপথ) নির্দিষ্ট করেছেন, যাতে তোমরা বছর গণনা ও সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন।’ সুরা ইউনুস : ৫
মৃত্যুর স্মরণ ও পরকালের প্রস্তুতি : একটু একটু করে সময় পার করছি, আর মৃত্যু ও পরকাল নামক এক অমোঘ গন্তব্যে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছি। তাই আমাদের মৃত্যু ও পরকালের জীবন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক জাতির জন্য অবকাশের একটি সময় নির্দিষ্ট রয়েছে। তারপর যখন কোনো জাতির সময় পূর্ণ হয়ে যাবে, তখন এক মুহূর্তকালের জন্যও তাকে বিলম্বিত বা ত্বরান্বিত করা হবে না।’ সুরা আল আরাফ : ৩৪
হাদিসে আছে, হজরত শাদ্দাদ ইবনে আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবনের জন্য কাজ করে, সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান। আর যে ব্যক্তি নিজেকে কু-প্রবৃত্তির গোলাম বানায় অথচ আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা করে (জান্নাত), সে-ই অক্ষম।’ জামে তিরমিজি : ২৪৫৯
জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা : জীবন মহান আল্লাহর এক বড় নেয়ামত। এই জীবন মহান রব অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তাই জীবনকে অর্থবহ করে গড়ে তুলতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি মনে করেছিলে আমি তোমাদের অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের কখনো আমার দিকে ফিরে আসতে হবে না?’ সুরা আল মুমিনুন : ১১৫
পবিত্র কাবা চত্বরে এক সন্তান তার জন্মদাতা বাবাকে কাঁধে নিয়ে তাওয়াফ করছেন। দুজনের চোখেই পানি। এ পানি হতে পারে স্বপ্নপূরণের, ভালোবাসা প্রকাশের কিংবা কৃতজ্ঞতার। তবে দৃশ্যটি মর্মস্পর্শী ও আবেগ সৃষ্টিকারী। সাধারণ মানুষ তাওয়াফের ফাঁকে বাবার প্রতি সন্তানের এমন দায়িত্ববোধ দেখে ছেলেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে দু-তিন দিন ধরে।
ছবিটি কখন তোলা হয়েছে তা জানা না গেলেও মনে হচ্ছে এটি বিকেলের। ছবিতে দেখা সন্তান ও বাবা কোন দেশের তাও জানা যায়নি। তবে পোশাকপরিচ্ছদ ও চেহারা দেখে মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক মনে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, লোকটি তার দুর্বল বাবাকে কাঁধে নিয়ে ধীরে ধীরে ‘তাওয়াফ’ বা কাবা প্রদক্ষিণ করছে। একজন লিখেছেন, ‘এই লোকটি ইসলামি মূল্যবোধের সত্যিকারের উদাহরণ।’
টুইটারে হারামাইন পরিষদের পেজে একজন লিখেছেন, ‘ছবিটি দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, তার হুইলচেয়ার নেওয়া উচিত। কিন্তু আপনি কি জানেন, মাতাফ তথা কাবার নিকটতম স্থানে হুইলচেয়ার অনুমোদিত নয়। হুইলচেয়ার মসজিদে হারামের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় রয়েছে। আর কে না চায় কাবার কাছ দিয়ে তাওয়াফ করতে? কিংবা হতে পারে, এটা ছেলের সিদ্ধান্ত; সে তার বাবাকে পিঠে বহন করে তার প্রতি সর্বোচ্চ স্তরের ভালোবাসা দেখাবে!’
শুধু এবার নয়, এর আগে বহুবার বাবা কিংবা মাকে পিঠে, কোলে ও কাঁধে বহন করে সন্তানের হজের আচার-আচরণ পালন ও কাবা তাওয়াফ করতে দেখা গেছে।
২০১৮ সালে হজের সময় একজন তার মাকে পিঠে বহন করে পুরো হজের কার্যক্রম শেষ করেন। ওই হজযাত্রী নিজেও বৃদ্ধ ছিলেন, তবুও মাকে পিঠে করে বয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায়। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের সময় এক ফটো সাংবাদিক তাকে দেখে অনুসরণ করতে থাকেন। ভিড়ের মাঝে ফটো সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান, এই মহিলা কে? সে উত্তর দেয়, আমার আম্মা। পরে টানা তিন দিন ওই দুজনকে ফটো সাংবাদিক অনুসরণ করেন। তিনি হজপালনের সময় অত্যধিক গরমে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তবুও বিরক্তি প্রকাশ করেননি। প্রয়োজনে বিশ্রাম নিয়েছেন, কিন্তু হার মানেননি। তার এমন দৃঢ়তা দেখে অনেকেই বাহাবা দিয়েছেন, দোয়া করেছেন।
আরেকবার প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বৃদ্ধ মায়ের তাওয়াফ করতে কষ্ট হবে, তাই সন্তান মাকে কাঁধে চড়িয়ে তাওয়াফ করাচ্ছেন। আর মা বলছেন, নামিয়ে দে বাছা, তোর কষ্ট হচ্ছে, তুই রোজা রেখেছিস! ছেলে মায়ের কথা শুনতে রাজি নয়। তার দৃঢ়োক্তিজান্নাহ! জান্নাহ ইনশাআল্লাহ!
অসুস্থ মা কিংবা বাবাকে কোলে, পিঠে কিংবা কাঁধে নিয়ে পবিত্র কাবা তাওয়াফ ভালো কাজ মনে করলেও ইসলামি স্কলাররা এটি যে খুব বড় কাজ তা মানতে নারাজ। তাদের মতে, মা-বাবা সন্তানকে যে কষ্ট করে লালন-পালন করেন তার তুলনায় এটি সামান্য। তবে বাবা-মার প্রতি সন্তানের এমন দয়া ও ইহসান তার জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে বলে মনে করেন ইসলামি স্কলাররা। সন্তানের এমন কর্তব্যবোধ গর্ব ও অহংকারের। সব সন্তানদেরই বয়োবৃদ্ধ-অসুস্থ ও স্বাভাবিক চলাফেরা করতে অক্ষম বাবা-মায়ের প্রতি এমন যতœবান হওয়া এবং তাদের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করা উচিত।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।